Monday, December 23, 2024

মাক্কী ও মাদানী সূরা কাকে বলে? মাক্কী ও মাদানী সূরাসমূহের বৈশিষ্ট্য লিখুন।

প্রশ্ন: মাক্কী ও মাদানী সূরা কাকে বলে? মাক্কী ও মাদানী সূরাসমূহের বৈশিষ্ট্য লিখুন। ▶ বিষয়: (IST-505) Principles and History of Tafsir Literatureকোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)



ভূমিকা

মহাবিস্ময়কর গ্রন্থ পবিত্র আল কোরআন সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে। আল কোরআনে মোট ১১৪টি সূরা আছে। নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নবুয়তী জীবনের প্রায় ২৩ বছর ধরে এসকল সূরা নাযিল করা হয়েছে। হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর তেইশ বছরের নবী-জীবন, মাক্কী ও মাদানী-এ দুই ভাগে বিভক্ত। কুরআন তথা কোরআনের সূরাগুলোও ও দুই পর্বে বিভক্ত। এজন্য কুরআন নাযিলের সময় ও স্থান অনুযায়ী কুরআনের সূরা ও আয়াতকে মাক্কী ও মাদানী দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে।

মাক্কী সূরা কাকে বলে

হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নবুয়তী জীবনে মক্কায় অবস্থানকালে তাঁর মদীনায় হিজরতের পূর্ব পর্যন্ত ১৩ বছরে পবিত্র কুরআনুল কারীমের যে সকল সূরা বা আয়াত নাযিল হয়, সেগুলোকে মাক্কী সূরা বা মাক্কী আয়াত বলা হয়।


আরো পড়তে পারেন: আন-নাসখ বলতে কী বোঝায়? আন-নাসখ কত প্রকার ও কি কি? সুন্নাহ দ্বারা কুরআন রহিত করা যায় কী আলোচনা করুন।


মাদানী সূরা কাকে বলে

হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মদীনায় হিজরত করার পর জীবনের শেষ ১০ বছরে মদীনায় কিংবা অন্য যে কোন স্থানে যে সকল সূরা ও আয়াত নাযিল হয় সেগুলোকে মাদানী সূরা ও মাদানী আয়াত বলা হয়।

মাক্কী ও মাদানী সূরাসমূহের বৈশিষ্ট্য

হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নবী জীবনের দু’টি অধ্যায়। প্রথম অধ্যায় হচ্ছে নবুওয়াত পাওয়ার পর মদীনায় হিজরত করে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তের বছরের জীবন। তাঁর হিজরত করার পর মদীনার দশ বছরের জীবন হচ্ছে দ্বিতীয় অধ্যায়। এ দু’অধ্যায় মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে দু’ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। এ পরিবেশ পরিস্থিতিকে সামনে রেখেই কুরআনের আয়াত ও সূরাসমূহ নাযিল হয়। তাই এ দুই অধ্যায়ের সূরাসমূহের দুই ধরনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিচে মাক্কী ও মাদানী সূরাসমূহের বৈশিষ্ট্য ও বিষয়বস্তু উপস্থাপন করা হলো-

মাক্কী সূরার বৈশিষ্ট্য

  • মাক্কী সূরাগুলো আকারে ছোট।
  • এতে আল্লাহর একত্ববাদ বা তাওহীদের বর্ণনা রয়েছে।
  • এতে রিসালাত ও নবুওয়াতের বর্ণনা রয়েছে।
  • এতে আখিরাত বা পরকালীন জীবন সম্পর্কে আলোচনা স্থান পেয়েছে।
  • মাক্কী সূরায় কুরআনের সত্যতার প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে।
  • এতে শিরক ও কুফরের যুক্তি ও উপমা ভিত্তিক বিরোধিতা করা হয়েছে।
  • এতে জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা বেশি এসেছে।

ডাউনলোড করুন তাফসীরের কিতাবসমূহ


  • এতে পারলৌকিক বিচার ও হিসাব নিকাশের বর্ণনা উপস্থাপিত হয়েছে।
  • এ সকল সূরায় আকাইদ ও ইমান সম্পর্কিত ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহের আলোচনা করা হয়েছে।
  • মাক্কী সূরায় চরিত্র গঠন ও পরিশুদ্ধির নির্দেশনা স্থান পেয়েছে।
  • এতে নৈতিকতাবোধ, চিন্তাশক্তি ও বিবেকবোধ জাগ্রত করে সত্য গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
  • নুবুওয়াতী দায়িত্ব পালনের উপযোগী উপদেশ প্রদান করা হয়েছে।
  • এ পর্বের সূরাগুলোর ভাষা স্বচ্ছ ও ঝরণাধারার মতো ঝরঝরে, হৃদয়গ্রাহী, সহজে মুখস্থ হওয়ার যোগ্য।
  • মাক্কী পর্যায়ের সূরার প্রারম্ভ শপথ বাক্য দ্বারা উপস্থাপন করা হয়েছে।
  • মাক্কী সূরার সংখ্যা মোট ৯২টি ।

মাদানী সূরার বৈশিষ্ট্য

  • মাদানী পর্বের সূরাগুলো আকারে দীর্ঘ।
  • এতে ইবাদাতের বর্ণনা এসেছে।
  • এতে আহকামে শরীআতের বর্ণনা ব্যাপকভাবে করা হয়েছে।
  • এতে হালাল ও হারামের বিস্তৃত বর্ণনা এসেছে।
  • মাদানী পর্বের সূরায় ইসলামী রীতি-নীতির বিশদ বর্ণনা উপস্থাপিত হয়েছে।


  • এতে অর্থনৈতিক আইন যথা- যাকাত, উশর, ক্রয়-বিক্রয়, লেনদেন ও উত্তরাধিকার আইন ইত্যাদি বিষয়ের বিবরণ রয়েছে।
  • ইসলামের ব্যবহারিক জীবন তথা আচার-ব্যবহার, বিয়ে-শাদী, তালাক ইত্যাদির বর্ণনা রয়েছে।
  • সামরিক আইন ও জিহাদ ইত্যাদি বর্ণনা করা হয়েছে।
  • পররাষ্ট্রনীতি, সন্ধি, চুক্তি ইত্যাদি বিষয় আলোচিত হয়েছে।
  • সামাজিক-রাষ্ট্রীয় এবং জাতীয়-আন্তর্জাতিক বিষয়াদির বিবরণ উপস্থাপিত হয়েছে।
  • মুনাফিক, কাফির, জিম্মি, আহলে কিতাব, শত্রু, মিত্র, তথা অমুসলিম জনগোষ্ঠীর সাথে আচরণ বিধির বিবরণ রয়েছে।
  • এ পর্বের সূরায় ঐতিহাসিক বিবরণ এনে সত্য গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
  • এ পর্বের সূরাগুলোর সুদীর্ঘ-বর্ণনা ধারা ও ছন্দময় আয়াত অত্যন্ত আকষর্ণীয় ও প্রলম্বিত।
  • এ পর্বের সূরায় শপথের বাক্য কম।
  • মাদানী সূরার সংখ্যা মোট ২২টি।


উপসংহার

মাক্কী ও মাদানী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নবুওয়াতি জীবনের দুইটি অধ্যায়। মক্কায় ইসলাম ছিল দাওয়াত পর্যায়ে। আর মাদিনায় ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময়। তাই উভয় পর্যায়ের সূরার বিষয়বস্তু ও বৈশিষ্ট্যে কিছু পার্থক্য লক্ষণীয়। হিজরতের পূর্বে অবতীর্ণ সূরা ও আয়াতকে মাক্কী সূরা ও আয়াত বলে এবং হিজরতের পরে অবতীর্ণ সূরা ও আয়াতকে মাদানী সূরা ও আয়াত বলে। মাক্কী সূরাগুলো আকারে ছোট। মাক্কী সূরাগুলোতে তাওহীদ, রিসালাত, নবুওয়াত, আখিরাত, জান্নাত-জাহান্নাম ইত্যাদি আলোচিত হয়েছে। মাদানী সূরাগুলো আকারে বড়। এতে ইবাদাত ও আহকামে শরীআত সংক্রান্ত বিষয়গুলোর বিশদ বর্ণনা রয়েছে। তাছাড়া হালাল, হারাম, ইসলামি রীতি-নীতি, অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় আন্তর্জাতিক আইন, বিবাহ শাদী সংক্রান্ত আইন, এবং বিভিন্ন আইন কানুন ও ঐতিহাসিক বিবরণ রয়েছে।


• IST-501 : Study of Al-Quran (Surah: Al-Fatah and Al-Hujurat) • IST-502 : Introduction to Islamic Dawah • IST-503 : Al-Sirat Al-Nababiah • IST-504 : Human Rights in Islam • IST-505 : Principles and History of Tafsir literature • IST-506 : Principles of Islamic Jurisprudence

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles