Friday, May 17, 2024
Homeশিক্ষাইতিহাস শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান আলোচনা করুন।

ইতিহাস শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান আলোচনা করুন।

প্রশ্ন: ইতিহাস শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান আলোচনা করুন। বিষয়: IST-512 : Muslim Contribution to Science and Technology কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)



ভূমিকা

ইতিহাস অতীত ঘটনাবলীর উজ্জ্বল প্রতীক। ইতিহাস অতীতের দর্পণ। ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে বিশ্বের কোন জাতির মধ্যেই ধারাবাহিকভাবে ইতিহাস সংকলনের প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়নি। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আগমনের পর হতেই মুসলমানদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইতিহাস রচনার অনুপ্রেরণা দেখা দেয়। মহানবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিচিত্র কর্মমুখর জীবনের নানা খুঁটিনাটি বিষয় জানার আগ্রহ এবং হাদীস চর্চা করতে গিয়েই ইতিহাস চর্চার উন্মেষ ঘটে। লৌকিক উপাদান, প্রাক ইসলামী আরবের কাহিনী, কুরআনে প্রাচীন জাতির ইতিবৃত্ত, মহানবীর জীবনবৃত্তান্ত, হাদীস সংগ্রহ করতে গিয়ে বর্ণনাকারীদের জীবন চরিত-ই ছিল মুসলমানদের ইতিহাসের মূল উৎস। ইতিহাসে মুসলমানদের অবদান চির বিস্ময়কর ঘটনা।

ইতিহাস শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান আলোচনা করুন।

মুসলিম ইতিহাস রচনার সূচনা পর্ব

ইলমুত্ তারীখ (ইতিহাস বিদ্যা) আল খাওয়ারিযমীর মতে, ধর্মীয় বিদ্যার অন্তর্গত। মুসলমানরা জীবন চরিতকেও ইতিহাসের অনুসঙ্গী হিসেবে দেখেছেন। মহানবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মৃত্যুর পর তাঁর জীবনী ও জীবন বিধানকে সঠিকভাবে সংকলিত করার উদ্দেশ্যেই পটভূমি রচিত হয়েছিল। পবিত্র কুরআন শরীফ এবং রাসূলুল্লাহর জীবনের ঐতিহাসিক কাহিনীর ব্যাপকতা মুসলমানদেরকে ইতিহাস পাঠ ও রচনায় উৎসাহিত করে। যে সকল মনীষী মহানবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হাদীস সংগ্রহ করেছিলেন, তাঁরাই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জীবনী ভিত্তিক ইতিহাস সংকলনকারী। প্রখ্যাত প্রাচ্যবিদ মার্গোলিওথ আরব ইতিহাস বিদ্যার তিনটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন।

  1. আরবদের ইতিহাস চর্চা অপরাপর জ্ঞান-বিজ্ঞানের মতো গ্রীক বা অন্য বিদেশী জ্ঞান দ্বারা প্রভাবিত হয়নি। তাদের ইতিহাস চর্চা নিজস্ব প্রয়োজনে নিজেদের মধ্যেই উৎপত্তি ও বিকাশ লাভ করেছে।
  2. ধর্মচর্চা ও দেশপ্রেম মুসলিম ঐতিহাসিকদের ইতিহাস চর্চায় উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা যোগালেও পক্ষপাতিত্বহীনতা ছিল এর প্রধান বৈশিষ্ট্য।
  3. আরব ঐতিহাসিকগণ তাঁদের ইতিহাসে সন, মাস ও দিনকাল উল্লেখপূর্বক ঘটনাবলীর বর্ণনা করে ইতিহাসের ধারাবাহিকতা রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।

ইতিহাস চর্চার ক্রমবিকাশ

নিম্নে মুসলমানদের ইতিহাস চর্চার ক্রমবিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দী

হিজরী দ্বিতীয় শতকে মুসলিম ইতিহাস রচনায় বিশেষ অগ্রগতি সাধিত হয়। এসময় ঐতিহাসিক হিশাম পশ্চিম ইরাকী (আল-হেরা) অঞ্চলের প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে বহু গ্রন্থ রচনা করেন। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘কিতাব- আল-আসলাম’ মিসরে প্রকাশিত হয়। এসময় থেকেই হযরত মুহাম্মাদ (স) কর্মময় জীবনের বিভিন্ন ঘটনাবলীসহ ঐতিহাসিক তথ্যাদির সত্যতা যাচাই-বাছাই করার লক্ষ্যে ‘ইসনাদ’ পদ্ধতির আশ্রয় গ্রহণ করে মুসলিম মনীষী ও ইতিহাসবিদগণ ইতিহাস রচনার প্রাথমিক পর্যায়ে একটি বিজ্ঞানসম্মত ইতিহাস রচনায় উদ্যোগী হয়।


কবিতার আসর ❑ হাজারো কবিতা

হিজরী তৃতীয় শতাব্দী

তৃতীয় হিজরী শতক (৮১৫-৯১২) সকল প্রকারের মুসলিম সাহিত্য ও ইতিহাস চর্চার উপযুক্ত সময় ছিল। এ যুগে মুসলমানগণ ধারাবাহিক ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। দুটি যুগান্তকারী ঘটনা এসময় সাহিত্য ও সংস্কৃতির উন্নতিতে গতিবেগ সঞ্চার করে।

প্রথমত, নবম শতাব্দী ছিল মুসলিম বিশ্বে এক অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির যুগ। এ যুগের ইতিহাসবিদদের মধ্যে মুহাম্মাদ ইবনে জারীর আত-তাবারী, ইবনে কুতায়বা, বালাযুরী, আহমদ ইবনে আবি তাহির, আবূ হানীফা, ইয়াকুবী প্রমুখ ছিলেন প্ৰধান।

দ্বিতীয়ত, ধারাবাহিক ইতিহাস রচনার পদ্ধতি ঐতিহাসিক তাবারীর লেখায় পরিপূর্ণতা লাভ করে। তাঁর ইতিহাস বিশ্ব ইতিহাসের আঙ্গিকে লেখা। ‘তারিখ-অর-রাসূল ওয়াল মুলূক’ গ্রন্থে তাবারী হযরত আদম-হাওয়া (আ) থেকে ৩০২ হিজরী সময় পর্যন্ত সামগ্রিক ইতিহাস ধারাবাহিক ও বর্ষভিত্তিতে লিপিবদ্ধ করেছেন।

ঐতিহাসিক বালাযুরী ‘ফুতূহ-আল-বুলদান’ গ্রন্থে মুসলমানদের রাজ্য জয় সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তাঁর সন-তারিখ ছিল মোটামুটি নির্ভুল।

হিজরী চতুর্থ শতাব্দী

চতুর্থ হিজরী শতকে সমসাময়িক ইতিহাস রচনার দায়ভাগ সচিব ও কাতিব শ্রেণীর হাতে চলে যাওয়ার ফলে ইতিহাসের আঙ্গিক, বিষয়বস্তু ও উদ্দেশ্য অনেকটা পরিবর্তিত হয়। এ পর্যায়ে প্রাচীন ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি ইতিহাসকে যে উদারতা ও মর্যাদায় ভূষিত করেছিল, তা পরিত্যক্ত হয় এবং ক্রমাগত শাসক ও রাজদরবারের কেচ্ছাকাহিনী ইতিহাসের উপজীব্য হয়ে দাঁড়ায় । এ যুগের ঐতিহাসিকদের মধ্যে আল-মাসুদী, হামযা আল-ইস্পাহানী, সাবিত বিন সিনান, মুহাসিন ইবনে আলী আত- তানুখী, ইব্রাহীম ইবনে হিলাল আস-সাবী, মিসকাওয়াহ প্রমুখ ছিলেন প্রধান হামযা লিখিত পৃথিবীর প্রাচীন ইতিহাস সমৃদ্ধ গ্রন্থ ‘তারিখ সিনীমুলুক আল-আরদ ওয়াল আম্বিয়া’ পাশ্চাত্যে বহুল প্রচলিত। ঐতিহাসিক আল মাসউদীকে ‘আরবদের হিরোডোটাস’ বলা হয়ে থাকে।



মার্গোলিওথের মতে, আরবী ভাষায় ইতিহাস রচনা চরম উৎকর্ষ লাভ করে দশম শতাব্দীতে এবং মিসকাওয়াইহর লেখা ‘আল-মুস্তাযাম’ বারো খণ্ডে লিখিত এবং এতে বর্ষানুক্রমিক কালপঞ্জীর সঙ্গে খ্যাতনামা ব্যক্তিবর্গের মৃত্যুসংবাদ ও জন্ম বৃত্তান্ত স্থান পেয়েছে।

ইসলামের ইতিহাসের প্রকৃতি

ধারাবাহিক বর্ষভিত্তিক ইতিহাস গ্রন্থের পরিপূরক হিসেবে মুসলমানদের মধ্যে দু’ধরনের ইতিহাস রচনার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। একটি হলো জীবনী কোষ ও অপরটি স্থানীয় ইতিহাস। স্থানীয় ইতিহাস রচনার মতো জীবনী ইতিহাস কোষে মুসলমানগণ বিশেষ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। এসবের মধ্যে মুহাদ্দিস, ফকীহ, বিচারক, ভাষাবিদ, কবি-সাহিত্যিক, ব্যাকরণবিদ, দার্শনিক, চিকিৎসক, বৈজ্ঞানিক, বিজেতা, শিল্পী-গায়ক প্রভৃতি জীবনী বিষয়ক গ্রন্থ বিশেষ স্থান পেয়েছে। এসব লেখক ঐতিহাসিকদের মধ্যে আবুল ফারাজ আল ইস্পাহানী, আস-সা’আলিবী, ইবনে খালকান, ইবনে আলকিফতি, ইবনে আবি উসায়বিয়া প্রমুখ ছিলেন প্রধান।

বিশ্বজনীন ইতিহাস রচনা

দ্বাদশ শতাব্দীর শেষভাগে মুসলিম ইতিহাস বিদ্যায় পুনরায় বিশ্ব ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে। একটি সার্বজনীন খিলাফতের আদর্শ পুন: প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা পুনরায় বিশ্ব ইতিহাসের ধারণার জন্ম দেয়। ইবনে আল-আসির ছিলেন বিশ্ব ইতিহাসের সর্বশেষ শ্রেষ্ঠ আরব ঐতিহাসিক। চতুর্দশ ও পঞ্চদশ শতকে মিসরের ঐতিহাসিকদের মধ্যে আল-মাকরাযী, আস-সুয়ূতী, আস-সাখাভী প্রমুখ ছিলেন প্রধান।



ইতিহাসে ইবনে খালদুনের অবদান

ইবনে খালদুন ছিলেন কালজয়ী প্রতিভার অধিকারী। কিতাব-আল-ইবার’ ছিল তাঁর বিখ্যাত বই। তিনটি ভাগে বিভক্ত বইটির প্রথম অংশ ‘মুকাদ্দিমা’ (ভূমিকা); দ্বিতীয় অংশ আরব ও প্রতিবেশী জাতিসমূহের ইতিহাস ও তৃতীয় অংশে উত্তর আফ্রিকার বার্বার ও অন্যান্য মুসলিম রাজবংশের ইতিহাস আলোচিত হয়েছে। খালদুনের জগৎ জোড়া খ্যাতি মুকাদ্দিমার ওপর নির্ভরশীল। এতে তিনি এমন একটি ইতিহাস তত্ত্ব পরিবেশন করেন, যাতে তিনি আবহাওয়া ও ভৌগোলিক পরিবেশ এবং অধিবাসীদের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শক্তিসমূহের উপর গুরুত্বারোপ করেন। পি. কে. হিট্টির মতে, “কোন আরব লেখক, বস্তুত কোন ইউরোপীয় লেখক কখনো যুগপৎ ইতিহাস সম্পর্কে খালদুনের মত এত ব্যাপক ও দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেননি।”

উপসংহার

মুসলমান পণ্ডিতগণ ইতিহাসের উপর যে সমস্ত গ্রন্থ রচনা করেছেন, তা বর্তমান যুগে আমাদের নিকট এক বিস্ময়কর ব্যাপার। যে যুগে কোন পুস্তক ও পরামর্শ করার মত মনীষীর সাক্ষাৎ মিলত না, সে যুগে এ ধরনের গ্রন্থ রচনা প্রকৃতই কৃতিত্বপূর্ণ। বিংশ শতকের শেষার্ধে পৌঁছে ইতিহাস শাস্ত্রের বিজ্ঞানভিত্তিক যে প্রক্রিয়া দেখতে পাই, তা বহু শতাব্দীর বাস্তব প্রতিফলন। আর ইতিহাস লিখন শাস্ত্রের উক্ত ক্রমবিকাশের ধারায় মুসলমানদের অবদান নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ।



সম্ভাব্য প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ (এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ)

• IST-507 : Study of Al-Hadith (Al-Mishkat Al-Masabih: Al-Iman, AlILM and Al-Salat (Selected Hadith) • IST-508 : Principles and History of Hadith literature • IST-509 : Muslim Personal Law and Law of Inheritance in Islam • IST-510 : Banking and Insurance in Islam • IST-511 : Study of Religions (Islam, Buddhism, Hinduism, Judaism, Christianity) • IST-512 : Muslim Contribution to science and technology

x

tiltony.com
tiltony.comhttp://www.tiltony.com
তিলটনি.কম একটি বাংলা ব্লগ সাইট। সঠিক, নির্ভরযোগ্য ও পূর্ণ তথ্য সমৃদ্ধ কনটেন্ট প্রকাশ করার উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ওয়েবসাইটটি।বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ‣ শিক্ষা ‣ স্বাস্থ্য ‣ জীবনযাপন ‣ পাঁচমিশালি ‣ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও সংবাদ পেতে ভিজিট করুন।
RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments