রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর জন্ম ও মৃত্যু
রাসূলে করীমের মোবারক নাম মুহাম্মদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। তাঁর পিতার নাম আবদুল্লাহ্। তাঁর পিতার পিতার নাম আবদুল মুত্তালিব, তাঁর পিতার নাম হাশেম, হাশেমের পিতা আবদে মনাফ। রাসূলে করীমের মাতার নাম আমেনা। আমেনা ছিলেন অহবের কন্যা। অহবের পিতা আব্দে মনাফ। তার পিতা যোহরা। উল্লেখযোগ্য যে, নবী করীমের পিতৃকুলের এবং মাতৃকুলের আব্দে মনাফ একই জন নহেন—ভিন্ন ব্যক্তি।
কাফের বাদশাহ আবরাহা যে বছর হস্তী সহকারে খানায়ে কা’বা ধ্বংস করতে আসে—সেই সালের বারই রবিউল আউয়াল নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ভূমিষ্ঠ হন। সেদিনটি ছিল সোমবার। জন্মের কয়েক মাস পর থেকে শিশু নবী ধাত্রী গৃহে লালিত-পালিত হন। পাঁচ বৎসর বয়সে ধাত্রী-মা হালিমা তাঁকে মাতা আমেনার গৃহে ফিরিয়ে দেন। ছয় বৎসর বয়সে মাতা আমেনা তাঁকে সঙ্গে করে আপন মাতুলালয় মদীনার বনী-নাজ্জারে গমন করেন। ফেরার পথে ‘আবওয়া’ নামক স্থানে ইন্তেকাল করেন। সঙ্গীয়া দাসী উম্মে আয়মন বালক নবীকে সঙ্গে করে মক্কায় পৌঁছেন।
👉 আরো পড়তে পারেন: চর্মরোগ থেকে রক্ষা পাবেন কীভাবে
পিতা আবদুল্লাহ্ নবী করীমকে মাতৃগর্ভে রেখেই ইন্তেকাল করেন। পিতা-মাতার মৃত্যুর পর দাদার লালন-পালনে তিনি বড় থেকে ছিলেন। আল্লাহর মহিমা অপার—মানুষের বুঝা ভার। কিছুদিন যেতে না যেতেই দাদা আবদুল মুত্তালিবও ইহধাম ছেড়ে গেলেন। এবার তাঁর ভরণ-পোষণের ভার চাচা আবু তালিব আপন কাঁধে তুলে নিলেন।
একবারের এক ঘটনা। নবীকে সঙ্গে করে চাচা আবু তালিব সিরিয়া তেজারতে চললেন। পথিমধ্যে নাছারা ধর্ম যাজক ‘বুহাইরার’ সাথে সাক্ষাৎ হলো। বুহাইরা আবু তালিবকে বললো—খবরদার! এই বালককে হেফাযত কর। এই বালকই ভাবী নবী, আখেরী পয়গম্বর। এই কথা শুনে আবু তালিব বিস্মিত ও চকিত হলেন— আনন্দে অবিভূত হলেন। বুহাইরার পরামর্শে তিনি বালক নবীকে মক্কায় পাঠিয়ে দিলেন।
বালক নবী যুবক হয়েছেন। বিবি খাদিজার মাল নিয়ে তেজারতে চলেছেন। পথে বিজ্ঞ- সাধু ব্যক্তি ‘নভূরা’ তাঁকে নবী হওয়ার সুসংবাদ দিল। তেজারত শেষে তিনি মক্কায় ফিরে আসলেন। ইতিহাস প্রসিদ্ধা সচ্চরিত্রা বিবি খাদিজার সাথে তাঁর শাদী-মোবারক সুসম্পন্ন হলো। এই সময় নবী করীমের বয়স পঁচিশ বৎসর, বিবি খাদিজার বয়স চল্লিশ বৎসর।
👉 আরো পড়তে পারেন: আল্লাহর সিফাতী বা গুণবাচক ৯৯টি নাম বা আসমাউল হুসনা
রাসূলুল্লাহ্ চল্লিশ বৎসর বয়সে নবুওত প্রাপ্ত হন। তিপ্পান্ন বৎসর বয়ঃক্রমে তিনি মে’রাজ শরীফ গমন করেন। তিনি নুবুওত লাভের সুদীর্ঘ তের বৎসর কাল মাতৃভূমি মক্কাতেই ইসলাম প্রচার কার্যে রত থাকেন। অতঃপর কাফেরদের অত্যাচার উৎপীড়নের কারণে আল্লাহ্ তা’আলার আদেশে মদীনা মনাওয়ারায় হিজরত করেন। তাঁর মদীনা আগমনের দ্বিতীয় বৎসরে ইতিহাস প্রসিদ্ধ প্রথম জেহাদ জংগে বদর অনুষ্ঠিত হয়। এরপর কাফের ও মুসলমানদের মধ্যে ছোট বড় বহু যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তন্মধ্যে পঁয়ত্রিশটি উল্লেখযোগ্য।
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জীবনে মোট এগারটি শাদী করেন। তাঁর জীবিতাবস্থায়ই দুইজন স্ত্রী ইন্তেকাল করেন। একজন হযরত খাদিজা (রাঃ), দ্বিতীয়জন যয়নব বিনতে খোযায়মা (রাঃ) বাকী নয়জনকে রেখে রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জান্নাতী হন। রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর স্ত্রীগণের নাম-
- হযরত সওদা রাযিআল্লাহু আনহা
- হযরত আয়শা রাযিআল্লাহু আনহা
- হযরত হাফছা রাযিআল্লাহু আনহা
- হযরত উম্মে হাবিবা রাযিআল্লাহু আনহা
- হযরত উম্মে সালমা রাযিআল্লাহু আনহা
- হযরত যয়নব বিনতে জাহাশ রাযিআল্লাহু আনহা
- হযরত জোয়ায়রিয়া রাযিআল্লাহু আনহা
- হযরত মায়মুনা রাযিআল্লাহু আনহা
- হযরত সাফিয়া রাযিআল্লাহু আনহা
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর চার জন কন্যা ছিলেন। তাদের নাম-
- হযরত যয়নব রাযিআল্লাহু আনহা
- হযরত রোকেয়া রাযিআল্লাহু আনহা
- হযরত উম্মে কুলসুম রাযিআল্লাহু আনহা
- হযরত ফাতেমা রাযিআল্লাহু আনহা
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর পাঁচ পুত্র সন্তান ছিলেন। তাঁদের সকলেই বাল্যকালে ইন্তেকাল করেন। একমাত্র হযরত বিবি খাদিজা (রাঃ)-এর গর্ভেই জন্ম নিয়েছিলেন চারজন। তাদের নাম—
- হযরত কাসেম রাযিআল্লাহু আনহু
- হযরত আবদুল্লাহ্ রাযিআল্লাহু আনহু
- হযরত তৈয়্যব রাযিআল্লাহু আনহু
- হযরত তাহের রাযিআল্লাহু আনহু
পঞ্চম পুত্র হযরত ইব্রাহীম (রাঃ) জন্ম গ্রহণ করে ছিলেন হযরত মারিয়ার গর্ভে। হযরত মারিয়া কিবতীয়া (রাযি.) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাদী ছিলেন। মক্কা শরীফে তিনি জন্ম নিয়ে শৈশবাবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করেন। হযরত আবদুল্লাহ্ নবুওতের পর মক্কা শরীফে জন্ম গ্রহণ করেন এবং বাল্যকালেই ইন্তেকাল করেন। এতদ্ব্যতীত অন্যান্য পুত্রগণ নুবুওতের পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন এবং নুবুওতের পূর্বেই ইন্তেকাল করেন।
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তেষট্টি বৎসরের জিন্দেগীর দশ বৎসরকাল মদীনা মনাওয়ারায় ইসলাম প্রচার কার্যে অতিবাহিত করেন। ছফর মাসের দুইদিন বাকী থাকতে (বুধবার) তিনি রোগ শয্যায় শায়িত হন। ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার চাশতের ওয়াক্তে তিনি ওফাত পান।
রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যাগণের মধ্যে হযরত যয়নব (রাঃ)-এর গর্ভে এক ছেলে ও এক মেয়ের জন্ম হয়। তাঁদের নাম মোবারক আলী ও উমামা। হযরত রোকেয়া (রাঃ)-এর গর্ভে আবদুল্লাহ্-এর জন্ম হয়। কিন্তু ছয় বৎসর বয়সে তিনি মারা যান। হযরত উম্মে কুলসুম (রাঃ) নিঃসন্তান। হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর গর্ভে ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেনের জন্ম হয়। তাঁদের বংশধরগণ দ্বারাই দুনিয়েতে নবী বংশ জারি আছে। কিন্তু দৈহিক বংশের চেয়ে রূহানী বংশের সংখ্যাই অধিক।
তথ্যসূত্র
- বেহেশতী জেওর • লেখক: হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ.) • অনুবাদক: হযরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.)