▶ প্রশ্ন: আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে কী বুঝ? অথবা, জাহেলিয়াতের যুগ কাকে বলে? ▶ বিষয়: (IST-503) Al-Sirat Al-Nababiah ▶ কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)
ভূমিকা
হযরত মুহাম্মদ (স)-এর আবির্ভাবের পূর্বে আরবসহ গোটা বিশ্ব ছিল জাহিলিয়াতের গর্ভে নিমজ্জিত। খ্রিষ্টিয় ষষ্ঠ শতাব্দীর কিছু পূর্বে বা যষ্ঠ শতাব্দীর শুরু হতে সমস্ত পৃথিবীই অজ্ঞতার চরম সীমায় পৌঁছে ছিল। আরব ভূ-খন্ডেও এ অজ্ঞতা কুসংস্কারের সয়লাব বয়ে গিয়েছিল। আইন-কানুন নিয়ম-শৃঙ্খলা, নীতি-নৈতিকতার কোন বালাই ছিল না। ঝগড়া-বিবাদ মানুষের স্বভাবে পরিণত হয়েছিল। লজ্জাহীনতা, বেহায়াপনা ও অশ্লীলতায় ভেসে গিয়েছিল সমাজ। মাদকাসক্তি ও ব্যভিচারে সমাজ কলুষিত হয়ে পড়েছিল। নারীদের কোন অধিকার ছিল না। নারীদের উপর নানা অত্যাচার ও নির্যাতন চলত। ক্ষেত্রে বিশেষে কন্যা সন্তানকে জীবন্ত করব দিতেও দ্বিধাবোধ করত না। একত্ববাদ অর্থাৎ এক আল্মাহর কথা ভুলে গিয়ে নানা দেব-বেদীর পূজা করত। কাবা ঘরে-ই ৩৬০টি মূর্তি স্থাপন করে পূজা করা হত। শাসন পদ্ধতি বা সরকার গঠনের কোন নীতি-নিয়ম ছিল না। গোত্রীয় শাসনের মধ্য দিয়ে সমাজ পরিচালিত হত। মোটকথা নীতি-নৈতিকতা, শিক্ষা-সভ্যতা, মানবতাবোধ ও ধার্মিকতার কোন পরিবেশ ছিল না। সুস্থ্য পরিবেশ ছিল না আর্থ-সামাজিক বা রাজনৈতিক জীবনেও। তবে আরবদের জীবনে কিছু প্রশংসনীয় দিক ছিল। তাদের ভাষা ছিল সমৃদ্ধ। কাব্য চর্চা, আতিথেয়তা ও নির্ভীকতায় আরবরা ছিল অসাধারণ। হযরত মুহাম্মদ (স)-এর আবির্ভাবে ও তীর শিক্ষায় এ অমানিশার অবসান ঘটে। আর সত্য সুন্দরের নতুন আলোয় আরবসহ গোটা বিশ্ব উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।
আরো পড়তে পারেন: খন্দক যুদ্ধ কী? খন্দক যুদ্ধের বিবরণ দিন।
আইয়ামে জাহেলিয়ার পরিচয়
নিম্নে আইয়ামে জাহেলিয়াত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
আভিধানিক অর্থ
আইয়াম শব্দটি আরবি শব্দ ইয়াওমুন এর বহুবচন। এর শাব্দিক অর্থ অনির্দিষ্ট সময়কাল বা যুগ। আর জাহেলিয়া শব্দের অর্থ অজ্ঞতা, বর্বরতা, কুসংস্কার বা অন্ধকার। তাই আইয়ামে জাহেলিয়া অর্থ অজ্ঞতা, বর্বরতা, বা কুসংস্কারের যুগ (The age of ignorance)।
আইয়ামে জাহিলিয়া কাকে বলে
“আইয়াম” শব্দের অর্থ সময় বা ঘুগ এবং ‘জাহেলিয়া’ শব্দের অর্থ অজ্ঞতা বা তমসা। সুতরাং আইয়্যামে জাহেলিয়া বলতে “তমসা’ বা ‘অজ্ঞতার যুগ’ বুঝায়। পি. কে. হিভ্রির মতে, প্রকৃত পক্ষে জাহেলিয়া বলতে সেই যুগকে বুঝায় যে যুগে আরবে কোন নিয়ম কানুন ছিল না, কোন নবীর আবির্ভাব ঘটে এবং কোন এঁশী কিতাব নাজিল হয় নাই।
আইয়্যামে জাহেলিয়ার ব্যাপ্তি
মহাগ্রন্থ পবিত্র আল কুরআনের ভাষ্যে, ইসলাম পূর্ব খোদাদ্রোহী সমাজ ব্যবস্থার সময়কালকে আইয়ামে জাহেলিয়া বলে অবিহিত করা হয়।
আরো পড়তে পারেন: বিদায় হজের ভাষণের প্রধান দিকগুলো উল্লেখ করুন এবং এ ভাষণের গুরুত্ব তাৎপর্য আলোচনা করুন
ঐতিহাসিকগণ আইয়্যামে জাহেলিয়ার সময়কালের ব্যাপ্তি সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়েছেন । যেমন-
- কোন কোন এঁতিহাসিকের মতে হযরত আদম (আ)-এর সৃষ্টিকাল হতে শুরু করে হযরত মুহাম্মাদ (স)-এর নবুরত প্রাপ্তির পূর্ব পর্যন্ত এ দীর্ঘ সময়কে আইয়্যামে জাহেলিয়া বলা হয়। কিন্তু এ মতবাদ গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এই দীর্ঘ সময়ে বিপথগামী মানুষকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য অনেক নবী ও রসুলের অবসান।
- আরেক ঐতিহাসিকের মতে- হযরত ঈসা (আ) এর ইন্তেকালের তার থেকে ইসলামের আবির্ভাব পর্যন্ত কালকে ‘আইয়্যামে জাহেলিয়ার’ যুগ বলা হয়। এই অভিমত আংশিক গ্রহণযোগ্য।
- ঐতিহাসিক R. A. Nicholson (নিকলসন) ইসলামের আবির্ভাবের পূর্ববর্তী এক শতাব্দীকালকে আইয়ামে জাহেলিয়া বলে অভিহিত করেছেন।
- ঐতিহাসিক মুর বলেন, হযরত ঈসা (আ) ও হযরত মুহাম্মদ (স)-এর মধ্যবর্তী সময়কে আইয়ামে জাহেলিয়া বলা হয়।
- ড. ইমামুদ্দিন বলেন, হযরত মুহাম্মদ (স)-এর জন্মের পূর্বে ৫১০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এক শতাব্দীকালকে আইয়ামে জাহেলিয়া বলা হয়।
আইয়ামে জাহেলিয়ার পরিচয় দিতে গিয়ে ঐতিহাসিক ওয়েল হাউসেন বলেন- The religion of the Arabs, as well as their political life, was on a thoroughly primitive level.
উপসংহার
একথা সুস্পষ্ট যে, মহানবী (স)-এর আবির্ভাবে নীতি নৈতিকতাহীন আরব সমাজ ইসলামের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে সুষ্ঠু সমাজ সভ্যতার গোড়াপত্তন করে। আমীর আলী যথার্থই বলেন- Never in the history of the world was the need so great, the time so ripe for the appearance of a deliverer. অর্থাৎ, পৃথিবীর ইতিহাসে একজন পরিত্রাণকারীর আবির্ভাবের এত বেশি প্রয়োজন এবং এমন উপযুক্ত সময় অন্য কোন সময়ে অনুভূত হয়নি।
• IST-501 : Study of Al-Quran (Surah: Al-Fatah and Al-Hujurat) • IST-502 : Introduction to Islamic Dawah • IST-503 : Al-Sirat Al-Nababiah • IST-504 : Human Rights in Islam • IST-505 : Principles and History of Tafsir literature • IST-506 : Principles of Islamic Jurisprudence •