Saturday, May 18, 2024
HomeUncategorizedইবনে সিনা কে ছিলেন৷ চিকিৎসা বিজ্ঞানে তার অবদান মূল্যায়ন করুন৷

ইবনে সিনা কে ছিলেন৷ চিকিৎসা বিজ্ঞানে তার অবদান মূল্যায়ন করুন৷

প্রশ্ন: ইবনে সিনা কে ছিলেন৷ চিকিৎসা বিজ্ঞানে তার অবদান মূল্যায়ন করুন৷ বিষয়: IST-512 : Muslim Contribution to Science and Technology কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)



ভূমিকা

বিজ্ঞানের যতগুলো শাখা রয়েছে তার মধ্যে চিকিৎসাশাস্ত্র হলো সবচেয়ে পুরাতন শাখা। পৃথিবীতে মানব সৃষ্টির প্রথম থেকেই চিকিৎসাশাস্ত্রের সূচনা শুরু হয়। পৃথিবীর চিরাচরিত স্বাভাবিক নিয়মে মানুষ জীবন ধারণের জন্য খাদ্যসংগ্রহ ও রোগব্যাধি মোকাবিলায় যে সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল তা থেকেই চিকিৎসাশাস্ত্রের উদ্ভব। আর তখনকার চিকিৎসা পদ্ধতি ছিল তাদেরই আবিষ্কৃত বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা। সময়ের সাথে সাথে মানুষ বিভিন্ন ধরণের সমস্যা ও রোগ-ব্যধিতে লতা-পাতা, গাছ-পালার ব্যবহার আয়ত্ত করে।

ইবনে সিনার পরিচয়

সর্বকালের অন্যতম সেরা ও আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক ইবনে সিনা। মুসলিম বিজ্ঞানী ইবনে সিনা ৯৮০ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান উজবেকিস্তানের রাজধানী বুখারায় জন্মগ্রহণ করেন। যা ইউরোপে আভিসিনা নামে পরিচিত। এই বিখ্যাত বিজ্ঞানীকে ‘আশশাইখ আলরাইস’ বা জ্ঞানীকুলের শিরোমণি উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। তিনি আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রের জনক।



ইবনে সিনার শিক্ষার হাতেখড়ি তার জন্মস্থান বুখারা শহরে। তিনি মাত্র ১০ বছর বয়সে পবিত্র আল কোরআন মুখস্থ করেন। ছেলেবেলা থেকেই প্রখর মেধাবী ছিলেন তিনি। তার মা-বাবা ও গৃহশিক্ষক তার মেধা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করতেন। তিনি তার উস্তাদ আল নাতেলির কাছে ফিকহ, ন্যায়শাস্ত্র, জ্যামিতি ও জ্যোতিষশাস্ত্র শেখেন।

চিকিৎসক হিসেবে ইবনে সিনার খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তৎকালীন সময়ে ওই অঞ্চলের বাদশাহ নুহ বিন মনসুর এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন। তাই বাদশার কাছে তার ডাক পড়ে। তিনি চিকিৎসা ও পরামর্শ দিয়ে বাদশাহকে সম্পূর্ণ সারিয়ে তুললেন। বাদশাহ খুব খুশি হয়ে তাকে পুরস্কৃত করতে চাইলেন। কিন্তু তিনি পুরস্কার নেয়ার বদলে বাদশাহের কাছে শুধু শাহি কুতুবখানায় পড়াশোনার অনুমতি চান। বাদশাহ তাকে শাহী কুতুবখানায় পড়াশোনা করার অনুমতি প্রদান করেন।

ইবনে সিনা ভ্রমণবিলাসী ছিলেন। পৃথিবীর অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন। তৎকালীন সময়ের পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধ নগরী খোয়ারিজমে গিয়ে বিখ্যাত মুসলিম বিজ্ঞানী আলবিরুনীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। রাজধানীর গরুগঞ্জে অনেক দিন বসবাস করেন, যেখানে বসে তিনি তার বিখ্যাত বই আলকানুন ফিততিব লিখেন।


👉 আরো পড়তে পারেন: প্রযুক্তি কাকে বলে? প্রযুক্তির উন্নয়নে মুসলমানদের অবদান লিখুন।


শেষ জীবনে ইবনে সিনা ইরানের ইস্পাহানে বসবাস শুরু করেন। এর মধ্যে একসময় হামাদান এবং ইস্পাহানের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যায়। এ সময় ইস্পাহানের সম্রাট ইবনে সিনাকে সঙ্গে নেয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও সম্রাটের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেতে পারেননি। হামাদানের পথে রওনা করেন। হামাদানের সঙ্গে তার অনেক স্মৃতিবিজড়িত ছিল। এখানে এসে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুখ আর সারেনি। হামাদানের যুদ্ধ শিবিরে অবস্থানকালে তিনি ১০৩৭ খ্রিষ্টাব্দে (৪২৮ হিজরি) মৃত্যুবরণ করেন।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে ইবনে সিনার অবদান

ইবনে সিনা কে গ্রিক অ্যারিস্টটলীয় দর্শন দ্বারা প্রভাবিত একজন পেরিপেটিক দার্শনিক হিসেবে অনেকেই ধারণা করেন। তিনি প্রায় ৪৫০টি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। যার মধ্যে ১৫০টি দর্শনশাস্ত্র বিষয়ক এবং ৪০টি চিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ক। তার সর্বাধিক বিখ্যাত রচনাগুলো দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক বিশ্বকোষ কিতাবুশ শিফা এবং চিকিৎসাবৈজ্ঞানিক বিশ্বকোষ কানুন ফিততিব অন্যতম।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের ওপর তার বিখ্যাত গ্রন্থ আলকানুন ফিততিব চিকিৎসা শাস্ত্রের সর্বাধিক প্রভাবশালী গ্রন্থ। একে চিকিৎসাশাস্ত্রের বাইবেল বলে। ইবনে সিনার কানুন সম্পর্কে অধ্যাপক হিট্টি বলেন, ‘কানুনের আরবি সংস্করণ ১৫৯৩ সালে রোমে প্রকাশিত হয়েছিল এবং এটি একটি প্রারম্ভিক যুগের মুদ্রিত গ্রন্থ। আরবি চিকিৎসাবিজ্ঞানে তার স্থান অদ্বিতীয়।’



চিকিৎসাবিজ্ঞানে ইবনে সিনার রচিত ১৬টি মৌলিক গ্রন্থের ১৫টিতে তিনি বিভিন্ন রোগের কারণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেন। মানুষের মানসিক অবস্থা (রোগ, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি) হৃদরোগের কারণ- এই তত্ত্ব তিনিই প্রথম আবিস্কার করেন। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় তিনি মানসিক প্রশান্তির সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ হিসেবে বিভিন্ন লতা-গুল্ম ও অন্যান্য বস্তুর বিবরণ দিয়েছেন। কিন্তু যে একটি গ্রন্থ তাকে অমর করেছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ চিকিৎসাবিদ হিসেবে— সেটির নাম কানুন ফিততিব। মানব সভ্যতায় চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে এর চেয়ে প্রভাবশালী গ্রন্থ এখনো পর্যন্ত আর দ্বিতীয়টি নেই। ৫ খণ্ডে এবং ৮০০ পরিচ্ছেদে সমাপ্ত এই চিকিৎসা বিশ্বকোষে তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞানের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতকে যেন একসঙ্গে বেঁধে ফেলেছেন।


👉 আরো পড়তে পারেন:


আলকানুন ফিততিবের প্রথম খণ্ডে রয়েছে শরীরতত্ত্ব (Physiology) ও স্বাস্থ্যতত্ত্ব (Hygiene), দ্বিতীয় খণ্ডে ৭৫০টি গুল্ম, পানীয় ও খনিজ ওষুধের বর্ণনা। এজন্য তিনি গ্রিক, রোমান, চীনা এবং ভারতীয় চিকিৎসা পদ্ধতির সারনির্যাস সংগ্রহ করেন। তৃতীয় খণ্ডে মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও একাধিক রোগ এবং সেগুলোর উপসর্গ (Symptom), নির্ণয় (Diagnosis), পূর্বাভাস (Prognosis) কারণতত্ত্ব (Etilogy) নিয়ে তিনি বিশদ আলোচনা করেছেন। তিনি মাথা হতে শুরু করে ধীরে ধীরে চোখ, কান, নাক, মুখ, দাঁত এভাবে নিচের দিকে নেমে চতুর্থ খণ্ডে বিশেষ কিছু রোগ যেমন: জ্বর, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, ভয়, বেদনা, প্রদাহ, পচন, বসন্ত, যক্ষ্মা, হাড়ের ভাঙন বা স্থানচ্যুতি, বিষক্রিয়া, ফোঁড়া, ঘা, চুল-নখ-চামড়া বিভিন্ন রোগ নিয়ে আলোচনা করেছেন।

উপসংহার

আধুনিক যুগে মুসলিম মনীষীদের হাত ধরে চিকিৎসাশাস্ত্রে আসে অভাবনীয় পরিবর্তন। ৯ম শতাব্দীতে মুসলিম মনীষীগণই সভ্যতার ও জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রকৃত পতাকাবাহক ছিলেন। ৯ম শতাব্দী হতে একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত ছিল মুসলিম মনীষীদের চিকিৎসাবিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধনের স্বর্ণযুগ। এ শতাব্দীতে চিকিৎসাবিজ্ঞানে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখেন আবু আলী আল হুসাইন ইবনে সিনা। ইসলামের অন্যতম এ চিকিৎসাবিজ্ঞানী পুরো বিশ্বে চিকিৎসাশাস্ত্রের জনক বলে সুপরিচিত। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম সেরা চিকিৎসক, গণিতজ্ঞ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং দার্শনিক।



সম্ভাব্য প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ (এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ)

• IST-507 : Study of Al-Hadith (Al-Mishkat Al-Masabih: Al-Iman, AlILM and Al-Salat (Selected Hadith) • IST-508 : Principles and History of Hadith literature • IST-509 : Muslim Personal Law and Law of Inheritance in Islam • IST-510 : Banking and Insurance in Islam • IST-511 : Study of Religions (Islam, Buddhism, Hinduism, Judaism, Christianity) • IST-512 : Muslim Contribution to science and technology

x

RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments