Sunday, May 5, 2024
Homeশিক্ষাওয়াদা পালনের গুরুত্ব কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে আলোচনা করুন।

ওয়াদা পালনের গুরুত্ব কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে আলোচনা করুন।

প্রশ্ন: ওয়াদা পালনের গুরুত্ব কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে আলোচনা করুন। বিষয়: IST-601 : Study of Al Tafsir কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (ফাইনাল)



ভূমিকা

একজন মুমিন মুসলমানের যে গুণগুলো থাকা প্রয়োজন তার মধ্যে অঙ্গীকার তথা ওয়াদা পূর্ণ করা অন্যতম। প্রকৃত মুমিন হওয়ার জন্য এই মহৎ সিফাত বা গুণটি থাকা প্রয়োজন। ওয়াদা পালন ইসলামের অন্যতম একটি অধ্যায়। ওয়াদা শব্দের অর্থ অঙ্গীকার, চুক্তি, প্রতিশ্রুতি, প্রতিজ্ঞা ইত্যাদি। পরিভাষায় বলতে গেলে, কারো সাথে কোনো অঙ্গীকার করলে তা পালন করার নাম ওয়াদা। সামাজিকভাবে প্রকৃত মানুষ চেনা যায় ওয়াদা পালনের মাধ্যমে। ওয়াদা পালনের মাধ্যমে মানুষের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হয়।

ওয়াদা পালনের গুরুত্ব কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে আলোচনা করুন।

কুরআনে ওয়াদা পালনের গুরুত্ব

ওয়াদা আমানত স্বরূপ। ইসলামে ওয়াদা পালনের গুরুত্ব অনেক বেশি। ওয়াদা পালনের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে সূরা মায়েদার ০১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,


یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اَوْفُوْا بِالْعُقُوْدِ ۬ؕ اُحِلَّتْ لَكُمْ بَهِیْمَۃُ الْاَنْعَامِ اِلَّا مَا یُتْلٰی عَلَیْكُمْ غَیْرَ مُحِلِّی الصَّیْدِ وَاَنْتُمْ حُرُمٌ ؕ اِنَّ اللهَ یَحْكُمُ مَا یُرِیْدُ ﴿۱﴾

অর্থ: হে মুমিনগণ! তোমরা অঙ্গীকার পূরণ করো। তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে চতুষ্পদ গবাদি পশু (ও তদসদৃশ জন্তু), সেইগুলি ছাড়া যা তোমাদেরকে পড়ে শোনানো হবে, তবে তোমরা যখন ইহরাম অবস্থায় থাকবে, তখন শিকার করাকে বৈধ মনে করো না। আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন আদেশ দান করেন।

এখানে মহান আল্লাহ তায়ালা মুমিনদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন তারা যেন ওয়াদা বা অঙ্গীকার পূরণ করে। এ বিষয়ে পবিত্র আল কোরআনের সূরা আনফাল এর ২৭ নম্বর আয়াতে আরো বলা হয়েছে,


یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَخُوْنُوا اللهَ وَالرَّسُوْلَ وَتَخُوْنُوْۤا اَمٰنٰتِكُمْ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ ﴿۲۷﴾

অর্থ: হে মুমিনগণ! আল্লাহ ও রাসূলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করো না এবং জেনে-শুনে নিজেদের আমানতের খেয়ানত করো না।

অর্থাৎ অঙ্গীকা বা ওয়াদাও একটি আমানত। আর আমানতের খেয়ানত যে করবে অর্থাৎ যে ব্যক্তি অঙ্গীগার পূরণ করবে না সে ব্যক্তি মুমিন হতে পারে না। এ বিসয়ে সূরা নিসা এর ৫৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

اِنَّ اللهَ یَاْمُرُكُمْ اَنْ تُؤَدُّوا الْاَمٰنٰتِ اِلٰۤی اَهْلِهَا ۙ وَ اِذَا حَکَمْتُمْ بَیْنَ النَّاسِ اَنْ تَحْكُمُوْا بِالْعَدْلِ ؕ اِنَّ اللهَ نِعِمَّا یَعِظُكُمْ بِهٖ ؕ اِنَّ اللهَ کَانَ سَمِیْعًۢا بَصِیْرًا ﴿۵۸﴾

অর্থ: (হে মুসলিমগণ!) নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করছেন যে, তোমরা আমানতসমূহ তার হকদারকে আদায় করে দেবে এবং যখন মানুষের মধ্যে বিচার করবে, তখন ইনসাফের সাথে বিচার করবে। আল্লাহ তোমাদেরকে যে বিষয়ে উপদেশ দেন, তা কতই না উৎকৃষ্ট। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু শোনেন, সবকিছু দেখেন।

ওয়াদার বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে। যথা : মহান আল্লাহর সঙ্গে কৃত ওয়াদা, বান্দার সঙ্গে কৃত ওয়াদা, সামাজিক দায়বদ্ধতার ওয়াদা, আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে অন্যান্য প্রাণীদের হক আদায়ের ওয়াদা ইত্যাদি। একজন মুত্তাকীর অন্যতম দায়িত্ব হলো, সে সব ধরনের ওয়াদাই পূরণ করবে এবং অন্যরাও যেন এ বিষয়ে সচেতন হয় তা নিশ্চিত করবে। কেননা, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কঠিন হাশরের ময়দানে অঙ্গীকারের ব্যাপারে গোটা মানবজাতির থেকে হিসাব নেবেন। পবিত্র কোরআনের সূরা বনি ইসরাঈল এর ৩৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,


وَلَا تَقْرَبُوْا مَالَ الْیَتِیْمِ اِلَّا بِالَّتِیْ هِیَ اَحْسَنُ حَتّٰی یَبْلُغَ اَشُدَّهٗ ۪ وَ اَوْفُوْا بِالْعَهْدِ ۚ اِنَّ الْعَهْدَ کَانَ مَسْـُٔوْلًا ﴿۳۴﴾

অর্থ: এবং ইয়াতীম যতক্ষণ না পরিপক্কতায় উপনীত হয়, তার সম্পদের কাছেও যেও না, তবে এমন পন্থায় যা (তার পক্ষে) উত্তম। আর অঙ্গীকার পূরণ করো। নিশ্চয়ই অঙ্গীকার সম্পর্কে (তোমাদের) জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

হাদিসে ওয়াদা পালনের গুরুত্ব

পবিত্র কোরআনে যেমন ওয়াদা পালনের গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, ঠিক তেমনি রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর বিভিন্ন হাদিসেও ওয়াদা পালনের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ফরমান, চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকে, সে সুস্পষ্ট মুনাফিক। আর যার মধ্যে এ স্বভাবগুলোর কোনো একটি থাকে, তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফেকির একটি দোষ রয়ে যায়। আর মুনাফেকীর আলামতগুলো হলো : তার কাছে কেউ কোনো কিছু আমানত রাখলে, তা খেয়ানত করে। সে কথা বললে, মিথ্যা বলে। ওয়াদা করলে, তা ভঙ্গ করে। এবং ঝগড়া করলে, গাল-মন্দ করে।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবু হাসমা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত লাভের পূর্বে একদা আমি তাঁর কাছ থেকে কেনাকাটা করি। যার কিছু মূল্য পরিশোধ করতে বাকি রয়ে গিয়েছিল। আমি তার সাথে ওয়াদা করেছিলাম যে, আমি অবশিষ্ট দাম নিয়ে তার নির্ধারিত স্থানে এসে হাজির হব। আমি এই প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে গেলাম। তিন দিন পরে আমার স্মরণ হলো। এসে দেখলাম তিনি সেই নির্দিষ্ট স্থানে আছেন। আমাকে দেখে তিনি বললেন, তুমি আমাকে খুব বিপদে ফেলেছিলে। আমি তিন দিন যাবৎ তোমার অপেক্ষা করছি।

