Saturday, November 16, 2024

হতবাক ইহুদি | নাসির গাজীর বুদ্ধিদীপ্ত ও শিক্ষণীয় গল্প

উপমহাদের প্রখ্যাত আলেম, হাকিমুল উম্মত হিসেবে খ্যাত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রচিত মুসলমানের হাসি বই-এ নাসির গাজীর অনেকগুলো বুদ্ধিদীপ্ত ও শিক্ষণীয় গল্প স্থান পেয়েছে। গল্পগুলো থেকে শিক্ষণীয় অনেক বিষয় রয়েছে। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের জন্য অনেক হাস্যরসাত্মক শিক্ষণীয় গল্প রয়েছে। সেখান থেকে গল্পগুলো এখানে তুলে ধরা হলো-


হতবাক ইহুদি

নাসির গাজীর গ্রামে এক সম্পদশালী ইহুদি লোক বাস করত। সে ছিল খুবই কৃপণ। কোন দিন কাউকে কিছু দিতো না। কৃপণতার জন্য সে যথেষ্ট দুর্নাম অর্জন করেছিল!

একদিন নাসির গাজীর বেশ কিছু টাকার প্রয়োজন হল। তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বললেন- “হে আল্লাহ! আপনি আমাকে নয় হাজার নয় শত নিরানব্বইটি মুদ্রা দান করুন। এর চেয়ে বেশী কিংবা কম হলে আমি নিব না।” ইহুদি নাসির গাজীর এই দোয়া শুনতে পেল। সে মনে মনে বলল- দেখা যাক, নাসির গাজী কতটা সত্যবাদী। এই বলে সে জানালা দিয়ে গাজীর ঘরে দশ হাজার মুদ্রা ছুড়ে মারল।

গাজী সাহেব প্রার্থনা থেকে উঠে এত মুদ্রা দেখে মনে করলেন- আল্লাহ প্রার্থনা কবুল করে মুদ্রাগুলো পাঠিয়েছেন। তিনি খুব খুশী হলেন এবং আল্লাহর শুকর আদায় করলেন। মুদ্রাগুলো গুণে দেখলেন- দশ হাজার মুদ্রা রয়েছে। তিনি তখন বললেন- “হে আল্লাহ! আপনি আমাকে একটি মুদ্রা বেশী দেয়াতে আমি খুশী। আমি তা সানন্দে গ্রহণ করলাম।”

ইহুদি তো তা দেখে অবাক। সে দৌড়ে গাজী সাহেবের কাছে গিয়ে বলল- ‘আমার মুদ্রাগুলো দাও।’ নাসির গাজী বললেন, ‘কিসের মুদ্রা?’ ইহুদি বললো- ‘একটু আগে আমি যা তোমার জানালা দিয়ে নিক্ষেপ করেছিলাম।’ গাজী সাহেব বললেন, “কানা-লেংড়াকে তুমি এক পয়সা দাও না, আবার আমাকে দেবে দশ হাজার মুদ্রা? বাজে বকো না। যাও আপন পথ ধর।

ইহুদি কি আর করবে, সে বলল, ‘আমি কাজীর দরবারে নালিশ করব। তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে।’ নাসির গাজী বললেন, কাজীর দরবারে যাওয়ার মত ক্ষমতা আমার নেই। কারণ আমার নেই আমার সুন্দর কাপড়, নেই ঘোড়া। ইহুদি বাড়িতে গিয়ে একটি জরির পোশাক এবং তার ঘোড়ায় জিন লাগিয়ে নিয়ে এল। গাজী সাহেব কাপড় পরে এবং ঘোড়ায় চড়ে পথ চলতে লাগলেন এবং ইহুদি পেছনে পেছনে হাঁটতে লাগল।

কাজী দরবারের গিয়ে ইহুদি তার অভিযোগ পেশ করল। অভিযোগ করার পর নাসির গাজী কাজীকে বললেন, “এই লোকটি আমার প্রতিবেশী, বদ্ধ পাগল, কখন কাকে কি বলে তার ঠিক নেই। ও হয়তো বলে বসবে- আমার এই পোশাকটি ওর। ইহুদি বলল, “এই পোশাক আমার নয় তো কি?” নাসির গাজি হা হা করে হেসে বললেন, “দেখলেন তো, ও কেমন পাগল?” আবার হয়তো বলবে, মাঠে যে আমার ঘোড়াটি ঘাস খাচ্ছে, সেটাও ওর।” ইহুদি সাথে সাথে বলল, “কি বললে? এই ঘোড়া আমার নয়? কাজীর দরবারে আসার জন্য আমি তোমাকে ধার দেইনি?” নাসির গাজি বললেন, “এর চেয়ে বড় পাগল আর কাকে বলে?”

এসব ঘটনা প্রত্যক্ষ করে কাজী সাহেব ইহুদিকে বিকৃত মস্তিষ্ক বলে সাব্যস্ত করলেন এবং তাকে পাগলা গারদে বন্দী করার আদেশ দিলেন। তখন গাজী সাহেব উদারতা দেখিয়ে বললেন, “থাক হুজুর! পাগলা গারদে নেয়ার দরকার নেই। আমি পাগলটাকে নিয়ে যাই। পাগলা গারদে দিলে ওর বাচ্চারা কান্নাকাটি করবে। ওদেরকে তো আমাকেই দেখতে হয়।” এই বলে ইহুদির ঘাড় ধরে বললেন- “চল হে… ।” ইহুদি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল গাজী সাহেবের মুখপানে।

নাসির গাজীর অন্যান্য গল্পসমূহ

  • এক সিংহ ও পথচারীর গল্প ➜ পড়ুন
  • জ্বি হুজুর! জ্বি হুজুর!! ➜ পড়ুন
  • মূল্যবান সম্পদ ➜ পড়ুন
  • আজ নগদ কাল বাকী ➜ পড়ুন
  • মাছের মাথা-খাওয়ার লোভ ➜ পড়ুন
  • ওয়াজ না করার ফন্দি ➜ পড়ুন
  • একসাথে দু’জন ➜ পড়ুন
  • হতবাক ইহুদি ➜ পড়ুন
  • উচিত বিচার ➜ পড়ুন
  • তিন টাকার সদাই ➜ পড়ুন
  • বাদশাহ’র ছেলের লেখাপড়া ➜ পড়ুন
  • ফুলদানির জন্য মৃত্যুদন্ড ➜ পড়ুন
  • পন্ডিত খেতাবের বিড়ম্বনা ➜ পড়ুন
  • সৎ লোকের সন্ধানে ➜ পড়ুন
  • চৈতন্য ফিরে এল ➜ পড়ুন
  • ঝাড়-ফুঁকের এ্যাকশন ➜ পড়ুন
  • দিতে জানে না, নিতে জানে ➜ পড়ুন
  • সম্পদের ওসীয়তনামা ➜ পড়ুন
  • আল্লাহ যা করেন বান্দার মঙ্গলের জন্যেই করেন ➜ পড়ুন
  • সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
  • চোর ধরার আজব বুদ্ধি ➜ পড়ুন
  • দুনিয়া ধ্বংসের আগেই ধ্বংস ➜ পড়ুন
  • অল্প সময়ের জন্য বিনা খরচে সুখের আস্বাদ ➜ পড়ুন
  • পনের দিনের মজুরীর ভয়ে ➜ পড়ুন
  • কুকুর তাড়ানো ভণ্ডপীর ➜ পড়ুন
  • সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
  • পবিত্র কোরআনের আয়াতের ফুঁকের ক্ষমতা

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles