নেককার মহিলাদের কাহিনী • হযরত সারা (আঃ)
মহান আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসুল দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন মানুষের হেদায়াতের জন্য। তাদের একত্ববাদের দাওয়াত ও শিক্ষা দেয়ার দায়িত্ব দিয়ে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে প্রেরণ করেছিলেন। ঠিক তেমিনভাবে অনেক নেককার মহিলাও দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। তাদের মধ্যেও আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য মুজিজা দিয়েছিলেন। যেগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে। এখানে তেমনিভাবে আল্লাহর কিছু প্রিয় নেককার মহিলাদের কাহিনী ও তাদের শিক্ষা তুলে ধরা হলো।
হযরত সারা (আঃ)
বিবি সারা হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-স্ত্রী এবং হযরত ইসহাক (আঃ)-এর মাতা। ফেরেশ্তাগণ হযরত সারাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, “আপনি আপনার পরিবার-পরিজনের জন্য আল্লাহ্ তা’আলার রহমত স্বরূপ।” তাঁর ঐশীপ্রেম ও দো’আ কবুল হওয়ার কথা কোরআন মজীদে বর্ণিত হয়েছে।
হাদীস শরীফে আছে—একদা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) শামদেশে হিজরত করছিলেন। বিবি সারা ছিলেন তাঁর সঙ্গীনী। তাঁরা পথ চলতে চলতে এক যালেম বাদশাহের রাজ্যে এসে পৌঁছিলেন। সেসময় এক নাদান গোপনে বাদশাকে জানিয়ে দিলো যে, আপনার রাজ্যে এক সুন্দরী রমণী আগমন করেছে। ঘটনাচক্রে হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-কে রাজ দরবারে ডেকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, তোমার সঙ্গী রমণীটি কে? উত্তরে তিনি বললেন, সে আমার ভগ্নী। [হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এখানে বিবি সারাকে স্বীয় স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিলেন না, যেহেতু ইব্রাহীম (আঃ)-কে স্বামী হিসেবে জানতে পারলে যালেম বাদশাহ্ তাঁকে কতল করার সম্ভাবনাই বেশী ছিল।] বাদশাহের সম্মুখ থেকে এসে ইব্রাহীম (আঃ) বিবি সারাকে বললেন, দেখ তুমি আমাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করো না। যেহেতু দীনী সম্পর্কে তুমি আমার ভগ্নীই হও।
এরপর বাদশাহ্ বিবি সারাকে ডেকে পাঠাইল। তিনি বাদশাহের দরবারে হাজির হলেন এবং বুঝতে পারলেন যে, বাদশাহের মতলব মোটেই ভাল নয়। তাই তিনি ওযূ করে নামায পড়লেন এবং দো’আর জন্য দরবারে এলাহীতে হাত উঠালেন। প্রার্থনা জানাইলেন, আয় আল্লাহ্! হে পরওয়ারদেগার বেনিয়েয! সত্য সত্যই আমি যদি তোমার প্রেরিত পয়গম্বরের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাকি, ঈমান আনিয়ে থাকি এবং অদ্যাবধি আমার সতীত্বকে বজায় রেখে থাকি, তবে এই যালেম বাদশাকে আমার উপর গালেব করে দিও না।
দো’আ করার সঙ্গে সঙ্গেই যালেম বাদশাহর হাত, পা, এমন-কি সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এমনিভাবে পঙ্গু হয়ে পড়লো যে, অত্যাচার যুলুম তো দূরের কথা, সে ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে কাকুতি মিনতি করতে লাগলো। কিছুক্ষণের মধ্যে তার অবস্থা মৃতপ্রায় হয়ে উঠলো। বিবি সারা ভাবলেন, এমতাবস্থায় যদি বাদশাহ্ মারা যায়, তবে জনগণ অবশ্যই বলবে যে, এই রমণীই বাদশাহ্ হত্যাকারিণী। তাই তিনি (সারা) বাদশাহের জন্য নেক (খায়রের) দো’আ করলেন। সঙ্গে সঙ্গে সে সুস্থ হয়ে গেল। পুনরায় বাদশাহের মাথায় বদ খেয়াল চাপিল। বাধ্য হয়ে বিবি সারা আবার বদ দো’আ করলেন। সঙ্গে সঙ্গে তার পূর্বাবস্থাই ঘটিল। এবার বাদশাহ্ কঠোর প্রতিজ্ঞা করে খুব কান্নাকাটা করতে লাগলো। বিবি সারার দয়ার দরিয়ায় বান ডাকিল। তিনি দো’আ করলেন, বাদশাহ্ ভাল হয়ে গেল। এইরূপে সে তিনবার প্রতিজ্ঞা করে প্রতিবারই তা ভঙ্গ করলো। অবশেষে বাদশাহ্ হিসেবে ফেলিল—আপনি এখানে কি মুছিবত নিয়ে এসেছেন, আপনি দয়া করে এখান থেকে বিদায় হউন। বাদশাহ্ পূর্বাহ্ণেই বিবি হাজেরাকে বাঁদী বানাইয়া রেখেছিল। এবার তাঁকে খেদমতের নিমিত্ত বিবি সারার হাওলা করে দিল। বিবি হাজেরার ইজ্জত আবরু আল্লাহ্ তা’আলা হেফাযত করে রেখেছিলেন। বিবি সারা তাঁকে স্বীয় স্বামী হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-কে প্রদান করলেন। উপরোক্ত কাহিনী থেকে স্পষ্টই বুঝা যায় যে, নামাযের পরের দো’আ কবুল হয়ে থাকে। তাই প্রত্যেকের উচিত কোন মুছিবতে লিপ্ত হয়ে পড়িলে খাঁটি দেলে তওবা করে নফল নামায আদায় করত দো’আয় মশগুল হওয়া।
নেককার মহিলাদের কাহিনী ও তাদের জীবনী
• হযরত হাওয়া (আঃ) • হযরত সারা (আঃ) • হযরত হাজেরা (আঃ) • হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর বিবি • বাদশাহ্ নমরুদের কন্যা • আইয়ূব নবীর স্ত্রী বিবি রহিমা • হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর খালা • হযরত মূসা (আঃ)-এর মাতা • হযরত মূসা (আঃ)-এর বোন • হযরত মূসা (আঃ)-এর বিবি ছফুরা • হযরত বিবি আছিয়া • ফেরাউনের কন্যা ও বাঁদী • হযরত মূসার এক বৃদ্ধা লস্কর • হাইসূরের ভগ্নী • হযরত বিলকিস • বনি-ইসরাইলের এক দাসী • বনি-ইসরাইলের এক বুদ্ধিমতী নারী • হযরত বিবি মারইয়াম • হযরত খাদিজা • হযরত সওদা • হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা • হযরত হাফসা • হযরত যয়নব বিনতে জাহাশ • হযরত যোয়ায়রিয়াহ • হযরত মায়মুনাহ • হযরত সাফিয়া • হযরত যয়নব • হযরত রোকেয়া • হযরত উম্মে কুলসুম • হযরত ফাতেমা (রাঃ) • হযরত হালিমা সাদিয়া •
তথ্যসূত্র
- বেহেশতী জেওর • লেখক: হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ.) • অনুবাদক: হযরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.)