Monday, December 23, 2024

সূরা আল-হুজরাতের আলোকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর মর্যাদা আলোচনা করুন

প্রশ্ন: সূরা আল-হুজরাতের আলোকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর মর্যাদা আলোচনা করুন | বিষয়: (IST-501) Study of Al-Quran (Surah: Al-Fatah and Al-Hujurat) | কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)



ভূমিকা

মহানবী রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব। সকল যুগের সকল নবীর সর্দার। জিন ইনসানসহ পৃথিবীর সকল জাতির নবী। তিনি শেষ নবী। পৃথিবীর রহমত স্বরূপ যিনি এই পৃথিবীতে এসেছেন। তাঁর মর্যাদা ও সম্মানের কথা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা থেকে শুরু করে এ জগতের সকল নবী বলেছেন। তিনি দয়ার নবী মায়ার নবী। তিনি দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত।

সূরা আল হুজুরাতে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মর্যাদা

সূরা আল হুজুরাতে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে আদব এবং তাঁর পক্ষে কষ্টদায়ক- এমন কাজকর্ম থেকে বিরত থাকার জন্য বলা হয়েছে। এবং হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সম্মান ও মর্যাদা তুলে ধরা হয়েছে। যেমন-

১. রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সামনে অগ্রবর্তী না হওয়া

সূরা হুজুরাতের ১নং আয়াতে বলা হয়েছে-

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تُقَدِّمُوۡا بَیۡنَ یَدَیِ اللّٰہِ وَرَسُوۡلِہٖ وَاتَّقُوا اللّٰہَ ؕ اِنَّ اللّٰہَ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ

মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও রসূলের সামনে অগ্রণী হয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু শুনেন ও জানেন। 

এই আয়াতের অর্থ এই যে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সামনে অগ্রবর্তী হয়ো না। আল্লাহ তায়ালা কোন বিষয়ে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর অগ্রণী হতে নিষেধ করেছেন। তবে নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে অগ্রনী হওয়ার বিষয়ে কোরআনে উল্লেখ করা হয়নি। এতে ব্যাপকতা প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। অর্থাৎ যে কোন কথা বা কাজে রাসূলের থেকে অগ্রবর্তী হয়ো না। বরং তারা জবাবের অপেক্ষা করো। তবে তিনি যদি কাউকে জবাব দেয়ার জন্য আদেশ করেন তবে সে জবাব দিতে পারে। এমনিভাবে যদি তিনি পথ চলেন তবে কেউ যেন তার অগ্রে না চলে। খাওয়ার মজলিসে কেউ যেন তার আগে খাওয়া শুরু না করে। তবে তিনি সফর বা যুদ্ধের সময় কিছু লোককে অগ্রে যেতে আদেশ দিতেন।


আরো পড়তে পারেন: সূরা আল-হুজরাতে বর্ণিত সামাজিক বিধানগুলো আলোচনা করুন


২. রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সামনে কণ্ঠস্বর উঁচু না করা

এটা নবী করীম সাল্লাল্লাহু ইসলামের মজলিসের দ্বিতীয় আদব। হুজুরাতের ২নং আয়াতে বলা হয়েছে,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَرۡفَعُوۡۤا اَصۡوَاتَکُمۡ فَوۡقَ صَوۡتِ النَّبِیِّ وَلَا تَجۡہَرُوۡا لَہٗ بِالۡقَوۡلِ کَجَہۡرِ بَعۡضِکُمۡ لِبَعۡضٍ اَنۡ تَحۡبَطَ اَعۡمَالُکُمۡ وَاَنۡتُمۡ لَا تَشۡعُرُوۡنَ

মুমিনগণ! তোমরা নবীর কন্ঠস্বরের উপর তোমাদের কন্ঠস্বর উঁচু করো না এবং তোমরা একে অপরের সাথে যেরূপ উঁচুস্বরে কথা বল, তাঁর সাথে সেরূপ উঁচুস্বরে কথা বলো না। এতে তোমাদের কর্ম নিস্ফল হয়ে যাবে এবং তোমরা টেরও পাবে না। 

অর্থাৎ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সামনে কণ্ঠস্বরকে তাঁর কণ্ঠস্বরের চাইতে উঁচু না করা বা উচ্চ স্বরে কথা বলা। যেমন পরস্পর বিনা দ্বিধায় করা হয়- তা এক প্রকার বেয়াদবি ও দৃষ্টতা। এ আয়াত অবতরণের পর সাহাবায়ে কেরামের অবস্থা পাল্টে যায়। হযরত আবু বকর আরজ করেন ইয়া রাসুল আল্লাহ এখন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আপনার সাথে কানাকানির অনুরূপ কথা বলব।

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সামনে উচ্চস্বরে কথা বলার কারণে মানুষের সৎ আমলগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়া সম্পর্কে মাওলানা আশরাফ আলী থানভী বলেন,

এর কারণ এই যে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে অগ্রণী হওয়া অথবা তাঁর কণ্ঠস্বরের উপর নিজেদের কণ্ঠস্বর উচ্চ করার মধ্যে বেয়াদবির আশংকা রয়েছে। যা রাসুলকে কষ্টদানের কারণ। তাই এই জাতীয় কাজ সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ ও গোনাহ সাব্যস্ত করা হয়েছে। কোন গুনাহের বৈশিষ্ট্য এই যে, যারা এই গুনাহ করে তাদের থেকে তওবা ও সৎকাজের তৌফিক ছিনিয়ে নেয়া হয়। ফলে তারা সবসময় গুনাহ করতে থাকে এবং গুনাহ করতে করতে কুফর পর্যন্ত পৌঁছে। যা সমস্ত নেক আমল নিষ্ফল হওয়ার কারণ। এভাবে নবীর সামনে অগ্রণী হওয়া এবং কণ্ঠস্বর উঁচু করার দ্বারাও তৌফিক ছিনিয়ে নেওয়া এবং অবশেষে কুফর পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে যা সৎকর্ম নিষ্ফল হওয়ার কারণ।

৩. রাসূলের প্রতি সম্মানবোধ

হুজরতের ৩নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে

اِنَّ الَّذِیۡنَ یَغُضُّوۡنَ اَصۡوَاتَہُمۡ عِنۡدَ رَسُوۡلِ اللّٰہِ اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ امۡتَحَنَ اللّٰہُ قُلُوۡبَہُمۡ لِلتَّقۡوٰی ؕ لَہُمۡ مَّغۡفِرَۃٌ وَّاَجۡرٌ عَظِیۡمٌ

যারা আল্লাহর রসূলের সামনে নিজেদের কন্ঠস্বর নীচু করে, আল্লাহ তাদের অন্তরকে শিষ্টাচারের জন্যে শোধিত করেছেন। তাদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। 

অর্থাৎ যেসব লোক আল্লাহ তাআলার পরীক্ষায় পূর্ণভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন তারা এ প্রমাণ দিয়েছেন তাদের অন্তকরণের প্রকৃতপক্ষে খোদাভীরুতা বর্তমান আছে এবং তারাই আল্লাহর রাসুলে প্রতি শিষ্টাচার ও সম্মান বজায় রাখেন। এই আয়াত থেকে প্রমাণিত হয়, যে অন্তরে রাসূলের প্রতি সম্মান নেই সে অন্তরে প্রকৃতপক্ষে তাকওয়া বা খোদাভীরতা নেই।



৪. রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নাম ধরে না ডাকা

তিনি যখন বাসগৃহে তাশরীফ রাখেন তখন বাইরে দাঁড়িয়ে তাকে ডাকা বিশেষত গুয়ার্তুমির সাথে নাম নিয়ে আহবান বেয়াদবি। এটি বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন-এ বলেন,

اِنَّ الَّذِیۡنَ یُنَادُوۡنَکَ مِنۡ وَّرَآءِ الۡحُجُرٰتِ اَکۡثَرُہُمۡ لَا یَعۡقِلُوۡنَ

وَلَوۡ اَنَّہُمۡ صَبَرُوۡا حَتّٰی تَخۡرُجَ اِلَیۡہِمۡ لَکَانَ خَیۡرًا لَّہُمۡ ؕ وَاللّٰہُ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ

যারা প্রাচীরের আড়াল থেকে আপনাকে উচুস্বরে ডাকে, তাদের অধিকাংশই অবুঝ। যদি তারা আপনার বের হয়ে তাদের কাছে আসা পর্যন্ত সবর করত, তবে তা-ই তাদের জন্যে মঙ্গলজনক হত। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। 

উপসংহার

এই আয়াতগুলো দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ততক্ষণ ছবর বা অপেক্ষা করতে হবে যতক্ষণ না তিনি আগন্তুকের সাথে কথাবার্তা বলার জন্য বাহিরে আসেন। যদি অন্য কোন প্রয়োজনে বাহিরে আসেন তখনও নিজের মতলব সম্পর্কে বলা সমীচীন নয় বরং তিনি নিজেই বাহিরে আসলে যখন আগন্তুকের প্রতি মনোনিবেশ করেন তখন বলতে হবে।


• IST-501 : Study of Al-Quran (Surah: Al-Fatah and Al-Hujurat) • IST-502 : Introduction to Islamic Dawah • IST-503 : Al-Sirat Al-Nababiah • IST-504 : Human Rights in Islam • IST-505 : Principles and History of Tafsir literature • IST-506 : Principles of Islamic Jurisprudence

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles