উপমহাদের প্রখ্যাত আলেম, হাকিমুল উম্মত হিসেবে খ্যাত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রচিত মুসলমানের হাসি বই-এ নাসির গাজীর অনেকগুলো বুদ্ধিদীপ্ত ও শিক্ষণীয় গল্প স্থান পেয়েছে। গল্পগুলো থেকে শিক্ষণীয় অনেক বিষয় রয়েছে। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের জন্য অনেক হাস্যরসাত্মক শিক্ষণীয় গল্প রয়েছে। সেখান থেকে গল্পগুলো এখানে তুলে ধরা হলো-
ওয়াজ না করার ফন্দি
নাসির গাজী সত্যিই খুব চালাক ও জ্ঞানী লোক ছিলেন। তার উপস্থিত বুদ্ধিরও কমতি ছিল না। গ্রামের লোকেরা তাকে মোল্লা নাসির গাজী নামেই ডাকত।
একদিন গ্রামের লোকেরা মোল্লা নাসির গাজীর কাছে জেদ ধরল- আগামী জুমু’আয় তাঁকে বক্তব্য রাখতে হবে। কিন্তু নাসির গাজীর বুদ্ধি বেশী হলেও বক্তৃতায় তিনি আনাড়ী। তাই নিজের এ দোষ ঢাকার জন্য তিনি বয়ান করার প্রস্তাবে রাজি হলেন না ।
গ্রামের লোকেরা তাকে বারবার অনুরোধ করতে লাগল। বেচারা যেন আর দায় এড়াতে পারেন না। অবশেষে তিনি লোকদের কথা দিয়ে দিলেন যে, আগামী জুমু’আয় তিনি ওয়াজ করবেন।
তিনি কথা দিলেন বটে, তবে মনে মনে বুদ্ধি করতে লাগলেন, যে করেই হোক এ মুসীবত থেকে তাঁকে বাঁচতেই হবে।
যাই হোক জুমু’আর দিন এসে গেল। লোকেরা তাঁকে এক রকম জোর করেই মসজিদের মিম্বরে তুলে দিলো।
নাসির গাজীর উপস্থিত বুদ্ধির কমতি ছিল না। তিনি একটু বুদ্ধি করে লোকদেরকে উদ্দেশ্যে করে বললেন, আজ আমি আপনাদের সামনে কোন বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করবো, আপনারা কি জানেন? লোকেরা সমস্বরে উত্তর দিলো, জ্বী না। নাসির গাজী তখন একটু রাগত স্বরে বললেন- আমি কোন বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করবো, এটাই যখন আপনারা কেউ জানেন না, এ রকম লোকদের সামনে আমি ওয়াজ করিনা। একথা বলে তিনি রাগে গজ গজ করতে করতে মসজিদ থেকে বেরিয়ে এসে অন্য মসজিদে নামায আদায় করলেন।
👉 আরো পড়তে পারেন: শিশুদের সুন্দর নাম | baby name bangla
পরের জুমু’আয় লোকেরা আবারো তাঁকে মিম্বরে তুলে দিলো। নাসির গাজী পূর্বের ন্যায় আবারো প্রশ্ন করলেন। লোকেরা যেহেতু সবাই জানে যে, গত জুমু’আয় তার উত্তরে ‘না’ বলার কারণে তিনি মসজিদ থেকে বেরিয়ে যান, এজন্য আজকের জুমু’আয় সবাই নাসির গাজীর প্রশ্নের উত্তরে বলল, ‘জ্বী জানি’। নাসির গাজীও সুযোগ পেয়ে বললেন, আমি আজ কি আলাপ-আলোচনা করবে, তা যখন আপনারা সবাই জানেনই, তাহলে তো আমার আর কথা বলার কোন প্রয়োজন-ই নেই। এ কথা বলে তিনি মিম্বর থেকে নেমে গেলেন।
যা হোক এ সপ্তাহেও লোকদের ওয়াজ শোনা হল না। কিন্তু গ্রামের লোকেরাও নাছোরবান্দা। তারা নাসির গাজী মুখে ওয়াজ শুনবেই। তাই লোকেরা চুপিচুপি এক বুদ্ধি করে পরবর্তী জুমু’আয় নাসীর গাজীকে আবারো হাজির করলো মিম্বরে।
নাসির গাজী এবারও মিম্বরে চড়ে পূর্বের ন্যায় একই প্রশ্ন করলেন। লোকেরা এবার তাদের পূর্ব বুদ্ধিমতে অর্ধেক লোক বলল, জ্বী জানি; আর অর্ধেক লোক বলল, জ্বী না, জানিনা। এবার নাসির গাজী একটি মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, যারা জানেন, তারা তাদেরকে জানিয়ে দিন- যারা জানেনা।
নাসির গাজীর অন্যান্য গল্পসমূহ
- এক সিংহ ও পথচারীর গল্প ➜ পড়ুন
- জ্বি হুজুর! জ্বি হুজুর!! ➜ পড়ুন
- মূল্যবান সম্পদ ➜ পড়ুন
- আজ নগদ কাল বাকী ➜ পড়ুন
- মাছের মাথা-খাওয়ার লোভ ➜ পড়ুন
- ওয়াজ না করার ফন্দি ➜ পড়ুন
- একসাথে দু’জন ➜ পড়ুন
- হতবাক ইহুদি ➜ পড়ুন
- উচিত বিচার ➜ পড়ুন
- তিন টাকার সদাই ➜ পড়ুন
- বাদশাহ’র ছেলের লেখাপড়া ➜ পড়ুন
- ফুলদানির জন্য মৃত্যুদন্ড ➜ পড়ুন
- পন্ডিত খেতাবের বিড়ম্বনা ➜ পড়ুন
- সৎ লোকের সন্ধানে ➜ পড়ুন
- চৈতন্য ফিরে এল ➜ পড়ুন
- ঝাড়-ফুঁকের এ্যাকশন ➜ পড়ুন
- দিতে জানে না, নিতে জানে ➜ পড়ুন
- সম্পদের ওসীয়তনামা ➜ পড়ুন
- আল্লাহ যা করেন বান্দার মঙ্গলের জন্যেই করেন ➜ পড়ুন
- সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
- চোর ধরার আজব বুদ্ধি ➜ পড়ুন
- দুনিয়া ধ্বংসের আগেই ধ্বংস ➜ পড়ুন
- অল্প সময়ের জন্য বিনা খরচে সুখের আস্বাদ ➜ পড়ুন
- পনের দিনের মজুরীর ভয়ে ➜ পড়ুন
- কুকুর তাড়ানো ভণ্ডপীর ➜ পড়ুন
- সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
- পবিত্র কোরআনের আয়াতের ফুঁকের ক্ষমতা