ডেস্কটপ কম্পিউটারের জন্য ব্যবহৃত অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে সারা পৃথিবীতে এখনও সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো মাইক্রোসফট করপোরেশনের উইন্ডোজ। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম এর যতগুলো ভার্সরন এ পর্যন্ত এসেছে তার মধ্যে উইন্ডোজ ১০ হলো সর্বশেষ। মাইক্রোসফ করপোরেশন উইন্ডোজ ১০ তৈরির সময় এর সিকিউরিটি ফিচারের দিকে খুব বেশি মনোযোগ দিয়েছে। এর সিকিউরিটি ফিচার অত্যন্ত চমৎকার। উইন্ডোজ ১০ ব্যবহারকারী অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন এই ভার্সনটি ব্যবহার করে। তবে যারা সাধারণ ব্যবহারকারী তারা প্রায়ই উইন্ডোজ ১০ এর আপডেট নিয়ে ঝামেলায় পড়েন। কম্পিউটারে কাজ করার সময় উইন্ডোজ ১০ অটোমেটিক আপডেটগুলো ডাউনলোড করতে থাকে। এতে কম্পিউটার কানেকশন ধীরগতি (স্লো) হয়ে যায়। অন্য কোন কাজ করতে সময় নেয়। পরে যখন আপডেটগুলো ইনস্টল হয় তখন কম্পিউটার স্লো হয়ে যায়। এতে সাধারণ ব্যবহারকারীগণ যথেষ্ট ঝামেলায় পড়েন, বিরক্তি বোধ করেন।
এই সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য উইন্ডোজ ১০ অটো আপডেট বন্ধ করে রাখতে পারেন। সহজ কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করে বন্ধ করে রাখতে পারেন উইন্ডোজ ১০ আপডেট। নতুন করে উইন্ডোজ দেওয়ার পরে করনীয় হিসেবে আপনি উইন্ডোজ ১০ আপডেট বন্ধ করে রাখতে পারেন।
ধাপগুলো অনুসরণ করুন
০১. প্রথমেই কী-বোডের্র windows logo key + R কী দুটি একসাথে চাপুন। এতে উইন্ডোজের Run ডায়ল বক্সটি চালু হবে।
০২. বক্সে services.msc লিখে কীবোডের্র Enter বাটন চাপুন অথবা বক্সের OK বাটনে ক্লিন করুন।
০৩. এবার উইন্ডোটিতে ডানপাশে যে নামের লিস্টটি রয়েছে সেখান থেকে Windows Update Media Service টিতে ডাবল ক্লিক করে ওপেন করুন।
০৪. এখন Windows Update Media Service Properties (Local Computer) ডায়লগ বক্সটিতে General ট্যাবে Startup type বক্সে ক্লিক করে Disabled সিলেক্ট করে OK করে দিন। তাহলেই উইন্ডোজের অটো আপডেট বন্ধ হয়ে যাবে।
ছোট বেলার একটি ঘটনা। ৮-৯ বছর বয়স হবে তখন। বিকেল বেলা খেলতে গিয়ে প্রায়ই আমরা বাজি ধরতাম এক কল (টিউবওয়েল) পানি কে খেতে (পান করতে) পারবে। অর্থাৎ টিউবওয়েলের মুখ ধরে রেখে হাতল ধরে চাপ দিতে থাকবে। পুরো টিউবওয়েলটি পানিতে ভরে উপচে পড়লে এটাকে বলা হবে এক কল। এই এক কল পানি কে কে খেতে (পান করা) পারে এটা নিয়ে আমাদের মাঝে প্রতিযোগিতা হতো। বিশেষ করে গরমের দিনে যখন রোদে খেলতে যেতাম। তখন এই প্রতিযোগিতাটা হতো বেশি। প্রচন্ড গরমে অনেক তৃষ্ণার্থ থাকতাম। সেই সাথে বাজি ধরা। সেই জন্য মোটামুটি সবাই এক কল পানি খেতো। এক কল পানি খেলে আমাদের ওই বয়সে পুরোপুরিভাবে পেট ভরে যেতো। এমনকি অনেক সময় খাওয়ার পর হাটতে কষ্ট হতো।
একটু বড় হয়ে আশেপাশের মানুষের কাছ থেকে শুনি পানি শরীরের জন্য খুবই ভালো। এর কোন ক্ষতিকর দিক নেই। পানির অপর নাম জীবন। পানি যতো বেশি পান করা যায় ততই ভালো। তাহলে প্রশ্ন আসে, পানি যেহেতু ভালো জিনিস সেহেতু অনেক বেশি বা অতিরিক্ত পানি পানে কি কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই? অতিরিক্ত পানি পান করাতে শারীরিক কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা নেই?
কিছুদিন আগে এই প্রশ্নগুলো আমার মনে উদ্রেক হয়। এর আগে এতো বছর এটাই জানতাম যে, পানি যতো বেশি পান করা যায় ততোই ভালো। এতে ক্ষতির কোন সম্ভবনা নেই।
এই লেখায় আমি পানি পান করা নিয়ে আমাদের মাঝে প্রচলিত ভুল ধারণা, পানি পান করার সঠিক নিয়ম ও পরিমাণ, বেশি পানি পানের অপকারিতা ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে স্পষ্ট ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছি।
অতিরিক্ত পানি পান করার অপকারিতা
বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণ পানি পান করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। অতিরিক্ত পরিমাণ পানি পান করার জন্য বলেননি। অতিরিক্ত পরিমাণ পানি পান করা শারীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত পানি পানের ফলে যে সমস্যাগুলো তৈরি হতে পারে তার মধ্যে অন্যতম হলো-
ভমি ভমি ভাব হওয়া অথবা বমি হওয়া
মাথা ধরা বা মাথা ব্যাথা হওয়া
পেশির দুর্বলতা, শারীরিক দুর্বলতা
শারীরিক ও মানসিক অস্বস্তি অনুভব করা
খিঁচুনি
জ্ঞান হারিয়ে ফেলা
একজন মানুষ যতটুকু পানি পান করেন তা আমাদের কিডনি পরিশোধন করে। পরিশোধনের পর তা শরীরের বিভিন্ন কাজে লাগে। অতিরিক্ত পানি পান করলে কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। কিডনির স্বাভাবিক কাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। যার ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরণের বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সেই সাথে বেশি পরিমাণ পানি পান করায় শরীরে পানি এবং সোডিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হয়।
প্রতিদিন কতটুকু পানি পান করা প্রয়োজন?
বয়স, লিঙ্গ এবং অবস্থার কারণে শরীরের পানির প্রয়োজনীয়তার পরিমাণে তারতম্য ঘটে। যেমন মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের শরীরে পানির পরিমাণ বেশি লাগে। তাছাড়া দিনের বেলায় তাপমাত্রা বেশি থাকলে, এমনকি গরমের দিনে স্বাভাবিকভাবেই পানির প্রয়োজন হয় বেশি। সেই সাথে যারা শারীরিক পরিশ্রম বেশি করেন তাদেরও বেশি পরিমাণে পানির প্রয়োজন হয়। ছকের বর্ণনায় বয়স অনুযায়ী প্রতিদিন কতটুকু পানি পান করা প্রয়োজন তা জেনে নিতে পারেন।
অনেকেই কিছুক্ষণ পরপর পানি পান করেন। অযথা কিছুক্ষণ পরপরই পানি পানের কোন প্রয়োজন নেই। পিপাসা লাগলে পানি পান করুন। শরীরে পানির প্রয়োজন অনুভূত হলে পানি পান করুন। এছাড়া প্রসাবের রং দেখে পানি পান করার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন।
কোন কিছু খাবার পর আমরা পানি পান করে থাকি। সে পানি পান করে শেষের দিকে একটু পানি মুখে নিয়ে কুলির মতো করে মুখ পরিস্কার করে পানি টুকু গিলে নিন। এতে মুখের ভিতরে ও দাঁতের ফাঁকে লেগে থাকা খাবারের কণাগুলো পেটের ভিতরে চলে যাবে।
পানি পান করার এর দিকে মনোযোগ দিন। পানি পান করার সময় কথা বলা বা অন্য কো কিছু করা থেকে বিরত থাকুন। পুর্ণ মনোযোগ দিয়ে পান করুন।
পরিস্কার গ্লাসে করে পানি পান করার অভ্যাস করুন। কাঁচের গ্লাস ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে পানি পানে মনোযোগ বাড়বে।
একসাথে অনেক বেশি পানি পান করা থেকে বিরত থাকুন।
দাঁড়িয়ে, শুয়ে, কাত হয়ে পানি পান করবেন না। বসে পানি পান করার চেষ্টা করুন এবং বসে পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
অবশ্যই আপনার পানিটুকু বিশুদ্ধ কিনা নিশ্চিত হয়ে তারপরই পান করুন।
পানি নিয়ে কয়েকটি চমকপ্রদ ও মজার তথ্য
মানুষের মস্তিষ্কের ৭৫% পানি।
একটি জীবন্ত গাছের ৭৫%-ই পানি।
একজন ব্যক্তি খাবার ছাড়া প্রায় একমাস বেঁচে থাকতে পারেন। কিন্তু পানি ছাড়া বাঁচতে পারবেন মাত্র এক সপ্তাহ।
পানি দুটি উপাদান হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন নিয়ে গঠিত। 2 হাইড্রোজেন + 1 অক্সিজেন = H2O।
বিশ্বের প্রায় ৯৭% পানি হলো লোনা পানি। এর মধ্যে ২% বরফ এবং হিমবাহে ঢাকা। আর মাত্র ১% মানুষ তার প্রয়োজনে ব্যবহার করে।
পানি পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
পানি মানবদেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, কোষগুলিতে পুষ্টি এবং অক্সিজেন বহন করে। জয়েন্ট এবং টিস্যুগুলিকে সুরক্ষা দেয় এবং শরীরের বর্জ্য অপসারণ করে।
বরফ পানির চেয়ে হালকা। তাই বরফ পানিতে ভেসে থাকে।
পৃথিবী যখন তৈরি হয়েছিল, তখন পৃথিবীর সমপরিমাণ পানি পৃথিবীতে ছিল।
আধা লিটার (এক পিন্ট) বিয়ার তৈরিতে ২০ গ্যালন পানি ব্যবহৃত হয়।
পৃথিবীতে প্রায় ৭৮০ মিলিয়ন মানুষ বিশদ্ধ পানি বঞ্চিত।
পৃথিবীতে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ২০০ শিশু মারা যায় অনিরাপদ পানির কারণে।
একটি শশার ৭৫% হালো পানি।
বিশ্বের প্রায় ৮০% রোগ পানি ঘটিত।
এক টন স্টীল তৈরিতে ৩০০ টন পানির প্রয়োজন হয়।
যদি পুরো পৃথিবীর পানিতে একটি ৪লিটারের জগে ভরা হয়, তাহলে সেখান থেকে মাত্র এক টেবিল চামচ পরিমান খাওয়ার পানি পাওয়া যাবে।
বায়ুমন্ডলে যে পরিমান পানি রয়েছে তা পৃথিবীর সমস্ত নদীগুলোর চেয়েও বেশি।
একটি নতুন গাড়ি তৈরি করতে প্রায় ৪০,০০০ গ্যালন পানির প্রয়োজন হয়।
পানি পান করার সুন্নাত
জীবনধারণে মানুষের পানি পান করা আবশ্যক। যেমন আবশ্যক, বেঁচে থাকার জন্য খাবার। জীবন বাঁচাতে পানির বিকল্প নেই। মানুষের জন্য পানি পানে রয়েছে কিছু ইসলামি নিয়ম ও পদ্ধতি। মানুষকে প্রতিদিন অনেকবার পানি পান করতে হয়। যদিও কাজটি খুবই ছোট। আমরা অনেকেই এটি খুব গুরুত্বের সাথে দেখি না। পানি পানের সময় মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুনির্দিষ্ট কিছু আমল করতেন। পানি পানের সুন্নত হচ্ছে ৬টি। এই তরীকাগুলো মেনে পানি পান করলে পানি পান করাও হবে। গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নতও আদায় হবে।
পানের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা। শুধু পানি পানের সময়ই নয়, বরং যে কোনো কিছু খাওয়ার সময় বিসমিল্লাহ বলতে হয়। এমনকি সব ভালো কাজের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে হয়। নিঃসন্দেহে পানি পান করা একটি ভালো কাজ।
ডান হাতে পানি নিয়ে পান করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কখনো খাবার এবং পানীয় বাম হাতে গ্রহণ করবে না। কেননা শয়তান বাম হাতে খাবার গ্রহণ করে।’ (মুসলিম)। বাম হাতে খাবার খাওয়া ও পানি পান করা শয়তানের কাজ। অনেকেরই জন্মগতভাবে বাম হাত ব্যবহারের অভ্যাস রয়েছে। চেষ্টা করবেন ডান হাত ব্যবহার করার জন্য। কারণ বাম হাত ব্যবহার শয়তানে কাজ। ‘বিসমিল্লাহ’ বলার মতো সব ভালো কাজে ডান হাত ব্যবহার করা উত্তম। পোশাক পরার সময় প্রথমে ডান দিক থেকে শুরু করা।
বসে পানি পান করা। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, (আগে) বসুন এবং পানি করুন। স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানেও বলা হয়েছে, বসে পানি পান করার জন্য। দাঁড়িয়ে পানি পান করার চেয়ে বসে পান করা বেশি ভালো।
তিন নিঃশ্বাসে পানি পান করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা কখনো এক নিঃশ্বাসে পানি পান করোনা। বরং তোমরা দুই কিংবা তিন নিঃশ্বাসে পানি পান করো। অনেকেই আছেন যারা এক নিশ্বাসেই প্রয়োজনীয় পানি পান কেরে নেন। আর বিশেষ করে যারা বোতল ব্যবহার করে পানি পান করেন, তাদেরও তিন নিঃশ্বাসে পানি পান করা হয় না। তাই গ্লাস ব্যবহার অনেক শ্রেয়। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানেও বলা হয়েছে, পানের সময় অল্প অল্প করে ২/৩ বারে পানি পান করা।
গ্লাসের পানিতে বা গ্লাসে নিঃশ্বাস না ছাড়া। হাদিসে ‘পানি পান কিংবা খাবার গ্রহণের সময় মুখ থেকে পানি কিংবা খাবারে নিঃশ্বাস না ছাড়ার জন্য বলা হয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞানে বলা হয়েছে যে, মুখে বা মুখের সামনে ব্যাকটেরিয়া বা জীবানু থাকতে পারে। পানি বা খাবারে ফুঁ দেয়া বা নিঃশ্বাস ফেলানোর ফলে এ জীবানু পানি ও খাবারের সঙ্গে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। আর এই জীবাণু মানুষের শরীরের বিভিন্ন ধরণের রোগ সৃষ্টি করে।
পানি পান শেষে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা। পানি পানের পর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় স্বরূপ সবসময় ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা। পানি, আল্লাহর অনেক বড় একটি নেয়ামত। তাই এই নেয়ামত গ্রহণ করে শুকরিয়া আদায় করা জরুরী।
বই পড়া! কারণে, অকারণে, ইচ্ছাকৃতভাবে মনের আনন্দে অথবা বাধ্য হয়ে বই পড়েননি এমন কোন লোক এই লেখাটি পড়ছেন না- এমনটি আমি নিশ্চিত। এই লেখাটি পড়ছেন তো আপনি বই পড়েছেন। সেটা যেকোন বই-ই হোক আর যেভাবেই হোক। যা হোক শিরোনামের সাথে এই কথাগুলোর কোন সামসঞ্জস্য নেই। তাই মূল প্রসঙ্গে আসি।
বই নিয়ে পৃথিবীর বিখ্যাত মনীষীগণ হাজারো উক্তি করেছেন। বলেছেন বই মানুষের পরম বন্ধু। সেটা যে কোন ধরনের বই-ই হতে পারে। হতে পারে একাডেমিক, হতে পারে সহপাঠ্য, হতে পারে বিজ্ঞান, শিক্ষা, সাহিত্য, রম্য, ভ্রমণ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে। যে যে বিষয় পছন্দ করে সেই ধরণের বই সেই পাঠকের হৃদয়ের খোরাক। একামেডিক পাঠ্য বই খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ে এবং খুবই আনন্দ পায় এমন লোকের সংখ্যা কমই পাওয়া যাবে বলে আমার মনে হয়। তবে এরকম লোক বা ছাত্র যে নেই তা বলছি না। অবশ্যই আছে। তবে বেশিরভাগ ছাত্রই পাঠ্য বইগুলো পড়ে বাধ্য হয়ে।
তবে পাঠ্য বইয়ের বাইরে বিষয়টা একটু ভিন্ন। একজন পাঠক তিনি যে কোন লেখকের ভক্ত হতে পারেন। যে কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের ভক্ত হতে পারেন। তিনি যে বিষয় বা লেখকের বই পড়েন না কেন- তিনি কিন্তু নিজের মনের আগ্রহ থেকেই বই পড়েন। বাধ্য হয়ে পড়তে হয় না। সে পাঠক তার নিজের হৃদয়ের তৃষ্ণা নিরবরণের জন্য বই পড়েন। আমি এমনও লোক দেখেছি যে কিনা তার একটি পছন্দের বই হাতে পাওয়ার পর আর দেরি সহ্য করতে পারেননি। এক রাতেই বইটি পড়ে শেষ করেছেন। বুঝা যায়, তিনি হৃদয়ের টানে, মনের পিপাসা মিটানোর জন্যই বই পড়েন।
বহুভাষাবিদ, ভাষাবিজ্ঞানী, দার্শনিক ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র একটি বিখ্যাত উক্তি সবার জানা আছে। তিনি বলেছেন, জীবনে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন- বই, বই এবং বই। তিনি ছাড়াও বহু মনীষী-দার্শনিকগণ বই পড়া নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। এমনিভাবে সারা পৃথিবীর সর্বকালে যত মনীষী এসেছেন সবাই বই পড়ার গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই বিভিন্ন ভাষার, বিভিন্ন দেশের কবি-সাহিত্যিক-মনীষীগণ বই পড়া নিয়ে হাজারো কথা বলে গিয়েছেন। তাদের ভাষায় বই পড়ার গুরুত্ব বোঝানোর চেষ্টা করেছেন তাদের মত করে।
বই পড়া শখটা মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ শখ হলেও আমি কাউকে শখ হিসেবে বই পড়তে পরামর্শ দিতে চাইনে। প্রথম, সে পরামর্শ কেউ গ্রাহ্য করবেন না; কেননা, আমরা জাত হিসেবে শৌখিন নই। দ্বিতীয়ত, অনেকে তা কুপরামর্শ মনে করবেন; কেননা, আমাদের এখন ঠিক শখ করবার সময় নয়। আমাদের এই রোগ-শোক, দুঃখ-দারিদ্র্যের দেশে সুন্দর জীবন ধারণ করাই যখন হয়েছে প্রধান সমস্যা, তখন সেই জীবনকেই সুন্দর করা, মহৎ করার প্রস্তাব অনেকের কাছে নিরর্থক এবং নির্মমও ঠেকবে।
বই পড়া শখটা মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ শখ হলেও আমি কাউকে শখ হিসেবে বই পড়তে পরামর্শ দিতে চাইনে। প্রথম, সে পরামর্শ কেউ গ্রাহ্য করবেন না; কেননা, আমরা জাত হিসেবে শৌখিন নই। দ্বিতীয়ত, অনেকে তা কুপরামর্শ মনে করবেন; কেননা, আমাদের এখন ঠিক শখ করবার সময় নয়।আমাদের এই রোগ-শোক, দুঃখ-দারিদ্র্যের দেশে সুন্দর জীবন ধারণ করাই যখন হয়েছে প্রধান সমস্যা, তখন সেই জীবনকেই সুন্দর করা, মহৎ করার প্রস্তাব অনেকের কাছে নিরর্থক এবং নির্মমও ঠেকবে।
–প্রমথ চৌধুরী
এই কথাগুলো আমার নয়। কথাগুলো বলেছেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রাবন্ধিক, কবি ও লেখক প্রমথ চৌধুরী। তিনি বই পড়া নামক একটি প্রবন্ধে এই কথাগুলো বলেছেন। একটি লাইব্রেরির বার্ষিক সভায় প্রবন্ধটি পঠিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ‘বই পড়া’ প্রবন্ধটি তাঁর প্রবন্ধ সংগ্রহে সংকলিত হয়েছে। এই প্রবন্ধে আমাদের পাঠচর্চার অনভ্যাস যে শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটির জন্য ঘটছে তা- দেখাতে চেয়েছেন। আর্থিক অনটনের কারণে, অর্থকরী নয় -এমন সবকিছুই এদেশে অনর্থক বলে বিবেচনা করা হয়। সেজন্য বই পড়ার প্রতি মানুষের যথেষ্ট অনীহা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে আমরা যে শিক্ষা পাই, তা জীবনের জন্য পূর্ণাঙ্গ নয়। তাই ব্যাপকভাবে বই পড়া দরকার। যথার্থ শিক্ষিত হতে হলে মনের প্রসার দরকার। তার জন্য বই পড়ার অভ্যাস বাড়াতে হবে। এ জন্য লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন। বাধ্য না হলে আমরা বই পড়ি না।
লেখক প্রমথ চৌধুরীর মতের সাথে সুর মিলিয়ে আমিও এরকমই বলতে চাই। আমাদের আসলে শখ করে বই পড়া হয় না। যদিও আমরা কথা বলার সময় বই পড়াকে হবি হিসেবে উল্লেখ করি। আমি অনেকগুলো ফেসবুক আইডি দেখেছি। তারা সবাই আমার পরিচিত ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাদের প্রোফাইলের এবাউট সেকশনের বুক ট্যাবে গিয়ে দেখেছি কতগুলো বইয়ের নাম দেয়া। একেকজনের প্রোফাইলে একেক রকম বই। কিন্তু বাস্তবে তাদের সম্বন্ধে আমি যথেষ্ট জানি। আসলে তারা ওই বইগুলো কখনোই পড়েনি। কিন্তু বুকস এ ঠিক দিয়ে রেখেছেন।
আসল কথা, আমাদের বই পড়ার অভ্যাস অনেক কম। যদিও প্রমথ চৌধুরী এ জন্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে দায়ী করেছেন। তার সাথে আরো কিছু বিষয় আছে, যেগুলো ছোট হলেও বই পড়ার অনভ্যাসের জন্য অনেকটাই দায়ী। এই অভ্যাসগুলোতে পরিবর্তন আনতে পারলে আমাদের মধ্যে বই পড়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। তার মধ্যে অন্যতম হলো মোবাইল ফোন। মোবাইলের (স্মার্ট ফোন) পিছনে বর্তমান সময়ে আমাদের প্রচুর সময় স্পয়েল হচ্ছে। দেখা গেছে, একজন আমেরিকান গড়ে প্রতিদিন ২ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট সময় তার স্মাটফোনে ব্যয় করে। এটি ২০১৯ সালের একটি রিপোর্ট। প্রতি বছরই সেই সময়টা বাড়ছে প্রায় ৯/১০ মিনিট করে। তাহলে আমরাও পিছিনে নেই। আমরা বাংলাদেশীরা গড়ে আমেরিকানদের চেয়ে বেশিই সময় নষ্ট করছি মোবাইলের পিছনে। আমি ব্যয় বলছি বলে, স্মাটফোন ব্যবহারের অনুসাহিত করছি না। বলতে চাচ্ছি, আমরা যে প্রায় তিন ঘণ্টা ব্যবহার করছি এর মধ্যে তিন ঘণ্টাই কি ফ্রুটফুল কাজে ব্যবহার করছি?? ভয়েস কল/কমিউনিকেশন, প্রয়োজনীয় টেক্সট করা, কোন ফাইল সেন্ড করা, রিমাইন্ডার রাখা, ই-মেইন আদান-প্রদান, প্রয়োজনীয় বিষয়ে গুগলিং করা ইত্যাদি সব ফ্রুটফুল কাজে সবমিলিয়ে দুই ঘণ্টাই ব্যবহার করছি। বাকী সময়টা কিন্তু নষ্টই হচ্ছে। তাহলে মোবাইলের ব্যবহার কমাতে পারলে বই পড়ার অনভ্যাসটা ফিরে যাবে।
আরেকটা কারণ হলো, ই-বুক বা পিডিএফ বই। এটা একেবারেই আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। আমি অনেক সময় মোবাইলে পিডিএফ বই পড়তে দিয়ে দেখেছি যে, মোবাইলে কিছুক্ষণ পড়ার পর কেমন যেন একটা অস্বস্তি কাজ করে। যে ছাপা বইয়ের ক্ষেত্রে হয় না। বেশিক্ষণ পড়া যায় না, যতক্ষণ না ছাপা বইয়ে পড়তে পারি। তাই আমরা এই বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ্য রাখলে আশা করি বই পড়ার যে অনভ্যাস রয়েছে সেটা কিছুটা হলেও কেটে যাবে।
প্রসঙ্গটা একটু অন্য দিকে নিয়ে যাই। বই পড়ার অভ্যাস আমাদের তৈরি হলো। ধরে নিলাম। বই পড়ার সময় পেলাম। পরিবেশ পেলাম। কিন্তু কি বই পড়বো? কোন লেখকের বই পড়বো? কোন বিষয়ের বই পড়বো?
এখন কথা হচ্ছে একজন পাঠক বই পড়ছেন। কিন্তু তার কি প্রেসক্রিপশন আছে? আসুন একটু বিস্তারিত আলোচনা করি।
এভাবে বই পড়াটা কি ঠিক হচ্ছে, নাকি সিলেবাস অনুযায়ী বই পড়া উচিত?
এখন আমি ধরে নিলাম আপনি একজন মুসলমান পাঠক। আপনি ইসলামি বই পড়েন। ইসলামি জীবনযাপনের নিয়ম কানুন, হুকুম আহকাম, মাসয়ালা-মাসায়েল সম্পর্কে জ্ঞান লাভের জন্য বই পড়েন। লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখে দেখে ইসলামি বই কিনছেন। অথবা অনলাইনে দেখে বইয়ের অর্ডার করছেন। সংগ্রহে এলে পড়ে নিচ্ছেন। সেভাবে আমল করছেন, নিজের জীবন পরিচালনা করছেন। ভালো কথা। কিন্তু এভাবে বই পড়াটা কি ঠিক হচ্ছে? নাকি কোন প্রেসক্রিপশন অর্থাৎ সিলেবাস অনুযারি বই কেনা এবং পড়া উচিত? অবশ্যই আপনাকে একটি নির্দিষ্ট সিলেবাস বা গাইড লাইন অনুসরণ করে বই পড়া উচিত।
একটা উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টা আরো পরিস্কার করি। ধরে নিলাম আপনি একজন প্রকৌশলী। আপনি পুর কৌশল নিয়ে পড়েছেন। এখন পড়াশোনা শেষ করে পেশাগত জীবনে আছেন। এখনও আপনাকে অনেক পড়তে হয়। পেশাগত উৎকর্ষ সাধনে পেশাগত পড়াশোনা করতে হয়। আরো একটু আগে যাই। মাধ্যমিক স্কুল জীবন থেকেই শুরু হয়েছে আপনার এই পেশাগত জীবনে পৌছার যাত্রা অর্থাৎ পড়াশোনা। তখন থেকেই আপনাকে বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে হয়েছে এই পেশায় আসার জন্য। সেই বিজ্ঞান বিভাগে যে বইগুলো আপনি পড়েছেন তা নির্দিষ্ট সিলেবাসের আলোকে রচিত। বইয়ের প্রত্যেকটি অধ্যায় নির্দিষ্টভাবে লেখা হয়েছে। কোনটার পরে কোন বিষয়টা আসবে সেটাও নির্দিষ্ট অর্থাৎ প্রেসক্রাইবড। তারপর মাধ্যমিক স্কুলের প্রেসক্রাইবড পড়াশোনা শেষ করে চলে গেলেন উচ্চ মাধ্যমিক জীবনে। সেখানেও প্রেসক্রাইবড পড়াশোনা। সুনির্দিষ্ট সিলেবাস। সেই সিলেবাস শেষ করে আবারো চলে গেছেন স্নাতক তথা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। সেখানেও সুনির্দিষ্ট সিলেবাস। একবারে পই পই করে নির্দিষ্ট অর্থাৎ প্রেসক্রাইব জীবনে লেখাপড়া শেষ করে আজ আপনি একজন সুদক্ষ-খ্যাতনামা পেশাজীবি।
আর এই প্রেসক্রাইবড সিলেবাসের প্রতিটি স্তরে নিশ্চয়ই নির্দিষ্ট কারো তত্বাবধানে ছিলেন। কেউ আপনাকে গাইড করেছে। বইয়ের বাইরেও বইয়ে উল্লেখিত বিষয়ে তিনি আপনাকে সুপষ্ট ধারনা দিয়েছেন। বিষয়গুলো সঠিকভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন। আর তিনিই হলেন আপনার গাইড। আপনার শিক্ষক।
আজকের আপনার এই খেতাব, এই অবস্থান তৈরি হয়েছে শুধু মাত্র নির্দিষ্ট সিলেবাস অনুযায়ী পড়াশোনা করার কারণে। এর ব্যতিক্রম যদি হতো? যদি আপনি আপনার কলেজ জীবনের সিলেবাস স্কুল জীবনে পড়তেন? অথবা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বইগুলো যদি স্কুল জীবনে পড়তেন? একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখুন। সম্ভব হতো আজকের এই অবস্থানে অবস্থান নেয়া? এই প্রশ্নের উত্তর কি হবে? অবশ্যই ‘না’।
ঠিক সেইভাবে আপনি ইসলামি জীবন পরিচালনা করতে চান। জ্ঞান আহরণ করতে চান। চান ইসলামের হুকুম আহকামগুলো সম্পর্কে জানতে। বিধি নিষেধগুলো সম্পর্কে জানতে চান। এই জ্ঞান আহরণের মূল উদ্দেশ্য কি? উদ্দেশ্য আপনার জীবনের প্রকৃত সফলতা অর্জন। একজন মুসলমানের প্রকৃত সফলতা হলো তার আখিরাত। তাই আপনি আপনার আখিরাত জীবনে সফলতা অর্জনের যে জ্ঞান আহরণ করছেন তা অবশ্যই প্রেসক্রাইবড হওয়া উচিত। তা না হলে আপনি সফলতা অর্জনে ব্যর্থ হবেন। সঠিক জ্ঞান অর্জন আপনার দ্বারা সম্ভব হবে না।
কোন বই পড়বেন, কোন লেখকের বই পড়বেন?
এজন্য আপনাকে একটি সিলেবাস অনুসরণ করতে হবে। আর একজন গাইডের অধীনে থেকে সেই সিলেবাস ফলো করতে হবে। অর্থাৎ একজন প্রকৃত আলেমের তত্ববধানে থেকে আপনাকে বই পড়তে হবে। কোন বই পড়বেন, কোন লেখকের বই পড়বেন। কোনটার পরে কোনটা পড়বেন সেটা তিনি আপনাকে বলে দিবে। সেভাবে আপনি অনুসরণ করবেন।
তাই, বই পড়ছেন? একজন প্রকৃত আলেমের তত্ববধানে পড়েন, প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী পড়েন। সফলতা অর্জিত হবে। ইনশাআল্লাহ।
আর সিলেবাসটা যে শুধুমাত্র ইসলামী বইয়ের ক্ষেত্রে তা কিন্তু নয়। এখানে মূলত ইসলামী বই কে উদ্দেশ্য করে বলা হলেও, প্রকৃত পক্ষে সকল ক্ষেত্রেই সিলেবাস অনুযায়ী বই পড়া উচিত। চিকিৎসা বিদ্যার কোন বই পড়তে অবশ্যই তা একজন ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পড়ুন। প্রকৌশল বিদ্যার কোন বই পড়তে চাইলে তা একজন দক্ষ প্রকৌশলী পরামর্শ নিয়ে পড়েন। অর্থাৎ যে বিষয়েই আপনি জানতে, বুঝতে, জ্ঞান আহরণ করতে চান- সেই বিষয়ে দক্ষ এবং অভিজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ নিন।
বৈশ্বিক বিপর্যয় করোনা মহামারীতে প্রায় থমকে গিয়েছে সারা বিশ্ব। এর প্রাদুর্ভাবে অনেকটাই থমকে গেছে সারা পৃথিবীর অর্থনীতি। অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রেই পড়েছে এর নেতিবাচক প্রভাব। লক ডাউনে স্থবির হয়ে যায় মানুষের সাধারণ সাধারন জীবনযাপন।
ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ তাদের সীমানা পুনরায় চালু করেছে। নতুন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে লকডাউন ধীরে ধীরে শিথিল করে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে।
বিশ্ব ভ্রমণ পুনরায় নিরাপদে শুরু করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। সে অনুযায়ী প্রতিটি দেশ তাদের স্বাস্থ্য বিধি অনুযায়ী ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে।
কতদিন এভাবে চলতে পারে? প্রশ্নটি সত্যিই গুরুত্বের। মানুষের জীবন এভাবে স্থবির হয়ে থাকতে পারে না। তাই সকলকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে হচ্ছে। যেহেতু স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে হচ্ছে তাই প্রত্যেকেই নিজের নিরাপত্তা নিজে নিশ্চিত করা একজন বুদ্ধিমানের কাজ হবে। একজন সচেতন মানুষ হিসেবে আপনি নিচের নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলো মেনে নিরাপদে ভ্রমণ করুন:
০১. প্রথমত অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন। বাজারে বিভিন্ন ধরণের মাস্ক পাওয়া যায়। সেগুলো থেকে কিনে ব্যবহার করবেন। তবে অবশ্যই ওয়ান টাইম অর্থাৎ সার্জিক্যাল মাস্কগুলো একবারের জন্যই ব্যবহার করবেন। অনেকের এলার্জি সমস্যা থাকায় তাদের নিজের যে মাস্ক উপযোগী হয় সেটিই ব্যবহার করবেন।
০২. সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোয়া। ভ্রমণের সময় যেখানে সাবান বা পানি ব্যবহারের সুযোগ থাকে না সেখানে আপনি হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে পারেন। কিছুক্ষণ পর পর স্যানিটাইজার আপনার দুই হাতে ভালভাবে মাখিয়ে নিবেন।
০৩. ভ্রমণকালে আপনি আপনার পাশের যাত্রী থেকে যতটুকু সম্ভব দূরত্বে অবস্থান করার চেষ্টা করুন। কমপক্ষে এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখুন। যদি দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব না হয় তাহলে আপনার পাশের লোকের মুখ আপনার মুখের দিক থেকে বিপরীত দিকে রাখার চেষ্টা করুন।
০৪. যাদের কাশি বা হাঁচি বা ঠান্ডার সমস্যা রয়েছে তারা কাশি হাঁচি দেয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখুন। রুমাল অথবা টিস্যু ব্যবহার করুন। এগুলো সম্ভব না হলে আপনার কনুই বাকিয়ে তার মধ্যে হাঁচি দিন। এর পর ব্যবহার করা টিস্যুগুলো অবশ্যই নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন। আর ব্যবহার করা রুমাল যথা সম্ভব বেশি বেশি ধুয়ে নিয়ে ব্যবহার করুন।
কারো মুখের ভাষা তিক্ত বা কর্ষশ হলে অনেকেই বলে থাকেন- ‘জন্মের সময় ওর মুখে মধু দেয়নি’। তাই মুখের কথা মিষ্টি হয়নি। সত্যিকার অর্থে বিষয়টা এমন হয়। কিন্তু মধুর যে প্রকৃতই বিশেষ গুণ আছে, সে কথা স্বীকার করতেই হয়। শিশুর জন্মের পর মুখে মধু দেয়াটা প্রাচীনকাল থেকেই চলমান প্রথা।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে, মৌমাছি বিভিন্ন ফুলে বিচরণ করে ফুলের রেণু ও মিষ্টি রস সংগ্রহ করে তাদের পাকস্থলীতে রাখে। তারপর সেখানে মৌমাছির মুখ নিঃসৃত লালা মিশ্রিত হয়ে রাসায়নিক জটিল বিক্রিয়ায় মধু তৈরি হয়। এরপর মৌমাচি মুখ হতে মৌচাকের প্রকোষ্ঠে তা জমা রাখে। মধু একটি উচ্চ ঔষধিগুণ সম্পন্ন একটি ভেষজ তরল।
পবিত্র কোরআন ও রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর হাদিসে মধু সম্পর্কে গুরুত্বের সাথে বয়ান করা রয়েছে। কোরআনে মধুর মধ্যে মানুষের বিভিন্ন রোগের প্রতিকার রয়েছে মর্মে সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে এবং একে ওষুধ ও খাদ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বৈজ্ঞানিকভাবেও মধুর পুষ্টিগুণ ও কার্যকারিতা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন। সর্দি, কাশি, আমাশয় এমনকি ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে মধুর ব্যবহার রয়েছে। নিয়মিত মধু সেবনে রূপচর্চা, যৌন দুর্বলতায় চিকিৎসা ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিসহ অন্যান্য ৩৩টি উপকারিতার কথা বর্ণনা করা হয়েছে বিভিন্ন জার্নাল ও লেখায়।
এছাড়াও মধুর সাথে কালোজিরা, রসুন, আদা ইত্যাদি মিশিয়ে তৈরি করা বিভিন্ন খাবারের বেশ প্রচলন রয়েছে আমাদের দেশে। তবে অবশ্যই এগুলোর সাথে মধু মিশিয়ে সেবন করার আগে ভালোভাবে জেনে বুঝে সেবন করা উচিত। হুট করেই মধুর সাথে আদা-রসুন ইত্যাদির সেবন বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
সম্প্রতি সময়ে অনেকে ঘরো বিভিন্ন মিষ্টান্ন বা খাবার তৈরিতে চিনির বদলে মধুর ব্যবহার করে থাকেন। বিশেষ করে শিশুদের জন্য বিভিন্ন খাবার তৈরিতে চিনির বদলে মধুর ব্যবহার করছেন সচেতন অভিভাবকগণ।
মধু-তে বিদ্যমান পুষ্টিগুণসমূহ
মধুর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ (Vitamin & mineral) উপাদান। যা মানবদেহের বহুমাত্রিক চাহিদা পূরণে সহায়ক। রয়েছে ৪৫টিরও বেশি খাদ্যগুণ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো-
এছাড়াও রয়েছে: জিংক, কপার, আয়োডিন, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান
বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে খাঁটি মধু এর ব্যবহার
সাধারণ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের জন্য মধুর ব্যবহার সর্বজন বিদিত। মধু এককভাবে, আবার কখনো ভেষজ বা অন্যান্য দ্রব্যের সাথে মিশিয়ে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এতে যথেষ্ট সফলতা পাওয়া যায়। তাই সাধারণ কিছু রোগের চিকিৎসায় মধুর ব্যবহার এখান থেকে জেনে নিতে পারেন-
সর্দি, কাশি ও স্বরভঙ্গে মধু
দুই চা চামচের সমপরিমাণ মধু এবং দুই চামচ পরিমাণ বাসক পাতার রস একসাথে মিশিয়ে খেলে সর্দি ও কাশি সেরে যায়।
এক চা চামচ পরিমাণ মধু ও এক চা চামচ আদার রস চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে সর্দির উপশম হয়। বুকের মধ্যে জমে থাকা শ্লেষ্মা বের করে বুক ও গলা পরিস্কার করার জন্য এটি খুবই কার্যকর। অনেকের শীতের সময় গলায় শ্লেষ্মা জমে থাকায় খুবই অসস্তি ভোগ করেন। তাদের জন্য এটি ফলদায়ক।
দুই চা চামচ মধু, এক গ্লাস গরম (হালকা গরম) দুধের সঙ্গে খেলে সর্দিকাশি দূর হয়। এভাবে সকালে একবার ও বিকালে একবার করে সেবন করতে হবে।
এক চা চামচ তুলসী পাতার রস ও এক চা চামচ মধু একসাথে মিশিয়ে সেবন করলে কাশি উপশমে কাজ করে। এতে খুব অল্প সময়ে কাশি দূর হয়।
হরিতকী ও বচচূর্ণ ভালভাবে একসাথে মিশিয়ে চেটে খেলে শ্বাসকষ্টের দ্রুত উপকার হয়।
যাদের ক্ষিদামন্দা রয়েছে তারা এক চা চামচ আদার রস এবং এক চা চামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে সেবন করতে পারেন। সকাল-সন্ধ্যা দুইবার এভাবে ব্যবহার করলে ক্ষুদা বৃদ্ধিপায়।
হালকা গরম পানিতে মধু মিশিয়ে গড়গড়া করলে গলার স্বর বৃদ্ধি পায়। গলার স্বরভঙ্গেও এটি ভালো কাজ করে। বিশেষ করে আবৃত্তিকার, উপস্থাপক ও গায়কদের জন্য গলার স্বর বৃদ্ধি ও ঠিক রাখতে খুবই উপকারী।
আমাশয়ের চিকিৎসায় মধু
বড়ই গাছের ছালের চূর্ণের সাথে মধু মিশিয়ে সেবন করলে আমাশয় ভালো হয়।
কচি বেল ও আমগাছের বাকল (কচি চামড়া) একসাথে বেটে (পিশে) তৈরিকৃত পেস্টের সঙ্গে গুর ও মধু মিশিয়ে খেলে আমাশয় ভালো হয়।
৫০০ গ্রাম আতপ চাল হাড়িতে ভেজে গুঁড়া করে এর সঙ্গে ১২৫ গ্রাম ঘি, ২৫০ গ্রাম খাঁটি মধু, ১২৫ গ্রাম চিনি এবং ২০টি সবরি কলা ভালোভাবে মিশিয়ে নিন (চটকে নিন)। এরপর সেটাকে হাড়িতে জ্বালান দিয়ে খাবার উপযোগী করে ৩/৪ দিন নিয়মিত সেবন করলে ধরনের আমাশয় ভালো হয়ে যায়। এতে অনেকের পুরাতন আমাশয় থাকলে ভালো হয়ে যাবে।
