Friday, May 17, 2024
Homeশিক্ষাচিকিৎসা বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান আলোচনা করুন।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান আলোচনা করুন।

প্রশ্ন: চিকিৎসা বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান আলোচনা করুন। বিষয়: IST-512 : Muslim Contribution to Science and Technology কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)



ভূমিকা

চিকিৎসাশাস্ত্র মানব সভ্যতার প্রাচীনতম শাস্ত্র। মানুষ সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই চিকিৎসাশাস্ত্রের সূচনা। মানবজীবনের সাথে এই চিকিৎসার একটা প্রাকৃতিক যোগ। সুস্থ মানুষ থাকলে সুস্থ পৃথিবী গড়ে উঠবে, সুস্থ পৃথিবীর দ্বারা পরিচালিত হবে নির্মল জীবনাচার। তাই প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ রোগ নিরাময়ের জন্য বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করে আসছে। এই শাস্ত্রে অবদান রেখেছেন অনেক মুসলিম চিকিৎসাবিদ। যাদের আবিষ্কারের সূত্র ধরেই বর্তমান চিকিৎসাবিজ্ঞান এগিয়েছে, হয়েছে আধুনিক। বলা যেতে পারে তাদের মৌলিক আবিষ্কারের ওপর ভিত্তি করে বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞান এগিয়েছে অনেক দূর।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান আলোচনা করুন।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান

চিকিৎসা শাস্ত্র বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। এই শাখার অগ্রযাত্রা ও উৎকর্ষ সাধনের ক্ষেত্রে মুসলমানদের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসাশাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান বুঝার সুবিধার্থে বিষয়টিকে কয়েকটি পর্যায়ে বিভক্ত করে আলোচনা করা হলো-

চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রাথমিক পর্ব

মুসলিম চিকিৎসাশাস্ত্র প্রধানত দু’টি ধারাকে অবলম্বন করে গড়ে উঠে-পারস্য ও গ্রীক। হারিস বিন কালদাবের মাধ্যমে প্রধানত পারসিক চিকিৎসাধারা এবং উমাইয়া যুগে গ্রীক বিজ্ঞান ও চিকিৎসাধারা মুসলিম সমাজে বিকাশ লাভ করে। মুসলিম মনীষীগণ পবিত্র কুরআন ও হাদীস হতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনুপ্রেরণা লাভ করেন। পবিত্র কুরআনে স্বাস্থ্য বিধানের (Hyginic directions) উপর আলোকপাত করা হয়েছে। মনীষী ইবনে হাযমের মতে চিকিৎসা সংক্রান্ত উপরোক্ত প্রশস্ত ও দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞান।


🡺 আপডেট তথ্য পেতে সাইবস্ক্রাইব করে রাখুন গুগল নিউজে

উমাইয়া যুগে চিকিৎসা বিজ্ঞান

উমাইয়া যুগে মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রাথমিক ধারা সূচিত হয়। এ সময় ইবনে বাত্তাল, মাসার যাওয়াইয়াহ প্রমুখ চিকিৎসাবিদগণ একাধিক চিকিৎসা বিষয়ক গ্রন্থ আরবীতে অনুবাদ করেন। খলীফা দ্বিতীয় ওমর আলেকজান্দ্রিয়া হতে মেডিক্যাল স্কুল ও চিকিৎসকদের ইরাকে স্থানান্তর করেন। এর ফলে মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রভূত কল্যাণ সাধিত হয়। খলীফা ইয়াযীদের পুত্র খালিদ চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় শরীক হয়।

আব্বাসীয় যুগে চিকিৎসা বিজ্ঞান (৭৫০-১২৫৮)

আব্বাসীয় শাসনামলেই মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞান উন্নতির স্বর্ণ শিখরে পৌঁছে। আব্বাসীয় যুগে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রাকে দুটি পর্যায়ে বিভক্ত করা যেতে পারে- (ক) অনুবাদ যুগ এবং (খ) মৌলিক অবদানের যুগ।

অনুবাদের যুগ

খলীফা মামুন প্রতিষ্ঠিত ‘বায়তুল হিকমার’ অনুবাদ বিভাগের প্রধান হুনায়ন বিন ইসহাক চিকিৎসা বিজ্ঞানী হিপোক্রেটিস, গ্যালেন ও ডায়োসকিউরাইডিসের ‘ম্যাটেরিয়া মেডিকা’ অনুবাদ করেন। মুসলিম ভেষজ বিজ্ঞানে-এর প্রভাব অপরিসীম। হুনায়নের পুত্র ইসহাক এবং ভ্রাতু[[ত্র হুবায়স মিলে তেরটি সিরীয় এবং ষাটটি আরবী গ্রন্থ তরজমা সম্পন্ন করেন। এছাড়াও হুনায়নের ৯০ জন বিজ্ঞ শিষ্য অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে অনেক উল্লেখযোগ্য অনুবাদ কার্য সম্পন্ন করেন । অনুবাদকগণ তরজমা ছাড়াও বিভিন্ন সারসংক্ষেপ ও প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে প্রাচীন চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিষয়বস্তু পাঠকদের সামনে তুলে ধরেন। এসব চিকিৎসা বিষয়ক ঐতিহ্য ও গ্রন্থাবলী মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। পরে তা ইউরোপে প্রসার লাভ করে।



মৌলিক অবদানের যুগ

যে সমস্ত মুসলিম চিন্তাবিদ ও মনীষীগণ চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা ও উন্নতির ক্ষেত্রে মৌলিক অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন-

  • আত-তাবারী: চিকিৎসা বিজ্ঞানী আত-তাবারীর চিকিৎসা বিষয়ক বিশ্বকোষ ‘ফিরদৌস আল হিকমা’ ছিল আরবীতে লিখিত সর্বপ্রাচীন চিকিৎসা গ্ৰন্থ।
  • আল-রাযী: সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞানী আল রাযীর প্রায় ২০০ শত গ্রন্থের মধ্যে ৬০টি ছিল চিকিৎসা বিজ্ঞান বিষয়ক। তিনি মূত্রথলী ও বৃক্কে পাথরের বিষয়ে বই লিখেন। জলবসন্ত ও হাম সম্পর্কে তাঁর সুবিখ্যাত গ্রন্থ ‘আলি জুদারী, আল-হাসবাহ’ ল্যাটিন ও ইংরেজিসহ অনেক ভাষায় বহুবার অনূদিত হয়। তিনিই সর্বপ্রথম বসন্ত ও হামের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য নির্ণয় এবং তাদের লক্ষণ ও উপসর্গের যথাযথ বর্ণনা দেন। ইংরেজি ও ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত আল রাযীর এসব গ্রন্থ বহু শতাব্দী ধরে পাশ্চাত্যের চিকিৎসা বিজ্ঞানে অভূতপূর্ব প্রভাব বিস্তার করেছিল।
  • আলী ইবনে আব্বাস আল-মাজুসী: এ চিকিৎসা বিজ্ঞানী ‘কিতাব আল মালিকী’ নামক গ্রন্থে চিকিৎসা বিজ্ঞানের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক দিক সম্পর্কে বিস্তারিত আলাপ করেন। ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত এ বইটিও পাশ্চাত্যে ব্যাপক প্রচলিত ছিল।
  • ইবনে সিনা: মুসলিম বিজ্ঞানী ইবনে সিনার চিন্তা ও কর্মে মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞান পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়। পাঁচ খণ্ডে সমাপ্ত তাঁর চিকিৎসা বিশ্বকোষ ‘আল-কানূন ফিত তিব্ব’-এ ৭৬০টি ঔষধের নাম রয়েছে। দ্বাদশ শতাব্দী থেকে সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত এ গ্রন্থটি পাশ্চাত্য জগতে চিকিৎসাবিদ্যার প্রধান পাঠ্য ও অবলম্বন ছিল।
  • আলী ইবনে ঈসা ও আম্মার: চক্ষু বিশেষজ্ঞ ঈসার ‘আককিরা আল-কাহহালীন’ এবং আম্মার এর ‘আল মুনতাখাব ফি ইলাজ আল-আইন’ গ্রন্থদ্বয় ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয়ে অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত পাশ্চাত্যে চক্ষু চিকিৎসা বিদ্যার পাঠ্য হিসেবে প্রচলিত ছিল। আম্মার গ্রন্থে ১৩০ রকমের চক্ষু রোগ ও তার চিকিৎসার উল্লেখ রয়েছে।


  • হুনায়েন বিন ইসহাক: হুনায়েন বিন ইসহাক তাঁর চক্ষু বিষয়ক গ্রন্থে চক্ষুর গঠন, চক্ষুর সঙ্গে মস্তিষ্কের সংযোগ রক্ষাকারী স্নায়ু, চক্ষুর বিভিন্ন রোগ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন।
  • আবুল কাসিম আয যাহরাবী: সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলিম শল্য চিকিৎসক স্পেনের আবুল কাশিম আয-যাহরাবী ‘আত তাসীফ’ গ্রন্থে রোগ নির্ণয়, অপারেশন পদ্ধতি এবং অপারেশনের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ছবি সম্বলিত বিবরণ দিয়েছেন।

ভেষজ বিজ্ঞান

ভেষজ বিজ্ঞানেও মুসলমানদের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরাই প্রথম ভেষজ বিজ্ঞানের বই রচনা করেন। তাঁরা ঔষধ তৈরির কারখানা এবং ঔষধের দোকান প্রতিষ্ঠা করেন। আল-বিরুনীর ‘কিতাব আস-সায়দালা’ এবং ইবনে যুহরের ‘তারানী’ ঔষধ বিষয়ক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। ইবনে আল বায়তারের ‘সহজ ঔষধ ও খাদ্য সমাহার’ নামক গ্রন্থে ১৪০০ শত ঔষধের উল্লেখ রয়েছে।

মুসলমানগণ যৌগিক ঔষধ সম্পর্কেও বহু মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন। গ্রীক, সিরিয়া ও মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের জীবনী ও রচনা সম্বলিত ইবনে আল কিফতীর ‘তারীখ আল-হুকামা’ চিকিৎসা বিজ্ঞানের জগতে অমূল্য সম্পদ।



হাসপাতাল ও গবেষণাগার

মুসলিম খলীফাগণ চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ব্যবহারিক জ্ঞান চর্চার স্বার্থে অনেক উন্নতমানের গবেষণাগার ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। হাসপাতালগুলোতে রুগীর পরিচর্যার সাথে সাথে চিকিৎসার তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল। ছিল তৎসংলগ্ন উন্নতমানের গ্রন্থাগার। প্রশিক্ষণ এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ‘সনদপত্র’ প্রদান করা হতো।

উপসংহার

মানব সভ্যতার বিকাশে শিল্প, সাহিত্য, দর্শন, আইন, জ্যোতির্বিদ্যাসহ নানা বিষয়ে মুসলিমদের অবদান প্রশংসার যোগ্য। চিকিৎসাশাস্ত্র তার ব্যতিক্রম নয়। এই শাস্ত্র সমৃদ্ধ হয়েছে মুসলিমদের অবদান নিয়ে। সভ্যতার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা পদ্ধতিতেও লক্ষ করা গেছে ব্যাপক পরিবর্তন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই পরিবর্তনে মুসলমানদের অবদান অতুলনীয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানী ইবনে যুহরের ‘আল-ইকতিসাদ’ এবং ইবনে রুশদের ‘কুল্লিয়্যাত’ প্রভৃতি গ্রন্থাবলী চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সংযোজন। এছাড়াও আল-খাতিক ব্যাধির সংক্রমণ বিষয় এবং ইবনে খাতিমা প্লেগের বিস্তার সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রদান করেন।



সম্ভাব্য প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ (এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ)

• IST-507 : Study of Al-Hadith (Al-Mishkat Al-Masabih: Al-Iman, AlILM and Al-Salat (Selected Hadith) • IST-508 : Principles and History of Hadith literature • IST-509 : Muslim Personal Law and Law of Inheritance in Islam • IST-510 : Banking and Insurance in Islam • IST-511 : Study of Religions (Islam, Buddhism, Hinduism, Judaism, Christianity) • IST-512 : Muslim Contribution to science and technology

x

tiltony.com
tiltony.comhttp://www.tiltony.com
তিলটনি.কম একটি বাংলা ব্লগ সাইট। সঠিক, নির্ভরযোগ্য ও পূর্ণ তথ্য সমৃদ্ধ কনটেন্ট প্রকাশ করার উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ওয়েবসাইটটি।বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ‣ শিক্ষা ‣ স্বাস্থ্য ‣ জীবনযাপন ‣ পাঁচমিশালি ‣ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও সংবাদ পেতে ভিজিট করুন।
RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments