▶ প্রশ্ন: চিকিৎসাশাস্ত্রে ইবনে সীনার অবদান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করুন। ▶ বিষয়: IST-512 : Muslim Contribution to Science and Technology ▶ কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)
ভূমিকা
আল-কুরআন ও আল-হাদীসের সরাসরি নির্দেশ এবং বৈজ্ঞানিক নির্দেশনায় মুসলিম জ্ঞানী ও বিজ্ঞানীগণ বৈজ্ঞানিক গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। এদের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসেন অজস্র বৈজ্ঞানিক যারা আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রদূত হয়ে আছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম সর্বকালের মুসলিম বিজ্ঞানী চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক ইবনে সিনা। মুসলিম বিজ্ঞানী ইবনে সিনা ৯৮০ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান উজবেকিস্তানের রাজধানী বুখারায় জন্মগ্রহণ করেন। এই বিখ্যাত বিজ্ঞানীকে ‘আশশাইখ আলরাইস’ বা জ্ঞানীকুলের শিরোমণি উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে।
চিকিৎসাশাস্ত্রে ইবনে সিনার অবদান
খ্যাতনামা মুসলিম বিজ্ঞানী ইবনে সিনার চিন্তা ও কর্মে, মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞান পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়। তবে দার্শনিক ও পদার্থ বিজ্ঞানী হিসেবেও তার যথেষ্ট পরিচিতি রয়েছে। ইউরোপীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানে তাঁর প্রভাব গভীর ও সুদূরপ্রসারী। তাঁর বিদ্যাবস্তা ও জ্ঞান-সাধনার জন্য তাকে ‘আশ-শায়খ আর-রাঈস আল-হুকামা’ বা ‘জ্ঞানীদের প্রধান ও পুরোধা’ নামে অভিহিত করা হয়। ১০৩৭ খ্রিস্টাব্দে শূল বেদনায় এ জ্ঞানী মহাপুরুষ ও চিকিৎসা বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয়।
ষোলো বছর বয়সেই তিনি তখনকার যাবতীয় চিকিৎসাবিদ্যায় পারদর্শিতা অর্জন করেন এবং অবিরত গ্রন্থ রচনার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞান, দর্শন, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, ধর্মতত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব প্রভৃতি বিষয়ে সর্বমোট ৯৯টি গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর চিকিৎসা বিষয়ক বিশ্বকোষ ‘আল-কানুন ফিত তিব্ব’ গ্রিক ও আরবী চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিপূর্ণ ও সমন্বিত সংকলন।
👉 আরো পড়তে পারেন: প্রযুক্তি কাকে বলে? প্রযুক্তির উন্নয়নে মুসলমানদের অবদান লিখুন।
প্রথম খণ্ডে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাধারণ তথ্য, যথা শরীরবিদ্যা, রোগের কারণ ও সাধারণ চিকিৎসা; দ্বিতীয় খণ্ডে প্রাণী, উদ্ভিদ ও খনি থেকে আহরিত নানারকম ঔষধ; তৃতীয় খণ্ডে মস্তক থেকে পা পর্যন্ত প্রত্যেক অঙ্গের নানাবিধ গোলযোগ, চতুর্থ খণ্ডে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন রোগের কথা, যেমন জ্বর ও পঞ্চম খণ্ডে যৌগিক ঔষধ, যথা চূর্ণ, সিরাপ ইত্যাদি আলোচিত হয়েছে। এ পুস্তকের দার্শনিক পরিকল্পনা, সুবিন্যস্ত আলোচনা এবং বিষয়বস্তুর বিভাজন এটিকে চিকিৎসা জগতে জনপ্রিয় করে তোলে এবং অচিরেই গ্যালেন, আল-রাজী ও আল-মাজুসীর গ্রন্থের পরিবর্তে ইউরোপের স্কুলসমূহে চিকিৎসা বিদ্যার পাঠ্য পুস্তক হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। দ্বাদশ শতাব্দীতে ক্রেমোনার জিরার্ড কর্তৃক ‘কানুন ফিত তিব্ব’ ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয়।
পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষ ত্রিশ বছরে এ বইয়ের ১৫টি ল্যাটিন সংস্করণ ও একটি হিব্রু সংস্করণ প্রকাশিত হয়। তাঁর গ্রন্থে ৭৬০টি ঔষধের নামের উল্লেখ রয়েছে। ইবনে সিনা পানি ও মাটির মাধ্যমে রোগ বিস্তারের বিষয় আলোচনা করেন। দ্বাদশ শতাব্দী থেকে সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত এ গ্রন্থ পাশ্চাত্য জগতে চিকিৎসাবিদ্যার প্রধান পাঠ্য ও অবলম্বন ছিল। তাঁর পুস্তক অদ্যাবধি প্রাচ্যের কোনো কোনো স্থানে পঠিত হয়। হামাদানে তাঁর সমাধি আজও ভক্তদের যিয়ারতের স্থান।
উপসংহার
আল-কুরআন ও আল-হাদীসের সরাসরি নির্দেশ ও বৈজ্ঞানিক নির্দেশনা আব্বাসীয় যুগকে জ্ঞান বিজ্ঞানের স্বর্ণযুগে রূপান্তর করেছিল। আর এ যুগের বড় বৈশিষ্ট্য ছিল এই যে, এ সময় বিজ্ঞানের সকল শাখায় মুসলমানগণ অবদান রাখেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে তাদের অবদান ও অভূতপূর্ব উন্নতি চির স্মরণীয় করে রেখেছে।
সম্ভাব্য প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ (এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ)
• IST-507 : Study of Al-Hadith (Al-Mishkat Al-Masabih: Al-Iman, AlILM and Al-Salat (Selected Hadith) • IST-508 : Principles and History of Hadith literature • IST-509 : Muslim Personal Law and Law of Inheritance in Islam • IST-510 : Banking and Insurance in Islam • IST-511 : Study of Religions (Islam, Buddhism, Hinduism, Judaism, Christianity) • IST-512 : Muslim Contribution to science and technology •