প্রফেশনাল ব্লগিং এর অন্যতম একটি উদ্দেশ্য হলো ব্লগ কনটেন্টকে মনিটাইজ করা। ব্লগিং করার যতগুলো ধাপ আছে একটির পর একটি পার হবেন। এতো মেধা, শ্রম, সময় বিনিয়োগ করবেন। অবশ্যই তার রিটার্ন পেতে হবে। অর্থাৎ আয় উপার্জন ভালো হতে হবে।
অনেককেই অভিযোগ করতে দেখা যায়, ট্রাফিক নেই। মানে সাইটে ভিজিটর আসছে না। এডসেন্স অনুমোদন দেয়নি। এডসেন্স মনিটাইজেশনে আবেদন রিজেক্ট করে দিয়েছে, ইত্যাদি।
অনেক সময় নিয়ে নিশ রিসার্চ করলেন, কী-ওয়ার্ড রিসার্চ করলেন। তারপর ব্লগ তৈরির পরিকল্পনায় দিস্তায় কাগজ খরচ করলেন। পকেটের টাকা খরচ করে ডোমেইন হোস্টিং কিনলেন। ডেভেলপার হায়ার করে সাইট ডেভেলপ করলেন। থিম কিনলেন, প্লাগিন কিনলেন। আরো প্রয়োজনীয় টুল কিনলেন। সবশেষে কষ্ট করে সময় দিয়ে কনটেন্ট লিখলেন। পাবলিশ করলেন- এর পর বললেন ভিজিটর নেই, এডসেন্স নট এপ্রুভড। এরকম যদি আপনার বেলায়ও ঘটে? তাহলে আগে থেকেই চিন্তা করে শুরু করুন। অথবা আগেই বাদ দিন, বস!
এজন্যই ব্লগিং করার জন্য প্রতিটি ধাপ অত্যন্ত কঠোর নিয়ম মেনে এগিয়ে যেতে হবে। আর নিয়ম মানতে হলে নিয়ম জানতে হবে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলেন, আগে জানুন। তারপর শুরু করুন।
ব্লগিং করার জন্য ফোকাস, গুণগত মান, ভ্যালু, এনগেজমেন্ট ও অথরিটি এই ৫টি বিষয় মেনে চলতে হবে। এই ৫টি বিষয়কে ব্লগিংয়ের আইন হিসেবে অভিহিত করা হয়।
ফোকাস | Focus
ফোকাস হলো একটি নির্দিষ্ট বিষয়। এটাকে নিশও বলা হয়। ব্লগিং করার অনেক নিশ আছে। আপনি কোনটি নিয়ে কাজ করবেন সেটা ঠিক করে নিতে হবে। সেই নিশকে ফোকাস করে আপনাকে লিখতে হবে। এজন্য নিশ রিসার্চের গুরুত্ব অনেক। ব্লগ নিয়ে ঘাটাঘাটি করলে দেখবেন অনেক ব্লগই ব্রড নিশের। মানে একটি ব্লগে অনেকগুলো নিশের কনটেন্ট রয়েছে। আপনিও চাইবেন ব্রড নিশ নিয়ে করার জন্য। কিন্তু একজন নবাগত হিসেবে আপনার জন্য ব্রড নিশ নয়। ওই সাইটগুলো বড় বড় মার্কেটার, প্ল্যানার, ডেভেলপার, কনটেন্ট রাইটার রয়েছে। যেটা আপনার মতো একজন নবাগত ব্লগারের পক্ষে ম্যানেজ করা সম্ভব না।
তাই নতুন হিসেবে ছোট নিশ নিয়ে কাজ করতে হবে। আপনার নিশের দিকে ফোকাস রেখে সাইট ডিজাইন করতে হবে। কনটেন্ট তৈরি করতে হবে। ছোট থেকে শুরু করতে হবে। অভিজ্ঞতা হয়ে গেলে পরবর্তীতে আপনিও পারবেন। ব্রড নিশ নিয়ে কাজ করবেন। শুরুটা অনেক চ্যালেঞ্জিং। তাই ছোট নিশের উপর ফোকাস থাকুন।
গুণগত মান | Quality
Qualiy first! লেখাটি কি একটি কোম্পানির ট্যাগ লাইনে দেখেছি। মনে পড়ছে না। সত্যিই গুণগত মান আগে। ব্লগের প্রতিটি ধাপের প্রতিটি কাজে আপনার নিজস্ব মান বজায় রাখতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই যেন নিজস্ব স্বকীয়তা প্রকাশ পায়। অন্যেরটা দেখুন। হুবহু কপি না করে শিখুন। শিখে নিজের মতো করে তৈরি করুন।
কনটেন্ট তৈরির জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য নিতে পারেন। সেসব তথ্যের রেফারেন্স, লিংক যোগ করে দিন। অন্য কারো কথা বা উক্তিকে কোট করে দিন। তাদের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করুন আপনার লেখায়। এতে লেখায় আপনার নিজস্ব স্বকীয়তার বিষয়টি ফুটে উঠবে।
ভ্যালু | Value
আপনার কনটেন্ট এর ভ্যালু তৈরি করুন। কনটেন্ট তৈরির সময় নিজেকে প্রশ্ন করুন- পাঠক আপনার লেখাটিই কেন পড়বে? এরকম কনটেন্ট গুগলে অনেক রয়েছে। সেগুলো বাদ দিয়ে পাঠক আপনারটিই কেন পড়বে।
এজন্য কনটেন্ট তৈরিতে যথেষ্ট সময় দিন। নিজের কাজটি কয়েকবার দেখুন। পারলে অন্য একজনকে দেখান। চেক করলে দেখবেন অনেক কিছুই বাদ পড়ে গেছে। অথবা একটি বাক্যে যেভাবে লিখেছেন, অন্যভাবেও লিখতে পারেন। আরো সহজ করে লিখতে পারেন। চেক করলেই এগুলো ধরা পড়বে। প্রথমে নিজের মতো করে লিখুন। তারপর চেক করুন অর্থাৎ প্রুফ দেখুন। অন্য কাউকে দেখান।
কনটেন্টে যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য সংযুক্ত করুন। তথ্যবহুল পোস্ট তৈরি করুন। তথ্যগুলোকে এমনভাবে উপস্থাপন করুন যেন পাঠক সহজে বুঝতে পারে। তথ্য ভিজুয়ালাইজ করাটাও অনেক জরুরী। বাস্তব সম্মত কথা লিখুন। বাস্তবতা বিবর্জিত কথা বা তথ্য ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। এই প্র্যাকটিসগুলো আপনার কনটেন্ট এর ভ্যালু বাড়াবে।
এনগেজমেন্ট | Engagement
স্কুল জীবনে আমরা বাংলা ২য় পত্র পরীক্ষায় রচনা লিখতাম। পরীক্ষা শেষে একজন আরেকজনকে জিজ্ঞাস করতাম, রচনা কে কয় পাতা লিখেছে। ব্লগে এরকম পাতা ভর্তি রচনা লিখলে হবে না। লেখায় বিভিন্ন ধরনের টেকনিক রাখতে হবে। লেখায় কল ইন এ্যাকশন থাকবে, ভিজুয়াল ম্যাটেরিয়াল থাকবে, প্রশ্ন থাকবে, কমেন্ট বক্স থাকবে, স্যোশাল শেয়ার লিংক থাকবে, এক্সটারনাল লিংক ইত্যাদি থাকবে। এগুলো নিয়ে পাঠকরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করবে। এধরনের চিত্তাকর্ষক বিষয় যদি না-ই থাকবে তাহলে কেন পাঠক আপনার পাতা ভর্তি রচনা নিয়ে আলোচনা বা শেয়ার করবে?
পাঠক আপনার লেখায় কমেন্ট করবে, আলোচনা-সমালোচনা করবে, চিন্তা, সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করবে এটাইে এনগেজমেন্ট। লেখার সময় এনগেজমেন্ট শব্দটি মাথায় রাখুন। ভিজুয়ালাইজ করুন। জীবন্ত করে লিখুন আপনার বিষয়টি। পড়লে পাঠক যেন এর মধ্যে ঢুকে যায়। আনন্দ পায়।
অথরিটি | Authority
অথরিটি বিষয়টি সচরাচর আলোচিত হয় না। কিন্তু বিষয়টা আসলে গুরুত্বপূর্ণ। যদি লেখক আনিসুল হক আজকে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন যে, আগামী বই মেলায় তার নতুন একটি বই প্রকাশিত হবে। বইটি কোন বিষয় নিয়ে লেখা, বইটির নাম কি হবে, কোন প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হবে, প্রচ্ছদ কেমন হবে ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন ও আলোচনা শুরু হবে। পত্রিকায় নিউজ হবে। আর এরকম একটি ঘোষণা যদি আপনি দেন, তাহলে? আনিসুল হকের বই নিয়ে আলোচনা হবে কারণ তিনি এর আগেও বই লিখেছেন। তার অথরিটি আছে। তার কথায় বিশ্বাসযোগ্যতা এবং আস্থা তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। এটাই অথরিটি। এটা একদিনে তৈরি হবে না।
আপনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকুন। সঠিক পদ্ধতিতে। আপনারও অথরিটি তৈরি হবে। এ জন্য যথেষ্ট ধৈর্যে্যর প্রয়োজন আছে।
আলোচিত এই পাঁচটি রুল মেনে ব্লগিং করুন। আর বিশ্বাস রাখুন আপনার মেধা, শ্রম ও সময় বৃথা যাবে না। আপনি সফলতা অর্জন করবেন। এভাবে নিয়ম মেনে যারা এগিয়েছে কেউই বিফল হয়নি। শীঘ্রই আপনিও তাদের দলে অন্তর্ভূক্ত হবেন, নিশ্চয়ই!