Tuesday, May 14, 2024
Homeশিক্ষাদর্শন শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান বর্ণনা করুন।

দর্শন শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান বর্ণনা করুন।

প্রশ্ন: দর্শন শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান বর্ণনা করুন। বিষয়: IST-512 : Muslim Contribution to Science and Technology কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)



ভূমিকা

জ্ঞানানুশীলন ও সত্যানুসন্ধানীই হলো দর্শন। এ শাস্ত্রে পৃথিবীর অন্যান্য জাতির তুলনায় মুসলমানদের দান কোন অংশেই কম নয়। ইমাম গাযযালী, আল কিন্দি, আল ফারাবী, ইবনে সীনা প্রমুখ দার্শনিকদের রচনাবলী গোটা দুনিয়াকে বিস্ময়ে অভিভূত করে দেয়। তাই ইতিহাসবিদ পি.কে. হিট্টি বলেন, “আরবদের নিকট দর্শনশাস্ত্র ছিল মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি ছেড়ে নিরূপণসাপেক্ষ বস্তুর যথার্থ রূপ বিশ্লেষণের সত্যিকার জ্ঞান”। দর্শনের ক্ষেত্রে মুসলমানগণ ছিলেন ইউরোপীয়দের পুরোধা। আলফ্রেড গুইলম বলেন, “আরবগণ প্রাচ্য জ্ঞানের অগ্নিশিখা অনন্তকালের জন্য নির্বাপণকারী মোঙ্গলদের মত বর্বর হলে ইউরোপের পুনর্জাগরণ আরও শতাধিক বছর বিলম্বিত হতো।”

দর্শন শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান বর্ণনা করুন।

ইসলামী দর্শনশাস্ত্র

সৃষ্টিকর্তা ও স্রষ্টা জীব সম্পর্কে ইসলামের একটি নিজস্ব দর্শন আছে। ইতিহাসের অন্যান্য জাতির ন্যায় মুসলমানরাও যুগ যুগ ধরে এক বিশেষ পদ্ধতিতে তাদের নিজস্ব জীবন দর্শন প্রণয়নের চেষ্টায় নিয়োজিত ছিলেন। দর্শন বলতে বুঝায় সত্যে উপনীত হবার যৌক্তিক পদ্ধতি । দর্শন মানুষকে প্রকৃত পথে পরিচালিত করে সত্যে উপনীত হতে সাহায্য করে। সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হওয়ার জন্য বিশ্ব প্রকৃতির চর্চাকেই দর্শন বলে। এ সংজ্ঞানুযায়ী ইসলামী দর্শনই প্রকৃত দর্শন। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে জানবার জন্য প্রকৃতি ও সৃষ্টি সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান লাভই ইসলামী দর্শনের মুখ্য উদ্দেশ্য। ইসলামী দর্শনের মূলভিত্তি হলো কুরআন ও হাদীস। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হলো মানুষ এবং জ্ঞানানুসন্ধান করা মানুষের অন্যতম প্রধান কর্তব্য। জ্ঞানের জন্যই মানুষ ফেরেশতা হতে ঊর্দ্ধে এবং পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি।

মুসলিম দার্শনিকগণ

মুসলিম জাহানের দার্শনিকদের দু অংশে বিভক্ত করা যায়, উদারপন্থী দার্শনিক ও গোঁড়াপন্থী দার্শনিক। কুরআন অপেক্ষা গ্রীক দর্শনের দ্বারা যারা অধিকতর প্রভাবিত হয়েছিলেন, তাঁরা উদারপন্থী বা এরিস্টটলীয় দার্শনিক নামে পরিচিত। এ দলে আছেন আল-কিন্দি, ফারাবী, ইবনে সীনা, ইবনে রুশদ, ইবনে তুফায়েল প্রমুখ দার্শনিক।

কুরআন-হাদীসের শিক্ষা দ্বারা যাঁরা প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং যারা গ্রীক দর্শনের অনুপ্রেবেশের বিরোধিতা করত তাঁদের বলা হয় বনেদী বা ইসলামী দার্শনিক। হযরত আলী (রা), আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা), ইমাম জাফর সাদেক, ইমাম আল-রাযী, ইমাম গাযালী (র) প্রমুখ মনীষী ইসলামী দার্শনিক হিসেবে খ্যাত।

আল-কিন্দি

আল-কিন্দি ছিলেন একজন অসাধারণ ব্যক্তি। তৎকালীন সময়ের সকল প্রকার জ্ঞান-বিজ্ঞান, চিন্তা, ভাবধারাকে তিনি আয়ত্ত করেছিলেন। তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ দার্শনিক, গণিতবিদ, ভূগোলিক, ইতিহাসবিদ, ভাষাতত্ত্ববিদ ও চিকিৎসক। আরবী, সিরীয়, সংস্কৃত, পাহলবী ও গ্রীক ভাষায় তাঁর পাণ্ডিত্য ছিল। তিনি বিভিন্ন বিষয়ের উপর কমপক্ষে ৩৬৯ খানা গ্রন্থ রচনা করেন। মুসলিম চিন্তাধারার বিকাশে বিরাট অবদানের জন্য আল কিন্দিকে মুসলিম ফালাসাফা’র জনক বলা হয়।

আল-ফারাবী

গ্রীক দর্শনের সামঞ্জস্য বিধানের যে ধারা শুরু করেছিলেন আল-কিন্দি, উহাকে সমৃদ্ধ করেন আবূ নসর মুহাম্মাদ আল ফারাবী (৮৭০ জন্ম)। আল ফারাবী মুসলিম বিশ্বের একজন শ্রেষ্ঠ মৌলিক চিন্তাবিদ ছিলেন। আল-ফারাবী বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তৎকালীন সময়ে প্রচলিত সকল জ্ঞান-বিজ্ঞানে তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল। তিনি একজন শ্রেষ্ঠ দার্শনিক, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ পদার্থবিদ ও রসায়নবিদ এমনকি সঙ্গীতজ্ঞও ছিলেন। তাঁর সম্পর্কে বলা হয়, তিনি তৎকালীন বিশ্বের প্রায় প্রত্যেকটি ভাষায় পণ্ডিত ছিলেন এবং আনুমানিক সত্তরটি ভাষায় কথা বলতে পারতেন। বিভিন্ন বিষয়ের উপর ফারাবী প্রায় শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেন। এগুলোর মধ্যে প্রায় পঞ্চাশটিতে তিনি নানা বিষয়ের ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং বাকি গ্রন্থগুলো তাঁর মৌলিক রচনা।

ফারাবীর মতে, দর্শনের ক্ষেত্রে আরাস্তু ও আফলাতুন উভয়ই সর্বোচ্চ পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। আরাস্তু সম্পর্কে তাঁর পাণ্ডিত্য এবং দর্শন ও যুক্তিবিদ্যার সকল ক্ষেত্রে তাঁর অগাধ জ্ঞানের জন্য তিনি দ্বিতীয় আরাস্তু নামে অভিহিত হয়েছেন।

ইবনে সীনা

আবু আলী আল-হুসাইন ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে সীনা ইসলামের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও মৌলিক চিন্তাবিদ ছিলেন। ইবনে সীনা অথবা আবিসিনা নামে তিনি অধিক পরিচিত।

ইবনে সীনা অসামান্য প্রতিভাশালী ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন দার্শনিক, গণিতজ্ঞ, ভাষাতত্ত্ববিদ, চিকিৎসক ও কবি। ইবনে সীনার জীবনস্রোত অসংখ্য ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। এ বৈচিত্র্যময় কষ্টকর জীবন সত্ত্বেও তিনি সর্বদাই জ্ঞানের অন্বেষণ করেছেন। তাঁর রচিত ১২৫টি গ্রন্থ রয়েছে।

তাঁর শ্রেষ্ঠ অবদান হলো ‘শিফা’ ও ‘কানূন’। এ দু’টি গ্রন্থের রচয়িতা হিসেবে তিনি অমর হয়ে থাকবেন। ইবনে সীনা ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তাঁকে অনতিক্রম্য শেখ বা ‘দার্শনিকদের যুবরাজ’ বলা হত। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে বহু শতাব্দী যাবত দার্শনিক ও চিকিৎসক হিসেবে তাঁর সুখ্যাতি ছিল। ইবনে সীনার রচনাবলী চিকিৎসক, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, রাজনীতিক, এমনকি ধর্মতত্ত্ববিদরাও পাঠ করেন। মুসলিম প্রাচ্যে একমাত্র ইমাম গাযালী (র) ছাড়া অন্য কারও রচনাবলী এত অধিক পঠিত হয়নি।

ইমাম গাযযালী (র)

মুসলিম বিশ্বের আর একজন শ্রেষ্ঠ দার্শনিক ছিলেন আবু হামিদ মুহাম্মাদ ইবনে মুহাম্মাদ আল গাযযালী (র)। ইসলামী ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে যে সমস্ত দার্শনিক সঠিকভাবে ইসলামকে বুঝতে ও রূপ দিতে চেষ্টা করেছিলেন, ইমাম গাযালী (র) তাঁদের অন্যতম। প্রথম জীবনে তিনি আশআরী মতবাদের প্রবক্তা থাকলেও পরবর্তী জীবনে সূফী মতবাদকেই সত্যিকার পথ বলে গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন মৌলিক চিন্তার অধিকারী। মুসলিম সমাজের সকল আধ্যাত্মিক সাধনাকে তিনি তাঁর চিন্তাধারায় প্রতিফলিত করেছিলেন। মুসলিম জাহানের এ প্রখ্যাত দার্শনিক ১০৫৮ খ্রিস্টাব্দে (৪৫০ হিঃ) ইরানের তুস নগরে জন্মগ্রহণ করেন।

ইমাম গাযযালী (র) সম্ভবত বিশ বছর বয়সে লেখা শুরু করেন। তাঁর জীবনের এগার বছর মরুভূমি ও বন-জঙ্গলে অতিবাহিত হয়। তিনি প্রায় চারশত গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো (১) এহইয়া-উ-উলূমুদ্দীন, (২) তোহফাতুল ফালাসিফাহ, (৩) কিমিয়ায়ে সা’আদাত। তাঁর মতে, দার্শনিকগণ জড়বাদী ( Materialists), ওহীর প্রতি অবিশ্বাসী নাস্তিক (Deists) ও আস্তিক বা একত্ববাদে বিশ্বাসী (Theists)-এ তিন শ্রেণীতে বিভক্ত। জড়বাদীদের মতে, বস্তু চিরন্তন এবং তা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে সহজাত নিয়মেই পরিচালিত হচ্ছে। ইমাম গায্যালী এ ধারণা গ্রহণ করেননি। তিনি আত্মাকে একটি অপরিহার্য বাস্তবতা বলে বিশ্বাস করতেন।

উপসংহার

উপরিউল্লিখিত দার্শনিকগণ ব্যতীত আরও বহু দার্শনিক রয়েছেন, যাঁরা মুসলিম দর্শনের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। দর্শনশাস্ত্রে মুসলিম দার্শনিকদের অবদান অপরিসীম।


এই উত্তরটি পিডিএফ ডাউনলোড করুন

সম্ভাব্য প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ (এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ)

• IST-507 : Study of Al-Hadith (Al-Mishkat Al-Masabih: Al-Iman, AlILM and Al-Salat (Selected Hadith) • IST-508 : Principles and History of Hadith literature • IST-509 : Muslim Personal Law and Law of Inheritance in Islam • IST-510 : Banking and Insurance in Islam • IST-511 : Study of Religions (Islam, Buddhism, Hinduism, Judaism, Christianity) • IST-512 : Muslim Contribution to science and technology

x

tiltony.com
tiltony.comhttp://www.tiltony.com
তিলটনি.কম একটি বাংলা ব্লগ সাইট। সঠিক, নির্ভরযোগ্য ও পূর্ণ তথ্য সমৃদ্ধ কনটেন্ট প্রকাশ করার উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ওয়েবসাইটটি।বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ‣ শিক্ষা ‣ স্বাস্থ্য ‣ জীবনযাপন ‣ পাঁচমিশালি ‣ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও সংবাদ পেতে ভিজিট করুন।
RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments