শিশু থেকে বৃদ্ধের স্বাস্থ্য সমস্যা : কৃমি সংক্রমণ
কৃমি সংক্রমণ শিশুদেরই বেশি দেখা যায়। সাধারণত গ্রামাঞ্চলে এবং ঘনবসতিপূর্ণ বা বস্তি এলাকায় এটি বেশি হয়। কারণ তারা খালি পায়ে হাঁটাচলা করে এবং খালি পায়ে মলত্যাগ করে। গ্রাম-গঞ্জের মানুষের মাঠে- ঘাটে, যেখানে-সেখানে মলত্যাগের অভ্যাস রয়েছে। বর্ষাকালে সাধারণত কৃমি সংক্রমণ বেশি হয়। যেখানে স্যানিটেশন পদ্ধতি ভালো নেই সেখানে মল বর্ষার পানিতে মিশে একাকার হয়ে যায়। সেসব পানি ব্যবহার করলে কৃমির ডিম বা ওভাম খুব সহজেই পেটে চালান হয়ে সংক্রমণ ঘটায়।
সুতো কৃমি সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি হয় শিশুদের। এ কৃমিগুলো থাকে, এমনকি ঘুমের মধ্যেও। সাধারণত মলদ্বারের বাইরে এসে ডিম পাড়ে। শিশুরা তখন মলদ্বার চুলকাতে শিশুর নখের মধ্যে ডিম ঢুকে যায়। ওই আঙুল মুখে দিলে ডিম খাদ্য নালিতে চলে গিয়ে আবার সংক্রমণ করে। এছাড়া শিশুর প্যান্ট, জামা বা বিছানার চাদরে কৃমির ডিম লেগে গেলেও সংক্রমণ হতে পারে। বেশি চুলকালে মলদ্বারে ঘা দেখা দিতে পারে।
👉 আরো পড়তে পারেন: শুধু হাড়ের জন্যই নয়, হার্টের স্বাস্থ্যেও ভূমিকা রাখে ক্যালসিয়াম
শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় হুকওয়ার্ম বা বক্র কৃমির সংক্রমণে। লাল রঙের খুব ছোট এই লার্ভাগুলো মাটিতে বা ঘাসে লেগে থাকে, পায়ের চামড়া ফুটো করে রক্তনালি বেয়ে ফুসফুসে পৌঁছায়। সেখান থেকে শ্বাসনালি বেয়ে প্রবেশ করে খাদ্যনালিতে, তারপর পাকস্থলি হয়ে ক্ষুদ্রান্তে পৌঁছায়৷ এতে ৪-৫ দিন সময় লাগে। অন্ত্রনালির রক্ত খেয়ে এরা বাঁচে বলে আক্রান্ত ব্যক্তি রক্তস্বল্পতা বা এনিমিয়ার শিকার হয়। চোখ-মুখ ফ্যাকাশে দেখায়, হাত-পা ফোলে, বুক ধড়ফড় করে, শ্বাসকষ্টও হতে পারে। কখনো পেটে অস্বস্তি, উদরাময় দেখা দেয়। পায়ের পাতায় যে স্থান দিয়ে লার্ভা ঢোকে, সেখানে চুলকানি ও ঘা হতে পারে।
বড়দের কেঁচো কৃমির সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি হয়। সাদা রঙের এ কৃমির ডিম শাকসবজি, ফলসহ নানা ধরনের খাদ্য ও পানীয়ের সঙ্গে থাকে। অন্ত্রনালিতে এ কৃমি আটকে গেলে বলা হয় ইনটেসটাইনাল অবস্ট্রাকশন। তখন অপারেশন করার প্রয়োজন হয়। শ্বাসনালিতে আটকে গেলে শ্বাসকষ্ট হয়, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। অনেক সময় মুখ দিয়ে বের হয়ে আসতে পারে।
কৃমি সংক্রমণে চিনির কোনো ভূমিকা নেই। গরমে কৃমির ওষুধের পাশ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। অনেকের ধারণা, পেটে দু-চারটা কৃমি থাকা ভালো। তাই তারা ওষুধের মাত্রা কম খাওয়ান। সঠিক মাত্রায় ওষুধ খেয়ে কৃমিমুক্ত থাকাই ভালো। কৃমি প্রতিরোধে মলত্যাগের জন্য স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার করা, খালি পায়ে মলত্যাগ করতে না যাওয়া, মলত্যাগের পর হাত সাবান বা ছাই দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করা উচিত। শিশুর কাপড়-চোপড় পরিষ্কার করার পর হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নেয়া, শাকসবজিসহ যে কোনো খাদ্য ভালোভাবে ধুয়ে সেদ্ধ করে খেতে হবে। খাবার তৈরি, পরিবেশন ও খাওয়ার আগে হাত ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। সবসময় পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত পানি পান করতে হবে। খাবার পানি বিশুদ্ধ না হলে তা ফুটিয়ে নিতে হবে।