▶ প্রশ্ন: জ্যোতির্বিদ্যায় মুসলমানদের অবদান আলোচনা করুন। ▶ বিষয়: IST-512 : Muslim Contribution to Science and Technology ▶ কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)
ভূমিকা
জ্যোতির্বিজ্ঞান হলো প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের অন্যতম একটি শাখা। গ্রহ, উপগ্রহ, ছায়াপথ, তারকা ও ধূমকেতু ইত্যাদি মহাজাগতিক বস্তুর বিকিরণ ও বিবর্তনের ধারাটিকে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ ও ব্যাখ্যা করা হয় জ্যোতির্বিজ্ঞানে। জ্যোতির্বিজ্ঞানের রয়েছে পর্যবেক্ষণমূলক ও তাত্ত্বিক দুটি উপ শাখা। জ্যোতির্বিজ্ঞানে মুসলমান বিজ্ঞানীদের অবদান অনস্বীকার্য। জ্যোর্তিবিজ্ঞানের শুরুর দিকে মূলত মুসলিম বিজ্ঞানীরাই এর ভিত্তি গড়ে তোলেন তাদের গবেষণা ও আবিস্কারের অনবদ্য অবদানের মাধ্যমে।
জ্যোতির্বিদ্যায় মুসলমানদের অবদান
জ্যোতির্বিদ্যায় মুসলমান বিজ্ঞানীগণের অবদান অবিস্মরণীয়। এ বিষয়ে তাদের আবিষ্কার ও গবেষণা ছিল অসংখ্য। তাঁদের সম্পর্কে বলা হয় যে, “নভোমণ্ডলে তাঁরা নিজেদের খ্যাতি প্রতিষ্ঠা করেন।” সৌরজগত ও গ্রহ-নক্ষত্রের গতি ও পরিক্রমা সম্পর্কে তাঁরা বহু বিচিত্র তথ্য আবিষ্কার করেন। ইবনে জুনাস, নাসিরউদ্দীন তুসী ও আলবানী মূল্যবান জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত নির্ঘন্ট প্রণয়ন করেন। মুসলমানগণই সর্বপ্রথম ইউরোপে মান-মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন এবং দূরবীক্ষণ যন্ত্র, দিক নির্ণয় যন্ত্র, দোলক ও অন্যান্য সাহায্যকারী যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করেছিলেন।
খ্যাতিমান মুসলিম জ্যোতির্বিদগণ
নিম্নে বিশ্বের বিখ্যাত কয়েকজন উল্লেখযোগ্য মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং তাদের অবদান সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
ইয়াকূত আল ফাজারী
৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে জ্যোতির্বিদ ইয়াকূত আল ফাজারী খলীফা মনসূরের দরবারে ‘মানকা’ নামে একজন হিন্দু জ্যোতির্বিদকে উপস্থিত করেন। ‘মানকা’ ‘সিদ্ধান্ত’ নামে ভারতীয় জ্যোতির্বিদ্যার উপর একটি নতুন গ্রন্থ পেশ করেন। ভারতের ‘সিদ্ধান্ত’ গ্রন্থের প্রভাবে ইসলামে প্রথম জ্যোতির্বিদ্যা চর্চা শুরু হয়। খলীফা আল মনসূরের সময়েই ‘সিদ্ধান্ত’ গ্রন্থটি আরবীতে অনুবাদ করেন মুহাম্মাদ ইবনে ইব্রাহীম আল-ফাজারী।
আল-নেহাওয়ান্দী
আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ আল নেহাওয়ান্দী ছিলেন প্রাথমিক যুগের একজন বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ । তিনি নিজের অভিজ্ঞতা হতে ‘আল-মুশতামল’ নামে যে জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত নির্ঘন্ট প্রণয়ন করেন, তা গ্রীক ও হিন্দু উভয় জ্যোতির্বিদ্যার পথপ্রদর্শক হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক আল-মামূন বিদেশী গ্রন্থ অনুবাদের জন্য ‘বায়তুল হিকমাহ’ (জ্ঞানগৃহ) প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া জ্যোতির্বিদ্যার উপর গবেষণার কাজ চালাবার জন্য তিনি সিনদ ইবনে আলী ও ইয়াহইয়া ইবনে আবী মনসূরের তত্ত্বাবধানে বাগদাদে সামাসীয়া ফটকের নিকট একটি মান-মন্দির স্থাপন করেন। বানূ মূসা ভ্রাতৃদ্বয়ও নিজেদের জন্য একটি মান-মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। মান-মন্দির প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি ইউরোপীয়গণ মুসলমানদের নিকট হতে অনুকরণ করে এর যথেষ্ট উন্নতি বিধান করে৷
আল ফারাগনী
আল মামুনের শাসনামলের অন্যতম জ্যোতির্বিদ ছিলেন আবুল আব্বাস আল ফারাগনী। জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ে তাঁর একটি বিস্তৃত গ্রন্থ (Elements of Astronomy) পনের শতক পর্যন্ত এ বিষয়ের প্রামাণিক গ্রন্থ বলে বিবেচিত ছিল। তিনি পৃথিবীর ব্যাস নতুন করে পরিমাপ করেছিলেন এবং গ্রহসমূহের আপেক্ষিক দূরত্ব নির্ধারণ করেছিলেন।
আবুল মাশার বালখী
আবুল মাশার বালখী বিশিষ্ট জ্যোতির্বিদ ছিলেন। জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ে রচিত তাঁর চারটি গ্রন্থ ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয়। জোয়ার-ভাটা সম্পর্কে তিনি এক সঠিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। তাঁর মতে, পৃথিবীর উপর চন্দ্রের আকর্ষণই জোয়ার-ভাটার কারণ।
আল-বাতানী
জ্যোতির্বিদ্যার ক্ষেত্রে পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন আল-বাতানী। তিনি ছিলেন বিশিষ্ট মুসলিম জ্যোতির্বিদদের অন্যতম। নিজস্ব প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে তিনি নক্ষত্রের একটি তালিকা প্রণয়ন করেছিলেন। তাঁর গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের কারণে মধ্যযুগে ও রেনেসাঁ আমলের ল্যাটিন পণ্ডিতদের দ্বারা তিনি উচ্চ প্রশংসিত হয়েছিলেন।
আবুল হাসান
আবুল হাসান টিউব দ্বারা একটি স্কুল টেলিস্কোপ তৈরি করেছিলেন। এটি কায়রো ও মারাঘার পর্যবেক্ষণাগারে ব্যবহৃত হয়েছিল। এসব পর্যবেক্ষণাগার জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণাদির ব্যাপারে বিশেষ সহায়ক ছিল। এজন্যই আব্বাসীয় আমলে জ্যোতির্বিদ্যার ক্ষেত্রে লক্ষণীয় অগ্রগতি সাধিত হয়। দশম শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বাগদাদে যে সকল বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ কর্মরত ছিলেন, তাদের মধ্যে আলী ইবনে আমাজুর ও আবুল হাসান এ দুই জনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ্য। চাঁদের গতি নির্ধারণ এবং চাঁদের কলা পর্যবেক্ষণে তাদের বিশেষ অবদান ছিল।
আবদুর রহমান আস-সূফী
মুসলিম যুগের পরবর্তী জ্যোতির্বিদদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, আবদুর রহমান আস-সূফী। তিনি পর্যবেক্ষণমূলক জ্যোতির্বিদ্যায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। তাঁর ‘নক্ষত্ররাজীর গতি’ শীর্ষক গ্রন্থটি নাক্ষত্রিক ঘটনাবলী অধ্যয়নে বিশেষ সহায়ক ছিল।
কায়রোর ইবনে ইউনুস যে গবেষণাকর্ম সম্পন্ন করেছিলেন, তা পরবর্তীকালে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের পথ সুগম করেছিল। আল বিরুনী প্রাকৃতিক ঘটনাবলীর সঠিক পর্যবেক্ষণ করে প্রথম সারির জ্যোতির্বিদ হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। প্রখ্যাত কবি ওমর খইয়ামও ছিলেন একজন বিশিষ্ট জ্যোতির্বিদ। তিনি সেলজুক সুলতান জালালুদ্দীন মালিক শাহ-এর নামানুসারে জালালী বর্ষপঞ্জী (আত-তারীখ আল জালালী) সংকলন করেন। মঙ্গোলীয় যুগে নাসিরউদ্দীন তূসী একজন প্রধান দার্শনিক ও জ্যোতির্বিদ ছিলেন। তিনি মারাঘায় তার নিজের মান-মন্দিরে পর্যবেক্ষণ চালান এবং ইলখানি নির্ঘণ্ট নামে জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত নির্ঘণ্ট প্রস্তুত করেন।
উপসংহার
মূলত জ্যোতির্বিজ্ঞানে মুসলিম জ্যোতির্বিদগণ যে অবদান রেখে গেছেন, তা ছিল অনেকাংশেই মৌলিক। ৭৬২ খ্রিস্টাব্দে বাগদাদ নগরীর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই তা বিশ্ব সংস্কৃতির কেন্দ্র হয়ে ওঠে। নওবখত ও মাশাআল্লাহ নামে দুজন বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ এ শহরের নকশা তৈরি করে দেন। আল খারিযমী ছিলেন একাধারে একজন বিশিষ্ট গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ। তিনি একটি জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত ছক প্রস্তুত করেছিলেন। তাই সংক্ষেপে বলা যায়, আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের মূল ভিত্তি মুসলমান বিজ্ঞানীরাই গড়ে তুলেছিলেন। তাদের অবদানের ভিত্তি ধরেই আজকের এই অবস্থান জ্যোতির্বিজ্ঞান।
সম্ভাব্য প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ (এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ)
• IST-507 : Study of Al-Hadith (Al-Mishkat Al-Masabih: Al-Iman, AlILM and Al-Salat (Selected Hadith) • IST-508 : Principles and History of Hadith literature • IST-509 : Muslim Personal Law and Law of Inheritance in Islam • IST-510 : Banking and Insurance in Islam • IST-511 : Study of Religions (Islam, Buddhism, Hinduism, Judaism, Christianity) • IST-512 : Muslim Contribution to science and technology •