▶ প্রশ্ন: রসায়ন শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান আলোচনা করুন। ▶ বিষয়: IST-512 : Muslim Contribution to Science and Technology ▶ কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)
ভূমিকা
ইতিহাস, ভূগোল, চিকিৎসাশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা ও গণিতশাস্ত্রের পর মুসলমানগণ রসায়নশাস্ত্রে তাঁদের মৌলিক অবদান রেখে গেছেন। রসায়নশাস্ত্র (Chemistry) আলকেমি (Alchemy) হতে জন্মলাভ করেছে। এর উন্নতির জন্য মুসলমানদের অবদান অতুলনীয়। পৃথিবীর জ্ঞানাগারে তাদের সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান হচ্ছে বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ এবং বৈজ্ঞানিকসূত্র ও পদ্ধতির উন্নতি বিধান। হ্যামবেন্টের মতে, “আধুনিক রসায়নশাস্ত্র মুসলমানদের উদ্ভাবন এবং এ বিষয়ে তাদের কৃতিত্ব অতুলনীয়রূপে চিত্তাকর্ষক।”
মুসলমানগণ প্রাচীন রসায়নের অসারতা প্রমাণ করেন। তারা সীসা, পারদ, রৌপ্য, তাম্র ও স্বর্ণের রাসায়নিক সাদৃশ্যের সন্ধান করেন। তারা ধাতুর সহিত অম্লজান মিশ্রণ (Oxidization) ও হিসেব নিরূপণের রাসায়নিক পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। মুসলমানগণ পৃথিবীকে প্রথম পাতন, পরিস্রবণ ও স্বচ্ছকরণের শিক্ষা দান করেন। মুসলিমরা স্পেনেই রসায়নশাস্ত্র প্রথম প্রতিষ্ঠিত করেছিল।
রসায়ন শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান
রসায়ণ শাস্ত্রে যে সকল মুসলিম বিজ্ঞানী অসামান্য অবদান রেখেছেন নিম্নে তা বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
জাবির বিন হাইয়ান
জাবির বিন হাইয়ানকে (যিনি পাশ্চাত্যে জেবের নামে পরিচিত) আধুনিক রসায়নের জনক বলা হয়। তিনি ৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে কূফায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রাচীন রসায়নবিদদের তুলনায় অধিক মাত্রায় পরীক্ষার গুরুত্ব স্বীকার করে রসায়নশাস্ত্রের সূত্র ও ব্যবহারে বিশেষ উন্নতি সাধন করেছিলেন । চতুর্দশ শতাব্দীর পরে তার রচনাবলী এশিয়া ও ইউরোপ রসায়নশাস্ত্রের নির্ভরযোগ্য আলোচনা হিসেবে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। তিনি রসায়নশাস্ত্রের উপর প্রায় পাঁচশত গ্রন্থ রচনা করেন । তাঁর এ সমস্ত গ্রন্থের মধ্যে কিতাব “আর রহমাহ্” (কৃপার পুস্তক) ‘কিতাব আল তাজমী’ ও ‘আল জিবাক’, ‘আশ শারকী’ বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
তিনি রসায়নশাস্ত্রের দু’টি মূলসূত্র অর্থাৎ ভস্মীকরণ ও লঘুকরণকে বৈজ্ঞানিক নিয়মে আলোচনা করেছেন। তিনি বাীকরণ, ঊর্ধ্বপাতন, দ্রবীকরণ, স্ফটিকীকরণ প্রভৃতি পদ্ধতির উন্নতি সাধন করেছিলেন। তিনিই প্রথম যবক্ষার এসিড, গন্ধক, দ্রাবক, জল দ্রাবক, রৌপ্যক্ষার ও অন্যান্য যৌগিকসূত্র আবিষ্কার করেন। তিনি স্বর্ণ-রৌপ্য দ্রবীভূত করার উপযোগী (ধাতু দ্রাবক) উৎপাদন পদ্ধতি জানতেন । তাকে নিরপেক্ষ ও গতি বিজ্ঞানের পুরোধা বলা হয়। এ গবেষণা দ্বারা তিনি যৌগিক বস্তু ও অন্যান্য পদার্থের গঠনে গ্যাসের ভূমিকা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তিনি রসায়ন বিজ্ঞানকে প্রণালীবদ্ধ করে একে একটি গবেষণা পদ্ধতিতে পরিণত করেন। তার অনুসারীদের মৌলিকতা, অধ্যবসায়, জ্ঞানের গভীরতা ও পরীক্ষার সূক্ষ্মতা পাঠকদের বিস্ময় উৎপাদন করে ।
আল-রাযী ও ইবনে সীনা
সে যুগের অপর একজন বিখ্যাত রসায়নবিদ আল রাযী ক্ষার এসিডের পুনরাবিষ্কার করেন এবং বিখ্যাত চিকিৎসক ইবনে সীনা রসায়নশাস্ত্রকে প্রণালীবদ্ধ করতে সাহায্য করেন। পরবর্তীকালে আল রাযী ইউরোপে প্রসিদ্ধি লাভ করে সুধীসমাজে রসায়নশাস্ত্রের সর্বপ্রথম নির্ভরযোগ্য পণ্ডিত হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। বস্তুত আধুনিক রসায়নশাস্ত্রে মুসলমানদের আবিষ্কার ও উত্তোরণ এবং এ বিষয়ে তাঁদের কৃতিত্ব অতুলনীয়।
ইবনে ইয়াযিদ
ইবনে ইয়াযিদ রসায়নের ইতিহাসে তিনি ঐতিহাসিক চরিত্র। গ্রিক ভাষায় রচিত বিজ্ঞানের অনেক বই সর্বপ্রথম আরবিতে অনুবাদ করেন তিনি। তিনি মিসরে গিয়ে রসায়ন চর্চা করেন। আল-রাজী, আবুল কাসেম প্রমূখ খ্যাতিমান রসায়নবিদগণ তাদের মূল্যবান রচনায় রসায়ন সম্পর্কে তাঁর মতামত নিয়ে আলোচনা করেন।
আর হুমায়রী ও আস সাদিক
হারবী আর-হুমায়রী ও জাফর আস-সাদিক দুইজনই ছিলেন আধুনিক রসায়নের জনক জাবের ইবনে হাইয়ানের শিক্ষক। তারা মিসরের রসায়ন সম্পর্কে প্রচুর জ্ঞান রাখতেন। ইবনে হাইয়ান তাদের রসায়নিক তত্ত্বগুলো নিয়ে তার রচিত গ্রন্থে বিস্তর আলোচনা করেন।
ইবনে ফিরনাস
মুসলিম রসায়নবিদদের মধ্যে আরেকটি উল্লেখযোগ্য নাম হল আব্বাস ইবনে ফিরনাস। তিনি ছিলেন একাধারে আবিষ্কারক, প্রকৌশলী এবং উড্ডয়ন বিশারদ ছিলেন। রসায়ন শাস্ত্রে তাঁর অসামান্য অবদান রয়েছে।
আন নাবতী
পুরো নাম আবু বকর আহমদ ইবনে আলী ইবনে কায়েস আন-নাবতী। তাছাড়া, বিখ্যাত এই মুসলিম রসায়নবিদ ইবনে ওয়াহশিয়া নামেও অধিক পরিচিত। ইরাকে জন্ম গ্রহণকারী এই রসায়নবিদের রসায়ন বিষয়ক শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হল ‘উসুলুল কাবির’।
উপসংহার
আল-তাতিমী, আল-মাজরিতি, মুয়াফফাক হারবী, আল-কাসী, ইবনে জাহিয, ইবনে রাসসাম, আল-সাদিক, আল-কিন্দি, ইবনে মিসকওয়াহ, আল বিরুনী, ইবনে সিনা, আল-খাজিনী, দীন তুসী, ইবনে খালদুন, আল খারিজমি, এইচ জেইয়েল, আব্বাস শাফেঈ ইত্যাদি অসংখ্য মুসলিমের হাত ধরে সমৃদ্ধ হয়েছে আমাদের আজকের আধুনিক রসায়ন বিজ্ঞান। অবশ্য একটা সময় জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলিমদের প্রবল প্রতাপ থাকলেও এখন আর তা লক্ষ্য করা যায় না।
সম্ভাব্য প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ (এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ)
• IST-507 : Study of Al-Hadith (Al-Mishkat Al-Masabih: Al-Iman, AlILM and Al-Salat (Selected Hadith) • IST-508 : Principles and History of Hadith literature • IST-509 : Muslim Personal Law and Law of Inheritance in Islam • IST-510 : Banking and Insurance in Islam • IST-511 : Study of Religions (Islam, Buddhism, Hinduism, Judaism, Christianity) • IST-512 : Muslim Contribution to science and technology •