পর্দা সংক্রান্ত জরুরী মাসায়িল
মহিলাদের পর্দা করার সময় ও পরিমাণ
মেয়েরা যখন কারীবুল বুলুগ বা বালেগা হওয়ার কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছে; অর্থাৎ, তারা নিজেরা কামভাব অনুধাবন করতে পারে এবং তাদের দিকে তাকালে অন্য পুরুষের মনে কামভাব সৃষ্টি হয়, তখন থেকেই তাদের জন্য পর্দা করা জরুরী হয়ে পড়ে। (আহসানুল ফাতাওয়া, ৮/ ৩৭)
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদুল মিল্লাত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ.বলেন, গায়র মাহরাম অনাত্মীয় হলে তাদের থেকে সাত বছর পূর্ব হতেই পর্দা করা উচিত এবং গায়র মাহরাম আত্মীয় হলে সাত বছর থেকেই পর্দা করা উচিত। কারণ, অনেক ক্ষেত্রে সাবালিকা মহিলা সামনে আসা-যাওয়া করাতে এ পরিমাণ ফিতনার আশংকা থাকে না, যে পরিমাণ আশংকা থাকে কারীবুল বুলুগ মেয়েদের সামনে আসা-যাওয়া করাতে। (ইসলাহে খাওয়াতীন-৩৭২)
মেয়েদের পর্দার পরিমাণ বা ক্ষেত্র দুটি: এক. মাহরাম পুরুষ যথা বাপ, ভাই প্রমুখ হতে পর্দা করা। দুই. গায়র মাহরাম পুরুষ যথা চাচাত ভাই, খালাত ভাই ইত্যাদি হতে পর্দা করা। মেয়েদের পরস্পর পর্দা বা সতর যতটুকু তথা নাভি হতে হাঁটু পর্যন্ত, মাহরাম পুরুষদের ক্ষেত্রে ততটুকু পরিমাণসহ পেট ও পিঠ ঢেকে রাখতে হবে। অর্থাৎ, মাহরাম পুরুষ বাপ, ভাই, ছেলে ইত্যাদি হতে পুরা শরীর ঢাকা যেমন ফরয নয় তেমনিভাবে পূর্ণ শরীর খোলারও অবকাশ নেই; বরং পেট পিঠসহ নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢেকে রাখা জরুরী। অবশিষ্ট অংশ মাহরাম থেকে ঢাকা জরুরী নয়। (ফাতাওয়ায়ে মাহমূদিয়া৬/৩৭৪, ৫/২১১২)
👉 আরো পড়তে পারেন: কাউকে বিদায় দেয়ার সময় পড়ার দু’আ
আর গায়র মাহরাম বা বেগানা পুরুষ তথা যাদের সাথে বিবাহ বৈধ তাদের সামনে সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে পর্দা করা জরুরী। শরীরের কোন অংশ তাদের সামনে প্রদর্শন করা জায়েয নেই। (কিফায়াতুল মুফতী, ৫/ ৩৮৭, ৩৮৯)
উল্লেখ্য, প্রথম যমানায় প্রয়োজনের ক্ষেত্রে মহিলাদের মুখমণ্ডল ও দু’হাতের কব্জি, পায়ের পাতা খোলা রাখা তথা পর্দা না করারও অবকাশ ছিল। কিন্তু ফিতনার যমানা হিসাবে উলামায়ে মুতাআখখিরীনের ফাতাওয়া অনুযায়ী পর পুরুষদের সামনে মহিলাদের সম্পূর্ণ শরীর ভালভাবে ঢেকে রাখা জরুরী। (ফাতাওয়ায়ে রাহীমিয়া-৪/১০৬, কিফায়াতুল মুফতী, ৫/ ৩৮৮)
মেয়েদের মুখমণ্ডলসহ সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে পর্দা করার ব্যাপারে ফকীহগণের উক্তি নিম্নে প্রদত্ত হল
আল্লামা শামসুল আইম্মা সারাখসী রহ. লিখেন, নারীর মুখমণ্ডল দেখলে কু-খেয়াল ও কামভাব সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য নারীর কোন অঙ্গের দিকেই দৃষ্টিপাত করা জায়েয নয়। (আল মাবসূত,১০/১৬০)
আল্লামা ইবনে আবিদ্বীন শামী রহ. লিখেন, বর্তমান ফিতনার যুগে কোন অবস্থাতেই নারীর কোন অঙ্গের দিকে দৃষ্টিপাত করা জায়েয নয়। তবে অপরিহার্য কোন পর্যায়ে দৃষ্টিপাত করা ভিন্ন কথা। যেমন চিকিৎসক, বিচারক বা সাক্ষী, যারা কোন ব্যাপারে নারীকে দেখে সাক্ষ্য বা ফয়সালা দিতে বাধ্য হয়। (ফাতাওয়ায়ে শামী, ৬/ ৩৭০)
👉 আরো পড়তে পারেন: বিবাহের ফযীলত ও উপকারিতাসমূহ
উক্ত কিতাবের নামায অধ্যায়ে বলা হয়েছে, নারীদের মুখমণ্ডল বেগানা পুরুষের সামনে খোলা নিষিদ্ধ। (ফাতাওয়ায়ে শামী, ১/ ৪০৬)
হযরত মুফতী মুহাম্মদ শফী রহ. বলেন: চার মাযহাবের সকল ইমামের ঐকমত্যে মহিলাদের জন্য পর্দার কাপড়, বোরকা, বড় চাদর ইত্যাদি দ্বারা সমস্ত দেহ ও মুখমণ্ডল আবৃত করে রাখা অপরিহার্য। (মা‘আরিফুল কুরআন, ৭/ ২২০)
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মহিলাদের জন্য গায়র মাহরাম পুরুষদের সামনে বা রাস্তা-ঘাটে চলার সময় চেহারা খোলা রাখা নাজায়েয। তেমনিভাবে উভয় হাতে মোজা পরিধান করে বের হওয়া এবং উত্তম হল পায়েও মোজা পরিধান করা, পা খোলা না রাখা। (হিদায়া, ৪/৪৫৮, তালীফাতে রশীদিয়া, ৪৮৫, ইমদাদুল ফাতাওয়া, ৪/১২৪)
অবশ্য মহিলাদের নির্জনে নামায পড়ার সময় তার মুখমণ্ডল, হাতের কব্জি ও পায়ের পাতা সতর নয়। সুতরাং নামাযে তা ঢাকা জরুরী নয়। (কিফায়াতুল মুফতী, ৫/৪৩১)
সূত্র
- শরঈ পর্দা • লেখক: মুফতী মনসূরুল হক