Saturday, May 4, 2024
Homeশিক্ষাওহী বলতে কি বুঝায়? ওহী ভিত্তিক ধর্মসমূহ ও ওহী ছাড়া ধর্মসমূহের সংক্ষিপ্ত...

ওহী বলতে কি বুঝায়? ওহী ভিত্তিক ধর্মসমূহ ও ওহী ছাড়া ধর্মসমূহের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিন।

প্রশ্ন: ওহী বলতে কি বুঝায়? ওহী ভিত্তিক ধর্মসমূহ ও ওহী ছাড়া ধর্মসমূহের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিন। বিষয়: IST-511 : Study of Religions (Islam, Buddhism, Hinduism, Judaism, Christianity) কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)



ভূমিকা

সাধারণ অর্থে গোপনে কোনো ব্যক্তির নিকট কোন সংবাদ পাঠানোকে ওহী বলে। বিশেষ অর্থে মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নবী-রাসুলগণের কাছে পাঠানো সংবাদকে ওহী বলা হয়। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়, হযরত জিবরাঈল (আঃ) এর মাধ্যমে আল্লাহর বাণী বা বার্তা নবী রাসূলগণের নিকট পাঠানোকে ওহী বলা হয়।

ওহী কাকে বলে

ওহী আরবি শব্দ। এটি বাবে দারাবা হতে ব্যবহৃত হয়। যার অর্থ হচ্ছে ইঙ্গিত করা, প্রেরণ করা, গোপনে জানিয়ে দেওয়া ইত্যাদি। পরিভাষায়, নবী-রাসূলদের উপর আল্লাহ তায়ালার অবতারিত বাণীকে ওহী বলে। গোপনে আল্লাহ প্রদত্ত নবী রাসূলদেরকে কোন কিছু জানানোর নামি ওহী।

ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়, জিব্রাইল আলাইহিস সালাম এর মাধ্যমে নবী-রাসূলগণের নিকট পাঠানো প্রত্যাদেশ-ই ওহী। মুজামুল ওয়াসিত অভিধানে বলা হয়েছে, নবীদের উপর আল্লাহ তায়ালার অবতারিত বাণী-ই ওহী।

পবিত্র আল কোরআনের সূরা নিসা-এর ১৬৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,

۠   اِنَّاۤ اَوْحَیْنَاۤ اِلَیْکَ کَمَاۤ اَوْحَیْنَاۤ اِلٰی نُوْحٍ وَّالنَّبِیّٖنَ مِنْۢ بَعْدِهٖ ۚ وَاَوْحَیْنَاۤ اِلٰۤی اِبْرٰهِیْمَ وَ اِسْمٰعِیْلَ وَ اِسْحٰقَ وَیَعْقُوْبَ وَالْاَسْبَاطِ وَعِیْسٰی وَاَیُّوْبَ وَیُوْنُسَ وَهٰرُوْنَ وَسُلَیْمٰنَ ۚ وَاٰتَیْنَا دَاوٗدَ زَبُوْرًا ﴿۱۶۳﴾

অর্থ: (হে নবী!) আমি তোমার প্রতি ওহী নাযিল করেছি, যেভাবে নাযিল করেছি নূহ ও তার পরবর্তী নবীগণের প্রতি এবং আমি ওহী নাযিল করেছিলাম ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব, (তাদের) বংশধরগণ, ঈসা, আইয়ুব, ইউনুস, হারুন ও সুলাইমানের প্রতি। আর দাঊদকে দান করেছিলাম যাবূর। 

ওহী ভিত্তিক ধর্ম ও ওহী ছাড়া ধর্মসমূহের বর্ণনা

পৃথিবীতে বর্তমানে ১০ হাজারেও বেশি সংখ্যক ধর্মের অস্তিত্ব রয়েছে। যদিও এগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই অঞ্চল ভিত্তিক ধর্ম। যেগুলোর অনেক ধর্মই রয়েছে যার অনুসারী সংখ্যা অত্যন্ত নগন্য। তবে পৃথিবীতে প্রধান ধর্ম রয়েছে চারটি। যথা- ইসলাম, খ্রিস্টধর্ম,  হিন্দুধর্ম ও বৌদ্ধধর্ম। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯২% মানুষ এই চারটি ধর্মের যেকোনো একটি অনুসরণ করে। বাকী ৮% মানুষ অন্যান্য ৯ হাজারেও বেশি ধর্ম অনুসরণ করে।

পৃথিবীর প্রধানতম চারটি ধর্মের মধ্যে একমাত্র ইসলাম ধর্মই ওহী ভিত্তিক ধর্ম। যে ধর্ম মহান আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক প্রেরিত পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআনের মাধ্যমে সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম) এর মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র আল কোরআনের সূরা শুরা এর ৫১ নম্বর আয়াতে বলেন,

وَ مَا کَانَ لِبَشَرٍ اَنْ یُّکَلِّمَهُ اللهُ اِلَّا وَحْیًا اَوْ مِنْ وَّرَآیِٔ حِجَابٍ اَوْ یُرْسِلَ رَسُوْلًا فَیُوْحِیَ بِاِذْنِهٖ مَا یَشَآءُ ؕ اِنَّهٗ عَلِیٌّ حَکِیْمٌ ﴿۵۱﴾

অর্থ: কোন মানুষের এ যোগ্যতা নেই যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন (সামনা সামনি), তবে ওহীর মাধ্যমে (বলতে পারেন) অথবা কোন পর্দার আড়াল থেকে কিংবা তিনি কোন বার্তাবাহী (ফেরেশতা) পাঠিয়ে দেবেন, যে তাঁর নির্দেশে তিনি যা চান সেই ওহীর বার্তা পৌঁছে দেবে। নিশ্চয়ই তিনি অতি উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন, প্রজ্ঞাময়।

এই আয়াতে তিনটি প্রকারের ওহীর কথা বর্ণিত হয়েছে।

  • অন্তরে কোনো কথা প্রক্ষিপ্ত করা (ঢুকিয়ে দেয়া) অথবা স্বপ্নে বলে দেয়া এই প্রত্যয়ের সাথে যে, তা আল্লাহরই পক্ষ হতে।
  • পর্দার আড়াল থেকে সরাসরি কথা বলা। যেমন- মহান আল্লাহর সাথে হযরত মুসা (আলাইহিমুস সালাম)-এর তুর পাহাড়ে কথা হয়েছিল।
  • মালাকের (স্বর্গীয় দূত বা ফেরেশতা) মাধ্যমে ওহী প্রেরণ করা। যেমন- হযরত জিবরীল আমীন ওহী নিয়ে আগমন করতেন এবং নবীদেরকে তা পৌছে দিতেন।

পৃথিবীতে যত বই রয়েছে সেসকল বইয়ে লেখক বইয়ের ভুমিকা লিখে থাকেন। ভূমিকায় বই সম্বন্ধে অনেক কিছু লিখে থাকেন। তার মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় যা প্রতিটি লেখকই লিখে থাকেন, সেটা হলো- এই বইতে অনিচ্ছাকৃত বা অসাবধনতা বশত কোন ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। সে সম্বন্ধে লেখককে অবহিত করা হলে পরবর্তী সংস্করণে তা সংশোধন করে দিবেন। এই ধরণের একটি কথা প্রায় প্রতিটি বইয়ের লেখকই লিখে থাকেন। সে ক্ষেত্রে ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআন একেবারেই অনন্য। এই কিতাবের লেখক মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের-ই সূরা বাকারা এর ২ নম্বর আয়াতে নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন এর মধ্যে কোন ভুল বা সন্দেহ নাই।

ذٰلِکَ الْکِتٰبُ لَا رَیْبَ ۚۖۛ فِیْهِ ۚۛ هُدًی لِّلْمُتَّقِیْنَ ۙ﴿۲﴾

অর্থ: এটি এমন কিতাব, যার মধ্যে কোনও সন্দেহ নেই। এটা হিদায়াত এমন ভীতি অবলম্বনকারীদের জন্য।

যে কিতাবের মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম প্রচারিত হয়েছে সেটা কোন মানুষের লেখা কিতাব নয়। অর্থাৎ ইসলাম ধর্ম ওহীর ধর্ম- এই কথা উপরোক্ত আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্ট বোঝা যায়।

পৃথিবীর অন্য কোন ধর্মে এমন স্পষ্টভাবে সেই গ্রন্থ বা ধর্ম সম্পর্কে উল্লেখ করা নেই। ফলশ্রুতিতে স্পষ্টভাবেই বোঝায় যায় কোনটি ওহী ভিত্তিক ধর্ম আর কোনগুলো ওহী ছাড়া ধর্ম।

পবিত্র কোরআনে সূরা ক্বাসাস এর ০৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَ اَوْحَیْنَاۤ اِلٰۤی اُمِّ مُوْسٰۤی اَنْ اَرْضِعِیْهِ ۚ فَاِذَا خِفْتِ عَلَیْهِ فَاَلْقِیْهِ فِی الْیَمِّ وَ لَا تَخَافِیْ وَلَا تَحْزَنِیْ ۚ اِنَّا رَآدُّوْهُ اِلَیْکِ وَ جَاعِلُوْهُ مِنَ الْمُرْسَلِیْنَ ﴿۷﴾

অর্থ: আমি মূসার মায়ের প্রতি ইলহাম করলাম, তুমি তাকে দুধ পান করাতে থাক। যখন তার ব্যাপারে কোন আশঙ্কা বোধ করবে তখন তাকে নদীতে ফেলে দিও। আর ভয় পেও না ও দুঃখ করো না। বিশ্বাস রেখ, আমি অবশ্যই তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব এবং তাকে রাসূলগণের মধ্য হতে একজন রাসূল বানিয়ে দেব।

উক্ত আয়াতে হযরত মুসা (আলাইহিস সালাম) এর জননীর অন্তরে আল্লাহ্ তায়ালা নির্দেশ পৌছে দিয়েছেন যেন তাকে দরিয়ায় ভাসিয়ে দেয়। তবে এখানে যে অর্থে কুরআনে নবুওয়তের ওহী ব্যবহার হয়েছে সে অর্থের ওহী হওয়া বাধ্যতামূলক নয়।

ওহী সম্পর্কে আল্লামা শফি উসমানী তার বিখ্যাত কিতাব মারেফুল কুরআনের ভূমিকায় বলেন,

“আল্লাহ তায়ালা থেকে মানবজাতি তিনটি মাধ্যমে শিক্ষা লাভ করে- ইন্দ্রিয়, বিবেক এবং ওহীর মাধ্যমে। যার শেষটি শুধুমাত্র নবী রাসুলগণ পেয়ে থাকে। হেদায়াত দানের উদ্দেশ্যে আল্লাহ যুগে যুগে নবী রাসুল প্রেরণ করেছেন, যার প্রথম ছিলেন আদম (আলাইহিস সালাম) আর সর্বশেষ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম)। আর ওহীর মাধ্যমে আল্লাহ বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে তার বাণী নবী রাসুলদের কাছে অবতীর্ণ করেন। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম) শেষ রাসুল বিধায় পৃথিবীতে আর কোনো ওহী আসবে না।”

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, হারিস ইবনে হিশাম (রা.) আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহর রাসুল! আপনার নিকট ওহী কিরূপে আসে?” আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, “কোনো কোনো সময় তা ঘণ্টা বাজার মত আমার নিকট আসে। আর এটি-ই আমার উপর সবচেয়ে বেদনাদায়ক হয় এবং তা শেষ হতেই মালাক (ফেরেশতা) যা বলেন তা আমি মুখস্থ করে নেই, আবার কখনো মালাক মানুষের রূপ ধারণ করে আমার সাথে কথা বলেন। তিনি যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে নিই।” আয়েশা (রা.) বলেন, আমি তীব্র শীতের সময় ওহী নাযিলরত অবস্থায় তাঁকে দেখেছি। ওহী শেষ হলেই তাঁর কপাল থেকে ঘাম ঝরে পড়তো।

উপসংহার

ওহী হলো আল্লাহর নির্দেশ। পৃথিবীতে একমাত্র ইসলাম ধর্মই একমাত্র ওহীর ধর্ম। পৃথিবীতে শান্তি আনয়ন এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনে মুক্তি লাভের জন্য একমাত্র ইসলাম ধর্মই সঠিক ধর্ম। যা পৃথিবীর শেষ সময় পর্যন্ত অবিকৃতভাবে ঠিকে থাকবে।



সম্ভাব্য প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ (এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ)

• IST-507 : Study of Al-Hadith (Al-Mishkat Al-Masabih: Al-Iman, AlILM and Al-Salat (Selected Hadith) • IST-508 : Principles and History of Hadith literature • IST-509 : Muslim Personal Law and Law of Inheritance in Islam • IST-510 : Banking and Insurance in Islam • IST-511 : Study of Religions (Islam, Buddhism, Hinduism, Judaism, Christianity) • IST-512 : Muslim Contribution to science and technology

x

tiltony.com
tiltony.comhttp://www.tiltony.com
তিলটনি.কম একটি বাংলা ব্লগ সাইট। সঠিক, নির্ভরযোগ্য ও পূর্ণ তথ্য সমৃদ্ধ কনটেন্ট প্রকাশ করার উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ওয়েবসাইটটি।বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ‣ শিক্ষা ‣ স্বাস্থ্য ‣ জীবনযাপন ‣ পাঁচমিশালি ‣ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও সংবাদ পেতে ভিজিট করুন।
RELATED ARTICLES

1 COMMENT

Comments are closed.

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments