Monday, December 23, 2024

মদীনায় মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রধান কার্যাবলী বিবরণ দিন

প্রশ্ন: মদীনায় মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রধান কার্যাবলী বিবরণ দিনবিষয়: (IST-503) Al-Sirat Al-Nababiahকোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)



ভূমিকা

৬২২ সালের পূর্বে ইয়াসরিব নামক জনৈক এক নরপতি এ নগরী প্রতিষ্ঠা করে একে রাজধানী মনোনীত করেন। তার নামানুসারে এ শহর ইয়াসরিব নামে অভিহিত হতে থাকে। মক্কা থেকে প্রায় আড়াইশ মাইল উত্তরে এ শহর অবস্থিত। হিজরতের পর মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সম্মানে ইয়াসরিববাসী এর নাম পরিবর্তন করে “মদিনাতুন্-নবী’ বা নবীর শহর, সংক্ষেপে মদিনা রাখেন।

মদীনায় মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রধান কার্যাবলী

মদীনায় হিজরত করে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অনেক ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করে। যেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-

  • মুহাজির ও আনসার: মদিনায় হিজরতের পর মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সামনে সবচেয়ে বড় সমস্যা দেখা দেয় মুহাজিরদের পুনর্বাসন নিয়ে। যেসব সাহাবী জন্মভূমি মক্কা ত্যাগ করে হযরতের সঙ্গে মদিনায় চলে এসেছিলেন তাদেরকে “মুহাজিরীন’ বলা হয়। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রতি তাদের অপরিসীম ভক্তি, শ্রদ্ধা ছিল। তারা ইসলামের জন্য নিজেদের ঘর-বাড়ি, আত্মীয়-স্বজন, বিষয়-সম্পদ সব কিছু ছেড়ে এসে নিঃস্ব অবস্থায় মদিনায় আশ্রয় নেন। প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। প্রথমত: মদিনাবাসী আনসারদের সাথে মন্কার মুহাজিরদের ভ্রাতৃতৃ বন্ধনে আবদ্ধ করেন। দ্বিতীয়ত: আনসারগণ মুহাজিরদেরকে ভাই বলে গ্রহণ করেন এবং নিজেদের ধন-সম্পদে মুহাজির ভাইকে অংশ দেন। মদিনাবাসী মুসলিমগণ মক্কা থেকে আগত উদ্বান্ত মুহাজিরীন ভাইদেরকে আশ্রয় দিয়েছিলেন, দুঃখ দুর্দশায় সাহায্য করেছিলেন এবং মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে সকল অবস্থায় সাহায্য করেছিলেন। এজন্য তাদেরকে “আনসার’ বা সাহায্যকারী” বলা হয়। এ আনসারদের সহায়তা না পেলে ইসলাম মদিনায় এবং সারা বিশ্বে হয়ত প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারত না। ধর্মভাইদের প্রতি এরূপ আত্মত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোথাও দেখা যায় না।

আরো পড়তে পারেন: উহুদ যুদ্ধের বিবরণ দিন এবং এ যুদ্ধে মুসলমানদের বিপর্যয়ের কারণ থেকে প্রমাণ করুন যে, এ ঘটনা থেকে তারা এক বিরাট নৈতিক শিক্ষা অর্জন করেছিল


  • মসজিদ নির্মাণ: মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বনু নাজ্জার গোত্রের সাহল ও সুহাইল দু’জন ইয়াতিম বালকের এক খণ্ড জমি ক্রয় করে মসজিদ নির্মাণ করেন। নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজেও নির্মাণ কাজে অন্যান্যদের সাথে সক্রিয়ভাবে কাজ করেন। মসজিদের দেয়াল তৈরি হয়েছিল ইট ও মাটি দিয়ে এবং ছাউনি দেয়া হয়েছিল খেজুর পাতার । এটাই মসজিদুন্নবী বা নবীর মসজিদ। এখানে বসেই মহানবী নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় সকল কাজ করতেন। কালক্রমে এটাই ইসলামের প্রধান মিলনকেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়। এ মসজিদের সাথেই তার পরিবারবর্ণের বাসস্থান নির্মাণ করা হয়। সাহাবীদের মধ্যে এদেরকে “আসহাবুস-সুফফা” বা চত্তরবাসী হিসেবে আখ্যায়িত করা হতো। যাদের ঘরবাড়ি ছিল না তাদের বসবাসের জন্য মসজিদের একাংশ আলাদা করা হয়েছিল। আর এ মসজিদই পরবতীকালের মুসলিমদের জন্য মসজিদ স্থাপনা তৈরীর অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
  • মদিনায় বিভিন্ন দল ও গোত্রের অবস্থা: মুহাজির ও আনসার ছাড়াও মদিনায় বিভিন্ন শ্রেণির লোক বাস করতো। মদিনায় আদি অধিবাসী আউস ও খাযরাজ গোত্রদ্বয় পরস্পর ঝগড়া-ফাসাদে লিপ্ত ছিল। এদের দ্বন্দের সুযোগ নিয়ে মদিনার ইহুদিরা নিজেদের স্বার্থের জন্য তাদেরকে শোষণ করতো। ইহুদিদের তিনটি শাখা ছিল। যথা- বনু কুরাইযা, বনু নাযির ও বনু কাইনুকা। বনু করাইযা ও বনু নাধীর আউস গোত্রের পক্ষে এবং বনু কাইনুকা ছিল খাযরাজ গোত্রের পক্ষে। ইহুদিদের কূটনৈতিক শত্রুতার ফলে “বুয়াসের’ ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধের ফলে উভয় গোত্রের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। তারা একজন ভালো নেতার সন্ধানে ব্যাস্ত ছিল। তারা হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে একজন উত্তম নেতা হিসেবে পেয়ে সাদরে গ্রহণ করেন।

আরো পড়তে পারেন: মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্ম পরিচয় ও বাল্যকাল সম্পর্কে আলোচনা করুন


  • আদি পৌত্তলিক: মদিনার আদি অধিবাসীদের মধ্যে একদল মূর্তি উপাসক পৌত্তলিকও ছিল। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আগমনে তারাও প্রথমে খুশি হয়েছিল এবং তাকে রক্ষা করার জন্য সংঘবদ্ধ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ইসলামের শক্তির একক উত্থান ও বিকাশে পৌন্তলিকরা ঈর্ধাকাতর হয়ে উঠেছিল। তবে এরা সময়ের ব্যবধানে ইসলামের সোন্দর্ষে মুগ্ধ হয়ে পরে ইসলামের পতাকা তলে সমবেত হয়েছিল।
  • ইহুদি: মদিনার ইহুদিরা ছিল শক্তিশালী এবং স্বার্থান্ধ। তারা প্রথমে হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মদিনা আগমনকে স্বাগত জানানোর জন্য মদিনাবাসীদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন। রাসূল (সা.) প্রথমে আসমানী ধর্ম হিসেবে তাদের ধর্মের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তাদের সাথে বন্ধুত ও সম্প্রীতি স্থাপন করার জন্য তাদের কিছু রীতিনীতি গ্রহণ করেছিলেন। ইহুদিরা প্রথমে মনে করেছিল, তারা হযরতকে দলভুক্ত করতে পারবে। কিন্ত ইহুদিরা ছিল অভিশপ্ত জাতি এবং বুদ্ধিবৃত্তিক দিক দিয়ে সীমাহীন দুবৃত্তি। হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে সর্বশেষ বিশ্বনবী তা তারা ভালো করে জানত। তবুও চরম স্বা্থান্তার পরিচয় দিয়ে তারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও ইসলামের বিরুদ্ধাচরণ করতে লাগল। ইহুদিদের মধ্যে তিনটি শাখা ছিল৷ যথা- বনু কুরাইযা, বনু নাধীর ও বনু কাইনুকা। এরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদের ব্যবসায় চালিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছিল।
  • খ্রিস্টান: খ্রিস্টানরা বসবাস করতো নাজরান অঞ্চলে। এদের ধর্মও বিকৃত ছিল। তবুও এরা ইহুদিদের মতো ততটা নিকৃষ্ট মানসিকতার ছিল না। মদিনার খিস্টানগণও হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মদিনায় আগমনকে অন্যান্যদের সাথে স্বাগত জানায়। কিন্ত তারাও পরবর্তী সময়ে রাসূলের বিরোধিতা করে।

ডাউনলোড করুন তাফসীরের কিতাবসমূহ


  • মুনাফিক গোষ্ঠী: রাসূলের মদিনায় আগমনের পর আরো একটি নতুন উপদল সৃষ্টি হলো। এরা সুযোগ-সুবিধা লাভের আশায় ইসলাম গ্রহণ করেছিল। এদের নেতা ছিল আবদুল্লাহ ইবনে উবাই। হযরতের আগমনের পূর্বে সে মদিনার রাজ-ক্ষমতা লাভের জন্য লালায়িত ছিল। কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মদিনায় আসার কারণে তার স্বগ্ন ধুলিসাৎ হয়ে যায়। এ মর্মজালায় সে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও ইসলামের সাথে গোপন শত্রুতা শুরু করে। তার সাথে আরো অনেকে মিলিত হয়। এরা স্বার্থ হাসিল ও জনপ্রিয়তা লাভের আশায় ইসলাম গ্রহণ করেছিল। কিন্তু গোপনে এরা ইসলামের ভীষণ শক্র ছিল। ইসলামের ধংসের জন্য এরা নানা ষড়যন্ত্রমূলক কাজ করতে থাকে। এদেরকে “মুনাফিক’ বলা হয়। এ শ্রেণির লোকগুলো প্রকাশ্য শক্রর চেয়ে অধিকতর ভয়ানক ছিল। এরা কাফিরদের চেয়েও নিকৃষ্ঠতর।
  • বিভিন্ন বিধান প্রবর্তন: দ্বিতীয় হিজরিতে রমযানের সাওম ফরয করা হয়। এ বছর ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতরের মহোৎসবও প্রবর্তিত হয়। দরিদ্র মুসলিমদের সাহায্য দানের জন্য এবং রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কাঠামো শক্তিশালী করার জন্য যাকাত ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। যাকাত প্রদান করা সাহেবে নেসাব ধনী মুসলিমদের জন্য ফরয বলে ঘোষিত হয়। এভাবে সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কারাদি প্রবর্তনে যাকাত ব্যবস্থা চালু করা হয়।


উপসংহার

মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের পর স্থানীয় জনগণ তাকে সাদর আমন্ত্রণ জানায়। মুহাজির ও আনসারগণ তাকে অনুসরণ করে। ইহুদিরা প্রথমদিকে মেনে নিলেও পরে যড়যন্ত্র শুরু করে। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মদীনার সকল জনগোষ্ঠির মধ্যে শাস্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন। তিনি মদিনা মসজিদ নির্মাণ ও মুসলিমদের মধ্যে ভ্রাতৃতবোধ প্রতিষ্ঠা এবং অমুসলিমদের জন্য সনদ প্রণয়নের মাধ্যমে আন্ত:ধর্মীয় সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।


• IST-501 : Study of Al-Quran (Surah: Al-Fatah and Al-Hujurat) • IST-502 : Introduction to Islamic Dawah • IST-503 : Al-Sirat Al-Nababiah • IST-504 : Human Rights in Islam • IST-505 : Principles and History of Tafsir literature • IST-506 : Principles of Islamic Jurisprudence


বিগত বছরের প্রশ্নসমূহ (এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ)

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles