▶ প্রশ্ন: সূরা আল-হুজরাতে বর্ণিত সামাজিক বিধানগুলো আলোচনা করুন ▶ বিষয়: (IST-501) Study of Al-Quran (Surah: Al-Fatah and Al-Hujurat) ▶ কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)
ভূমিকা
ইসলাম মানবজাতির পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। এতে জীবনের প্রতিটি বিষয় সুবিন্যস্তভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। ইসলাম সার্বজনীন এক জীবনাদর্শ। ইনলাম মানুষকে নীতি-নৈতিকতা ও শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়ে থাকে যার মাধ্যমে মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি, ধন-সম্পদ ও মান-মর্যাদার হিফাজত হয়। সূরা আল-হুজুরাত পবিত্র আল কুরআন-এর ৪৯তম সূরা। এই সূরায় সামাজিক জীবনে মুসলমানদের করণীয় বিভিন্ন সদাচরণের উপর আলোকপাত করা হয়েছে।
সূরা আল-হুজরাতে বর্ণিত সামাজিক বিধানসমূহ
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা আল হুজুরাতে মুসলমানদের জন্য সামাজিক বিধানসমূহ তুলে ধরেছেন যা তাঁদের সামাজিক ব্যবস্থাকে সমুন্নত, সুসংহত এবং সুরক্ষিত করে। এ সূরার বিষয়বস্তু হচ্ছে মুসলমানদেরকে পরিপূর্ণ ঈমানদারের আদব-কায়দা, শিষ্টাচার ও আচরণ শিক্ষা দেয়া। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা আল হুজুরাতের ১-৫ আয়াতে উল্লেখ করেন,
قال الله تعالى : يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ * يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ وَلَا تَجْهَرُوا لَهُ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَن تَحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ وَأَنتُمْ لَا تَشْعُرُونَ * إِنَّ الَّذِينَ يَغُضُّونَ أَصْوَاتَهُمْ عِندَ رَسُولِ اللَّهِ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ امْتَحَنَ اللَّهُ قُلُوبَهُمْ لِلتَّقْوَىٰ ۚ لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ عَظِيمٌ * إِنَّ الَّذِينَ يُنَادُونَكَ مِن وَرَاءِ الْحُجُرَاتِ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ * وَلَوْ أَنَّهُمْ صَبَرُوا حَتَّىٰ تَخْرُجَ إِلَيْهِمْ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُمْ ۚ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ . (سورة الحجرات-১-৫)
অর্থ: হে মু’মিনগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের চেয়ে অগ্রগামী হয়ো না। আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও জানেন। হে মু’মিনগণ! নিজেদের আওয়াজ রাসূলের আওয়াজের চেয়ে উঁচু করো না এবং উচ্চস্বরে নবীর সাথে কথা বলো না, যেমন তোমরা নিজেরা পরস্পর বলে থাকো। এমন যেন না হয় যে, তোমাদের অজান্তেই তোমাদের সব কাজ-কর্ম ধ্বংস হয়ে যায়। যারা আল্লাহর রাসূলের সামনে তাদের কণ্ঠ নিচু রাখে তারাই সেসব লোক, আল্লাহ যাদের অন্তরকে তাকওয়ার জন্য বাছাই করে নিয়েছেন। তাদের রয়েছে ক্ষমা ও বড় পুরস্কার। হে নবী! যারা তোমাকে গৃহের বাইরে থেকে ডাকাডাকি করতে থাকে তাদের অধিকাংশই নির্বোধ। যদি তারা তোমার বেরিয়ে আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করতো তাহলে তাদের জন্য ভাল হত। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
আরো পড়তে পারেন: কুরআনের বর্ণনা শৈলি। বর্ণনারীতির উপর একটি মানসম্মত প্রবন্ধ লিখুন।
ইসলাম পরিবারের অন্তর্গত এবং বহির্ভূত, নিকটবর্তী এবং দূরবর্তী সকল শ্রেণীর আত্মীয়ের সাথে উত্তম সম্পর্ক রেখে সদ্ব্যবহার করার জন্য জোর তাগিদ দিয়েছে। এই সূরা আল্লাহ তায়ালা মানুষের সামাজিক জীবনে অহরহ ঘটে যাওয়া কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়েছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্্য হলো-
- কারো কোন বিষয় বা সংবাদ যাচাই ব্যতিরেকে বিশ্বাস না করা। (আয়াত-৬)
- বিবাদমান দুটি দলের বিবাদ ন্যায়পন্থায় মীমাংসা করা (আয়াত-৯)
- সর্বাবস্থায় ইনসাফ করা। (আয়াত-৯)
- কাউকে উপহাস না করা। (আয়াত-১১)
- কাউকে দোষারোপ করো না। (আয়াত-১১)
- কারো নাম বিকৃত না করা বা মন্দ নামে না ডাকা। (আয়াত-১১)
- কারো পশ্চাতে নিন্দা না করা। (আয়াত-১২)
- মন্দ ধারণা করা থেকে বিরত থাকা। (আয়াত-১২)
- ছিদ্রান্বেষন না করা। (আয়াত-১২)
- কে কতো বড় বা মানুষের মর্যাদার মূল মাপকাঠি হলো ‘তাকওয়া’। (আয়াত ১৩)
তাই যে কোন খবরই বিশ্বাস করা এবং সে অনুসারে কোন কর্মকাণ্ড করে বসা মুসলমানদের শিক্ষা এবং করণীয় নয়। যদি কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা কওমের বিরুদ্ধে কোন খবর পাওয়া যায় তাহলে গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। খবর পাওয়ার মাধ্যম নির্ভরযোগ্য কি না সেটা দেখতে হবে। নির্ভরযোগ্য না হলে তার ভিত্তিতে কোন তৎপরতা চালানোর পূর্বে খবরটি সঠিক কি না তা যাঁচাই বাছাই করে নিতে হবে।
আরো পড়তে পারেন: মুত্তাকী কারা? মুত্তাকী কাকে বলে? মুত্তাকীদের পরিচয়, বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলি লিখুন?
এই সূরায় আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদেরকে খারাপ জিনিস থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। যেগুলো সামাজিক জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে এবং যার কারণে পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। একে অপরকে ঠাট্রা বিদ্রুপ করা, বদনাম ও উপহাস করা, মন্দ নামে আখ্যায়িত করা, কারো প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করা, অন্যের গোপনীয় বিষয় খোঁজাখুঁজি ও অনুসন্ধান করা, অসাক্ষাতে মানুষের বদনাম করা এগুলো থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা রয়েছে। এগুলো গোনাহের কাজ এবং এগুলো সামাজিক জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে।
বর্তমান সময়ে পৃথিবীর প্রতিটি জায়গায় বিভিন্নভাবে জুলুমের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। জাতি, গোত্র ও বংশের নিজ নিজ মর্যাদা নিয়ে গর্ব ও অহংকার, অন্যদেরকে নিজেদের চেয়ে নিম্নস্তরের মনে করা এবং নিজেদের বড়ত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য অন্যদের হেয় করা ইত্যাদি বিষয় হলো এসব জুলুমের মূলে। আল্লাহ তা’আলা এই সূরায় এসব অনাচারের মূলোৎপাটন করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, সমস্ত মানুষ এই মূল উৎস থেকে সৃষ্টি হয়েছে। তাদেকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভিক্ত করা হয়েছে পারস্পরিক পরিচয়ের জন্য, গর্ব ও অহংকার প্রকাশের জন্য নয় এবং একজন মানুষের ওপর আরেকজন মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব লাভের জন্য আর কোন বৈধ ভিত্তি নেই।
উপসংহার
প্রকৃতপক্ষে একজন ঈমানদার ব্যক্তির চরিত্র কেমন হওয়া উচিত তা-ই এই সূরার মূল উপজীব্য বিষয়। ঈমানের মৌখিক দাবী প্রকৃত ঈমানদারের পরিচয় নয়। এক মনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে মানা, কার্যত অনুগত হয়ে থাকা এবং আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর পথে জান ও মাল কুরবানী করাই হলো ঈমানদারের কাজ। যে প্রকৃতহ মু’মিন সে এই নীতি ও আচরণ গ্রহণ করে। আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের আচরণ ও জীবনকে আল কুরআনের সূরা হুজুরাতের শিক্ষার আলোকে আলোকিত করার তাওফীক দান করুন। আমীন!
• IST-501 : Study of Al-Quran (Surah: Al-Fatah and Al-Hujurat) • IST-502 : Introduction to Islamic Dawah • IST-503 : Al-Sirat Al-Nababiah • IST-504 : Human Rights in Islam • IST-505 : Principles and History of Tafsir literature • IST-506 : Principles of Islamic Jurisprudence •