উক্ত হাদিসের দ্বারা বোঝা যায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়াদা পালনে কত সোচ্চার ছিলেন। এর থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। অথচ আমরা খেল-তামাশায় ওয়াদা ভঙ্গ করে ফেলি।

অনেক সময় আমরা অনেকেই কথার ছলে বিভিন্ন ওয়াদা করে ফেলি। যেমন, তোমাকে এটা দেব, ওইটা দেব বা আমি এটা করব, ওইটা করব ইত্যাদি। এইভাবে বললেও যদি তা পালন না করা হয়, তাহলে অবশ্যই গুনাহগার হবে।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমের (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমার মা আমাকে ডাকলেন। তখন রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের ঘরে বসা ছিলেন। মা বললেন, এদিকে এসো। তোমাকে আমি কিছু দেব। তখন রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাকে বললেন, তুমি তাকে কি দিতে ইচ্ছা পোষণ করেছ? তিনি বললেন, আমি তাকে একটি খেজুর দিতে ইচ্ছা করেছি। তখন রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে বললেন, সাবধান! যদি তুমি তাকে কিছু না দিতে, তবে তোমার আমলনামায় একটি মিথ্যা কথা বলা লেখা হতো।

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সাল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, মুনাফিকের আলামত তিনটি। (১) কথা বললে মিথ্যা কথা বলে। (২) ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে। (৩) আমানত রাখলে তা খেয়ানত করে।

উক্ত হাদিসের মাধ্যমে বোঝা যায়, ইসলামে কতটা গুরুত্বারোপ করা হয়েছে ওয়াদা পালনের ব্যাপারে। তবে হ্যাঁ, যদি কোনো বিশেষ সমস্যার কারণে ওয়াদা পালন করতে না পারে তাহলে এক্ষেত্রে ছাড় রয়েছে। যেমন-

হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি ওয়াদা করার সময় যদি তা পূরণের নিয়ত রাখে কিন্তু পরে (কোনো বিশেষ অসুবিধার কারণে) তা পূরণ করতে না পারে, তবে এতে তার অপরাধ হবে না।

উপসংহার

আমাদের ব্যক্তি জীবনের সব ক্ষেত্রেই এমন খেল-তামাশায় বা দুষ্টামির ছলে এমন কাজ করা হতে বিরত থাকতে হবে। কেননা এর ভয়াবহতা খুব কঠোর। ওয়াদা করার পর ভঙ্গ করা মুনাফিকের আলামত। সমাজে সম্মানের সাথে জীবনযাপন করতে হলে অবশ্যই ওয়াদা পালনে সোচ্চার হতে হবে। সামাজিক কর্মনীতিতে ওয়াদার গুরুত্ব অপরিসীম। পবিত্র কোরআনের পাশাপাশি হাদিস শরিফের অসংখ্য জায়গায় ওয়াদা রক্ষা করার গুরুত্ব সম্পর্কে তাগিদ দেয়া হয়েছে।


এই উত্তরটি পিডিএফ ডাউনলোড করুন

• IST-601 : Study of al Tafsir (Tafsir Ibn Kathir : Surah-al-Maieda verse 1 to 77) • IST-602 : Study of al-Fiqh • IST-603 : Philosophy of religion and Comparative Religion • IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and some prominent • IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam

x

tiltony.com
tiltony.comhttp://www.tiltony.com
তিলটনি.কম একটি বাংলা ব্লগ সাইট। সঠিক, নির্ভরযোগ্য ও পূর্ণ তথ্য সমৃদ্ধ কনটেন্ট প্রকাশ করার উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ওয়েবসাইটটি।বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ‣ শিক্ষা ‣ স্বাস্থ্য ‣ জীবনযাপন ‣ পাঁচমিশালি ‣ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও সংবাদ পেতে ভিজিট করুন।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments