উপমহাদের প্রখ্যাত আলেম, হাকিমুল উম্মত হিসেবে খ্যাত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রচিত মুসলমানের হাসি বই-এ নাসির গাজীর অনেকগুলো বুদ্ধিদীপ্ত ও শিক্ষণীয় গল্প স্থান পেয়েছে। গল্পগুলো থেকে শিক্ষণীয় অনেক বিষয় রয়েছে। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের জন্য অনেক হাস্যরসাত্মক শিক্ষণীয় গল্প রয়েছে। সেখান থেকে গল্পগুলো এখানে তুলে ধরা হলো-
এক সিংহ ও পথচারীর গল্প | নাসির গাজী
একবার এক সিংহ চোরাবালির পানিতে আটকা পড়ে যায়। সে অনেক চেষ্টা করে বালু থেকে উঠতে পারছিল না। ক্রমেই ডুবে যেতে লাগলো। তখন সেই সিংহ দেখলো ডোবার পাশ দিয়ে এক লোক যাচ্ছে। সিংহ সেই লোকটিকে দেখে বলল,
-ওহে মানুষ ভাই! দয়া করে আমাকে বালি থেকে তুলে নাও। নইলে আমি মরে যাব।
লোকটি সিংহকে দেখে ভয় পেয়ে গেল এবং বলল না ভাই আমি পারবো না। তোমাকে তুলে আনলে তুমি আমাকে খেয়ে ফেলবে।
সিংহ বলল, আমি কথা দিলাম তোমার কোন ক্ষতি করব না।
সিংহের অনেক কাকুতি-মিনতির পর লোকটি সিংহকে বালি থেকে তুললো।
সিংহ তখন লোকটিকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কোথায় যাচ্ছ?
লোকটি বলল বন্ধুর বাসায় যাচ্ছি।
তখন সিংহ বলল, তা আর হবে না। আমি তোমাকে খাবো। আমার বেশ খিদে পেয়েছে।
লোকটি বলল, কেন তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে খাবে না।
সিংহ বলল, আমি ওসব বুঝিনা এখন আমার খাবার দরকার।
তখন লোকটি মনে সাহস এনে বলল ঠিক আছে তবে একটু সবুর করো। আমি দুই জনের কাছে বিচার চাইব। তারা যদি খেতে বলে তবে খেও। সিংহ বলল, ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি চলো বিচারকের কাছে। তখন তারা হাঁটতে লাগলো এবং পথে একটি বটগাছ পেল লোকটি বলল এই বটগাছ কে জিজ্ঞাসা করি,
-ওহে বটগাছ তুমি বিচার করো। আমি চোরাবালি থেকে তুলে বাঁচিয়েছি কিন্তু সে আমাকে এখন খেতে চায়। এটা কি উচিত হবে? বটগাছ বলল,
-নিশ্চয়ই। তাতো খাবেই। দেখনা আমি কত লোককে বিভিন্নভাবে উপকার করি। কিন্তু তারা আমার ডালপালা কেটে আমাকে কষ্ট দেয়। সুতরাং এভাবে উপকারীকে খাওয়া-ই জগতের নিয়ম।
তখন সিংহ বললো, শুনলে তো! আর দেরি করে লাভ কি।
লোকটি বলল, থামো! আরো একজন বিচারক বাকি আছে। তাকেও জিজ্ঞেস করে দেখি।
তারপর তারা আবার হাটতে লাগল। চলতে চলতে নাসির গাজীর সাথে তাদের দেখা হল। নাসির গাজী সিংহকে দেখে পালাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। তখন লোকটি বলল,
-ওহে গাজী ভাই! পালাইয়েন না। আমাদের বিচার করে আমাকে সিংহের খপ্পর থেকে উদ্ধার করুন।
নাসির গাজী লোকটির বিপদ দেখে দাঁড়ালেন। লোকটি তার কাছে সব ঘটনা খুলে বললো। সব শুনে গাজীর মাথায় বুদ্ধি এলো। গাজী বললেন,
– তোমাদের কথা আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না। যেখানে ঘটনা ঘটেছে সেখানে আমাকে নিয়ে চলো।
হাঁটতে হাঁটতে তারা সেই চোরাবালির ডোবার কাছে আসলো। নাসির গাজী বললেন,
-সিংহ তুমি কোথায় পড়েছিলে নেমে দেখাও তো।
সিংহ চোরাবালিতে নেমে গেল এবং বললো এখান থেকে একটু দূরে। তখন গাজী বললেন যে জায়গায় পড়ে ছিল সেখানে যাও। সিংহ আর একটু এগিয়ে গেল। নাসির গাজী যখন দেখলেন সিংহ যেখানে গিয়েছে সেখান থেকে উঠে আসা সম্ভব নয় তখন বললেন,
– এবার নিজে নিজে উঠে আসো।
তখন সিংহ উঠতে পারল না। নাসির গাজীর তখন সেই লোকটিকে বললেন, – এবার চম্পট দাও। আমিও পালাই। যেমনি ছিল তেমনিভাবে ডুবে মরুক এই অকৃতজ্ঞ সিংহ।
নাসির গাজীর বুদ্ধিদীপ্ত ও শিক্ষণীয় গল্পসমূহ
- এক সিংহ ও পথচারীর গল্প ➜ পড়ুন
- জ্বি হুজুর! জ্বি হুজুর!! ➜ পড়ুন
- মূল্যবান সম্পদ ➜ পড়ুন
- আজ নগদ কাল বাকী ➜ পড়ুন
- মাছের মাথা-খাওয়ার লোভ ➜ পড়ুন
- ওয়াজ না করার ফন্দি ➜ পড়ুন
- একসাথে দু’জন ➜ পড়ুন
- হতবাক ইহুদি ➜ পড়ুন
- উচিত বিচার ➜ পড়ুন
- তিন টাকার সদাই ➜ পড়ুন
- বাদশাহ’র ছেলের লেখাপড়া ➜ পড়ুন
- ফুলদানির জন্য মৃত্যুদন্ড ➜ পড়ুন
- পন্ডিত খেতাবের বিড়ম্বনা ➜ পড়ুন
- সৎ লোকের সন্ধানে ➜ পড়ুন
- চৈতন্য ফিরে এল ➜ পড়ুন
- ঝাড়-ফুঁকের এ্যাকশন ➜ পড়ুন
- দিতে জানে না, নিতে জানে ➜ পড়ুন
- সম্পদের ওসীয়তনামা ➜ পড়ুন
- আল্লাহ যা করেন বান্দার মঙ্গলের জন্যেই করেন ➜ পড়ুন
- সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
- চোর ধরার আজব বুদ্ধি ➜ পড়ুন
- দুনিয়া ধ্বংসের আগেই ধ্বংস ➜ পড়ুন
- অল্প সময়ের জন্য বিনা খরচে সুখের আস্বাদ ➜ পড়ুন
- পনের দিনের মজুরীর ভয়ে ➜ পড়ুন
- কুকুর তাড়ানো ভণ্ডপীর ➜ পড়ুন
- সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
- পবিত্র কোরআনের আয়াতের ফুঁকের ক্ষমতা