Saturday, June 29, 2024
HomeUncategorizedপদার্থবিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান আলোচনা করুন৷

পদার্থবিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান আলোচনা করুন৷

প্রশ্ন: পদার্থবিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান আলোচনা করুন৷ বিষয়: IST-512 : Muslim Contribution to Science and Technology কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)



ভূমিকা

জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখার প্রাথমিক যুগে মুসলমানদের অবদান উল্লেখযোগ্য। জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার মতে পদার্থবিজ্ঞানেও মুসলিম মনীষীদের গুরত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। যেসব মুসলিম মনীষী পদার্থবিজ্ঞানে অসামান্য অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে হাসান ইবনে হায়সাম, আবু রাইহান আল বিরুনি, আবুল ফাতাহ আল খাজনি, মুহাম্মাদ আবদুস সালাম ও জামাল নজরুল ইসলামের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

পদার্থবিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান

বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার মতো পদার্থবিজ্ঞানে যেসকল মুসলমান মনীষীদের অবদান রয়েছে, সে সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো-

হাসান ইবনে হাইসাম

হাসান ইবনে হাইসাম শ্রেষ্ঠ মুসলিম পদার্থবিজ্ঞানী। তিনি ৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।  তিনি স্পেনের কর্ডোভা বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাশাস্ত্র ও পদার্থবিদ্যা বিষয়ে শিক্ষাগ্রহণ করেন। ১০০৫ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন ফাতেমীয় শাসক আল হাকিম কায়রোতে ‘দারুল হিকমা’ নামে একটি বিজ্ঞান গবেষণাগার এবং একটি মানমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। ইবনে হায়সামকে এ গবেষণাগার ও মানমন্দিরের অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হয়। এ দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে তিনি গ্রিক ও ল্যাটিন ভাষায় পদার্থবিদ্যার গ্রন্থগুলো অনুবাদ করেন। এর পাশাপাশি আলোকবিজ্ঞানের ওপর ব্যাপক গবেষণা চালিয়ে তিনি নিজেও কয়েকখানা মৌলিক গ্রন্থ রচনা করেন। ‘কিতাবুল মানাযির’ নামে তিনি দৃষ্টিবিজ্ঞান বিষয়ক একটি মৌলিক গ্রন্থ রচনা করেন। এটি ছিল মধ্যযুগে আলোকবিজ্ঞানের ওপর একমাত্র গ্রন্থ।


👉 আরো পড়তে পারেন: প্রযুক্তি কাকে বলে? প্রযুক্তির উন্নয়নে মুসলমানদের অবদান লিখুন।


ইবনে হায়সাম আলোর প্রতিফলন ও প্রতিসরণ বিষয়ে গ্রিকদের ভুল ধারণা খণ্ডন করেন। তৎকালীন সময়ে গ্রিকরা মনে করত, চোখ থেকে বের হওয়া আলো বাহ্য পদার্থকে দৃষ্টিগোচর করায়। কিন্তু ইবনে হায়সাম দেখান যে, বাহ্য পদার্থ থেকেই আমাদের চোখে আলোক রশ্মি প্রতিফলিত হয় এবং এভাবেই আমরা দর্শনযোগ্য বস্তুসমূহ দেখতে পাই।

ইবনে হাইসাম গতিবিজ্ঞান নিয়েও কাজ করেছেন। তিনি ম্যাগনিফায়িং গ্লাস আবিষ্কার করেন। তার লিখিত একটি গ্রন্থে তিনি বায়ুমণ্ডলের ওজন, চাপ এবং মাধ্যাকর্ষণ শক্তি বিষয়ে আলোকপাত করেন। সেখানে তিনি প্রমাণ করেন যে, পদার্থের ওপর বায়ুমণ্ডলের চাপের তারতম্যের জন্য পদার্থের ওজনেও তারতম্য হয়। স্যার আইজাক নিউটনকে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আবিষ্কারক মনে করা হলেও ইবনে হায়সাম এ তত্ত্বের মূল প্রবক্তা।

আবু রায়হান আল বিরুনি

পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একটি পরিচিত নাম মুসলিম মনীষী আবু রাইহান আল বিরুনি ৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি শতাধিক ধরনের বিভিন্ন ধাতু ও পাথর সংগ্রহ করে সেগুলো নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি প্রায় ১৮ ধরনের মূল্যবান ধাতু ও পাথরের ঘনত্ব নির্ণয় করতে সক্ষম হন। স্থিতিবিদ্যা (Statics) ও গতিবিদ্যাকে (Dynamics) একীভূত করে বলবিদ্যা (Mechanics) নামক গবেষণার নতুন ক্ষেত্র প্রবর্তন করেন তিনি। ১০৪৮ খ্রিস্টাব্দে এই মুসলিম মনীষী ও পদার্থবিজ্ঞানী মৃত্যুবরণ করেন।


👉 আরো পড়তে পারেন: মুসা আর খাওয়ারিজমী কে ছিলেন৷ গণিত শাস্ত্রে তার অবদান মূল্যায়ন করুন৷


মুহাম্মাদ আবদুস সালাম

বর্তমান পাকিস্তানের পাঞ্জাবে ১৯২৬ সালের ২৯ জানুয়ারি বিখ্যাত মুসলিম পদার্থবিজ্ঞানী মুহাম্মদ আবদুস সালাম জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষা ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে তিনি পারিবারিকভাবে প্রাথমিক বুনিয়াদি শিক্ষা গ্রহণ করেন। আবদুস সালাম মাত্র ১৪ বছর বয়সে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর অর্জন করেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৯ সালে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে বি.এ (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন। আবদুস সালাম প্রাক-ডক্টরেট পর্যায়ে পদার্থবিজ্ঞানে অসাধারণ অবদান রাখায় ১৯৫০ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্মিথ পূরস্কারে ভুষিত করা হয়। তিনি ১৯৫১ সালে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ওপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তার পিএইচডি গবেষণার বিষয় ছিল কোয়ান্টাম ইলেকট্রোডায়নামিকসের মৌলিক কাজ (Fundamental work in quantum electrodynamics)। এই গবেষণার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেন। আবদুস সালাম পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে ১৯৫৭ সাল থেকে তিনি লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। প্রায় চল্লিশ বছর যাবৎ মুসলিম বিজ্ঞানী আবদুস সালাম সেখানে পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক কণাতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করেন।

এছাড়াও পদার্থবিজ্ঞানে তার উল্লেখযোগ্য অবদান হলো- পার্টি-সালাম মডেল, ম্যাগনেটিক ফোটন, ভেক্টর মেসন, গ্র্যান্ড ইউনিফাইড তত্ত্ব ও ইলেকট্রোউইক ইউনিফিকেশন তত্ত্ব (Electroweak Unification Theory) প্রভৃতি। তিনি ১৯৭৯ সালে প্রথম ও একমাত্র মুসলিম মনীষী হিসেবে ইলেকট্রোউইক ইউনিফিকেশন তত্ত্বের জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। উন্নয়নশীল দেশগুলারে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে আবদুস সালামের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তিনি ১৯৯৬ সালের ২১ নভেম্বরে যুক্তরাজ্যে মৃত্যুবরণ করেন।



জামাল নজরুল ইসলাম

বিখ্যাত গণিতবিদ ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম ১৯৩৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৪ সালে যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায়োগিক গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ওপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তার মৌলিক গবেষণার বিষয় ছিল মহাবিশ্বের উৎপত্তি, গঠন, বিবর্তন ও পরিণতি সম্পর্কে। বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইন ও মুহাম্মাদ আবদুস সালামের গবেষণার সূত্র ধরে তিনি তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আন্তরিক চেষ্টা করেন। কর্মজীবনে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। প্রায়োগিক গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণার লক্ষ্যে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও পরিণতি সম্পর্কে তিনি দুইটি বই লিখেছেন। তার দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ হলো The Ultimate Fate of The Universe এবং An Introduction to Mathematical Cosmology। তাঁর রচিত বই জাপানি, ফরাসি ও পর্তুগিজসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে এবং সেগুলো অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজসহ বিশ্বের বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। বিজ্ঞানে তার অসামান্য অবদানের জন্য তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক পুরস্কারে ভুষিত হয়েছেন। তিনি ২০০১ সালে একুশে পদক লাভ করেন। এই মুসলিম মনীষী ২০১৩ সালের ১৬ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন।

উপসংহার

আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রায় প্রতিটি শাখাতেই মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান অসামান্য। এরকম অনেক বিজ্ঞানী ও অবদানকারী রয়েছেন যাদের অবদানের কথা সাধারণ মানুষের সামনে আলোচনা হয় না। তাই তাদের সম্পর্কে বিশেষ করে বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান সম্পর্কে আমরা খুবই সামান্যই জ্ঞান রাখি।



সম্ভাব্য প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ (এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ)

• IST-507 : Study of Al-Hadith (Al-Mishkat Al-Masabih: Al-Iman, AlILM and Al-Salat (Selected Hadith) • IST-508 : Principles and History of Hadith literature • IST-509 : Muslim Personal Law and Law of Inheritance in Islam • IST-510 : Banking and Insurance in Islam • IST-511 : Study of Religions (Islam, Buddhism, Hinduism, Judaism, Christianity) • IST-512 : Muslim Contribution to science and technology

x

tiltony.com
tiltony.comhttp://www.tiltony.com
তিলটনি.কম একটি বাংলা ব্লগ সাইট। সঠিক, নির্ভরযোগ্য ও পূর্ণ তথ্য সমৃদ্ধ কনটেন্ট প্রকাশ করার উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ওয়েবসাইটটি।বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ‣ শিক্ষা ‣ স্বাস্থ্য ‣ জীবনযাপন ‣ পাঁচমিশালি ‣ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও সংবাদ পেতে ভিজিট করুন।
RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments