▶ প্রশ্ন: কুরআনের বর্ণনা শৈলি। বর্ণনারীতির উপর একটি মানসম্মত প্রবন্ধ লিখুন। ▶ বিষয়: (IST-501) Study of Al-Quran (Surah: Al-Fatah and Al-Hujurat) ▶ কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)
ভূমিকা
আল্লাহ যখন মাটির তৈরি মানুষের সাথে কথা বলতে চাইলেন তখন নানা দেশের নানান রীতিনীতি বর্জন করলেন, যা সদা পরিবর্তনশীল। আদতে যুগে যুগে মানুষের সীমাবদ্ধ জ্ঞান যে রীতি গড়ে তোলে, তা তাদের ক্রমাগত মুর্খতার পরিচয় নিয়ে চলে। তাই তা ছেড়ে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন-এর বাক্য ও বাক্য সমষ্টি এমনভাবে প্রকাশিত করলেন যা বর্ণনার প্রতিটি ক্ষেত্রেই যথাযথ সুষমামণ্ডিত, অর্থপূর্ণ, সুন্দর এবং যথার্থ অদ্বিতীয়।
আয়াতের রচনা রীতি
যদিও কুরআনের আয়াতের মাত্রা রীতি প্রচলিত সব রীতির থেকে আলাদা তথাপি তা রীতিনীতি ছাড়াও তার নিজস্ব বিশেষ নিয়ম নীতি রয়েছে। বস্তুত কুরআনের বিভিন্ন সূরার ভেতর যে রীতি অনুসরণ করা হয়েছে সে সবের ভেতরকার সব রীতিগুলোর বৈশিষ্টের মূল সূত্র ধরে নতুন এক রচনা রীতি নির্ধারিত করা চলে। কুরআনে মাত্রার জন্য শ্বাস ও স্বরকে ভিত্তি করা হয়েছে। বাহরে ত্বাবীল ও বাহরে মদীদ এর মত ধরা বাঁধা মাত্রার আশ্রয় নেয়া হয়নি। তেমনি ছন্দের জন্যেও সেই পন্থা অনুসরণ করা হয়নি যা আমর কবিতায় দেখতে পাই। বরং একটি শ্বাস নিয়ে যে শব্দ নিঃশোষিত হয়, সেই শব্দটি কুরআনের আয়াতে ছন্দের গ্রন্থি হয়ে দেখা দেয়, হোক তা আমাদের পরিকল্পিত ছন্দরীতির প্রতিকূল। কুরআনের মাত্রা ও ছন্দ রীতির এটাই চরম সংক্ষিপ্ত পরিচয়।
আরো পড়তে পারেন: সূরা আল-হুজরাতের আলোকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর মর্যাদা আলোচনা করুন
প্রকৃতিগত শ্বাস-প্রশ্বাসের যাতায়াতই কুরআনের ছন্দ রীতি
মূলত বুকের ভিতর শ্বাস প্রশ্বাসের যাতায়াত চিরন্তন ও প্রকৃতিগত ব্যাপার। যদিও শ্বাস বাড়ানো কমানো মানুষের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল, তথাপি শ্বাসকে যদি স্বাভাবিক অবস্থায় ছেড়ে দেয়া হয়, তাহলে তার আসা যাওয়াটা একটা নির্ধারিত সময় অনুসরণ করে চলে। বাক্য বা চরণের ভিক্তি যদি এই শ্বাস-প্রশ্বাসের ওপর রাখা হয়, তাহলে বিভিন্ন চরণের ভেতরে ২/৩ শব্দের বেশি তারতম্য দেখা দেয় না। বস্তুত, কোন শব্দের ৪ ভাগের ১ বা ৩ ভাগের ১-এর বেশি তারতম্য কমই দেখা দেয়। আর এ সামান্য পার্থক্য এমন গুরুত্বর কিছু নয়। যার ফলে চরণটি রীতির সীমা লংখন করে কিংবা মাত্রা হারিয়ে ফেলে। এর ফলে ক্ষতি তেমন হয়ই না, উপরন্তু রচনার ক্ষেত্রে বাড়ানো কমানোর স্বাধীনতা পাওয়া যায় ও আগ পিছু করার সুযোগ মেলে। যার ফলে নিয়ম নীতির ভেতর দিয়ে বাক্যের সৌন্দর্য রাখার, এমনকি বাড়ানোও সম্ভাবনা থাকে। বলা বাহুল্য কুরআন চৌদ্দশত বছর আগে আধুনিক মুক্ত ছন্দের প্রবর্তন করে গেছে।
আয়াতের ওজন বা মাত্রা
বলা বাহুল্য, শ্বাসের এ সময়টিকে কুরআনের মাত্রার মানদন্ড করা হয়েছে। সেটাকে আবার ২ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন- দীর্ঘ, মধ্যম। দীর্ঘ মাত্রার উদারণ হল সূরা নিসা। মধ্যম মাত্রার উদারণ হল সূরা আরাফ ও সূরা দূখান।
আয়াতের ছন্দরীতি
আয়াতের মাত্রার মত তার আয়াতের ছন্দ রীতির ভিত্তি হল শ্বাসের সময়। শ্বাসটি যে শব্দে গিয়ে নিঃশেষিত হবে। শ্বাস গিয়ে আলিফেই শেষ হোক কিংবা ইয়ায়, তথাপি সেই আয়াতের ছন্দ রীতি রসানুভূতির উদ্রেক করবে।
আরো পড়তে পারেন: সূরা আল ফাতাহ এর আয়াত ১১ এর ব্যাখ্যা
আলিফ দ্বারা সৃষ্ট ছন্দ
শেষ আলিফের সংযোজন ও কাফিয়া ছন্দের সৃষ্টি হয়। তেমনি বাক্যের শেষে আলিফের সংযোজন ও কাফিয়া সৃষ্টি করে। কারণ কুরআনের নির্ধারিত নীতিতে এরা এত দূরত্ব সত্তেও কাফিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
পূর্বের অক্ষরের সমতা অধিক শ্রুতিমধুর
এরূপ অবস্থায় যদি পূর্ব অক্ষরের মতামত শর্ত করা হয়, তাহলে নীতির দিক থেকে অপ্রয়োজনীয় হলেও অধিকতর শ্রুতিমধুর হবে ঠিকই। সূরা মরিয়ম এবং সূরা ফুরকানস তার সাক্ষর বয়ে চলেছ। তেমনি যদি সব আয়াতের একই অক্ষরে গিয়ে সমাপ্তির শর্ত লাগানো হয় যেরূপ সূরা আর রহমানের আয়াতগুলো নুন অক্ষরে শেষ হয়েছে তাতেও রস সৃষ্টির মাত্রা বাড়বে।
সূরার প্রথম ও শেষে কাফিয়া ছন্দের পরির্তন
কখনও শ্রোতার রুচি লক্ষ করে কিংবা কাক্যের সৌন্দর্যানুভূতি সৃষ্টির জন্য প্রথম ও শেষ আয়াতের কাফিয়া ঢ়ং বদলে দেয়া হয়। যেমন: সূরা মরিয়মের শেষে ইদ্দা ও হাদ্দা এসেছে। অথচ এটা সর্বজনবিদিত যে এসব আয়াতের প্রথম দিকের ছন্দরীতি সম্পূর্ণ অন্য ধরনের ।
ছোট আয়াতের সাথে বড় আয়াতের সম মাত্রার আনার রহস্য
কুরআনের এ হিসেবে ওজনবিহীন কিছু আয়াত রয়েছে। কোন আয়াত তো সংক্ষিপ্ত, আর সাথেই রয়েছে লম্বা এক আয়াত। কিন্তু আদতে তাও মাত্রা ছাড়া নয়। কারন এ ধরনের স্থানে হয় কাব্য বিন্যাসের এক বিশেষ ধারা অনুসৃত হয়েছে, নয় কোন প্রবাদ বাক্য গ্রহণ করা হয়েছে, কিংবা একই বাক্যাংশের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। তাই ছোট আয়াতের ও অবশেষে বড় আয়াতের সমান মাত্রায় এসে গেছে।
বড় আয়াতের ছোট আয়াতের সম-মাত্রার ব্যবহার রহস্য
কখন পাশাপাশি দুটি আয়াতের একটি হয় লম্বা, অপরটি খাট। তা সত্বেও দুয়ের ওজন ঠিকই থাকে। এ সমতার রহস্য মূলত আয়াত দুটোর বর্ণনারীতিতেই নিহিত থাকে। মূল রহস্য হল এই যে, যখন ওজন কাফিয়াসহ কোন সুন্দর বাক্য সৃষ্টি হয়ে এক পাল্লায় আসে, আর অন্য পাল্লায় সহজ সাবলীল ও আকর্ষনীয় একটি বাক্য বসে, সুরুচি তখন তাৎপর্যের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ন বাক্যটিকেই মূল্য দেয় বেশি। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এ সুযোগ থাকে যে একটি কাফিয়া উপেক্ষা করে অন্য কাফিয়ায় গিয়ে ওজন শেষ করবে। সুস্থরুচির কেউ তখন এ দুয়ের ভেতর আর অমিল অনুভব করবে না।
কিছু কিছু সূরাতে কাফিয়া মাত্রা আনা হয়নি
কোন কোন সূরায় বক্তৃতার ঢ়ং ছেড়ে পত্র রচনার রীতি অনুসরণ করা হয়েছে। কোনরূপ অলংকার ঝংকার সেখানে লক্ষ্য ছিলনা। যেভাবে সবাই স্বাধীনভাবে পরস্পর আলাপ আলোচনা করে, সরল সহজ কথাবার্তা চালায়, ঠিক তেমনি যেখানে স্বভাবতই কথা শেষ হয়, সেখানেই শেষ করে দেয়া হয়েছে। এ ধরনের বাক্যরীতিতে রস ও আকর্ষণ সৃষ্টির রহস্য হল এই, আরববাসী স্বভাবতই সেখানে থামত, যেখানে তাদের শ্বাস থেমে যেত।
উপসংহার
পবিত্র কুরআন মহান আল্লাহ তায়ালার বাণী। এই কুরআন এক মহা বিস্ময়কর গ্রন্থ। কুরআনের সৌন্দর্য, বর্ণনাশৈলী, ভাষারীতি এক কথায় কোরআন এক অনন্য ও অদ্বিতীয় গ্রন্থ। তাই সংক্ষেপে এর আলোচনা করা সম্ভব নয়। এই বিষয়ে মহান আল্লাহ তায়ালাই সবচেয়ে ভালো জ্ঞান রাখেন।
• IST-501 : Study of Al-Quran (Surah: Al-Fatah and Al-Hujurat) • IST-502 : Introduction to Islamic Dawah • IST-503 : Al-Sirat Al-Nababiah • IST-504 : Human Rights in Islam • IST-505 : Principles and History of Tafsir literature • IST-506 : Principles of Islamic Jurisprudence •