উপমহাদের প্রখ্যাত আলেম, হাকিমুল উম্মত হিসেবে খ্যাত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রচিত মুসলমানের হাসি বই-এ নাসির গাজীর অনেকগুলো বুদ্ধিদীপ্ত ও শিক্ষণীয় গল্প স্থান পেয়েছে। গল্পগুলো থেকে শিক্ষণীয় অনেক বিষয় রয়েছে। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের জন্য অনেক হাস্যরসাত্মক শিক্ষণীয় গল্প রয়েছে। সেখান থেকে গল্পগুলো এখানে তুলে ধরা হলো-
তিন টাকার সদাই
এক দেশে এক রাজা ছিলেন খুব চালাক প্রকৃতির। মাঝে মাঝে এমন সব জিনিস আনতে বলতেন সভাসদকে, যা নাসির গাজীকে ছাড়া কেউ আনতে পারতো না। এভাবে রাজার কাছে নাসির গাজী দিন দিন প্রিয় থেকে প্রিয় হতে লাগল।
একদিনের ঘটনা। রাজা সবাইকে ডেকে বললেন- আমার কিছু মূল্যবান সদাই করতে হবে। তখন উপস্থিত সভাসদরা বলে উঠল, হুজুর! বলুন, আমরাতো রয়েছি। কি সদাই করতে হবে? রাজা তখন মুচকি হেসে বললেন, এ সদাই নাসির গাজীকে ছাড়া কেউ আনতে পারবে না।
সভাসদরা নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করতে লাগল- যে করেই হোক এ সদাই আমাদেরকে আনতেই হবে। নইলে রাজার সামনে মুখ দেখাতে পারবো না। উজির-নাজির সবাই রাজার কাছে গিয়ে জোর দিয়ে বললেন- কি এমন সদাই? টাকা দিন এক্ষুণি এনে দিচ্ছি। তখন রাজা তিনটি টাকা দিয়ে বললেন- এক টাকার “এখন”, এক টাকার “তখন” আর এক টাকার “এখনো না- তখনো না” নিয়ে এসো।
সদাইয়ের নাম শুনে উজির-নাজির তো একেবারে হতভম্ব। অগত্যা কি আর করা। টাকা তিনটি নিয়ে বাজারে গেলেন।
উজির-নাজিরকে দেখে দোকানদাররা ভাবলো- অনেক কিছুই নেবেন নিশ্চয়। তাই সব দোকানদাররা ডাকতে লাগলো- আমার দোকানে আসুন, আমার দোকানে আসুন।
উজির-নাজির সব দোকানে না গিয়ে একটি ভাল দোকানে গিয়ে বসলেন। দোকানের মালিক এটা-সেটা অনেক কিছু খাওয়ালেন উজির-নাজিরকে। তারপর দোকানের মালিক বললেন- এবার বলুন, কি জিনিস নেবেন?
উজির-নাজির তিনটি টাকা বের করে বললেন- আমাদেরকে এক টাকার “এখন”, এক টাকার “তখন” আর এক টাকার “এখনো না- তখনো না” দিন। উজির-নাজিরের কথা শুনে দোকানের মালিকতো রাগে ফায়ার। বললেন, ফাজলামি করার আর জায়গা পাননা? কর্মচারীদের বললেন, ধর ব্যাটাদেরকে। বকা শুনে তারা রাজার কাছে চলে এলেন এবং বিস্তারিত ঘটনা শুনালেন।
তখন রাজা তাদেরকে বললেন, জানতাম এমনটিই হবে। তোমরা তো একেকজন একটা গাঁধা। আবার গাধা তো বোঝা বহন করে, তোমরা তাও পার না। যাও, ডাকো নাসির গাজীকে।
বুদ্ধির রাজা নাসির গাজী রাজার সামনে এসে হাজির হলেন। রাজা তাকে তিনটি টাকা দিয়ে বললেন- যাও, ওদেরকে যা আনতে বলা হয়েছিল, তা নিয়ে এসো।
নাসির গাজী টাকা তিনটি নিয়ে বাজারে রওয়ানা দিলেন, আর যেতে যেতে ভাবতে লাগলেন- কি করা যায়?
কিছুদুর যেতেই একজন ভিক্ষুক পড়ল সামনে। তাকে দিলেন এক টাকা। আরো কিছুদুর যেতেই সামনে পড়ল ম্যাজিক খেলার আসর। ম্যাজিক দেখে সবাই টাকা দিচ্ছে। নাসির গাজীও সেখানে এক টাকা দিলেন। বাকী রইল আরো এক টাকা। ভাবতে লাগলেন- কি নেয়া যায়? কিছুদুর যেতেই দেখতে পেলেন- এক লোক জিলাপী বানাচ্ছে। গরম গরম জিলাপী রাজার খুব পছন্দ। তাই তিনি এক টাকার গরম জিলাপী নিয়ে বিজয়ের হাসি হেসে রাজার সামনে হাজির হলেন।
রাজা মাত্র বিকালের চা পান করতে যাবেন- এমন মুহূর্তে গরম জিলাপীর মোড়কটি নাসির গাজী তার সামনে ধরলেন। লোভ সামলাতে না পেরে এক টুকরা জিলাপী রাজা মুখে পুরে নিলেন। আর বললেন- মনে হচ্ছে জিলাপীগুলো “এখন” বানানো। তখনি নাসির গাজী বললেন, এটাই হচ্ছে আপনার এক টাকার “এখন”। আরেক টাকা দিয়েছি ফকিরকে, তা পাবেন আপনি সেই “তখন” মানে আখিরাতে। আরেক টাকা দিয়েছি ম্যাজিক দেখানোর লোকটিকে। সেটা আপনি পাবেন না, “এখনও না- তখনও না”। সদাই তিনটি পেয়ে রাজা খুব খুশী হলেন এবং নাসির গাজীকে অনেক টাকা পুরস্কৃত করলেন।
নাসির গাজীর অন্যান্য গল্পসমূহ
- এক সিংহ ও পথচারীর গল্প ➜ পড়ুন
- জ্বি হুজুর! জ্বি হুজুর!! ➜ পড়ুন
- মূল্যবান সম্পদ ➜ পড়ুন
- আজ নগদ কাল বাকী ➜ পড়ুন
- মাছের মাথা-খাওয়ার লোভ ➜ পড়ুন
- ওয়াজ না করার ফন্দি ➜ পড়ুন
- একসাথে দু’জন ➜ পড়ুন
- হতবাক ইহুদি ➜ পড়ুন
- উচিত বিচার ➜ পড়ুন
- তিন টাকার সদাই ➜ পড়ুন
- বাদশাহ’র ছেলের লেখাপড়া ➜ পড়ুন
- ফুলদানির জন্য মৃত্যুদন্ড ➜ পড়ুন
- পন্ডিত খেতাবের বিড়ম্বনা ➜ পড়ুন
- সৎ লোকের সন্ধানে ➜ পড়ুন
- চৈতন্য ফিরে এল ➜ পড়ুন
- ঝাড়-ফুঁকের এ্যাকশন ➜ পড়ুন
- দিতে জানে না, নিতে জানে ➜ পড়ুন
- সম্পদের ওসীয়তনামা ➜ পড়ুন
- আল্লাহ যা করেন বান্দার মঙ্গলের জন্যেই করেন ➜ পড়ুন
- সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
- চোর ধরার আজব বুদ্ধি ➜ পড়ুন
- দুনিয়া ধ্বংসের আগেই ধ্বংস ➜ পড়ুন
- অল্প সময়ের জন্য বিনা খরচে সুখের আস্বাদ ➜ পড়ুন
- পনের দিনের মজুরীর ভয়ে ➜ পড়ুন
- কুকুর তাড়ানো ভণ্ডপীর ➜ পড়ুন
- সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
- পবিত্র কোরআনের আয়াতের ফুঁকের ক্ষমতা