অন্যান্য সাধারণ রোগে মধু
শরীরের বাইরের কোন ক্ষত হলে আমরা মলম ব্যবহার করি। মলমের পরিবর্তে ক্ষতে মধুর প্রলেপ লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
শিশুদের দৈহিক গড়ন, রুচি বৃদ্ধি, ওজন বৃদ্ধি ও পেট ভালো রাখার জন্য মধু ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিদিন এক চা চামচ মধু গরম দুধ ও গরম পানির সঙ্গে খাওয়ালে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
আধা তোলা পরিমাণ পেঁয়াজের রস, ২৫০ গ্রাম ঘি এবং ২৫০ গ্রাম মধু মিশিয়ে একটা পাত্রে রেখে দিন। উক্ত মিশ্রণ প্রতিদিন সকাল-বিকাল এবং রাতে চিনি দিয়ে অল্প পরিমাণ গরম দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে যক্ষ্মা ভালো হবে।
পানিতে অল্প মধু মিশিয়ে খেলে পাকস্থলীর ক্ষত সারে।
মৌরির ভিজিয়ে রাখা পানিতে মধু মিশিয়ে পান করলে দূষিত বায়ু পেট থেকে বেরিয়ে যায়।
খয়ের ও দারুচিনির গুঁড়া সমপরিমাণ সামান্য মধুর সঙ্গে মিশিয়ে দিনে ৩/৪ বার খেলে ডায়রিয়ায় দ্রুত উপকার পাওয়া যায়।
শরীরের চর্বি বা মেদ কমানোর জন্য পানির সাথে মধু মিশিয়ে খেলে সুফল পাওয়া যায়।
দুর্বল শিশুকে দুধের সাথে অল্প (কয়েক ফোঁটা) মধু মিশিয়ে খাওয়ালে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়।
এক গ্লাস দুধে এক চা চামচ পরিমাণ মধু মিশিয়ে রোজ সকালে খেলে শক্তি বৃদ্ধি পায়।
মধুর সঙ্গে গুড়ের রস মিশিয়ে খেলে বমি বন্ধ হয়ে যায়।
পিপুল ও গোল মরিচের শুকনো গুঁড়ার সঙ্গে মধু মিশিয়ে কিছু দিন নিয়মিত খেলে পুরাতন ডায়রিয়া ভালো হয়ে যায়।
আমাশয় ও পাতলা পায়খানায় হালকা গরম পানিতে আড়াই চা-চামচ মধু মিলিয়ে শরবত বানিয়ে সেবন করতে হবে। পাতলা পায়খানার ক্ষেত্রে এভাবে বারবার সেবন করতে হবে।
যক্ষ্মা রোগে বাসক পাতার রস এক চা-চামচ পরিমাণ এক চা-চামচ মধু এবং এক চা-চামচ আদার রস মিশিয়ে কিছু দিন খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
এক গ্লাস গরম দুধ বা গরম পানিতে ২চা-চামচ মধু মিশিয়ে কয়েকবার খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য ভালো হবে।
অর্থ: এরপর সর্বপ্রকার ফল থেকে ভক্ষণ কর এবং আপন পালনকর্তার উম্মুক্ত পথ সমূহে চলমান হও। তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙে পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্যে রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে। — সূরা: আন নাহল, ৬৯।
পবিত্র কোরআনে আন নাহল নামে এই সূরাটি নাযিল হয়েছে। এটি পবিত্র কোরআনের ১৬ নম্বর সূরা। আরবি পরিভাষায় মৌমাছিকে ‘নাহল’ বলা হয়। উপরের আয়াতে যে পানীয় সম্পর্কে বলা হয়েছে তা হলো মধু। এই মধুতে মানুষের রোগের প্রতিকার রয়েছে। যা মহান আল্লাহ তায়ালা নিজেই ঘোষণা করেছেন। বুঝাই যাচ্ছে মধুর কতো গুণ।
এছাড়াও পবিত্র কোরআনের ৪৭ নম্বর সূরা মুহাম্মদ- এর ১৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
অর্থ: পরহেযগারদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে, তার অবস্থা নিম্নরূপঃ তাতে আছে পানির নহর, নির্মল দুধের নহর যারা স্বাদ অপরিবর্তনীয়, পানকারীদের জন্যে সুস্বাদু শরাবের নহর এবং পরিশোধিত মধুর নহর। তথায় তাদের জন্যে আছে রকমারি ফল-মূল ও তাদের পালনকর্তার ক্ষমা। পরহেযগাররা কি তাদের সমান, যারা জাহান্নামে অনন্তকাল থাকবে এবং যাদেরকে পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি অতঃপর তা তাদের নাড়িভূঁড়ি ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেবে?
উপরের আয়াত অনুযায়ী, বেহেশতেও মধুর একটি নদী থাকবে। আল্লাহ তায়ালার অনেক নেয়ামতপূর্ণ একটি খাবার হলো মধু। যা বেহেশতের মধ্যে থাকবে। এখানে এগুলো তুলে ধরা হয়েছে মধুর গুরুত্ব বোঝানোর জন্য। যেখানে মধু সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন।
ইসলামের বিভিন্ন বুযুর্গ এবং ওলিগণ মধুর মধ্যে যে সর্বরোগের প্রতিষেধক রয়েছে তা স্বীকার করেছেন। তারা নিজেদের প্রয়োজনে মধু ব্যবহার করতেন। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় তারা মধু ব্যবহার করেছেন। হযরত ইবনে ওমর (রা.) সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তার শরীরে ফোঁড়া বের হলে তিনি তাতে মধুর প্রলেপ দিয়ে চিকিৎসা করেন। এর কারণ তিনি বলেন- আল্লাহ তায়ালা কোরআনে কি বলেননি যে, তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার। -(কুরতুবী)