Monday, December 23, 2024

শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে দেশীয় ছোট মাছ

আমাদের পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও কল্যাণে ছোট মাছ খাওয়ার পরিমাণ ও হার বাড়ানোর গুরুত্ব অপরিসীম। ছোট মাছ পুষ্টি সমৃদ্ধ হওয়ায় এতে ভিটামিন এ, আয়রন, জিংকক্যালসিয়াম বেশী থাকে এবং এগুলো প্রাণিজ প্রোটিন ও অত্যাবশ্যকীয় স্নেহ উপাদানের ভালো উৎসও বটে। ছোট মাছগুলো সাধারণত গোটা খাওয়া হয় বলে এগুলোর পুষ্টিগুণও অনেক বেশী।



গর্ভবতী নারী ও বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মায়েদের এবং ৬ মাস থেকে ২ বছর বয়সী ছোট বাচ্চাদের বেশী করে ছোট মাছ খাওয়া উচিত। এতে শিশুদের স্বাস্থ্যবান হয়ে বেড়ে ওঠা ও বিকাশ ত্বরান্বিত হয়। এতে করে তারা স্কুলে ভালো ফলাফলসহ পরবর্তীতে কর্মজীবনেও ভালো করতে পারে।

বাংলাদেশে ২ কোটিরও অধিক মানুষ, বিশেষত নারী ও ছোট শিশুরা ভিটামিন এ, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও জিংকের দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতিতে ভূগছে। এ সকল ভিটামিন ও খনিজ উপকরণকে অণুপুষ্টি বলা হয় যা শরীরের পুষ্টি ও সুস্বাস্থ্যের জন্য জরুরী।

শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে দেশীয় ছোট মাছ

দৈনন্দিন খাবারে যথেষ্ট অণুপুষ্টি না গেলে শিশুরা অপুষ্টির শিকার হয়, তাদের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং স্বাভাবিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। অপুপুষ্টির অভাবে তাদের মস্তিস্ক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয়। ফলে তাদের পক্ষে স্কুলে শেখা এবং পরবর্তীতে কর্মজীবনেও ভালো করা কঠিন হয়ে গড়ে। এ ধরনের ক্ষতি অপূরণীয়, তবে অণুপষ্টি সমৃদ্ধ খাবার যেমন ছোট মাছ, অন্যান্য প্রাণিজ খাবার, শাক-সবজী ও ফলমূল খাওয়ার মাধ্যমে এই ক্ষতি প্রতিরোধ করা সম্ভব।


আরো পড়তে পারেন: পৃষ্টিগুণে ভরপুর দেশীয় ফল কাঁঠালের উপকারিতা


সীমিত আয়, অপুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার কেনার সামর্থ্যের অভাব, প্রথাগত খাদ্যাভ্যাস ও সংস্কৃতির কারণে বাংলাদেশের অনেক গ্রামীণ পরিবার খাবার হিসাবে মূলত ভাতের ওপরই নির্ভরশীল। শরীরে শক্তির ভালো উৎস হলেও ভাত সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় যথেষ্ট অণুপুষ্টির যোগান দিতে পারে না।

ছোট মাছের উপকারিতাসমূহ

বিভিন্ন ছোট জাতের মাছ যেমন মলা, দারকিনা এবং ঢেলা মাছ পুষ্টির চাহিদা পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। সাংস্কৃতিকভাবেই বাংলাদেশের মানুষের খাবারে ছোট মাছ খুব সাধারণ তরকারী হলেও এগুলো যথেষ্ট পরিমাণে এবং বারে বারে খাওয়া হয় না। বিশেষত গর্ভবতী নারী, বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মা এবং ৬ মাস থেকে ২ বছর বয়সী ছোট বাচ্চাদের ছোট মাছ খাওয়ার হার আরও কম। ছোট মাছগুলো খুব অল্প পরিমাণেও কেনা যায় এবং অপেক্ষাকৃতভাবে দামে সস্তা বলে গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের সামর্থ্যের ভেতরে থাকে।

জীবনের প্রথম ১ হাজার দিনে মাছের গুরুত্ব

একজন সুস্থ-সবল শিশু জন্মদানে একজন মায়ের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যগত অবস্থা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিধায় মেয়ে ও নারীদের জন্য অণুপুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া অত্যাবশ্যক। গর্ভসঞ্চার থেকে শুরু করে ২ বছর বয়স পর্যন্ত একজন শিশুর জীবনের প্রথম ১ হাজার দিন তার বৃদ্ধি ও পরবর্তী বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়।

গর্ভাবস্থায় ও বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়কালে শিশুর পুষ্টি ও স্বাস্থ্য নির্ভর করে মায়ের পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার ওপর। শিশুর বয়স ৬ মাস পূর্ণ হলে তাকে বুকের দুধের পাশাপাশি সম্পূরক পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। বুদ্ধিমান, স্বাস্থ্যবান ও সবল হিসাবে বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে ছোট বাচ্চাদের খাবারে অবশ্যই অণুপুষ্টি সমৃদ্ধ ছোট মাছ যোগ করতে হবে।


আরো পড়তে পারেন: বয়স ৩০ ছুয়েছে! কী খাবেন, কী খাবেন না


ছোট মাছ দিয়ে খাবার তৈরি ও খাওয়ানোর পদ্ধতি

রান্না করা মাছ মিহি করে বেটে নিয়ে বাচ্চাদের উপযোগী করে রান্না করা ভাত ও শাকসবজীর সাথে মিশিয়ে নেয়া যেতে পারে। পছন্দের খাবার খিড়ুড়ির ঝোল, ডাল ও সবজীসহ রান্না করা মাছ বেটে দিলেও অনেক সুস্বাদু হয়। এটা বাচ্চাদের জন্য খাওয়া যেমন সহজ তেমনি উচ্চ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ।

বাংলাদেশীদের খাবারে ছোট মাছ খুব জনপ্রিয়। সাধারণত, শাকসবজীর মধ্যে ছোট মাছ দিয়ে তরকারী রান্না করা হয়। ভাত ও শাক-সবজীর সাথে খাওয়ার জন্য তাজা ছোট মাছ বা ছোট মাছের শুটকি দিয়ে ভর্তাও (রান্না করে ডলে বানানো) বানানো যায়। অনেক সময় মশলা ও তেল দিয়ে শুটকির চাটনিও বানানো যায়। মাছের এসব খাবার অনেক সুস্থাদু বলে সবাই খুব পছন্দ করে এবং এগুলো অণুপুষ্টি সমৃদ্ধ। ছোট মাছের শুটকি দিয়ে বানানো খাবার ও চাটনি সারা বাংলাদেশে পুরো বছর জুড়েই খাওয়া যেতে পারে।

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles