▶ প্রশ্ন: মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্ম পরিচয় ও বাল্যকাল সম্পর্কে আলোচনা করুন ▶ বিষয়: (IST-503) Al-Sirat Al-Nababiah ▶ কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)
ভূমিকা
ইসলাম পূর্ব যুদে সমগ্র আরব যখন চরম উচ্ছৃঙ্খলতা, পাপাচার, ব্যাভিচার, মিথ্যা, হত্যা, লুন্ঠন, মদ্যপান, জুয়ায় ভরপুর ছিল সেসময় মানবতার মুক্তির দিশারী সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রহমত স্বরূপ সমগ্র জাহানের হিদায়েতের জন্য আবির্ভূত হলেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আমি তোমাকে প্রেরণ করেছি বিশ্ব জগতের জন্য বিশেষ রহমত স্বরুপ।”
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জন্ম
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ১২ রবিউল আউয়াল মোসবার আরবের বিখ্যাত কুরাইশ বংশের বনু হাশিম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। সময়কাল ছিলো ‘আমুল ফিল’ বা হস্তীবাহিনীর বছর অর্থাৎ ৫৭০ খ্রিস্টাব্দ।
আরো পড়তে পারেন: নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় রাসুলুল্লাহ (সা.) এর অবদান মুল্যায়ন করুন।
নাম ও বংশপরিচয়
তাঁর নাম মুহাম্মদ। পিতার নাম আবদুল্লাহ এবং মাতার নাম আমিনা। দাদার নাম আবদুল মুত্তালিব এবং নানার নাম ওহাব ইবনে আবদ মানাফ। জন্মের পূর্বেই তাঁ পিতা আবদুল্লাহর ইনতিকাল করেন। ছয় বছরে বয়সে তাঁ স্নেহময়ী মাতা ইনতিকাল করেন। উল্লেখ্য যে, তাঁর দাদা প্রদত্ত নাম মুহাম্মদ এবং তাঁর মায়ের দেওয়া নাম ছিলো আহমাদ। তবে নবুওয়াতের পূর্বে তিনি আল-আমিন হিসেবে বেশি প্রসিদ্ধ ছিলেন।
প্রাথমিক জীবন
আরবের প্রথানুযায়ী জন্মের পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হালিমা সাদিয়া (রা.) এর তত্ত্বাবধানে লালিত-পালিত হন। হযরত হালিমা (রা.) ছিলেন বনু সাদ গোত্রের লোক। বনু সাদ গোত্র বিশুদ্ধ আরবিতে কথা বলতো। এ জন্য মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিশুদ্ধ আরবি ভাষায় কথা বলতে শেখেন। মহানবি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বনু সাদ গোত্রে ছয় বছর কাটিয়েছেন। এ সময় একদিন তাঁর বক্ষ বিদারণ হয়। এ বিষ্ময়কর ঘটনার পর হালিমা (রা.) ভয় পান। তিনি তাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেন। মা হযরত আমিনা শিশু মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে নিয়ে তার পিতার করব যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে মদিনায় যান। ফেরার পথে ‘আবওয়া’ নামক স্থানে তিনি ইনতিকাল করেন। মায়ের ইনতিকালের পর তার দায়িত্ব নেন দাদা আবদুল মুত্তালিব। তার বয়স আট বছর; তখন দাদা আবদুল মুত্তালিব ইনতিকাল করলেন। এরপর তাকে লালন-পালনের দায়িত্ব তার চাচা আবু তালিবের ওপর। চাচা আবু তালিবের সাথে তিনি সিরিয়া সফর করেন। তাঁর বয়স তখন বারো বছর। এ সফরে আবু তালিব ও তাঁর কাফেলার লোকেরা মহানবি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মাঝে অনেক অলৌকিক ঘটনা দেখনে পান।
আরো পড়তে পারেন: সীরাত সাহিত্য বলতে কী বুঝায়? কোরআন ও হাদিসের আলোকে রাসূল (সা.) এর জীবনী অধ্যয়নের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করুন
এ কারণে আবু তালিবের মনে তাঁর প্রতি গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ শৈশব থেকেই মহানবি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে সর্বপ্রকার পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত রাখেন। নবি করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর পনের বছর বয়সের সময় কুরাইশগণ কাবা ঘর পুনর্নিমাণে হাত দেয়। ‘হাজরে আসওয়াদ’ যথাস্থানে স্থাপনের সময় আসল। তখন তাদের মধ্যে বিবাদ দেখা দিল। তা কোথায় স্থাপন করা হবে এবং কারা করবে, এ নিয়ে বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে গৃহযুদ্ধ বাধার মতো অবস্থা সৃষ্টি হলো। তারা সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিলো, যে ব্যক্তি আগামীকাল ভোর বেলায় সেখানে প্রথম প্রবেশ করবে সে এ বিষয়ে ফয়সালা দেবে। পরের দিন ভোর বেলায় প্রথমে যিনি আসলেন তিনি হলেন মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। সকলে খুশি হলো। সমস্বরে বলে উঠলো, আল আমিন এসেছেন। তাঁকে সকলেই বিচারক হিসেবে মেনে নিলো। তিনি একটি চাদরে ‘হাজরে আসওয়াদ’ রেখে বললেন, প্রত্যেক গোত্রের একজন করে চাদরের কিনারা ধরো, সকলে তাই করলো। এরপর তিনি নিজ হাতে পাথরটি উঠিয়ে যথাস্থানে রাখলেন। এভাবে বিবাদ মিটে গেল। সকলেই খুশি মনে ফিরে গেলো।
উপসংহার
মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নবুওয়াতপূর্ব জীবনের চারিত্রিক গুণাবলি, ন্যায়নিষ্ঠা, আমানতদারিতা ও সত্যবাদিতার কারণে জাহিলিয়া যুগে আরবের লোকজন তাঁকে আল আমিন বা বিশ্বস্ত বলে ডাকতো। আমরা সর্বদা মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর আদর্শ অনসরণ করে চলার চেষ্টা করবো।
• IST-501 : Study of Al-Quran (Surah: Al-Fatah and Al-Hujurat) • IST-502 : Introduction to Islamic Dawah • IST-503 : Al-Sirat Al-Nababiah • IST-504 : Human Rights in Islam • IST-505 : Principles and History of Tafsir literature • IST-506 : Principles of Islamic Jurisprudence •