প্রশ্ন: বর্তমান বিশ্বে মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র বর্ণনা করুন? বিদায় হজের আলোকে এর প্রতিকার বর্ণনা করুন | বিষয়: (IST-504) Human Rights in Islam | কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)
ভূমিকা
মানবতা ও মানবাধিকার বর্তমান বিশ্ব এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশে দেশে চলছে গণহত্যা আর জাতিগত নিধনযজ্ঞ। ধর্মের অধিকার, ভূমির অধিকারসহ প্রতিটি অধিকারই কেড়ে নেয়া হচ্ছে আধুনিক অস্ত্রের মাধ্যমে। সর্বাধুনিক অস্ত্র দিয়ে কেড়ে নেয়া হচ্ছে মানুষের জীবন। নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষকে রক্ষার দায়িত্ব যাদের উপর রয়েছে তারাও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। জাতিসংঘের মতো বিশাল প্রতিষ্ঠানও আজ দর্শকে পরিণত হয়েছে। সংঘত প্রতিরোধ ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র
বিগত সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের একটার পর একটা দেশে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। এসব যুদ্ধে মারা গেছে লাখ লাখ নিরীহ মানুষ। হত্যা, ধ্বংস আর জাতিগত নিধনযজ্ঞ থেকে বাঁচতে নিজ বাড়ি ঘর ছেড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে পাড়ি জমাচ্ছে মানুষ। এখানে বর্তমান বিশ্বে মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র তুলে ধরা হলো-
১। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ
সবচেয়ে সম্প্রতি সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমনের ফলে সে দেশে জ্বলছে আগুন। পুড়ছে হাজারো মানুষের স্মৃতিঘেরা স্বপ্নের ঘর। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য মানুষ ছুটছে এদিক ওদিক। নিজের আপনজন-বাড়িঘর ছেড়ে মানুষ সীমানা পাড়ি দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য চলে যাচ্ছে অন্য দেশে। যুদ্ধের নির্মমতার শিকার হচ্ছে শিশু, যুবক, বৃদ্ধ, মহিলাসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ।
২। রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর হামলা
মায়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর দেশটির সেনাবাহিনী ও সংঘবদ্ধ বৌদ্ধ অধিবাসীদের অভিযান মানবাধিকার লঙ্ঘনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তাদের অন্যায়, অবিচার, অত্যাচারের কারণে লাখ লাখ রোহিঙ্গা অধিবাসী সীমানা পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। সেখানে ফেলে এসেছে তার অতীত স্মৃতি, কষ্ট ও মমতায় গড়া বাড়ি ঘর। শুধুমাত্র নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সবকিছু ছেড়ে মানুষ চলে এসেছে বাংলাদেশে।
৩। উইঘুর মুসলিমদের উপর নির্যাতন
চীনের উইঘুর জাতিঘোষ্ঠীর উপর নির্যাতন করে তাদের জাতিগত ও সাংস্কৃতিকভাবে নিচিহ্ন করে ফেলার পায়তারা করছে বেইজিং। বন্দি শিবিরে বন্দি করা হয়েছে ১০ লাখেরও বেশি উইঘুরদের। শিবিরে বন্দিদের করা হচ্ছে অমানুষিক অত্যাচার নির্যাতন। সেখানকার অধিবাসীরাও ভোগ করছে অমানুষিক অত্যাচার ও নির্যাতন। তারা বঞ্চিত ন্যুনতম মৌলিক অধিকার থেকে। লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার।
৪। ফিলিস্তিনিদের উপড় হামলা
বিশ্বে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অন্যতম বড় উদাহরণ হলো ফিলিস্তিনে ইসরাইলের হামলা, অত্যাচার ও নির্যাতন। প্রায় ৭০ বছরের মতো সময় ধরে ফিলিস্তিনিরা জুলুম নির্যাতনের শিকার। কেড়ে নেয়া হয়েছে ফিলিস্তিনিদের ভূমির অধিকার। ইসরাইলদের কাছে নিজের আবাস, বাড়ি ঘর, জীবন- জীবিকা একে একে সব হারাচ্ছে। ৭০ বছর ধরে ফিলিস্তিনিদের অধিকার নিয়ে খেলছে ইসরাইল।
৫। সিরিয়া ও ইয়েমেনে
সিরিয়া ও ইয়েমেনি সংঘাতের ফলে অসংখ্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। জীবনের অধিকার, নির্যাতন থেকে স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। এই সংঘাতে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার, বেসামরিক জনগণের উপর নির্বিচারে হামলা এবং শিশু নির্যাতনের মতো মারাত্মক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে প্রতিবেশী দেশগুলিতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। এই সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্তদের মানবাধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রচেষ্টা যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ। সিরিয়া ও ইয়েমেনে ধুঁকছে মানবতা। ক্ষুধা আর দুর্ভিক্ষের কবলে লাখ লাখ নাগরিক।
৬। কাশ্মীর সংঘাত
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি দীর্ঘস্থায়ী বিরোধ কাশ্মীর যুদ্ধ। উভয় পক্ষই এই অঞ্চলটিকে নিজেদের বলে দাবি করে। এই সংঘাতের ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং চলাফেরার স্বাধীনতার মতো অসংখ্য মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। ভারত সরকারের বিরুদ্ধে নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং জোরপূর্বক গুমসহ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ রয়েছে। এই অঞ্চলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং ইন্টারনেট বন্ধের উপর বিধিনিষেধের খবরও পাওয়া গেছে বিভিন্ন সময়ে। এই সংঘাতের ফলে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত সেখানকার সর্বসাধারণ। সংঘাতের অবসান ঘটাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত রয়েছে এবং পরিস্থিতি এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
বিদায় হজের আলোকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিকার
মুসলমানদের মক্কা বিজয়ের পর আরবের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অসংখ্য প্রতিনিধি ইসলাম ধর্ম গ্রহণের উদ্দেশ্যে মদিনায় আসতে আরম্ভ করলে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বুঝতে পারলেন যে তাঁর মিশন সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। সেই সাথে তিনিও জীবনের শেষ প্রান্তে উপস্থিত হয়েছেন। তাই জীবনের এই গোধূলি লগ্নে মুসলিম উম্মাহ কে বিদায়ী হেদায়েত দানের পরিকল্পনা করেন। সেই লক্ষ্যে তিনি আয়োজন করেন এক মহা সম্মেলনের। আর এটাই ইসলামের ইতিহাসে বিদায় হজ হিসেবে পরিচিত।
ইসলামের ইতিহাসে বিদায় হজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ও অপরিসীম। বিদায় হজে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ভাষণের মাধ্যমে মানবজাতির একটি পূর্ণাঙ্গ ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবন বিধানের রূপরেখা উল্লেখ করা হয়েছে। ধর্ম, সমাজ, অর্থনীতি, ফৌজদারি, নারী ও দাস দাসীর অধিকারের একটা বাস্তবসম্মত সনদ প্রকাশিত হয়েছে। বিদায় হজের ভাষণের আলোকে মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তির এক আলোকদীপ্ত ব্যবস্থার সন্ধান পাওয়া যায়। বর্তমান বিশ্বের সংঘাতময় পরিস্থিতির শান্তিময় সমাধানের মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর বিদায় হজের ভাষণ খুবই বাস্তবসম্মত সমাধান। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর বিদায় হজের এই ভাষণকে অনুসরণ করে খুব সহজেই বর্তমান পৃথিবী থেকে সমস্ত প্রকার যুদ্ধ বিগ্রহ সমাধান করে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
উপসংহার
যে অধিকার নিয়ে মানুষ জন্মগ্রহণ করে এবং যে অধিকার থেকে মানুষকে আলাদা করার উপায় নেই তাকে মানবাধিকার বলে। এই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে মানুষের জীবনে আদালা করে আর কিছু থাকে না। একমাত্র ইসলাম অনুসরণ ও সামগ্রিক জীবনে ইসলামের অনুশাসনের বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে পৃথিবী রেহাই পেতে এই সকল যুদ্ধ-বিগ্রহের মতো অশান্তি থেকে। ইসলামের আইন, অনুশাসনই ফিরিয়ে দিতে জুলুম ও নিযাতনের শিকার মানুষের মানবাধিকার।
• IST-501 : Study of Al-Quran (Surah: Al-Fatah and Al-Hujurat) • IST-502 : Introduction to Islamic Dawah • IST-503 : Al-Sirat Al-Nababiah • IST-504 : Human Rights in Islam • IST-505 : Principles and History of Tafsir literature • IST-506 : Principles of Islamic Jurisprudence •