গর্ভাবস্থায় রক্তস্বল্পতা যখন ক্ষতির কারণ
মানবদেহের রক্তের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিমোগ্লোবিন। রক্তে এর পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলে তাকে রক্তস্বল্পতা বা এনিমিয়া বলে। আয়রন বা লৌহ রক্তে হিমোগ্লোবিনের সঠিক মাত্রায় রাখতে সহায়তা করে। আমাদের দেশের অনেক মহিলা-ই আয়রনের অভাবজনিত কারণে রক্তস্বল্পতায় ভোগেন। এর কারণ, মহিলাদের প্রতি সামাজিক বৈষম্যমূলক আচরণ, খাবারের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অজ্ঞতা, বয়ঃসন্ধিকাল থেকে শুরু করে সমগ্র প্রজননকালে প্রতিমাসে একবার করে ঋতুবতী হওয়ার ফলে শরীর থেকে রক্তক্ষরণ, কৃমির সংক্রমণ প্রভৃতি।
গর্ভাবস্থায় মহিলাদের শরীরে আয়রনের চাহিদা বেড়ে যায়। গর্ভবতী মা এবং গর্ভজাত বাচ্চার চাহিদা মেটাতে এ সময় স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ বা তিনগুণ আয়রন প্রয়োজন হয়। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ৭ গ্রাম/ডেসিলিটারের নিচে না নামলে সাধারণত কোনো প্রকার অসুবিধা বোধ হয় না। অনেক ক্ষেত্রে উপসর্গ না থাকলেও রক্ত পরীক্ষা করালে রক্তস্বল্পতা ধরা পড়তে পারে।

রক্তস্বল্পতাজনিত কারণে গর্ভবতী প্রায় সময়ই ক্লান্ত এবং দুর্বল বোধ করেন। অবসন্নতা, মাথা ঝিমঝিম করা, বুক ধড়ফড় করা, অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠা, শ্বাসকষ্ট হওয়া কিংবা হাত- পায়ে পানি আসা মারাত্মক রক্তস্বল্পতার লক্ষণ। এ সময় চামড়া ফ্যাকাশে হয়ে যায়। হাত-পায়ের তালু, জিহ্বা, দাঁতের মাড়ি এবং চোখের নিচের পাতার ভেতরের দিকে এ ফ্যাকাশে ভাব পরিলক্ষিত হয়। তাই এ সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা নির্ণয় করা উচিত। রক্তস্বল্পতার চিকিৎসা না করালে গর্ভাবস্থায় এর জটিলতা বেড়ে যায়।
👉 আরো পড়তে পারেন: কোন ধরনের কলা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো? পাকা, আধা পাকা, বেশি পাকা
অধিক মাত্রায় রক্তস্বল্পতা হার্ট ফেইলিওর, গর্ভপাত কিংবা নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রসবের মতো মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত মহিলাদের বিভিন্ন প্রকার জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। তাই এ সময় প্রচুর পরিমাণে রঙিন শাক-সবজি (যেমন- কচুশাক, ডাঁটাশাক, লালশাক) ও ফলমূল, দুধ, মাছ, মাংস, কলিজা, ডিম প্রভৃতি লৌহসমৃদ্ধ খাবার খেলে রক্তস্বল্পতা দূর হয়। এছাড়া ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ খাবার যেমন— আমলকি, লেবু, জাম্বুরা, আমড়া, আনারস, পেয়ারা ইত্যাদি খেতে হবে। এতে শরীরের আয়রন বা লৌহের শোষণ ভালোমতো হয়।