Friday, May 17, 2024
Homeশিক্ষাহিজরত বলতে কী বোঝায়? হিজরতের কারণ ও গুরুত্ব আলোচনা করুন

হিজরত বলতে কী বোঝায়? হিজরতের কারণ ও গুরুত্ব আলোচনা করুন

প্রশ্ন: হিজরত বলতে কী বোঝায়? হিজরতের কারণ ও গুরুত্ব আলোচনা করুনবিষয়: (IST-503) Al-Sirat Al-Nababiahকোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)



ভূমিকা

কাফিরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহ্‌ তায়ালার নির্দেশে নিজ মাতৃভূমি মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেন। ইসলামের প্রচার এবং প্রসারে হিজরতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মদিনায় হিজরতের ফলে ইসলামের পতাকা আরো শক্তিশালীভাবে উত্তোলিত হয়।

হিজরত বলতে কী বোঝায়

হিজরত শব্দের অর্থ ত্যাগ করা, ছেড়ে দেওয়া বর্জন করা, ফেলে আসা ইত্যাদি। পরিভাষায় হিজরত বলতে নিজের দেশ ত্যাগ করে কোনো কারণে অন্যত্র চলে যাওয়া। হিজরত ইসলামের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা।


আরো পড়তে পারেন: বিদায় হজের ভাষণের প্রধান দিকগুলো উল্লেখ করুন এবং এ ভাষণের গুরুত্ব তাৎপর্য আলোচনা করুন


হিজরতের কারণ

মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নবুওয়াত প্রাপ্তির পর দীন প্রচারের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ফলে ক্রমশ মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এতে কাফিরদের মর্ম জ্বালা বেড়ে যায়। তারা মহানবি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে দ্বীন প্রচারের কাজে বিভিন্নভাবে বাধা দিতে থাকে। মক্কার মুশরিকরা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং তাঁর সাহাবিগণের উপর সম্ভাব্য সব ধরণের নির্মম অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে। এমনকি তারা আল্লাহর রাসূলকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। এরপর মহানবি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে আল্লাহ তায়ালা হিজরতের নির্দেশ দেন। অতঃপর তিনি জম্নভূমি মক্কা ত্যাগ করে মদিনায় হিজরত করেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের সূরা আত-তাওবার ৪০ নম্বর আয়াতে বলেন,

اِلَّا تَنۡصُرُوۡهُ فَقَدۡ نَصَرَهُ اللّٰهُ اِذۡ اَخۡرَجَهُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا ثَانِیَ اثۡنَیۡنِ اِذۡ هُمَا فِی الۡغَارِ اِذۡ یَقُوۡلُ لِصَاحِبِهٖ لَا تَحۡزَنۡ اِنَّ اللّٰهَ مَعَنَا ۚ فَاَنۡزَلَ اللّٰهُ سَکِیۡنَتَهٗ عَلَیۡهِ وَ اَیَّدَهٗ بِجُنُوۡدٍ لَّمۡ تَرَوۡهَا وَ جَعَلَ کَلِمَۃَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوا السُّفۡلٰی ؕ وَ کَلِمَۃُ اللّٰهِ هِیَ الۡعُلۡیَا ؕ وَ اللّٰهُ عَزِیۡزٌ حَکِیۡمٌ ﴿۴۰

অর্থ: যদি তোমরা তাকে সাহায্য না কর, তবে আল্লাহ তাকে সাহায্য করেছেন যখন কাফিররা তাকে বের করে দিল, সে ছিল দু’জনের দ্বিতীয়জন। যখন তারা উভয়ে পাহাড়ের একটি গুহায় অবস্থান করছিল, সে তার সঙ্গীকে বলল, ‘তুমি পেরেশান হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন’। অতঃপর আল্লাহ তার উপর তাঁর পক্ষ থেকে প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাকে এমন এক সৈন্য বাহিনী দ্বারা সাহায্য করলেন যাদেরকে তোমরা দেখনি এবং তিনি কাফিরদের বাণী অতি নিচু করে দিলেন। আর আল্লাহর বাণীই সুউচ্চ। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান।


আরো পড়তে পারেন: বদর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল বিস্তারিত আলোচনা করুন


রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নবুয়াতের ত্রয়োদশ বছর রবিউল আউয়াল মাস মোতাবেক ৬২২ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে হিজরত করে মদিনায় পৌঁছেন। তিনি মদিনায় ‘কুবা’ নামক স্থানে অবতরণ করেন। এ স্থানে ইসলামের প্রথম মসজিদ ‘মসজিদে কুবা’ নির্মাণ করা হয়।

হিজতের ফলাফল

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মদিনায় প্রবেশ করলে মদিনাবাসি তাঁকে গভীর শ্রদ্ধা জানায় এবং সাদরে গ্রহণ করে। লোকজন তাঁকে তাদের আতিথ্য করার অনুরোধ জানাতে থাকে। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, আমার উটের পথ ছেড়ে দাও, সে আল্লাহর পক্ষ হতে আদিষ্ট। উট চলতে চলতে আবু আইয়ুব আনিসারি (রা.) এর বাড়িতে এসে থামে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর মেহমান হলেন।

মদিনায় এসে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সর্বপ্রথম মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি মসজিদ নির্মাণের জন্য সাহল-সুহাইল বনু নাজ্জারের দুই ইয়াতিম কিশোরের থেকে জমি ক্রয় করেন। অতঃপর তিনি মসজিদ নির্মাণ করেন। ইসলামের ইতিহাসে এটাই মসজিদে নববি নামে পরিচিত।

মদিনায় হিজরতের পর মুসলিম, ইহুদি এবং অন্যান্য গোত্রের লোকদের নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। বিশ্বের ইতিহাসে এটি প্রথম লিখিত সংবিধান। এটাকে মদিনা সনদ বলা হয়। এ লিখিত সনদটি প্রথমবারের মতো গোত্রভিত্তিক একনায়তন্ত্রের অবসান ঘটায়। নানা ধর্মের ও গোত্রের মানুষ মিলে এক জাতিতে পরিণত হয়। এর মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মদিনায় একটি রাষ্ট্রের ভিত্তি করেন।



উপসংহার

ইসলাম প্রচার ও ইমান রক্ষার এক স্থান থেকে অন্য গমন করাকে হিজরত বলে। মহানবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাফিরদের অত্যাচার ও নির্যাতনে জন্মভূমি মক্কায় টিকতে না পেরে আল্লাহর নির্দেশে মদিনায় হিজরত করেন। মদিনায় তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর আদর্শ অনুসরণ বর্তমানে যুগে কল্যান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা এখনো সম্ভব।


• IST-501 : Study of Al-Quran (Surah: Al-Fatah and Al-Hujurat) • IST-502 : Introduction to Islamic Dawah • IST-503 : Al-Sirat Al-Nababiah • IST-504 : Human Rights in Islam • IST-505 : Principles and History of Tafsir literature • IST-506 : Principles of Islamic Jurisprudence

x

tiltony.com
tiltony.comhttp://www.tiltony.com
তিলটনি.কম একটি বাংলা ব্লগ সাইট। সঠিক, নির্ভরযোগ্য ও পূর্ণ তথ্য সমৃদ্ধ কনটেন্ট প্রকাশ করার উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ওয়েবসাইটটি।বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ‣ শিক্ষা ‣ স্বাস্থ্য ‣ জীবনযাপন ‣ পাঁচমিশালি ‣ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও সংবাদ পেতে ভিজিট করুন।
RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments