মাথাঘোরা সমস্যার কারণ ও প্রতিকার
মাথাঘোরা সমস্যায় কখনো ভোগেননি এমন কেউ কি আছেন? রোগীরা প্রায়ই অভিযোগ করেন তাদের মাথা ঘোরে। এই অভিযোগ তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে মধ্যবয়সী ও প্রৌঢ়রা করে থাকেন।
মাধাঘোরা আসলে কী?
ইংরেজিতে মাথাঘোরাকে বলে ভার্টাইগো। এটা এমন এক চলনশীল অনুভূতি-প্রকৃতপক্ষে যখন কোনো চলাচল নেই। ব্যক্তির কাছে মনে হতে পারে তার মাথাটা চক্রাকারে ঘুরছে। কেউ কেউ আবার ভাবেন যে, সে স্থির আছে কিন্তু তার চারপশের জগৎ ঘুরছে। মাথাঘোরা কানের অসুখের প্রধান উপসর্গ। মাঘাঘোরা রোগীর কাছে জগৎ-সংসার সবকিছু অর্থহীন মনে হয়। যারা মাইগ্রেইনে ভুগে থাকেন- মাথা ঘুরে তাদের কখনো কখনো পড়ে যেতে দেখা যায়। মাথাব্যথা থেকে মাথাঘোরা হতে পারে। মাথাঘোরা ব্যক্তি সামনে কিংবা পেছনে পড়ে যেতে পারেন। কখনো কখনো তার এমন মনে হয় যে, তার পায়ের নিচের মাটি নড়ছে।
👉 আরো পড়তে পারেন: সরিষার তেলের এলার্জিক প্রতিক্রিয়া
ভার্টাইগো বা মাথাঘোরা বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। যেমন-
- ভার্টাইগো অডিটরি: কানের রোগের জন্যে যে মাথাঘোরা উপসর্গ দেখা দেয় তার নাম ভার্টাইগো অডিটরি।
- ভার্টাইগো সেন্ট্রাল: কেন্দ্রীয় স্নায়ুব্যবস্থার জন্যে মাথাঘোরা।
- ভার্টাইগো সেরিব্রাল: মস্তিষ্কের রোগের জন্যে মৃগীর আক্রমণজনিত মাথাঘোরা।
- ভার্টাইগো এসেনশিয়াল : অজানা কারণে মাথাঘোরা।
- ভার্টাইগো গ্যাসট্রিক: পাকস্থলীর গোলমালজনিত কারণে মাথাঘোরা।
- ভার্টাইগো ল্যারিঞ্জিয়াল : ল্যারিংস (স্বরযন্ত্র)-এর খিঁচুনিজনিত মাথাঘোরা।
- ভার্টাইগো অবজেকটিভ: এটা এমন একধরনের মাথাঘোরা যেখানে অনড় বস্তুসমূহ ঘুরছে বলে প্রতীয়মান হয়।
- ভার্টাইগো অক্যুলার: চোখের রোগের কারণে মাথাঘোরা।
- ভার্টাইগো অর্গানিক: মস্তিষ্কে ক্ষতের জন্যে মাথাঘোরা।
- ভার্টাইগো পেরিফেরাল : কেন্দ্রীয় স্নায়ুব্যবস্থার প্রান্তিক এলাকার গোলমাল জনিত মাথাঘোরা।
- ভার্টাইগো সাবজেকটিভ: এক্ষেত্রে রোগীর মনে হয় যে, সবকিছু ঠিক আছে কেবল তার মাথাটাই ঘুরছে।
- ভার্টাইগো টক্সিক: শরীরে বিষের উপস্থিতিজনিত কারণে মাথাঘোরা।
- ভার্টাইগো ভেস্টিবুলার : কানের বিভিন্ন অংশের অসুখজনিত মাথাঘোরা।
আপনার মাথাঘোরার কারণ খুঁজে পেয়েছেন?
মাথাঘোরার প্রকারভেদে যে-বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে তাছাড়াও আরো কিছু কারণে আপনার মাথাঘোরা দেখা দিতে পারে। আপনি এমন কিছু ওষুধ হয়তো খাচ্ছেন যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে মাথাঘোরা সমস্যায় কাহিল হয়ে পড়ছেন।
আপনি কি ব্যথার কারণে ব্যথানাশক ওষুধ খাচ্ছেন? আপনি কি অ্যান্টিবায়োটিক খেয়েই চলেছেন? প্রশান্তিদায়ক ওষুধ কতদিন যাবত খাচ্ছেন তার হিসেব করেছেন কি?
👉 আরো পড়তে পারেন: শিশুদের বুদ্ধি বিকাশের জন্য টিপস
মনে রাখবেন, এসব ওষুধের কারণে আপনার মাথাঘোরা সমস্যার উদ্ভব ঘটতে পারে। অত্যধিক পরিশ্রমে অনেকের মাথা ঘোরে। কেউ যদি বিষণ্নতায় ভোগেন তাহলে মাথা ঘুরতে পারে। ক্ষুধা লাগলেই মাথাঘোরা শুরু হয়। ধূমপান, মদ্যপান ইত্যাদি মাথাঘোরার কারণ বটে। উচ্চরক্তচাপের জন্যে মাথাঘোরা সমস্যা হতে পারে। অনেক যুবক আছে যারা অবিরাম হস্তমৈথুনজনিত কারণে বিষণ্নতায় ভোগে এবং মাথাঘোরার অভিযোগ করে থাকে। মেয়েদের বেলায় মাসিকজনিত মাথা ঘুরতে পারে। মাইগ্রেইন থেকে মাথাঘোরা নতুন কোনো বিষয় নয়। আপনার মাথাঘোরার সাথে নিম্নলিখিত কোনো বিষয়ের সম্পর্ক আছে কিনা ভেবে দেখুন—
- বিশেষ খিঁচুনি বিরোধী ওষুধ
- অ্যান্টিবায়োটিক
- হিপনোটিক
- ব্যথানাশক ওষুধ
- ট্রাংকুলাইজার
- সর্দিগরমি
- অবস্থাজনিত নিম্ন রক্তচাপ
- ফুড পয়জনিং
- সংক্রামক রোগ
- অ্যালকোহল
কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন
মনে রাখবেন, মাথাব্যথাটা বিশেষ বিশেষ রোগের উপসর্গ। নিজে রোগ না হলেও এটা কিছু কিছু রোগের প্রকাশিত লক্ষণ। সুতরাং মাথাঘোরাকে কখনোই উপেক্ষা করবেন না। মাথা ঘুরলেই আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।