Saturday, December 21, 2024

উহুদ যুদ্ধের বিবরণ দিন এবং এ যুদ্ধে মুসলমানদের বিপর্যয়ের কারণ থেকে প্রমাণ করুন যে, এ ঘটনা থেকে তারা এক বিরাট নৈতিক শিক্ষা অর্জন করেছিল

প্রশ্ন: উহুদ যুদ্ধের বিবরণ দিন এবং এ যুদ্ধে মুসলমানদের বিপর্যয়ের কারণ থেকে প্রমাণ করুন যে, এ ঘটনা থেকে তারা এক বিরাট নৈতিক শিক্ষা অর্জন করেছিলবিষয়: (IST-503) Al-Sirat Al-Nababiahকোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)


ভূমিকা

ইসলামের দ্বিতীয় যুদ্ধ উহুদ যুদ্ধ ৩ হিজরির শাওয়াল মাসে সংঘটিত হয়। বদর যুদ্ধের ঠিক এক বছর পর মদিনার মসজিদে নববি থেকে উত্তরে পাঁচ কিলোমিটার দূরে ওহুদের প্রান্তর।ওহুদ যুদ্ধ হয়। মদিনার মুসলিম ও মক্কার অমুসলিমদের মধ্যে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।

উহুদ যুদ্ধ

হিজরি দ্বিতীয় সনের ১৭ রমযান বদর প্রান্তরে মুসলমানদের সাথে কুরাইশ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও পরাজয়ের পর কুরাইশরা প্রতিশোধ নিতে আবারো পরের বছর মদিনা আক্রমণ করে। উহুদ যুদ্ধ ছিল কুরাইশদের প্রতিশোধের বহিঃপ্রকাশ। মদিনার অদূরে উহুদ উপত্যাকায় এ যুদ্ধে সংঘটিত হয়েছিল বলে তা উহুদ যুদ্ধ নামে পরিচিত।

উহুদ যুদ্ধের কারণ

বদর যুদ্ধ শোচনীয় পরাজয় ও মুসলমানের ক্রমশ উন্নতি কুরাইশদের গাত্রদাহের কারণ হয়েছিল। তারা মুসলমানদের চিরতরে ধ্বংস করার লক্ষ্যে আরেকটি যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়। এ যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ বিদ্যমান ছিল। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-


আরো পড়তে পারেন: মদিনা সনদের শর্তসমূহ উল্লেখ করুন৷ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক মদীনা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটে এই সনদের গুরুত্ব বর্ণনা করুন


১. বদর যুদ্ধে শোচনীয় পরাজয়

হিজরি দ্বিতীয় সনে কুরাইশরা বদর যুদ্ধে পরাজিত হলে প্রতিহিংসা ও বিদ্বেষবশত মুসলমানদের সাথে মোকাবেলা করার জন্য পুনরায় প্রস্তুতি গ্রহণ করে। যুদ্ধে আপনজন ও নেতাদের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে তারা শোককে শক্তিতে পরিণত করে মদিনা আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

২. ইহুদীদের কুমন্ত্রণা

কুরাইশদের প্রতিহিংসার মূলে ইন্ধন যুগিয়েছিল ষড়যন্ত্রকারী বিশ্বাসঘাতক ইয়াহুদী চক্র। বদর যুদ্ধের পর ইয়াহুদী কবি ‘ইবনে আশরাফ’ মক্কায় গিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুরাইশদেরকে উস্কানি দিত। এমনকি কবি নানা কবিতা রচনা করে কুরাইশদের অন্তরে প্রতিশোধের আগুন আরো বৃদ্ধি করে দেয়।

৩. মুসলমানদের শক্তি বৃদ্ধিতে হিংসা

মক্কা থেকে মুসলমানরা মদিনায় হিজরত করার পর ক্রমশ তাদের শক্তি বৃদ্ধি পায়। বদর যুদ্ধের পর মুসলমানদের ঈমানী শক্তি ও সাহসিকতা আরো বেড়ে যায়। এ সময় আরবসহ পার্শ্ববর্তী অনেক দেধে ইসলামের বাণী ছড়িয়ে দিতে মুসলমানরা সক্ষম হয়। এতে কুরাইশরা বেশি হিংসাপরায়ণ হয়ে মুসলমানদের উপর আক্রমণ করে।

৪. আবু সুফিয়ানের বর্বর আচরণ

আবু সুফিয়ান মদিনার ইয়াহুদীদেরকে অনুপ্রাণিত করতে দু’শত অশ্বারোহীসহ মদিনার দিকে যাত্রা করে। মদিনায় কতিপয় ইয়াহুদীদের সাথে আলাপ-আলোচনা ও সাহায্যের আশ্বাস নিয়ে মক্কা ফেরার পথে সাদ ইবনে আমর নামক একজন সাহাবীকে হত্যা করে। কয়েকটি বাড়ি লুট করে এবং চারণভূমিতে আগুণ লাগিয়ে দেয়। এ সংবাদ পেযে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের পশ্চাৎ ধাবন করলেন। উহুদ যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার এটিই প্রত্যক্ষ কারণ।


আরো পড়তে পারেন: সীরাত সাহিত্য বলতে কী বুঝায়? কোরআন ও হাদিসের আলোকে রাসূল (সা.) এর জীবনী অধ্যয়নের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করুন


৫. মদিনা প্রাধান্য

বদর যুদ্ধের বিজয়ে মদিনায় ইসলাম সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। এতে নগরীর আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব বাড়তে থাকে। হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও মদিনার সকল গোত্রসমূহকে ঐক্যবদ্ধ করে এক অভূতপূর্ব প্রীতিবন্ধনে আবদ্ধ করেন। কুরাইশরা তাই মসলমানদের সাথে পুনরায় শক্তি পরীক্ষার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হল।

৬. বনু হাশিম-উমাইয়া বিরোধ

মদিনায় রাসূলে করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নেতৃত্বে বনু হাশিম গোত্রের ক্রমোন্নতিতে কুরাইশদের অন্য শাখা উমাইয়াদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনিবার্য হয়ে উঠল। তারা তাদের দলনেতা আবু সুফিয়ানকে সর্বোতভাবে সহযোগিতা করতে লাগল আর এসব কারণে উহুদ যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠে।

উহুদের ঘটনা

কুরাইশরা প্র্রতিশোধের জন্য মরিয়া হয়ে উঠল। ইসলামের এ জ্বলন্ত শিখাকে নির্বাপিত করতে সবাই বদ্ধ পরিকর হল। আবু সুফিয়ান পুনরায় তিন হাজার সৈন্যের আর এক নতুন বাহিনী সংগঠিত করল। সৈ্ন্যদের মধ্যে সাতাশ বর্মধারী, দু’শ অশ্বারোহী ও অবশিষ্টরা ছিল উষ্ঠ্রারোহী ও পদাতিক। তায়েফ হতে আরো ১০০ সৈন্য এসে এ সেনাদলে যোগ দিল। এ বিশাল বাহিনী নিয়ে আবু সুফিয়ান অভিমুখে অগ্রসর হল।

তৃতীয় হিজরির শাওয়াল মাসের ১৪ তারিখে হযরত মুহাম্মদ (স) জুম্মার নামায আদায় করে সমবেত মুসলিমদের পরামর্শ সভায় বললেন, এবার আমাদের নগদ ছেড়ে দূরে গিযে যুদ্ধ করা সমীচীন হবে না। তাতে বিপদ ঘটতে পারে। তোমাদের মত কি? বায়োজ্যেষ্ঠ মুহাজির ও আনসারগণ সকলে মহানবীর (স)-এর মতে সাড়া দিলেন। কিন্তু তরূণ দলের কাছে এ প্রস্তাব মনঃপুত হল না। তারা এ ব্যবস্থাকে কাপুরূষতা মনে করে মদিনার বাইরে গিয়ে শত্রুর সম্মুখীন হওয়া সমীচীন ভাবল। শেষে অনেকেই তাদের এ মত সমর্থন করল। হযরত মুহাম্মদ (স) সকলকে রণসাজে সজ্জিত হতে নির্দেশ দিলেন। মোট এক হাজার সৈন্যের এ বাহিনীর ২ জন মাত্র অশ্বা্রোহী, ৭০ জন বর্মধারী, ৪০ জন তীরন্দাজ, বাকি সকলেই বর্মহীন পদাতিক বাহিনী। মুনাফিক আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ৩০০ সৈন্য সমেত যোগদান করেছিল। কিন্তু পথিমধ্যে অজুহাত দেখিয়ে দলত্যাগ করল পথিমধ্যে অজুহাত দেখিয়ে দলত্যাগ করল। মদিনা হতে তিন মাইল দূরে উহুদ পাহাড়। সেই পাহাড়ের অপর পার্শ্বে গিয়ে হযরত একটি সুবিধাজনক স্থানে ঘাঁটি স্থাপন করলেন, সম্মুখে ময়দান, পিছনে পাহাড়।



আবু সুফিয়ানও তার বিরাট বাহিনী নিয়ে পূর্বেই উহুদ প্রান্তরে অপেক্ষা করছিল। মুসলিম পক্ষের  বামপাশে পর্বতগাত্রে একটি গিরিপথ ছিল। পরিণামদর্শী মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এ গিরিপথের পশ্চাদিক হতে শত্রুর হামলার আশংকায় হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যোবায়েরের নেতৃত্বে ৫০ জনের একটি তীরন্দাজ বাহিনী সেখানে মোতায়েন করেন এবং পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত সেখানে তাদেরকে দাঁড়িয়ে থাকতে বললেন। মল্লযুদ্ধে কুরাইশদের প্রসিদ্ধ বীর তালহা ও ওসমান নিহত হন। মুহূর্তে দুজন বীরের শোচনীয় পরাজয় দেখে কুরাইশগণ সমবেতভাবে মুসলমানদের উপর আক্রমণ চালাল। উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ আরম্ভ হল। মুসলিম বীরকেশরীদের হাতে শত্রু পক্ষের বহু সৈন্য হতাহত হল। অল্পক্ষণের মধ্যেই ময়দাসে টিকতে না পেরে কুরাইশগণ পালাতে আরম্ভ করল। মুসলমানগণ শত্রু পরিত্যক্ত সম্পদ সংগ্রহ করতে লাগল। হযরতের নির্দেশ ভুলে গিরিপথে নিযোজিত তীরন্দাজগণ সংগ্রহ কার্যে অংশগ্রহণ করল। ৫০ জনের মধ্যে দুজন সেখানে রইল। দূর হতে সুচতুর খালিদ এ দৃশ্য দেখে তার অশ্বারোহী সেনাদল নিয়ে সেখানে এসে উপস্থিত হল। দুজন তীরন্দাজকে সে অনায়াসে পরাজিত ও নিহত করে পশ্চাৎ দিক হতে মুসলমানদের উপর আক্রমন করল। পলায়নপর কুরাইশ সৈন্যরাও ফিরে আসে। যুদ্ধ পুনরায় আসম্ভ হল। বীরবর হামযা ও মোসায়ের (রা) যুদ্ধে শহীদ হলেন। এবার কুরাইশগণ মহানবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে লক্ষ্য করে তীর ও অন্যন্যা অস্ত্র প্রয়োগ করতে লাগল। কয়েক জন মুসলমান নিজেদের জীবন তুচ্ছ জ্ঞান করে মহানবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে রক্ষা করার জন্য ব্যূহ রচনা করলেন। বহু তীর তাঁদের শরীর বিদ্ধ করল। এমন সময় কাফির ইবনে কামিয়া মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর অতি নিকটে এসে তলোয়ার নিক্ষেপ করল। এতে তিনি আহত হয়ে এক গর্তে পড়ে গেলেন। ইবনে কামিয়া বলে উঠল আমি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে হত্যা করেছি। যুদ্ধের মাঠে এ খবর রটে গেল যে, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিহত হয়েছেন। এতে বহু মুসলমান হতোদ্যম হয়ে পড়ে। হযরতের গায়ে দুটি লোম বর্ম ছিল। এর ওজন ও যখমের যন্ত্রনায় তিনি উপরে উঠতে পারছিলেন না। হযরত তালহা কাঁধে করে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে তুলে নিলেন এবং তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা করা হল।এবার বিক্ষিপ্ত সাহাবাগণ আবার মহানবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর চতুর্দিকে সমবেত হলেন। হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও সাহাবাগণ যারা মাঠে ছিলেন সকলে পর্বতে আরোহণ করলেন। কাফেরগণ উঠতে চেয়েও ব্যর্থ হল। কাফির নেতা আবু সুফিয়ান উচ্চকন্ঠে জিজ্ঞাসা করলেন, মুহাম্মদ আছে কি? হযরত বললেন, চুপ থাক; আবার বললেন চুপ থাক। তখন সে চিৎকার করে বলল, মনে হয় এ তিনজনই নিহত হয়েছে। হযরত ওমর ধৈর্যচ্যুত হয়ে বলে ফেললেন-আল্লাহর রহমতে তিনজনই তোমাকে বিপদগ্রস্ত করার জন্য জীবিত আছেন। তারপর আবু সুফিয়ান বলল, আগামী বছর বদরে তোমাদের ও আমাদের মধ্যে আরার যুদ্ধ হবে। উহুদের যুদ্ধে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পবিত্র দাঁত নিহত হয়। এতে ৭০ জন মুসলমান শাহাদত বরণ করেন। কুরাইশদের পক্ষে নিহত হয় ২৩ জন।



উহুদ যুদ্ধের ফলাফল

ঈমান ও বিশ্বাসের পরীক্ষা

উহুদের পরাজয় অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা ও আত্মলহের ফল নয়; বরং েএটা ছিল ঈমানের অগ্নিপরীক্ষা। কারণ নিরবচ্ছিন্ন বিজয় কোন জাতির ভাগ্যেই জোটে না, বরং বিজয়ের আনন্দ ও পরাজয়ের গ্লানিকে সঙ্গী করেই বৃহত্তম সাফল্যের পথে এগোতে হয়। এজন্যই প্রয়োজন ধৈয্য ও ঈমানের। কুরাইশের বিজয় দেখে মুসলমানরা হতাশ হয়ে গেলে আল্লাহ ইরশাদ করেন- “তোমরা ভয় পেয়ো না, চিন্তিত হয়ো না, যদি তোমরা মু’মিন হও, তাহলে তোমাদের বিজয় আসবেই।”

মুসলমানদের মনোবল বৃদ্ধি

এ যুদ্ধে মুসলমানদের মনোবল বৃদ্ধি পায়। পরাজয়ের পরই তাঁরা তাঁদের ভুল বুঝতে পেরে যুদ্ধ বিধ্বস্ত হওয়ার পরও কুরাইশ বাহিনীকে ধাওয়া করেছিলেন।

মুনাফিক ও মু’মিন চিহ্নিতকরণ

এ যুদ্ধের ফলে মুসলমানদের কাছে মুনাফিক ও মু’মিন কারা তা চিহ্নিত হয়ে গেল।

ইহুদীদের বহিষ্কার

এ যুদ্ধের বিশ্বাসঘাতকতার অপরাধে ইয়াহুদীদের দু’টি গোত্র বানু কাইনুকা ও বানু কুরায়যা পর্যায়ক্রমে মদিনা হতে বিতাড়িত হয়।

জয়-পরজয়ের সন্তুষ্ট থাকার শিক্ষা

 এ যুদ্ধের পর জানা গেল নেতার আনুগত্য না মানলে কী করূণ দশা হতে পারে। আর জয়-পরাজয় সকল অবস্থাতেই আল্লাহর আনুগত্য ও সন্তুষ্ট থাকাই হচ্ছে খাঁটি মু’মিনের কর্তব্য।


শিশুর আধুনিক, সুন্দর ও অর্থবহ নাম


সুশৃঙ্খল জাতিতে পরিণত

উহুদের বিপর্যয় মুহূর্তে সংঘবদ্ধ হয়ে মুসলমানরা ‍নিজেদের নবীকে রক্ষা করেন। উহুদের বিপর্যরই মুসলমানদের সুশৃঙ্কখল সামরিক জাতিতে পরিণত করে।

উহুদের যুদ্ধে মুসলমানদের জয়-পরাজয়

উহুদ যুদ্ধে মুসলমানরা আপাতত দৃষ্টিতে পরাজয়বরণ করলেও প্রকৃতপক্ষে তাঁরাই বিজয় লাভ করেছিলেন। এ সাময়িক পরাজয়ে মুসলমানদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে কিছু রহস্য ও শিক্ষা নিহিত ছিল। এ পরাজয় ছিল ঈমানদারদের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ। এ পরীক্ষা মাধ্যমে নিষ্ঠাবান মু’মিন ও মুনাফিকদের মধ্যে পার্থক্য করা সম্ভব হয। এছাড়াও কাফিররা বিজয়লাভ করে মদিনায় প্রবেশ কিংবা যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থান করেনি। যুদ্ধ শেষে মুসলমানরা পশ্চাদ্ধাবন করলে তারা রণে ভঙ্গ দিয়ে পলায়ন করেছিল। কাজেই পলায়ন তো বিজয়ের লক্ষণ নয়। শত্রু সৈন্যও ২৩ জনের মতো নিহত হয়েছিল। কাফিরদের নিরঙ্কুশ প্রাধান্য এ ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। মুসলমানরা যদি পরাজিত হত, তবে কুরাইশরা মুদনা দখলের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিল তা বাস্তবায়নের ধারে কাছেও যেতে পারেনি কেন? কুরাইশদের প্রাধান্য বিস্তার লাভ না করার আরেকটি কারণ হচ্ছে আবু সুফিয়ানের বক্তব্য। সীরাতে ইবনে হিশামে রয়েছে-আবু সুফিয়ান উগুদের পাদদেশে দাঁড়িয়ে উমর (রা) কে উদ্দেশ্য করে বলেছিল, “মনে রাখবে আগামী বছর পুনরায় বদর প্রান্তরে তোমাদের সাথে মোকাবেলা হবে।” এ দ্বারা বুঝা যায় তারা যে উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিল, তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি।

উহুদ যুদ্ধ সত্যিকার অর্থে মুসলমানদের জন্য এক কঠোর অগ্নি পরীক্ষা ছিল। এ যুদ্ধে মুসলমানরা নৈতিক শিক্ষা লাভ করেছিল। যা পরবর্তী কালে ইসলাম বিস্তারে প্রভূত সাহায্য করেছিল।



উপসংহার

কুরাইশরা হিজরি তৃতীয় সনের ১৪ শাওয়াল মুসলমানদের মোকাবিলা করতে উহুদ প্রান্তরে মুখোমুখি হয়। কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে সেন্য ছিল ৩,০০০। এ সংবাদ পেয়ে সাহাবাদের কেরামের পরামর্শ অনুযায়ী ১,০০০ সৈন্যের এক কাফেলা উহুদের দিকে অগ্রসর হয়। পথিমধ্যে মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই  ৩০০ সৈন্য নিয়ে পলায়ন করে। নবী করিম (স) ‍মুজাহিদদেরকে সারিবদ্ধভাবে শত্রুদের আক্রমণ প্রতিহত করতে নির্দেশ দিলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরকে ৫০ জন সুদক্ষ তীরন্দাজ বাহিনীর নেতা করে পাহাড়ের গিরিপথে মোতায়েন করেন। নির্দেশ ছিল জয়লাভ করলেও যেন এ পথ না ছাড়েন। যুদ্ধের প্রথমাংশ মুসলমানরা জয়লাভ করেন। তীরন্দাজ বাহিনী রাসূলের নির্দেশ ভুলে বিজয় উল্লাসে গাণিমাতের মাল কুড়িয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। ফলে মুসলিম বহিনীর মধ্যে এক বিশৃঙ্কখলার সৃষ্টি হয। এ সুযোগে শত্রু সেনা খালিদ ইবনে ওয়ালিদ সুযোগ পেয়ে পাহাড়ের  পেছন দিক থেকে মুসলমানদের উপর তীব্র আক্রমণ চালায়। মুসলমানদের এব বড় অংশ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ‍যুদ্ধ ক্ষেত্র ত্যাগ করে। এমতাবস্থায় আবু বকর, আলী (রা) প্রমূখ ১১ জন সাহাবী নবীজীকে ঘিরে রেখে রক্ষা করেছিলেন। তবুও শত্রুর তরবারীর আঘাতে তিনি মাথায় আঘাত পেলেন এবং প্রস্তরাঘাতে তাঁর একটি দাঁতের কিয়দংশ শহীদ হয়ে যায়। মুসলমানগণ অপ্রত্যাশিতভাবে পরাজয়বরণ করল। হযরত হামযাহ (রা) সহ এ যুদ্ধে ৭০/৭৩ জন মুজাহিদ শাহাদত বরণ করেন এবং ২৩ জন শত্রু সৈন্য নিহত হয়। আপাতদৃষ্টিতে মুসলমানরা পরজিত হলেও প্রকৃতপক্ষে মুসলমানদের বিজয় হয়। মুসলমানরা এ যুদ্ধে থেকে অনেকে শিক্ষা লাভ করেন।


• IST-501 : Study of Al-Quran (Surah: Al-Fatah and Al-Hujurat) • IST-502 : Introduction to Islamic Dawah • IST-503 : Al-Sirat Al-Nababiah • IST-504 : Human Rights in Islam • IST-505 : Principles and History of Tafsir literature • IST-506 : Principles of Islamic Jurisprudence

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles