Friday, May 3, 2024
Homeইসলামনামাযের মধ্যে মাকরূহ এবং নিষিদ্ধ কাজসমূহ

নামাযের মধ্যে মাকরূহ এবং নিষিদ্ধ কাজসমূহ

নামাযের মধ্যে মাকরূহ এবং নিষিদ্ধ কাজসমূহ

যা করলে গোনাহ হয় এবং নামাযের ছওয়াব কম হয় কিন্ত নামায নষ্ট হয় না, এরূপ কাজকে মাকরূহ বলা হয়। অর্থাৎ নামাযের মধ্যে কোন মাকরূহ কাজ করলে নামায আদায় হয়ে যাবে কিন্তু ওই মাকরূহ কাজের জন্য নামাযের সওয়াব কমে যাবে এবং সেই কাজের জন্য গোনাহ হয়ে যাবে। তাই নামাযে মাকরূহ কাজ থেকে সতর্ক থাকা জরুরী। এখানে নামাযের মাকরূহসমূহ উল্লেখ করা হলো-

  • নামাযের মধ্যে শরীর, কাপড় কিংবা অলংকারাদি নাড়াচাড়া করা (দাড়িতে অনর্থক হাত বুলান বা ধুলাবালি ঝাড়া), কংকর সরানো মাকরূহ। অবশ্য যদি সেজদার জায়গায় কোন কংকর (বা কাঁটা) থাকে যার কারণে সেজদা করা যায় না, তবে একবার- কি দুইবার হাত দিয়া তা সরিয়ে দেওয়া জায়েয আছে।
  • নামাযের মধ্যে আঙ্গুল মটকান, কোমরের উপর হাত রেখে দাড়ানো, ডানে বামে এদিক-ওদিক মুখ ফিরিয়ে দেখা মাকরুহ। অবশ্য  ঘাড় বা মুখ না ফিরিয়ে শুধু চোখের কোণ ‍দিয়া ইমামের বা কাতারের উঠা বসা দেখে লওয়া দুরুস্ত আছে। কিন্ত নিতান্ত প্রয়োজন ব্যতীত এরূপ করাও অনুচিত।
  • নামাযের মধ্যে চারজানু হয়ে (আসন গেড়ে) বসা, কুকুরের মত বসা, হাঁটু খাড়া করে চুতড় ও হাত মাটিতে রেখে বসা, মেয়েদের উভয় পা খাড়া রেখে বসা (এবং পুরুষদের সেজদার মধ্যে উভয় হাত পা বিছিয়ে রাখা) মাকরূহ। অবশ্য রোগ ব্যাধির কারণে যেভাবে বসার হুকুম আছে, যদি সেইভাবে বসতে না পারে, তবে যেভাবে বসতে পারে সেভাবেই বসবে, ঐ সময় কোন প্রকার মাকরূহ হবে না।

যে স্থানে এরূপ আশঙ্কা হয় যে, হয়ত কেউ নামাযের মধ্যে হাসিয়ে দিবে, বা মন এদিক ওদিক চলে যাবে, বা লোকের কথা-বার্তায় নামাযে ভুল হয়ে যাবে, সেরূপ স্থানে নামায পড়া মকরূহ।

  • নামাযের মধ্যে হাত উঠিয়ে ইশারা করে কাউকে সালামের জওয়াব দেওয়া মাকরূহ। মুখে সালামের জওয়াব দিলে নামায নষ্ট হয়ে যাবে।
  • নামাযের মধ্যে ধুলা বালুর ভয়ে কাপড় গুটানো বা সামলানো মাকরূহ।
  • যে স্থানে এরূপ আশঙ্কা হয় যে, হয়ত কেউ নামাযের মধ্যে হাসিয়ে দিবে, বা মন এদিক ওদিক চলে যাবে, বা লোকের কথা-বার্তায় নামাযে ভুল হয়ে যাবে, সেরূপ স্থানে নামায পড়া মকরূহ।
  • কেউ কথা বার্তা বলছে বা কোন কাজ করছে, তার পিটের দিকে মুখ ফিরিয়ে নামায পড়া মাকরূহ না, কিন্ত আশেপাশে অন্য কোনো জায়গা  থাকলে এরূপ স্থানে নামায ‍শুরু করা উচিত না। কারণ, হয়ত তার উঠে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে এবং নামাযের কারণে যেতে না পারায় বিরক্তি বা কষ্ট অনুভব করতে পারে বা তার কোন ক্ষতি হয়ে যেতে পারে বা হয়ত সে জোরে কথাবার্তা শুরু করে দিতে পারে এবং সে কারণে নামাযে ভুল হতে পারে। কারও মুখের দিকে মুখ করে নামায পড়া মাকরূহ।


  • সামনে কোরআন শরীফ (বাতি, লন্ঠন) বা তলোয়ার টাঙ্গানো থাকলে তাতে নামায পড়া মাকরূহ হয় না (অন্ধকার ঘরে নামায পড়া মাকরূহ না)।
  • ছবিওয়ালা জায়নামায রাখা মাকরূহ এবং ঘরে ছবি রাখা কঠিন গোনাহ (অবশ্য যদি কোনখানে পাক বিছানায় ছবি থাকে এবং তার উপর নামায পড়ে, তবে নামায হয়ে যাবে, কিন্ত ছবির উপর সেজদা করা যাবে না (পা রাখবে)। ছবির উপর সেজদা করলে নামায মাকরূহ হবে।
  • নামাযীর সামনে বা উপরে অর্থাৎ ছাদ বা বারান্দায় বা ডান কি বামে যদি ছবি থাবে, তবে নামায মাকরূহ হবে। (পিছনের দিকে ছবি থাকলেও মকরূহ হবে)। পায়ের নিচে ছবি থাকলে মাকরূহ হবে না। ছবি যদি এত ছোট হয় যে, দাঁড়ালে দেখা যায় না, কিংবা ছবি পূর্ণাঙ্গ না বরং মাথা কাটা এবং অস্পষ্ট তবে এতে কোন দোষ নাই। তা যেদিকেই থাকুক নামায মাকরূহ হবে না।
  • প্রাণীর ছবিওয়ালা কাপড় পরে নামায পড়া মাকরূহ।

  • বৃক্ষ-লতা, দালান কোঠা ইত্যাদি অচেতন পদার্থের ছবি মাকরূহ না।
  • নামাযের মধ্যে আয়াত, সূরা বা তসবীহ আঙ্গুলে গণনা করা মাকরূহ। ‍যদি হিসাব শুধু আঙ্গুল টিপে ঠিক রাখে, তবে মাকরূহ হবে না।
  • প্রথম রাকাআত অপেক্ষা দ্বিতীয় রাকাআত (তিন আয়াত বা ততোধিক পরিমাণ) লম্বা করা মাকরূহ।
  • কোন নামাযের কোন সূরা এমনভাবে নির্দিষ্ট করে লওয়া যে, কখনও সেই সূরা ছাড়া অন্য সূরা পড়বে না, এরূপ করা মাকরূহ্।
  • কাঁধের উপর রুমাল (বা অন্য কোন কাপড় ) ঝুলিয়ে রেখে নামায পড়া মাকরূহ।
  • (ভাল লোকের সমাজে যেতে লজ্জা বোধ এমন) অত্যন্ত খারাপ ও ময়লা কাপড় পড়ে নামায পড়া মাকরূহ্। অবশ্য যদি অন্য কাপড় না থাকে, তবে মাকরূহ হবে না। (কনুইর উপর আস্তিন গুটিয়ে নামায পড়া মাকরূহ্।)

  • টাকা, পয়সা, সিকি, দুয়ানি ইত্যাদি বা অন্য কোন জিনিস মুখের মধ্যে চাপিয়া রেখে নামায পড়া মাকরূহ্। যদি এমন কোন জিনিস হয়, যাতে কোরআন পড়া যায় না, তবে নামাযই হবে না।
  • পেশাব, পায়খানা বা বায়ু চাপিয়ে রেখে নামায পড়া মাকরূহ।
  • বেশী ক্ষুধার সময় খানা তৈয়ার থাকলে খানা খেয়ে তারপর নামায পড়বে, নতুবা (খাইবার চিন্তায়) নামায মাকরূহ হয়ে যাবে। অবশ্য যদি নামাযের ওয়াক্ত চলে যাওয়ার মত হয় বা জামাআত ছুটে যাওয়ার ভয় হয়, তবে নামায আগে পড়ে নিতে হবে।
  • চোখ বন্ধ করে নামায পড়া ভাল না। কিন্ত যদি চক্ষু বন্ধ করে নিলে দিল ঠিক হয়, তবে চক্ষু বন্ধ করে নামায পড়া দোষ নাই।

  • (নামাযের মধ্যে হাই তোলা মাকরূহ) বিনা জরুরথে থুথু ফেলা বা নাক ঝাড়া োকরূহ্। যদি ঠেকা পড়ে, তবে থুথু বা সিকনি কাপড়ের কোণে নিয়ে মুছে  ফেলবে, নামায নষ্ট হবে না। কিন্ত ডান দিকে বা ক্বেবলার ‍দিকে জায়গা থাকলেও সে দিকে থুথু ফেলা যাবে না। বাম দিকে থুথু ফেলে দিতে হবে।
  • নামাযের মধ্যে মশা, পিঁপড়া, উকুন বা ছারপোকায় কামড়ালে সেগুলোকে মারা ভাল নয়, আস্তে হাত দিয়া তাড়িয়ে দিবে এবং না কামড়ালে হাত দিয়ে তাড়ানও মাকরূহ। (এইসব মেরে মসজিদে ফেলা মাকরূহ। যদি কষ্ট দেয়, তবে মেরে বাইরে ফেলে দিবে)।
  • ফরয নামাযে বিনা জরুরতে দেওয়াল, খুঁটি বা অন্য কোন জিনিসের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ানো মাকরূহ।

  • (কোন কোন লোক এত তাড়াতাড়ি নামায পড়ে যে) সূরা খতম হওয়ার দুই এক ফরয বাকী থাকতেই রূকুতে চলে যায় এবং ঐ অবস্থায় সূরা খতম হয়, এইরূপ করা মাকরূহ।
  • পায়ের জায়গা হতে সেজদার জায়গা যদি আধ হাত উঁচু হয়, তবে নামায দুরূস্ত হবে না, যদি আধ হাত বা আধ হাতের চেয়ে কম উঁচু হয়, তবে নামায হয়ে যাবে, কিন্ত বিনা জরূরতে এরূপ করা মাকরূহ্।

তথ্যসূত্র

x

tiltony.com
tiltony.comhttp://www.tiltony.com
তিলটনি.কম একটি বাংলা ব্লগ সাইট। সঠিক, নির্ভরযোগ্য ও পূর্ণ তথ্য সমৃদ্ধ কনটেন্ট প্রকাশ করার উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ওয়েবসাইটটি।বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ‣ শিক্ষা ‣ স্বাস্থ্য ‣ জীবনযাপন ‣ পাঁচমিশালি ‣ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও সংবাদ পেতে ভিজিট করুন।
RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments