▶ প্রশ্ন: কিতাবুল্লাহ কী? এর প্রকারভেদ ও বিস্তারিত আলোচনা করুন? ▶ বিষয়: (IST-506) Principles of Islamic Jurisprudence ▶ কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)
ভূমিকা
পবিত্র কুরআন মাজীদ হলো মহান আল্লাহর কিতাব। যা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মহানবী হযরত মুহম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর ফেরেশতা জিবরাইল (আঃ)-এর মাধ্যমে সুদীর্ঘ ২৩ বছরে অবতীর্ণ হয়। কোরআন মানবজাতির সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ ও মুক্তির দিশারি বা পথপ্রদর্শক। সর্বকালের, সর্বদেশের, সর্বলোকের জীবনবিধান ও মুক্তির সনদ হিসেবে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনকে ওহীর মাধ্যমে নাযিল করেছেন।
কিতাবুল্লাহ কী
কিতাব শব্দটি ক্রিয়ামূল। এর অর্থ একত্রিত করা ও আঁকা। প্রচলিত এবং প্রসিদ্ধ অর্থে কিতাব হলো গ্রন্থ, বই, লিখিত বিষয়। এ হিসেবে কিতাবুল্লাহ-এর অর্থ হবে আল্লাহ তাআলার কিতাব বা গ্রন্থ। বলা বাহুল্য, কিতাবুল্লাহ দ্বারা আল্লাহ তা’আলার কাছ থেকে নাযিলকৃত সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ও চুড়ান্ত কিতাব পবিত্র কুরআন মাজীদ-কে বোঝানো হয়।
কিতাবুল্লাহ-এর পারিভাষিক সংজ্ঞায় মনীষীগণ যা বলেছেন-
- ইমাম ইবন হুমামের মতে, কিতাব হলো ঐ কুরআন যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর কদরের রাতে নাযিল করা হয়েছে।
- আল্লামা আবদুল ওহাবের মতে, কুরআন হলো আল্লাহর ঐ বানী যা জিবরাঈল (আঃ) আরবি ভাষায় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)- এর অন্তকরণে নাযিল করেন।
- ইমাম ইবন হিশামের মতে, কিতাব হলো আল্লাহ তাআলার ঐ বানী যা সহীফাসমূহ লিপিবদ্ধ রয়েছে এবং যা কদরের রাতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপরে নাযিল করা হয়েছে।
- জালালুদ্দীন সুয়ূতির মতে, কিতাব হলো ঐ কুরআন যা হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর উপর নাযিল করা হয়েছে এবং তাঁর পক্ষ হতে ধারাবাহিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।
কিতাবুল্লাহ-এর প্রকারভেদ
প্রথমত, অভিধানিক বিবেচনায় কুরআন মাজীদের শব্দমালা ৪ প্রকার। যথা-
- খাস: খাস এমন শব্দকে বলা হয়, যা এককভাবে কোনো একটি নির্দিষ্ট এককের জন্য গঠিত হয়েছে।
- আম: আম এমন শব্দকে বলা হয়, যা একই প্রকারের বহু একককে একই সময় শামিল করে।
- মুশতারাশ: এমন শব্দকে বলে যা বিভিন্ন প্রকারের একাধিক বস্তকে বদলের ভিক্তিতে শামিল করে।
- মুআববাল: এমন মুশতারিককে বলে যার একটি অর্থ প্রবল ধারণার মাধ্যমে অগ্রাধিকার পেয়ে নির্দিষ্ট হয়ে গেছে।
আরো পড়তে পারেন: নাসখ কী? এর প্রকারভেদ। হাদিস দ্বারা কোরআন রহিত করা যাবে কিনা তা আলোচনা করুন?
দ্বিতীয়ত, শব্দের অর্থ স্পষ্ট ও অস্পষ্টতা বিবেচনায় কুরআন মাজিদের শব্দমালাকে ৮ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো-
- যাহির: এমন ব্যক্তব্যকে যাহির বলা হয় যা শোনা মাত্রই শ্রোতা এবং অর্থ বুঝতে পারে।
- খাফী: এমন বক্তব্যকে খাফী বলা হয়, যার উদ্দেশ্য কোনো আনুমানিক বিষয়ের কারণে অস্পষ্ট থাকে।
- নস: এমন বক্তব্যকে নস বলা হয় যা যাহির হতে স্পষ্ট।
- মুশকাল: এমন বক্তব্যকে মুশকাল বলা যায়, যা এ বক্তব্যের মতো অনেকগুলো বাক্যের সঙ্গে মিশে যায়।
- মুফাসসার: এমন বক্তব্য কে মুফাসসার বলা হয় যা যাহির ও নস হতেও অধিক পরিমানে স্পষ্ট।
- মুজমাল: যাতে বহু অর্থের সংমিশ্রনের কারনে বক্তব্য এত অধিক পরিমানে দুর্বোধ্য হয়ে পড়ে যে, মূল ভাষার দ্বারা বোঝা যায় না। এর বক্তাকে জিজ্ঞাসা করে এবং অনুসন্ধান ও গবেষণার মাধ্যমে এ অর্থ উদ্ধার করতে হয়।
- মুহকাম: এমন বত্তব্য যার মর্মার্থ সুস্পষ্ট ও সুদৃঢ়। এতে নসখ ও কাবিলের কোনো সম্ভাবনাই বিদ্যমান নেই।
- মুতাশাবিহ: এমন বক্তব্য যার উদ্দেশ্য অবগত হওয়ার কোন সম্ভবনা নেই।
তৃতীয়ত, শব্দ ব্যবহারের দিক বিবেচনায় কুরআন মাজীদের শব্দাবলি ৪ প্রকার। যেমন-
- হাকীকত: শব্দ প্রণয়নকারী যে শব্দকে যে অর্থের জন্য প্রণয়ন করেছেন শব্দকে সেই অর্থে ব্যবহার করাকে হাকীকত বলে।
- মাজায: শব্দকে যে অর্থের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে সে শব্দের বিপরীত অর্থ ব্যবহার করাকে মাজায বলে।
- সরীহ: এমন শব্দ যার অর্থ ও উদ্দেশ্য সুস্পূর্ণ স্পষ্ট। এর নিজস্ব অর্থ সন্দেহাতীত ভাবে সাব্যস্ত হয়।
- কিনায়া: এমন শব্দ যার অর্থ অস্পষ্ট। কোনো কারীনাহ বা চিহ্ন ছাড়া এর অর্থ বোঝা যায় না।
আরো পড়তে পারেন: উসুলে ফিকহ কী? এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য বর্ণনা করুন?
চতুর্থত, শব্দের উদ্দেশ্য অবগত হওয়ার দিক বিবেচনার কুরআনর মাজীদের শব্দবলি ৪ প্রকার। এগুলো হলো-
- ইসতিদলাল বিইবারাতিন নস: শব্দসমূকে দলিল হিসেবে পেশ করা এবং ইচ্ছাকৃতভাবে যে উদ্দেশে বাক্যটিকে প্রয়োগ করা হয়েছে তার প্রকাশ্য অর্থ অনুসারে আমল করা।
- ইসতিদলাল বিইশারাতিন নস: কুরআন মাজীদের ইশারাকে দলিল হিসেবে পেশ করা হয়। আর তা হলো নসের শব্দ দ্বারা যা আভিধানিক ভাবে সাব্যস্ত ও বোধগম্য হয়েছে যে অনুসারে আমল করা। কিন্তু নসের শব্দ দ্বারা এটি উদ্দেশ্য নয়। আর না এটাকে বোঝানোর জন্য নসকে আনা হয়েছে। আর এটি সবদিক দিয়ে সাব্যস্ত নয়।
- ইসতিদলাল বিদালালাতিন নস: নসের নির্দেশনাকে দলিল হিসেবে পেশ করা। আর এটা হলো যা শব্দের আভিধানিক অর্থ হিসেবে সাব্যস্ত হয়। ইজতিহাদের প্রয়োজন হয় না।
- ইসতিদলাল বিইকতিদাইন নস: নসের হক চাহিদা কে দলিল হিসেবে পেশ করা। আর নসেব মাধ্যমে যা সাব্যস্ত আমল তার ওপর নস আমল করেনা। তবে এ শর্ত সাপেক্ষে আমল করে যে, তা নসের ওপর অগ্রবর্তী হবে। এর দ্বারা যা সাব্যস্ত হয় তা দালালতুন নসের দ্বারা সাব্যস্তের অনূরুপ হয়ে থাকে।
উপসংহার
কিতাবুল্লাহ বা আল্লাহর কিতাব সমগ্র মানবজাতির হেদায়াতের জন্য নাযিল করা হয়েছে। বর্তমান অশান্ত পৃথিবীতে হানাহানি, মারামারি, যুদ্ধ-বিগ্রহ, অন্যায়-অনাচার, অত্যাচার-নির্যাতনে পরিপূর্ণ। তাই শান্ত এই পৃথিবীতে শান্তির সুবাতাস বয়ে আনতে পারে একমাত্র কোরআন নির্দেশিত পথ অনুসরণ করার মাধ্যমে।
• IST-501 : Study of Al-Quran (Surah: Al-Fatah and Al-Hujurat) • IST-502 : Introduction to Islamic Dawah • IST-503 : Al-Sirat Al-Nababiah • IST-504 : Human Rights in Islam • IST-505 : Principles and History of Tafsir literature • IST-506 : Principles of Islamic Jurisprudence •