Friday, May 17, 2024
Homeশিক্ষাগণিত শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান বর্ণনা করুন।

গণিত শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান বর্ণনা করুন।

প্রশ্ন: গণিত শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান বর্ণনা করুন। বিষয়: IST-512 : Muslim Contribution to Science and Technology কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)



ভূমিকা

বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে জ্ঞান ও বিজ্ঞানে মুসলমান বিজ্ঞানীদের অবদান অপরিসীম। প্রাচীন কালে মুসলিম বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানের যেসব মৌলিক শাখায় অবদান রেখেছেন গণিতশাস্ত্র তার অন্যতম। মানুষের চিন্তা ও যুক্তি বিস্তারের অনন্য ধারা হলো গণিত। একে সব বিজ্ঞানের প্রবেশদ্বার ও চাবিকাঠিও বলা হয়। কেউ কেউ আবার একে ‘বিজ্ঞানের মা’ আখ্যা দিয়ে থাকেন। মুসলিম বিজ্ঞানীরা যেমন গ্রিক ও ভারতীয়দের আবিষ্কৃত গণিতের সূত্রগুলো বিশ্লেষণ ও উন্নয়ন করেছেন, তেমনি গণিতশাস্ত্রে নিত্যনতুন তথ্য ও শাখা যুক্ত করেছেন। মানুষের প্রয়োজনে এই শাস্ত্রের চর্চা আদি যুগ থেকেই শুরু হয়েছিল। নিয়মতান্ত্রিকভাবেই এই শাস্ত্রচর্চার আদিভূমি হিসেবে মেসোপটেমিয়া, মিসর, চীন ও ভারতবর্ষকে চিহ্নিত করা হয়।

গণিত শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান বর্ণনা করুন।

গণিত শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান

গণিতশাস্ত্র জ্ঞান-বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বা মৌলিক শাখা। গণিতশাস্ত্রকে বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানের Root (মূল) বলে থাকেন। আর এই গণিতশাস্ত্রের আবিষ্কার, অগ্রগতি, অগ্রযাত্রা ও উৎকর্ষ সাধনে মুসলমানদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জর্জ সাটন Introduction to History of science গ্রন্থে বিজ্ঞান চর্চায় মুসলমানদের অবদানের স্বীকৃতস্বরূপ ৭৫০ সাল থেকে ১১০০ সাল পর্যন্ত সময়কে সাতটি যুগে ভাগ করেছেন। এর প্রত্যেক যুগকে তিনি একজন মুসলিম বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদের নামানুসারে নাম দিয়েছেন। এই সাতজন বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদের মধ্যে চারজন আল খাওয়ারিযমী, আবুল ওয়াফা, আল বিরুনী ও ওমর খৈয়াম ছিলেন অংক শাস্ত্র সংশ্লিষ্ট বিষয়ক বিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ। গণিতশাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান কয়েকটি পর্বে বিন্যস্ত করা যায়।

প্রারম্ভিক পর্ব

ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের উপর পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ধর্মীয় অনুশাসন পালন করার তাগিদেই মুসলিম মনীষীগণ গণিতশাস্ত্রের উপর গবেষণা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। দৈনিক পাঁচ বার সালাতের সময় নির্ধারণ, যাকাত আদায়ের হিসাব- নিকাশকরণ, রমযান মাসের সাওম পালন, উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি বণ্টন ইত্যাদি প্রশ্ন সমাধানের জন্য তাঁরা গণিতশাস্ত্রে গবেষণা করতে উৎসাহিত হন।



বস্তুত আল কুরআনের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত হয়ে মুসলিম বৈজ্ঞানিকগণ গণিতশাস্ত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করেছিলেন এবং এ বিষয়ে তাঁদের আবিষ্কার ছিল বিস্ময়কর। মুসলমানদের গবেষণার সাথে সংযুক্ত হয় ভারতীয় এবং গ্রীক ঐতিহ্য। অংক ও গণিতশাস্ত্রের গ্রীক গ্রন্থাবলী আরবীতে অনুবাদ করে তাঁরা গণিতশাস্ত্রকে একটি পরিপূর্ণতার পর্যায়ে নিয়ে যায়।

দ্বিতীয় পর্ব বা মৌলিক যুগ

নবম শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত সময়কালকে গণিতশাস্ত্রে মুসলমানদের মৌলিক গবেষণা ও অবদান রাখার যুগ বলা যায়। ইতোমধ্যেই মুসলমানগণ নিজস্ব গাণিতিক পদ্ধতি নিরূপণ করেন। অনুবাদের মাধ্যমে বিভিন্ন জাতির গণিতশাস্ত্রে এবং সংশ্লিষ্ট শাখা-প্রশাখার সঙ্গে তাঁদের ব্যাপক পরিচিতি ঘটে। তাঁদের মৌলিক গবেষণার ফলে গ্রীক জ্যামিতির জটিল সমস্যাগুলোর সমাধান শূন্যের ব্যবহারে ইউরোপে বহুল প্রচারিত দশমিক প্রথা, বীজগণিত, গোলাকার এবং ত্রিকোণমিতির প্রবর্তন প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিশেষ উৎকর্ষ সাধিত হয়।

গণিত বিজ্ঞানের অগ্রদূত আল-খারিযমী

ইসলামের স্বর্ণযুগে যে সকল চিন্তাবিদ ও মনীষী বিজ্ঞানের শাখা সমৃদ্ধ করেন, তাঁদের মধ্যে মুহাম্মদ বিন মূসা আল- খারিযমী (৭৮০-৮৫০ খ্রি:) বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন । তিনি গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা ও ভূগোল শাস্ত্রে অভূতপূর্ব স্থায়ী অবদান রাখেন। গণিতবিদ হিসেবে তাকে নিঃসন্দেহে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মৌলিক প্রতিভার অধিকারী এবং গণিত বিকাশের অগ্রদূত বলা যায় ।



তাঁর বিশ্ববিশ্রুত গ্রন্থ ‘আল-জিবরা’ (Algebra) বীজগণিতের এ নামটি তাঁর বই ‘আল-জবর’ হতেই উৎপত্তি হয়েছে। পি. কে. হিট্টি বলেন, দ্বাদশ শতাব্দীতে ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত খারিযমের এ বইখানি ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অংক শাস্ত্রের শ্রেষ্ঠ পাঠ্যপুস্তক হিসেবে প্রচলিত ছিল এবং এ গ্রন্থখানির মাধ্যমেই ইউরোপে বীজগণিতের ব্যবহার প্রবর্তিত হয়।

গণিত বিশারদ কয়েকজন পন্ডিত

নিম্নে মুসলিম কয়েকজন উল্লেখযোগ্য মুসলিম বিজ্ঞানীর নাম ও গণিত শাস্ত্রে তাদের অবদান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

  • আবুল ওয়াফার: তিনি আল-খারিযম ও ইউক্লিডের জ্যামিতির সমালোচনা এবং ত্রিকোণমিতির তালিকা প্রণয়ন করেন। তিনি প্রথম সাইন উপপাদ্যের সঙ্গে গোলাকার ত্রিভূজের সাধারণত্ব প্রতিষ্ঠা করেন।
  • জাবির ইবন-আফলাহ: তিনি ‘কিতাবুল হায়াত’ এ গোলাকার সাধারণ ত্রিকোণমিতির উপর একটি জ্ঞানগর্ভ পরিচ্ছেদ সন্নিবেশ করে মৌলিকত্বের স্বাক্ষর রাখেন।
  • আল-বাত্তানী: তিনি সর্বপ্রথম ত্রিকোণমিতির অনুপাত প্রকাশ করেন।
  • ওমর খইয়াম: এ পণ্ডিত পাটিগণিত ও বীজগণিতের উপর বহু গ্রন্থ রচনা করেন। তিনিই কণিকের ছেদ দ্বারা দ্বিঘাত, ত্রিঘাত ও ঘন সমীকরণগুলোর সমাধান পেশ করেন।
  • মুহাম্মাদ-বিন-ঈসা আল-মাহানী: আধুনিক বীজগণিতের অন্যতম প্রবক্তা আল-মাহানী ত্রিকোণমিতি, জ্যামিতি, জ্যোতির্বিদ্যা ও ঘন সমীকরণ সম্পর্কে গ্রন্থ রচনা করেন।
  • মুহাম্মাদ-বিন-তাইয়্যের আল-সারাখশী: গণিত, বীজগণিত ও জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে অনেক বই-পুস্তক রচনা করেন।


  • আল-বিরুনী: গণিতশাস্ত্রে আল-বিরুনীর মৌলিক প্রতিভা সর্বজন স্বীকৃত। তিনি ভূগোল সংশ্লিষ্ট গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের আলোচনার ক্ষেত্রে ভূ-পৃষ্ঠের বিপরীত দিক পৃথিবীর গোলত্ব এর গতিধারা বিভিন্ন স্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমার আলোচনা করেন।
  • নাসিরুদ্দীন আল-তুসী: তিনি যাবতীয় বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের আকর (Root) ষোলটি গণিত গ্রন্থের সম্পাদনা করেন।
  • আল-বিন-মুহাম্মদ-আল-কালাহাদী: তাঁর সংখ্যাসূত্র গ্রন্থটি মৌলিকত্বের স্বাক্ষর বহন করে।

এছাড়াও আল-ইয়ামী, আল-ফারাবী, আবুল কাসিম মাসলামা, ইবনে সীনা, আলকিন্দি, হাসান-বিন-আল হাসান, বাহাউদ্দীন আমীর প্রমুখ মনীষী গণিতশাস্ত্রের উপর উল্লেখযোগ্য মৌলিক অবদান রেখেছিলেন। এদের সামগ্রিক চেষ্টা সাধনায় গণিতশাস্ত্র বিশেষভাবে সমৃদ্ধ হয়েছিল।

উপসংহার

গণিতশাস্ত্র বিজ্ঞানের মূলভিত্তি। এ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মুসলিম বিজ্ঞানীগণ যে অপূর্ব অবদান রেখে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কারকের মর্যাদা কুড়িয়েছেন এটা ধ্রুবসত্য। সামগ্রিক বিচারে গণিতশাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান অতীব প্রশংসনীয় এবং কৃতিত্বের দাবীদার। গণিতশাস্ত্রে মুসলিম মনীষীর অবদানকে বিস্ময়কর ও চমকপ্রদ বলতেই হবে।



সম্ভাব্য প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ (এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ)

• IST-507 : Study of Al-Hadith (Al-Mishkat Al-Masabih: Al-Iman, AlILM and Al-Salat (Selected Hadith) • IST-508 : Principles and History of Hadith literature • IST-509 : Muslim Personal Law and Law of Inheritance in Islam • IST-510 : Banking and Insurance in Islam • IST-511 : Study of Religions (Islam, Buddhism, Hinduism, Judaism, Christianity) • IST-512 : Muslim Contribution to science and technology

x

tiltony.com
tiltony.comhttp://www.tiltony.com
তিলটনি.কম একটি বাংলা ব্লগ সাইট। সঠিক, নির্ভরযোগ্য ও পূর্ণ তথ্য সমৃদ্ধ কনটেন্ট প্রকাশ করার উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ওয়েবসাইটটি।বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ‣ শিক্ষা ‣ স্বাস্থ্য ‣ জীবনযাপন ‣ পাঁচমিশালি ‣ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও সংবাদ পেতে ভিজিট করুন।
RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments