Saturday, December 21, 2024

ইমাম গাযযালী (রহ.) এর জীবনী • কর্ম • কিতাবসমূহ

ইমাম গাযযালী (রহ.) এর জীবনী

ইমাম গাযযালী (রহ.) এর জীবনী
ইমাম গাযযালী (রহ.) এর জীবনী

মূল নাম মুহাম্মদ। উপাধি হলো হুজ্জাতুল ইসলাম। গাজ্জালী জন্মস্থানগত উপাধি । বর্তমান ইরানের খোরাসান প্রদেশের তুস জেলার তাহেরান শহরে ১০৫৮ খ্রিস্টাব্দে ৪৫০ হিজরীতে ইমাম গাজ্জালী (রঃ) জন্মগ্রহণ করেন। দাদা সম্মানিত ব্যক্তি হলেও স্বীয় পিতা আহমদ তেমন প্রসিদ্ধ লোক ছিলেন না সে এলাকায়। বাল্যকালেই পিতৃহারা হন ইমাম গাজ্জালী (রঃ)। তার পিতা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকলেও জ্ঞানের প্রতি আগ্রহ ছিল অনেক। তাই মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে তিনি ইমাম গাজ্জালী ও তাঁর ছোট ভাই ইমাম আহমদ গাজ্জালীকে স্বীয় বন্ধুর হাতে তুলে দিয়ে অত্যন্ত আবেগের সাথে বলে যান যে, আমি নিজে লেখাপড়া করতে পারিনি। ইচ্ছা ছিল আমার এ সন্তানদেরক লেখাপড়া শিখাব। কিন্তু পরিতাপের বিষয় তা আর আমার পক্ষে সম্ভব হল না। তাই আমার বিশেষ অনুরোধ, তুমি আমার শিশু দুটিকে লেখাপড়া শিখিয়ে আমার অন্তিম বাসনা পূরণ করবে। অবুঝ দুটি শিশুকে আর নিজের সামান্য যা কিছু সম্পদ ছিল তিনি বন্ধুর হাতে তুলে দিলেন।



বন্ধুও ছিলেন তারই মত একজন দরিদ্র ও দরবেশ মানুষ ৷ বন্ধুর পুত্রদের প্রাথমিক লেখাপড়ার ব্যবস্থা নিয়ে তিনি ওসিয়ত পূর্ণ করলেন। প্রাথমিক স্তর শেষ হলে স্নেহের স্বরে তাদেরকে বললেন, তোমাদের পিতার প্রদত্ত সম্পদ শেষ হয়েছে, তোমাদের লেখাপড়া এবং ভরণপোষণের জন্য আমারও এমন সামর্থ নেই যা দিয়ে তোমাদের উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করব। তোমাদের পিতার ইচ্ছা পূরণ করতে হলে কোন অবৈতনিক মাদরাসায় ভর্তি হতে পার। বাবার ইচ্ছা পূরনের উদ্দেশ্যে উপদেশ মত ইমাম গাজ্জালী (রঃ) ও আহমদ গাজ্জালী ভর্তি হয়ে গেলেন নিকটবর্তী এক অবৈতনিক

মাদরাসায়। উল্লেখ্য যে প্রাথমিক স্তরে ইমাম সাহেব কম সময়েই কুরআন হিফয করে নিয়েছিলেন। এখন ফিকাহ্শাস্ত্র অধ্যয়ন করে নিলেন সে সময়ের বিখ্যাত ফিকাহবিদ মাওলানা আহমদ ইব্‌ন মুহাম্মদ জারকানীর কাছে। অতঃপর তুস ত্যাগ করে জুরজানে গমন করেন উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে এবং উচ্চতর শিক্ষালাভে আত্মনিয়োগ করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ

ইমাম আবু নযর ইসমাঈল (র)-এর তত্ত্বাবধানে। তখনকার যুগে শিক্ষক শিক্ষার্থীকে শুধু পুস্তকের পাঠ দিতেন না বরং যাতে পরবর্তীতে কোন বিষয় ভুলে গেলেও তা সংশোধন করে নিতে পারেন। অনুশীলনের জন্য খাতায় লিখিয়েও দিতেন, এসব নোটকে বলা হত “তালীকাত”। সে নোটগুলো ছাত্ররা অতিযত্নে সংরক্ষণ করত। গাজ্জালী (রঃ) অতি যত্রুসহকারে রক্ষা করে রেখেছিলেন তীর উস্তাদের তালীকাতগুলো।


শিশুর আধুনিক, সুন্দর ও অর্থবহ নাম


শিক্ষা সমাপ্ত করে ইমাম জুরজানীর কাছে থেকে পাওয়া নোটগুলো বুকে জড়িয়ে ইমাম গাজ্জালী (রঃ) নিজ জন্মভূমি তাহেরান উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। পথে ইমাম সাহেবের সেই তালীকাতসহ সর্বস্ব লুট করে নিল একদল দস্যু ৷ অন্যান্য জিনিস পত্রের জন্য তেমন দুঃখিত ছিলেন না তিনি। তালীকাতগুলোর জন্য বিশেষ বিব্রত হলেন এবং নোটগুলো ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন দস্যু-সর্দারকে। সর্দার অনুরোধ শুনে উপহাসের হাসি হেসে ইমাম সাহেবকে বলল, তুমি তো দেখি ভাল লেখাপড়া শিখেছ। নোটগুলোর ভেতরেই কি তোমার যাবতীয় শিক্ষা আবদ্ধ? মনে ভিতর কি কিছুই নেই তোমার যে, এগুলোর জন্য এভাবে ভেঙ্গে পড়ছ? উপহাসের পর সর্দার তালীকাতগুলো ফিরে দিল। দস্যু সর্দারের ব্যঙ্গোক্তিতে ইমাম গাজ্জালী (র)-এর মন বিক্ষুব্ধ হলো এবং অল্প সময়েই সে সমস্ত নোট মুখস্থ করে ফেললেন।

নিশাপুর নিযামিয়া মাদরাসায় অধ্যয়ন

খ্যাতির শীর্ষে খোরাসানের অন্তর্গত নিশাপুর নিযামিয়া মাদরাসা তথকালীন যুগের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। নিযামুল মুলক সুলতান মালিক শাহির প্রধানমন্ত্রী প্রথমে একটি সাধারণ মাদরাসা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে একে সর্বোচ্চ বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করেন। সে সময় এর সমকক্ষ কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাগদাদে আর দ্বিতীয়টি -ছিল না। সে যুগের সেরা দুই মনীষী ইমামুল হারামাইন ও আল্লামা আবু ইসহাক শীরাজী। খোরাসানের নিশাপুরে থাকতেন ইমামুল হারামাইন আর দ্বিতীয়জন আল্লামা আবু ইসহাক শীরাজী ইরাকের রাজধানী বাগদাদে। তখন মাদরাসা নিযামিয়ার অধ্যক্ষ ইমামুল হারামাইন।



ইমাম গাজ্জালী (রঃ)-এর জন্মভূমি তুসের নিকটবর্তী মাদরাসাটি বিধায় তিনি উচ্চতর শিক্ষা লাভের জন্য ইমামুল হারামাইনেরই শরণাপন্ন হলেন এবং জ্ঞানের উচ্চ শিখরে আরোহণ করলেন অতিঅল্প সময়েই। ইমামুল হারামাইনের বিশিষ্ট তিন ছাত্র- হাররাসী, “আহমদ ইবৃন মুহাম্মদ ও ইমাম গাজ্জালীর মধ্যে পরবর্তীকালে ইমাম গাজ্জালী যে মর্যাদা অর্জন করেছিলেন তা তার উত্তাদ ইমামুল হারামাইনকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ৪৭৮ হিজরী সালে ইমামুল হারামাইন পরলোক গমন করলে সমগ্ধ দেশবাসী শোকে’ এমনি শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল যে, সমগ্র নিশাপুজ্পর হাট-বাজার, দোয়াত-কলম ভেঙ্গে ফেলে এবং এক বছর ধরে শোক পালন করে। ইমাম গাজ্জালী নিজেও নিশাপুর ছেড়ে বাগদাদে চলে যান উত্তাদের শোকে অভিভূত হয়ে।

বাগদাদের নিযামিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ পদ গ্রহণ

বাদশাহ সেলজুক মালিক শাহের প্রধানমন্ত্রী নিযামুল মুলক ইমাম গাজ্জালীর স্বভাব-চরিত্র ও অগাধ জ্ঞানের কথা শুনে মাদরাসায়ে নিযামিয়ার অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দান করেন। এ মাদরাসার সামান্য একজন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ছিল সে সময় এক দুর্লভ সম্মানের বিষয়। আর বিজ্ঞতা যাচাইয়ের পথ ছিল পপ্তিতদের বিতর্কানুষ্ঠান। প্রথা অনুসারে নিষামুল মুলক ও ইমাম গাজ্জালীকে, অধ্যক্ষ নিয়োগ করার আগে এক বিতর্কানুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেন এবং তাতে তিনি জয়ী হন। তখন তীর বয়স ছিল মাত্র ৩৪ বছর। শাহী বা রাষ্টীয় ক্ষমতার উপর প্রভাব- অল্প বয়সে এমন সম্মানজনক উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হওয়ার ফলে চর্তুর দিকে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। যাবতীয় ব্যাপারে তার পরামর্শ ও …

ইমাম গাযযালী (রহ.) এর লিখিত বইসমূহ


ইমাম গাযযালী (রহ.) এর লিখিত বইসমূহ

  • ধন-সম্পদের লোভ ও কৃপণতা • লেখক: ইমাম গাযযালী (রহ.) • অনুবাদক: মাওলানা মতিউর রহমান • প্রকাশক: মোহাম্মদী লাইব্রেরি • পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৪৭ ➜ PDF Download
  • মিশকাতুল আনওয়ার বা আলোর দীপাধার • লেখক: ইমাম গাযযালী (রহ.) • অনুবাদক: মাওলানা মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন • প্রকাশক: ইসলামিক কুরআন মহল • পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৩৬ ➜ PDF Download
  • সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ • লেখক: ইমাম গাযযালী (রহ.) • অনুবাদক: মোহাম্মদ খালেদ • প্রকাশক: মোহাম্মদী লাইব্রেরী • পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৭৫ ➜ PDF Download
  • সৃষ্টি দর্শন • লেখক: ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) • প্রকাশক: হাবিবিয়া বুক ডিপো • পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৫১ ➜ PDF Download
  • রূহ কি এবং কেমন • লেখক: ইমাম গাযযালী (রহ.) • অনুবাদক: আলহাজ্ব মাওলানা একেএম ফজলুল হক মুনশী • প্রকাশক: রশীদ বুক হাউজ • পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৪৫ ➜ PDF Download
  • রিয়া (লোক দেখানো ইবাদাত) • লেখক: ইমাম গাযযালী (রহ.) • অনুবাদক: মোহাম্মদ খালেদ • প্রকাশক: মোহাম্মদী লাইব্রেরি • পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৮৩ ➜ PDF Download
  • আখেরাত • লেখক: ইমাম গাযযালী (রহ.) • অনুবাদক: মাওলানা বশির উদ্দিন • প্রকাশক: মোহাম্মদী লাইব্রেরী • পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১২৭ ➜ PDF Download
  • দাকায়েকুল আখবার • লেখক: ইমাম গাযযালী (রহ.) • অনুবাদক: আলহাজ্ব মাওলানা একেএম ফজলুল হক মুনশী • প্রকাশক: …. • পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৬৫ ➜ PDF Download
  • জবানের ক্ষতি • লেখক: ইমাম গাযযালী (রহ.) • অনুবাদক: মোহাম্মদ খালেদ • প্রকাশক: মোহাম্মদী লাইব্রেরি • পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৩৯ ➜ PDF Download
  • আজাবের ভয় ও রহমতের আশা • লেখক: ইমাম গাযযালী (রহ.) • অনুবাদক: মোহাম্মদ খালেদ • প্রকাশক: মোহাম্মদী লাইব্রেরী • পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১১৩ ➜ PDF Download
  • সবর ও শোকর • লেখক: ইমাম গাযযালী (রহ.) • অনুবাদক: মোহাম্মদ খালেদ • প্রকাশক: মোহাম্মদী লাইব্রেরী • পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১২৫ ➜ PDF Download
  • মিনহাজুল আবেদীন • লেখক: ইমাম গাযযালী (রহ.) • অনুবাদক: মাওলানা মুজীবুর রহমান • প্রকাশক: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ • পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৩৫২ ➜ PDF Download
  • মুকাশাফাতুল-কুলুব • লেখক: ইমাম আবু হামেদ মুহাম্মদ আল-গাযযালী (রহ.) • অনুবাদক: মুফতী মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ • প্রকাশক: দারুল ইফতা প্রকাশনী • খন্ড সংখ্যা: ০২ ➜ PDF Download
  • ➜ PDF Download

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles