Saturday, January 11, 2025

সূরা আল-হুজরাতের আলোকে মুসলিমদের বিবাদমান দুই দলের মধ্যে মীমাংসা পদ্ধতি আলোচনা করুন

প্রশ্ন: সূরা আল-হুজরাতের আলোকে মুসলিমদের বিবাদমান দুই দলের মধ্যে মীমাংসা পদ্ধতি আলোচনা করুন ▶ বিষয়: (IST-501) Study of Al-Quran (Surah: Al-Fatah and Al-Hujurat) ▶ কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)



ভূমিকা

সূরা আল-হুজরাত এর বিষয়বস্তু হচ্ছে মুসলমানদেরকে ঈমানদারসূলভ স্বভাব চরিত্র ও ভাবমূর্তির উপযুক্ত ও মানানসই আদব-কায়দা, শিষ্টাচার ও আচরণ শিক্ষা দেয়া। আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ব্যাপারে একজন মুমিনের আচার-আচরণ, আদব-কায়দা ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া হয়েছে এই সূরায়। এমনকি মুসলমানদের মাঝে কোন বিবাদ দেখা দিলে তা কিভাবে মীমাংসা করতে হবে তাও শিখিয়ে দেয়া হয়েছে এই সূরায়।

মুসলিমদের বিবাদমান দুই দলের মধ্যে মীমাংসা পদ্ধতি

পবিত্র কোরআনের ৪৯তম সূরা আল হুজুরাতে মানুষের শিষ্টাচার, আচার-আচরণ ও সামাজিক শিক্ষা দেয়া হয়েছে। এমনকি আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে কিভাবে কথা বলতে হবে, কিভাবে সম্বোধন করতে হবে, কিভাবে আচরণ করতে হবে তার শিক্ষা দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা এই সূরার ০২ নম্বর আয়াতে বলেন-

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَرۡفَعُوۡۤا اَصۡوَاتَکُمۡ فَوۡقَ صَوۡتِ النَّبِیِّ وَلَا تَجۡہَرُوۡا لَہٗ بِالۡقَوۡلِ کَجَہۡرِ بَعۡضِکُمۡ لِبَعۡضٍ اَنۡ تَحۡبَطَ اَعۡمَالُکُمۡ وَاَنۡتُمۡ لَا تَشۡعُرُوۡنَ

অর্থ: মুমিনগণ! তোমরা নবীর কন্ঠস্বরের উপর তোমাদের কন্ঠস্বর উঁচু করো না এবং তোমরা একে অপরের সাথে যেরূপ উঁচুস্বরে কথা বল, তাঁর সাথে সেরূপ উঁচুস্বরে কথা বলো না। এতে তোমাদের কর্ম নিস্ফল হয়ে যাবে এবং তোমরা টেরও পাবে না। 


আরো পড়তে পারেন: সূরা আল-হুজরাতে বর্ণিত সামাজিক বিধানগুলো আলোচনা করুন


অর্থাৎ এখানে আল্লাহর নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে কথা বলার কিভাবে তাকে সম্বোধন করতে হবে, কোন আওয়াজে বলতে হবে তার শিক্ষা পাওয়া যায়। অন্যথয় কঠিন শাস্তি তথা কৃত আমলসমূহ নষ্ট হয়ে যাওয়ার বিষয়ে হুশিয়ার করা হয়েছে।

মুসলমানদের দুটি দল যদি কোন সময় পরস্পর বিবাদে জড়িয়ে পড়ে তবে সে ক্ষেত্রে অন্য মুসলমানদের করণীয় কি এবং তার মীমাংসা পদ্ধতি কি হবে তা নিয়ে আল্লাহ তায়ালা আলোচনা করেছেন। এই সূরার ০৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন-

وَاِنۡ طَآئِفَتٰنِ مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اقۡتَتَلُوۡا فَاَصۡلِحُوۡا بَیۡنَہُمَا ۚ فَاِنۡۢ بَغَتۡ اِحۡدٰىہُمَا عَلَی الۡاُخۡرٰی فَقَاتِلُوا الَّتِیۡ تَبۡغِیۡ حَتّٰی تَفِیۡٓءَ اِلٰۤی اَمۡرِ اللّٰہِ ۚ فَاِنۡ فَآءَتۡ فَاَصۡلِحُوۡا بَیۡنَہُمَا بِالۡعَدۡلِ وَاَقۡسِطُوۡا ؕ اِنَّ اللّٰہَ یُحِبُّ الۡمُقۡسِطِیۡنَ

অর্থ: যদি মুমিনদের দুই দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর চড়াও হয়, তবে তোমরা আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে; যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি ফিরে আসে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে ন্যায়ানুগ পন্থায় মীমাংসা করে দিবে এবং ইনছাফ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ ইনছাফকারীদেরকে পছন্দ করেন। 


আরো পড়তে পারেন: হুদায়বিয়ার সন্ধির শর্তাবলি লিখুন এবং এর ফলাফল বর্ণনা করুন


ব্যক্তিগত মত, সামাজিক বা গোত্রীয় মতবিরোধ এবং রাষ্ট্রীয় মতবিরোধের কারণে অহরহই আমাদের মাঝে ঝগড়া বিবাদ সৃষ্টি হয়ে থাকে। এমনকি এসকল বিরোধী রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চলে যাওয়ায় পৃথিবীতে এক দেশের সাথে অন্য দেশের যুদ্ধ বিগ্রহ লেগেই রয়েছে পৃথিবীতে। বিভিন্ন কারণে তৈরি হওয়া এরকম মতবিরোধের কারণে সারা পৃথিবীতে অশান্তি বিরাজ করছে।

এজন্য পৃথিবীতে শান্তি বিধানের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা সুরা হুজুরাতে নির্দেশনা দিয়েছেন। যখন মুসলমানের মধ্যে দুটি পক্ষের মধ্যে কোন কারণে মতবিরোধ দেখা দেয় অথবা পক্ষ দুটি বিবাদে বা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তখন অন্য মুসলমানরা তাদের মধ্যে সৃষ্ট হওয়া বিরোধ নিস্পত্তি করে দেয়ার চেষ্টা করবে। অর্থাৎ দুইটি দল সংঘর্ষে লিপ্ত হলে কোন মুসলমানের সেটা দেখে নিরব থাকার কোন সুযোগ নেই। দুই দলকেই বুঝিয়ে বা যেকোন সুন্দর পদ্ধতি বা কৌশলে তাদের মধ্যে বিবাদ মিটিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে করতে হবে।

এরপরও যদি কোন একটি পক্ষ উশৃঙ্খল আচরণ করে? বিবাদ মিটিয়ে চেষ্টা করার পরও যদি কোন একটি দল মীমাংসার দিকে না যায় তাহলে অপর মুসলমানদের দায়িত্ব হবে যে পক্ষ বা দলটি বাড়াবাড়ি করবে তার বিরুদ্ধে লড়াই করা। মজলুমের পক্ষে নিয়ে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে লড়াই করা। মহান আল্লাহ তায়ালা উপরোক্ত আয়াতে তারই নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা সেই উশৃঙ্খল পক্ষের বিরুদ্ধে তারা সঠিক পথে ফিরে আসা পর্যন্ত যুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন।



এছাড়াও সমাজ জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে এবং যার কারণে পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় মুসলমানদেরকে সেসব খারাপ জিনিস থেকে আত্মরক্ষার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এই সূরায়। একে অপরকে ঠাট্রা বিদ্রূপ করা, বদনাম ও উপহাস করা, খারাপ নামে আখ্যায়িত করা, খারাপ ধারণা পোষণ করা, অন্যে গোপনীয় বিষয় খোঁজাখুঁজি ও অনুসন্ধান করা, অসাক্ষাতে মানুষের বদনাম করা এগুলো বিরত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এগুলো খুবই নিকৃষ্ট কাজ, গুনাহের কাজ এবং সমাজে বিপর্যয় সৃষ্টি করে।

উপসংহার

ঈমানের মৌখিক দাবী প্রকৃত জিনিস নয়, বরং সরল মনে আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে মানা, কার্যত অনুগত হয়ে থাকা এবং আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর পথে জান ও মাল কুরবানী করাই ঈমানদারের কাজ। আন্তরিকভাবে মেনে নেয়া ছাড়াই শুধু মৌখিকভাবে ইসলামকে স্বীকার করে এবং তারপর এমন নীতি ও আচরণ অবলম্বন করে যেন ইসলাম গ্রহণ করে তারা কোন মহা উপকার সাধন করেছে, পৃথিবীতে তারা মুসলমান, হিসেবে গণ্য হতে পারে, সমাজে তাদের সাথে মুসলমানের মত আচরণও করা যেতে পারে, কিন্তু আল্লাহর কাছে তারা মুসলমান হিসেবে গণ্য হতে পারে না।



• IST-501 : Study of Al-Quran (Surah: Al-Fatah and Al-Hujurat) • IST-502 : Introduction to Islamic Dawah • IST-503 : Al-Sirat Al-Nababiah • IST-504 : Human Rights in Islam • IST-505 : Principles and History of Tafsir literature • IST-506 : Principles of Islamic Jurisprudence


বিগত বছরের প্রশ্নসমূহ (এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ)

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles