Sunday, December 22, 2024

ইসলামি দাওয়াতের বিষয়বস্তু সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসের আলোকে আলোচনা করুন

প্রশ্ন: ইসলামি দাওয়াতের বিষয়বস্তু সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসের আলোকে আলোচনা করুন ▶ বিষয়: (IST-502) Introduction to Islamic Dawahকোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)



ভূমিকা

মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান জানানো এবং তাদেরকে সত্য ও সুন্দরের পথে পরিচালিত করে আল্লাহ সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে দাওয়াত পরিচালিত হয়। প্রথম নবি হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে বিশ্ব নবি হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পর্যন্ত প্রেরিত সকল নবি-রাসূল এ সব লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে সামনে নিয়ে দাওয়াতের কাজ পরিচালনা করেছেন। দাওয়াত এমন একটি প্রক্রিয়া যা ছাড়া ইসলামের প্রচার, প্রসার, প্রতিষ্ঠা, সংরক্ষণ, মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ ও মুক্তি সম্ভব নয়। দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং পার্থিব মুক্তির জন্যই তাই দাওয়াত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় কাজ।

ইসলামি দাওয়াতের বিষয়বস্তু

দাওয়াত নবী-রাসুলগণের মূল দায়িত্ব। প্রত্যেক নবী-রাসুলগণকে আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াত দেয়ার জন্যই পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনের সূরা আল-আরাফ এর ১৫৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-

﴿ٱلَّذِينَ يَتَّبِعُونَ ٱلرَّسُولَ ٱلنَّبِيَّ ٱلۡأُمِّيَّ ٱلَّذِي يَجِدُونَهُۥ مَكۡتُوبًا عِندَهُمۡ فِي ٱلتَّوۡرَىٰةِ وَٱلۡإِنجِيلِ يَأۡمُرُهُم بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَىٰهُمۡ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ﴾ [الاعراف: ١٥٧]

“যারা অনুসরণ করে বার্তাবাহক উম্মি নবীর, যাঁর উল্লেখ তারা তাদের নিকট রক্ষিত তাওরাত ও ইঞ্জীলে লিপিবদ্ধ পায়, যিনি তাদেরকে সৎকাজের নির্দেশ দেন এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করেন।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৭]


আরো পড়তে পারেন: দাওয়াহ সম্পর্কে কোরআনের ১০টি আয়াত লিখুন


এই আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কর্মকে আদেশ ও নিষেধ নামে অভিহিত করা হয়েছে। নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যা করেছেন প্রতিটি কাজই আল্লাহর নির্দেশে করেছেন। তাই তার প্রতিটি কাজই আমাদের জন্য কোন আদেশ বা নিষেধের অন্তর্ভূক্ত। অন্যত্র এই কাজ বা কর্মকে দাওয়াত বা আহ্বান নামে অভিহিত করা হয়েছে। যেমন, আল্লাহ তায়ালা সূরা আল-হাদীদ এর ৮ নম্বর আয়াতে বলেন-

﴿وَمَا لَكُمۡ لَا تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلرَّسُولُ يَدۡعُوكُمۡ لِتُؤۡمِنُواْ بِرَبِّكُمۡ﴾ [الحديد: ٨]

“তোমাদের কী হলো যে, তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আন না, অথচ রাসূল তোমাদেরকে আহ্বান করছেন যে, তোমরা তোমাদের রবের ওপর ঈমান আন।” [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ৮]

রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ দায়িত্বকে দাওয়াত বা আহ্বান বলে অভিহিত করে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের সূরা আন-নাহর এর ১২৫ নম্বর আয়াতে বলেন-

﴿ٱدۡعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِٱلۡحِكۡمَةِ وَٱلۡمَوۡعِظَةِ ٱلۡحَسَنَةِۖ وَجَٰدِلۡهُم بِٱلَّتِي هِيَ أَحۡسَنُ﴾ [النحل: ١٢٥]

“আপনি আপনার রবে দিকে আহ্বান করুন হিকমত বা প্রজ্ঞা দ্বারা এবং সুন্দর ওয়াজ-উপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে উৎকৃষ্টতর পদ্ধতিতে আলোচনা-বিতর্ক করুন।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ১২৫]

পবিত্র কোরআনে নবী-রাসুলগণের এই দায়িত্বকে তাবলীগ বা প্রচার বলে অভিহিত করা হয়েছে।


আরো পড়তে পারেন: ইসলামি দাওয়াতের সংজ্ঞা দিন, ইসলামি দাওয়াতের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ আলোচনা করুন


কুরআনুল কারীমে বারবার বলা হয়েছে যে, প্রচার বা পোঁছানোই রাসূলগণের একমাত্র দায়িত্ব। মহান আল্লাহ তায়ালা হযরত নূহ (আ.), হযরত ইবরাহীম (আ.), হযরত মূসা (আ.), হযরত ঈসা (আ.)সহ সকল নবী-রাসুলকে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে কাফির মুশরিকদের কাছে দাওয়াত পৌছানোর জন্য প্রেরণ করেছেন। তাবারি, ইবন কাসির ও অন্যান্য মুফাসসির, সাহাবী-তাবেঈ মুফাসসিরগণ সকলে দ্বীন প্রতিষ্ঠার অর্থ হলো দ্বীন পালন করাকে বুঝিয়েছেন। আর দীন পরিপূর্ণ পালনের মধ্যে রয়েছে আদেশ, নিষেধ ও দাওয়াত। আল্লাহ তায়ালা সুরা আন-নাহর এর ৩৫ নম্বর আয়াতে বলেছেন-

﴿فَهَلۡ عَلَى ٱلرُّسُلِ إِلَّا ٱلۡبَلَٰغُ ٱلۡمُبِينُ﴾ [النحل: ٣٥]

“রাসূলগণের দায়িত্ব তো কেবল সুস্পষ্টভাবে প্রচার করা।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৩৫]

দ্বীনের দাওয়াতের আরেক নাম নসীহত। নসীহত বর্তমানে সাধারণভাবে উপদেশ অর্থে ব্যবহৃত হলেও মূল আরবিতে নসীহত অর্থ আন্তরিকতা ও কল্যাণ কামনা। কাজের পরামর্শ দেওয়া ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য নিষেধ করেই হলো কারো প্রতি আন্তরিকতা ও কল্যাণ কামনার বাস্তব রূপ। এই কাজটি মুমিনদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি অন্যতম দায়িত্ব। আর এটাই দাওয়াত, এই কাজটিই দ্বীনের কাজ। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন-

“দীন হলো নসীহত। সাহাবীগণ বললেন, কার জন্য? তিনি বললেন, আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জন্য, মুসলিমগণের নেতৃবর্গের জন্য এবং সাধারণ মুসলিমদের জন্য।”



রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ নসীহতের জন্য সাহাবীগণের বাই‘আত তথা দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতেন। তিনি সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধের বাই‘আত গ্রহণ করতেন। উবাদাহ ইবন সামিত ও অন্যান্য সাহাবীগণ বলেন, “আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে বাই‘আত করি আনুগত্যের এবং সৎকর্মে আদেশ ও অসৎকর্মে নিষেধের এবং এ কথার ওপর যে, আমরা মহিমাময় আল্লাহর জন্য কথা বলব এবং সে বিষয়ে কোন নিন্দুকের নিন্দা বা গালি-গালাজের তোয়াক্কা করব না।”

এগুলো থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, দাওয়াত হলো প্রত্যেক মুমিনের অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। কারো অন্যায় দেখতে পেলে সাধ্য ও সুযোগ মত তার পরিবর্তন বা সংশোধন করার জন্য বলা এবং সেই সাথে তাকে ভালো কাজের জন্য পরামর্শ ও উৎসাহ প্রদান করা। অন্যায়ের প্রতি হৃদয়ের বিরক্তি ও ঘৃণা না থাকা ঈমান হারানোর লক্ষণ।



উপসংহার

বর্তমান সময়ে আমরা অগণিত পাপ, কুফর, হারাম ও নিষিদ্ধ কর্মের মধ্যে বসবাস করছি। বারংবার দেখতে দেখতে এসব গুনাহের কাজের বিষয়ে আমাদের মনের বিরক্তি ও আপত্তি কমে যায়। তখন এসব হীন কাজগুলোকেও স্বাভাবিক মনে হয়। কিন্তু এসব বিষয়ে যখন অন্য কেউ একজন স্মরণ করিয়ে দেন তখন আমার সম্বিত ফিরে আসে। তাই বর্তমান সময়ে দাওয়াতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় অপরিসীম।


• IST-501 : Study of Al-Quran (Surah: Al-Fatah and Al-Hujurat) • IST-502 : Introduction to Islamic Dawah • IST-503 : Al-Sirat Al-Nababiah • IST-504 : Human Rights in Islam • IST-505 : Principles and History of Tafsir literature • IST-506 : Principles of Islamic Jurisprudence


বিগত বছরের প্রশ্নসমূহ (এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ)

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles