Saturday, May 4, 2024
Homeশিক্ষাভূগোল শাস্ত্রে মুসলিম পন্ডিতদের অবদান বিস্তারিতভাবে লিখুন।

ভূগোল শাস্ত্রে মুসলিম পন্ডিতদের অবদান বিস্তারিতভাবে লিখুন।

প্রশ্ন: ভূগোল শাস্ত্রে মুসলিম পন্ডিতদের অবদান বিস্তারিতভাবে লিখুন। বিষয়: IST-512 : Muslim Contribution to Science and Technology কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)



ভূমিকা

ইসলামের অভ্যুদয় মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক যুগান্তকারী বিপ্লব হিসেবে পরিচিত। ইসলাম শুধু ধর্মীয় সীমারেখার মধ্যে আবদ্ধ নয়। ইসলাম একটি সামগ্রিক ও পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। তাই ইসলামকে কেন্দ্র করে জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সূচিত হয়েছে এক নবতর অধ্যায়। আধুনিক সভ্যতার পথিকৃৎ হিসেবে মুসলিম শিক্ষা ও সভ্যতাকে চিহ্নিত করা হয়। মানবতার বিকাশ, উৎকর্ষ পার্থিব এবং পারলৌকিক মুক্তির জন্যে ইসলামী শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

ভূগোল শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান

ভূগোল শাস্ত্র জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিক্ষা-সভ্যতার একটি অন্যতম শাখা। সমাজ সভ্যতার ক্রমবিবর্তন এবং বিশ্ব প্রকৃতিতে নিরন্তর পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও উত্থান-পতনের সঙ্গে ভূগোল শাস্ত্রের নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। ধর্মীয়, বৈজ্ঞানিক, রাজনৈতিক এবং অজানাকে জানার অদম্য আকাঙ্খাই মুসলমানদেরকে ভূগোল অধ্যয়নে অনুপ্রাণিত করেছিল। পবিত্র হজ্জব্রত পালন, নামাযের জন্য কিবলা নির্ধারণ, অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ নির্ণয়, বিশাল মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় যোগাযোগ স্থাপন, বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যিক পথ ও বাজারের সন্ধানে এবং গ্রীক ও ভারতীয় প্রভাবে মুসলমানগণ ভূগোল চর্চায় মহামূল্যবান অবদান রাখতে সক্ষম হন।



মুসলমানদের ভূগোল চর্চার প্রারম্ভিক পর্ব

বিশ্বের অজানাকে জানার প্রচণ্ড কৌতূহলই মুসলমানদেরকে ভূগোল পাঠে অনুপ্রাণিত করেছে। এই বিষয়ে ঐতিহাসিক পি. কে. হিট্টি বলেন, “পবিত্র অনুষ্ঠান, মক্কার দিকে মসজিদের কিবলা নির্ধারণ ও সালাতের জন্য দিক নির্ণয়ের প্রয়োজনীয়তা মুসলমানদেরকে ভূগোল পাঠে ধর্মীয় উৎসাহ প্রদান করেছিল।” তাই সরাসরি ধর্মীয় প্রয়োজনে ভূগোল চর্চার গুরুত্ব বৃদ্ধি পায় মুসলমানদের কাছে।

ইসলামী সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ এবং নতুন নতুন দেশ জয়ের সঙ্গে সঙ্গে মুসলমানদের দেশ-বিদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠে। তাঁরা বিচিত্র ভৌগোলিক জ্ঞানে সমৃদ্ধশালী হতে থাকে। অন্যদিকে দেশ-বিদেশের জ্ঞান-বিজ্ঞানের বহু উপাদান ও তাঁদের হাতে পৌঁছে। এর মধ্যে ভূগোল শাস্ত্রের উপাদানগুলো মুসলমানদেরকে ভীষণভাবে আকর্ষণ করে। সম্ভবত গ্রীকের প্রভাবেই মুসলমানগণ বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে ভূগোল চর্চা শুরু করেন। শুধু তাই নয়, তারা এর সংরক্ষণ এবং উন্নতি বিধানও করেন।

ভূগোল শাস্ত্রে মুসলিম পন্ডিতদের অবদান বিস্তারিতভাবে লিখুন।

মৌলিক পর্ব ও পর্যায়সমূহ

নবম শতাব্দীর প্রথমার্ধে মুহাম্মদ মূসা আল-খারিযমী রচিত ‘কিতাব আল-খারিযমী’ গ্রন্থটি আরবী ভাষায় ভূ-বিজ্ঞানের বুনিয়াদ প্রতিষ্ঠা করে। বিখ্যাত ‘সুরাত আল-আরদ’ গ্রন্থে তিনি ঊনসত্তর জন অন্য পণ্ডিত ব্যক্তির সহায়তায় পৃথিবীর একটি মানচিত্র সংযোজন করেন। এতে পৃথিবীকে ৭টি ভূ-খণ্ডে ভাগ করে দেখানো হয়। তিনি পৃথিবীর একটি পরিমাপ তৈরি করেছিলেন।

নবম শতাব্দীতে লিখিত ভৌগোলিক তথ্য সম্বলিত পুস্তকসমূহ মুসলমানদের প্রথম স্বাধীন ও স্বতন্ত্র আরবী ভূগোল গ্ৰন্থ। এসব সড়ক পুস্তকে মুসলিম দেশসমূহের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পথে পরিভ্রমণ, রাস্তা-ঘাট, নগর ও দেশসমূহের বিস্তারিত বর্ণনা এবং প্রদেশের উৎপন্ন শস্য ও রাজকোষে প্রদত্ত রাজস্বের বিবরণ দেয়া আছে। এসব পুস্তকের মধ্যে বিখ্যাত ভূগোলবিদ ইবনে খুরদাদবিহ রচিত ‘আল মাসালিক ওয়াল মামালিক’, কুদামার রচিত ‘কিতাব আল খারাজ’, ইয়াকুবীর ‘কিতাব আল বুলদান’ এবং ইবনে রুস্তাহর ‘আল আ’লাক আন নাফীসাহ’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

দশম শতাব্দী থেকে মুসলিম ভূগোলবিদগণ সুবিন্যস্ত ভূগোল গ্রন্থ রচনা শুরু করেন, তারা মুসলিম দেশসমূহের প্রতিটি অঞ্চল সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন। এ সময়কালে রচিত অসংখ্য গ্রন্থের মধ্যে ইসতাখবী রচিত ‘মাসালিক ওয়াল মামালিক’ এবং মুকাদ্দিসীর ‘আহসান-আত-তাকাসিম ফি মারিফাত আল-আকালিম’ প্রভৃতি ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মাকদিসী দীর্ঘ বিশ বছরের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা দিয়ে সর্ববৃহৎ ও সর্বাপেক্ষা মৌলিক ভূগোল গ্রন্থ রচনা করে নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। এছাড়াও তাঁদের গ্রন্থসমূহে এলাকা ও দেশের মানচিত্র, রঙ্গীন মানচিত্র ও নকশা, স্থানের বর্ণনা, উৎপন্ন ও শিল্পজাত দ্রব্য, মানুষের আচার-ব্যবহার, রীতি-নীতি ইত্যাদির মনোজ্ঞ ও নিখুঁত বর্ণনা রয়েছে। আল মাসউদী তাঁর গ্রন্থে বহু মূল্যবান ভৌগোলিক তথ্য লিপিবদ্ধ করেছেন। তাঁর মতে, বর্তমানে যা ছিল স্থলভাগ, তা এককালে সমুদ্র ছিল এবং যা এখন সমুদ্র তা কোন এক সময় স্থল ছিল ।


10k+ বাংলা বই PDF ডাউনলোড

একাদশ শতাব্দীর বিখ্যাত পরিব্রাজক ‘নাসির-ই-খসরু’ এবং ইবন জুবাইর তাঁদের ভ্রমণবৃত্তান্তে মুসলিম বিশ্বের বহু অঞ্চলের চিত্তাকর্ষক বর্ণনা তুলে ধরেছেন। মধ্যযুগীয় সর্বশ্রেষ্ঠ ভূগোল ও মানচিত্রবিদ আল ইদ্রিসী প্রাচীন ও আধুনিক ভৌগোলিক জ্ঞানের সমন্বয় সাধন করেন। ‘কিতাবুল রোজারী’ তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। তিনি একটি ভূ-গোলক (Celestial Sphere) তৈরি করে একটি গোলকে জ্ঞাত জগতের অবস্থান চিহ্নিত করেছেন।

দ্বাদশ শতকের প্রথমদিকে মুসলিম প্রাচ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ ভূগোলবিদ ইয়াকূত ভৌগোলিক বিশ্বকোষ ‘মুজাম আল বুলদান’ রচনা করেন। এতে তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের সার্বিক ভৌগোলিক জ্ঞানের প্রমাণ মিলে। তাঁকে মুসলিম ভূগোল শাস্ত্রের জনক বলা হয়।

মুসলিম মনীষী আল-বিরুনীর ‘কিতাবুল হিন্দ’ গ্রন্থে ভূ-বিদ্যা সম্পর্কে সূক্ষ্ম আলোকপাত করা হয়েছে। তিনিই সর্বপ্রথম পৃথিবীর গোলাকার মানচিত্র তৈরি করেন।

আয-যুহরীর ‘ভৌগোলিক অভিধান’ ভূগোল শাস্ত্রের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। বিশ্ববিখ্যাত পরিব্রাজক ইবনে বতুতা তাঁর ‘রেহেলাতে’ বহু দেশ-বিদেশের তথ্যসমৃদ্ধ মনোজ্ঞ বিবরণ দিয়ে ইতিহাসে বর্ণনামূলক ভূগোলবিদ হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছেন।

উপরোক্ত খ্যাতিমান ভূ-বিশারদ ও ভূগোলবিদ ছাড়াও অসংখ্য ভূগোল বিশেষজ্ঞ আছেন এবং তারা নিজ নিজ অভিজ্ঞতা ও গবেষণা দ্বারা মূল্যবান ভূগোল বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেছেন।



মুসলমানদের দ্রাঘিমা ও অক্ষরেখা সংক্রান্ত সারণী ইউরোপে সমাদৃত ছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল পৃথিবীর কেন্দ্রচূড়া সম্পর্কিত ধারণা। কলম্বাস এসব সূত্র থেকে জানতে পারেন যে, পৃথিবী একটি নাসপাতির মতো এবং পূর্ব গোলার্ধের অরিণের ঠিক উল্টো দিকে পশ্চিম গোলার্ধেরও তেমনি আর একটি চূড়া আছে। এভাবে মুসলমানদের পৃথিবীর কেন্দ্রীয় চূড়ার ধারণা নতুন পৃথিবী অর্থাৎ, আমেরিকা আবিষ্কারে সহায়তা করেছিল।

ভূগোল জ্ঞানে মুসলমানদের অভিজ্ঞতা ও উন্নতির সুবাদেই জলপথ ও নৌচালনার ক্ষেত্রে তারা অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করেছিল। নব শতাব্দীতে মুসলিম নৌচালনা ভারত মহাসাগর, ভূ-মধ্যসাগর, পারস্য উপসাগর ও আরব সাগরের সীমানা অতিক্রম করে। অতঃপর মুসলিম বাণিজ্যিক জাহাজ চীনা বন্দর খানফুত, কোরিয়া, জাপান, সুমাত্রা, মালাক্কা, ভারতের পশ্চিম উপকূল ও শ্রীলংকা এবং পূর্ব আফ্রিকার উপকূলে মাদাগাস্কারেরও পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াত শুরু করে।

পর্তুগীজ নাবিক ভাস্কো ডা-গামা ভূ-প্রদক্ষিণের পর যখন আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে পৌঁছেন, তখন আহমদ ইবনে মাজিদ নামক আরব নৌ-চালক তাঁকে ভারতের পথ দেখিয়ে নিয়ে যান। পর্তুগীজ সূত্রে জানা যায় যে, ইবনে মাজিদের কাছে একটি সমুদ্র পথের মানসচিত্রসহ অন্যান্য নৌ-চালনার যন্ত্রপাতি ছিল। ইবনে মাজিদ ভারত মহাসাগর, লোহিত সাগর, পারস্যোপসাগর, দক্ষিণ চীন সাগর এবং পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে সমুদ্র যাত্রার জন্য একটি নির্দেশিকা পুস্তকও রচনা করেন। আফ্রিকার উপকূলীয় অঞ্চলে কম্পাসের উদ্ভাবক হিসেবে বহু শতাব্দী ধরে ইবনে মাজিদ সম্মানিত ছিলেন।

উপসংহার

জ্ঞান বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার মতো ভুগোল শাস্ত্রেও মুসলমানদের অবদান অনস্বীকার্য। বিশেষ ভূগোলের মৌলিক জ্ঞান এবং ভূগোল শাস্ত্রের গোড়াপত্তন মুসলমান বিজ্ঞানীদের হাতেই শুরু হয়। মুসলমান বিজ্ঞানীদের প্রদত্ত মৌলিক জ্ঞানের উপর ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে সারা পৃথিবীতে ভূগোল শাস্ত্রের গবেষণা ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।



সম্ভাব্য প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ (এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ)

• IST-507 : Study of Al-Hadith (Al-Mishkat Al-Masabih: Al-Iman, AlILM and Al-Salat (Selected Hadith) • IST-508 : Principles and History of Hadith literature • IST-509 : Muslim Personal Law and Law of Inheritance in Islam • IST-510 : Banking and Insurance in Islam • IST-511 : Study of Religions (Islam, Buddhism, Hinduism, Judaism, Christianity) • IST-512 : Muslim Contribution to science and technology

x

tiltony.com
tiltony.comhttp://www.tiltony.com
তিলটনি.কম একটি বাংলা ব্লগ সাইট। সঠিক, নির্ভরযোগ্য ও পূর্ণ তথ্য সমৃদ্ধ কনটেন্ট প্রকাশ করার উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ওয়েবসাইটটি।বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ‣ শিক্ষা ‣ স্বাস্থ্য ‣ জীবনযাপন ‣ পাঁচমিশালি ‣ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও সংবাদ পেতে ভিজিট করুন।
RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments