Monday, December 23, 2024

খাস কী? খাসের হুকুমসহ বিস্তারিত আলোচনা করুন?

প্রশ্ন: খাস কী? খাসের হুকুমসহ বিস্তারিত আলোচনা করুন? ▶ বিষয়: (IST-506) Principles of Islamic Jurisprudenceকোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)



ভূমিকা

খাস ফিকহশাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা। মহান আল্লাহ তায়ালার কিতাব তথা পবিত্র কুরআন মাজিদ এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর হাদীসসমূহ থেকে প্রয়োজনীয় মাসয়ালা উদ্ভাবনের জন্য খাসের গুরুত্ব অপরিসীম। খাস হলো আম-এর বিপরীত। তাই সময়ের প্রেক্ষাপটে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন নতুন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সে সকল সমস্যার শরয়ী সমাধানের জন্য মাসয়ালা উদ্ভাবনে খাসের ব্যবহার জানা থাকা জরুরী। খাসের রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু প্রকারভেদ।

খাসের আভিধানিক অর্থ

খাস আরবী শব্দ যা বাবে আল-খুসুস মাসদার থেকে ইসমি ফাইল এর ওয়াহিদ মুযাক্কারের সীগাহ। খাস-এর আভিধানিক অর্থ হল নির্ধারিত, নির্দিষ্ট, আমের বিপরীত, সুনির্ধারিত ও স্থিরকৃত ইত্যাদি। মুজমাল অসিয়ত গ্রন্থে খাস এর অর্থ হলো সাধারণের বিপরীত।


আরো পড়তে পারেন: কিতাবুল্লাহ কী? এর প্রকারভেদ ও বিস্তারিত আলোচনা করুন?


পারিভাষিক সংজ্ঞা 

  • আল মানার গ্রন্থে আল্লামা নাসাফী বলেন, খাস এমন শব্দ যাকে এককভাবে একটি নির্দিষ্ট অর্থ বোঝানোর জন্য গঠন করা হয়েছে।
  • উসূলুশ শশী-এর গ্রন্থাগার বলেন, খাস এমন একটি শব্দ যাকে এককভাবে নির্দিষ্ট অর্থ নামের জন্য গঠন করা হয়েছে।
  • উসূলে বাযদাবী প্রণেতার মতে, প্রত্যেকটি নির্দিষ্ট শব্দ যা একক অর্থের জন্য গঠন করা হয়েছে।
  • ইলমে উসূলে ফিকহে গ্রন্থে বলা হয়েছে, এমন শব্দ যা একক সত্ত্বা বুঝানোর জন্য গঠন করা হয়েছে।
  • আল্লামা মুহিবুল্লাহ বিহারূ বলেন, খাস  হল প্রত্যেক ঐ শব্দ যা পরিচিত শব্দের দালালাত করে।

সারকথা হলো, খাস এমন একটি একক অর্থবোধক শব্দ, যা ব্যাপকতার পরিবর্তে নির্দিষ্টভাবে কোন ব্যক্তি, বস্তু ও বিষয়কে শামিল করে। যেমন- মুহাম্মদ-এর দ্বারা কেবলমাত্র এক ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ইনসান বা মানুষ এর দ্বারা কেবলমাত্র মানুষ জাতিকে নির্দিষ্টভাবে ‍বুঝানো হয়। তেমনিভাবে ইমরাআতু বা নারী দ্বারা শুধুমাত্র নির্দিষ্টভাবে নারী জাতিকে বুঝায়।

খাস সম্পর্কে কুরআনে অনেক আয়াত তথা হুকুম রয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র ‍কুরআনের সূরা বাকারার ২৩৪ নম্বর আয়াতে বলেন, “তারা যেন তিন কুরু পর্যন্ত অপেক্ষা করে।”

এ প্রসঙ্গে ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) বলেন, “এখানে কুরু হলো অপবিত্রতা। কারণ অপবিত্রতা হলো সুনির্দিষ্ট”।


আরো পড়তে পারেন: ইজতিহাদ কী? এর প্রয়োজনীয়তা, শর্তাবলি এবং মুজতাহিদের যোগ্যতা ও গুণাবলি আলোচনা করুন?


খাসের প্রকারভেদ

আল মানার কিতাবে খাস-কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন-

  1. খাসাসুল জিনস তথা নির্দিষ্ট জাতিবাচক
  2. খাসাসুন না’উ তথা নির্দিষ্ট শ্রেণীবাচক
  3. খাসাসুল আইন বা খাসাসুল ফারদ তথা ব্যক্তিবাচক

খাসাসুল জিনস তথা নির্দিষ্ট জাতিবাচক

যে শব্দ দ্বারা নির্দিষ্ট জাতিকে বোঝানো হয় তাকে খাসাসুল জিনস বলা হয়। অর্থের দিক দিয়ে নির্দিষ্ট জাতি হবে কিন্তু বিষয়বস্তু শ্রেণীগতভাবে অনির্দিষ্ট হবে। উদাহরণ স্বরূপ- খালিকুল ইনসান এর দ্বারা এখানে ইনসান একটি নির্দিষ্ট জাতি হলেও নারী ও পুরুষের সৃষ্টির উদ্দেশ্য ভিন্ন ভিন্ন।

খাসাসুন না’উ তথা নির্দিষ্ট শ্রেণীবাচক

যে শব্দের দ্বারা একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীকে বোঝায় তাকে খাসাসুন না’উ বলা হয়। অর্থাৎ অর্থগত দিক দিয়ে নির্দিষ্ট জাতি হবে। তবে এর বিষয়বস্তু ভিন্ন হলেও এর উদ্দেশ্য এক হবে। যেমন- রজলুন দ্বারা মহিলা থেকে পুরুষ খাস হয়েছে। আবার ইমরতুন দ্বারা পুরুষ দ্বারা মহিলাকে আলাদা করা হয়েছে।


Request for Book


খাসাসুল আইন বা খাসাসুল ফারদ তথা ব্যক্তিবাচক

যে শব্দের দ্বারা নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝায়, তাকে ব্যক্তিবাচক খাস বলা হয়। উদাহরণ স্বরূপ- পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “ওয়া ইজকালা ইব্রাহীমা” -এর দ্বারা ইব্রাহীম (আঃ) এর নামকে সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।

খাসের হুকুম

খাসের হুকুম দুই ধরনের। যথা-

  • খাস তার নির্দিষ্ট বস্তু দ্বারা অকাট্যভাবে অন্তর্ভূক্ত করবে। খাসের তাৎপর্য এমন যে, উক্ত খাসের আপন উদ্দীষ্ট এবং নির্দিষ্ট বস্তুটিকে এমন অকাট্যভাবে অন্তর্ভূক্ত করে তাতে উদ্দিষ্ট বস্তুটি ব্যতীত অন্য কোন কিছুর সম্ভাবনা দূর করে দেয়। যদি খাসের সাথে খবরে ওয়াহেদ অথবা কিয়াসের বিপরীত কিছু পাওয়া যায়, তাহলে উভয়ের মাঝে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে হবে। কিন্তু যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে খবরে ওয়াহেদ অথবা কিয়াসকে বর্জন করে কুরআনের উপর আমল করতে হবে। কারণ খাসের দ্বারা ইলমে ইয়াকীন পয়দা হয়।
  • নিজেই সুস্পষ্ট হওয়াতে সেই ব্যাপারে আর কোন ধরনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয় না। অতএব এর উপর ব্যাখ্যা করে আর নতুনভাবে শরীয়াত প্রণয়ন করা যাবে না। এখানে তা খবরে ওয়াহেদ কিংবা কিয়াস দ্বারা তা রহিত করা যাবে না। উদাহরণ স্বরূপ-

পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারায় ইরশাদ হয়েছে, “ওয়ালী ব্যতীত স্বামী গ্রহণ করতে পারবে।” আর খবরে ওয়াহেদে বলা হয়েছে, “প্রত্যেক ঐ নারী যে ওয়ালীর অনুমতি ছাড়া বিবাহ করবে তার বিবাহ বাতিল বাতিল বাতিল।”

এখানে খবরে ওয়াহেদটি সম্পূর্ণরুপে আল কোরআনের বিপরীত শব্দ। তাই একই সাথে দুটি বিষয়ের উপর আমল করা সম্ভব নয়। এখানে খাসের উপর বায়িন সাব্যস্ত হয়েছে। কিন্তু খাস যেহেতু নিজে নিজে সুস্পষ্ট, তাই এটা বায়িন এর সম্ভাবনা রাখে না, তাই এই বিষয়ে খবরে ওয়াহেদের উপর আমল পরিত্যাজ্য হবে।



প্রখ্যাত উসূলবিদ বলেন, খাসের নির্দেশ মোতাবেক আমল করা জরুরী তাতে কোনরুপ অন্যথা ঘটানোর সুযোগ নেই। কাজেই খাসের সাথে খবরে ওয়াহিদ এবং কিয়াসের সাথে সামঞ্জস্যতা রক্ষা করে তার উপর আমল করতে হবে তা পরস্পর বিপরীতার্থক হয়। কারণ কিতাবুল্লাহ হল অকাট্য আর খবরে ওয়াহিদ ও কিয়াস অকাট্য নয়। উদাহরণস্বরুপ বলা যায় যে, তালাকপ্রাপ্তা নারীগণ তিন রুকু পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। এখানে তিন কথাটা বলা হয়েছে যার দ্বারা কোনকিছু খাস করা হল। আর কুরু অর্থ হল পবিত্রতা ও হায়েয। যদি তা ইলমে নহবের কায়দায় পড়া হয় তাহলে তা পবিত্রতা অর্থে বুঝাবে। কিন্তু তার দ্বারা তিন কথাটির যথার্থতা রক্ষা পায় না। কারণ তখন তালাকপ্রাপ্তা নারীর তিন তুহর বা দুই তুহর ও তৃতীয় তুহরের কিছু অংশ (+২) ইদ্দত পাওয়া যায়। অন্যদিকে, যদি তা হায়েয অবস্থা দ্বারা বুঝানো হয় তাহলে তিন কথাটির যথার্থতা বজায় থাকে। তাই পবিত্র হওয়ার জন্য কিয়াস শক্তিশালী হলেও তা খাস বিরোধী হওয়ার দরুন তা গ্রহণযোগ্য হবে না।

উপসংহার

খাস উসূলে ফিকহের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা। আর যেহেতু এটা স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং কোন বস্তুকে অকাট্যভাবে অন্তর্ভূক্ত করে, সেহেতু মাসাআলা নির্ণয়ে খাসের ভূমিকা অপরিসীম। সাধারণভাবে মাসয়ালা সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝার খাস এমনকি আম, ইজমা ও কিয়াসের জ্ঞান রাখা জরুরী।



• IST-501 : Study of Al-Quran (Surah: Al-Fatah and Al-Hujurat) • IST-502 : Introduction to Islamic Dawah • IST-503 : Al-Sirat Al-Nababiah • IST-504 : Human Rights in Islam • IST-505 : Principles and History of Tafsir literature • IST-506 : Principles of Islamic Jurisprudence

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles