Friday, April 25, 2025

হাদীস নাকি সুন্নাহ: কোনটি অনুসরণ করবো?

অনেক সহীহ হাদীস রহিত হয়ে যাওয়ার কারণে হাদীসের কিতাবের সকল হাদীস আমলযোগ্য নয়, শুধু যেসব হাদীস সুন্নাহ পর্যায়ের সেগুলোর উপর আমল করতে হবে, যার সারসংক্ষেপ হলো ফিক্বহের কিতাবসমূহ। এ সম্পর্কে কিছু হাদীস ও আসার নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

  • হযরত ইরবায ইবনে সারিয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহকে ভয় করতে উপদেশ দিচ্ছি এবং আমীরের কথা শুনতে ও তার অনুগত থাকতে উপদেশ দিচ্ছি, যদিও তিনি হাবশী গোলাম হন। আমার পর তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে তারা অচিরেই অনেক মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাহকে এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরবে এবং তা দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে। অতএব সাবধান! তোমরা দীনের বিষয়ে কুরআন ও সুন্নাহর বাহিরে নতুন কথা থেকে বেঁচে থাকবে। কেননা দীনের মধ্যে প্রত্যেক নতুন কথাই বিদ‘আত। (সুনানে দারেমী হা. নং ৯৬)
  • হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছেন, হে প্রিয় বৎস! যদি তুমি এভাবে সকাল-সন্ধ্যা কাটাতে পারো যে, তোমার অন্তরে কারো প্রতি হিংসা নেই, তবে তা করো। অতঃপর তিনি বললেন, প্রিয় বৎস! এটা আমার সুন্নাহ। আর যে আমার সুন্নাহকে যিন্দা করলো, সে আমাকেই ভালোবাসলো। আর যে আমাকে ভালোবাসলো, সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। (তিরমিযী শরীফ হা. নং ২৬৮৩)

👉 আরো পড়তে পারেন: পিতা মাতার হক সম্পর্কে আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশনা

  • হযরত মালেক রহ. থেকে বর্ণিত, তার নিকট পৌঁছেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি তোমাদের মধ্যে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতোক্ষণ পর্যন্ত তোমরা সে জিনিস দুটি আঁকড়ে ধরে রাখবে, পথভ্রষ্ট হবে না। আর জিনিস দুটি হচ্ছে- আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূলের সুন্নাহ। (মুয়াত্তা মালেক হা. নং ৬৮৫)
  • হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি হালাল খাবে এবং সুন্নাহর উপর আমল করবে এবং যার অনিষ্ট থেকে সকল মানুষ নিরাপদ থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। অতঃপর একলোক বলে উঠলো, হে আল্লাহর রাসূল, এমন লোক তো আজকাল অনেক। হুযূর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমার পরবর্তী যুগসমূহেও এমন লোক থাকবে। (তিরমিযী শরীফ হা. নং ২৫২৫)
  • হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, কিছু সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিবিগণকে মানুষের অগোচরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমলের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন। অতঃপর তাদের কেউ বললেন, আমি মহিলাদের বিবাহ করবো না। কেউ বললেন, আমি আর গোশত খাবো না। আর কেউ বললেন, আমি আর বিছানায় ঘুমাবো না। অতঃপর নবী ‘আলাইহিস সালাম আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং ছানা পড়লেন আর বললেন, মানুষের কী হলো? তারা এমন এমন বলে! অথচ আমি নামায পড়ি ও ঘুমাই, নফল রোযা রাখি ও রোযা ছেড়ে দেই, এবং আমি মহিলাদের বিবাহও করি। সুতরাং যে আমার সুন্নাহ থেকে বিমুখ হবে, সে আমার দলভুক্ত নয়। (মুসলিম শরীফ হা. নং ১৪০১)

  • রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার সুন্নাহ সমূহের এমন কোনো সুন্নাহকে যিন্দা করেছে যা আমার পরে পরিত্যক্ত হয়ে গিয়েছিলো, তার জন্য সে সকল লোকের সাওয়াবের পরিমাণ সাওয়াব রয়েছে যারা এর উপর আমল করবে। অথচ তাদের থেকে বিন্দু পরিমাণ সাওয়াব হ্রাস করা হবে না। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি কোনো গোমরাহীর নতুন পথ আবিষ্কার  করেছে যার উপর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (‘আলাইহিস সালাম) রাজী নন, তার জন্য সে সকল লোকের গোনাহের পরিমাণ গুনাহ  রয়েছে, যারা এর উপর আমল করবে। অথচ তাদের গুনাহ  থেকে বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না। (তিরমিযী শরীফ হা. নং ২৬৮২)
  • হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজ্জের সময় খুতবা দিলেন। তিনি বললেন, শয়তান এ ব্যাপারে নিরাশ হয়ে গেছে যে, তোমাদের এ যমীনে তার ইবাদাত করা হবে। তবে ইবাদাত ব্যতীত তোমরা যেসব আমলকে ছোট মনে করো সেসব বিষয়ে তার আনুগত্য করা হবে, এ ব্যাপারে সে আশাবাদী। অতএব হে মানবসকল, সাবধান! আমি তোমাদের নিকট এমন জিনিষ রেখে যাচ্ছি, যদি তোমরা তা আঁকড়ে ধরো, কখনও পথভ্রষ্ট হবে না। আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাহ। (মুসতাদরাকে হাকেম: ১/৯৩)
  • হযরত ইবনে হারেস ছুমালী রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখনই কোনো জাতি একটি বিদ‘আত চালু করেছে তখনই একটি সুন্নাহকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। সুতরাং কোনো সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা বিদ‘আত চালু করা থেকে উত্তম। (মুসনাদে আহমাদ হা. নং ১৬৯৭২)
  • হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রতিটি কাজের উত্থান রয়েছে। আর প্রতিটি উত্থানের একটি স্থিতিশীলতা রয়েছে। অতএব, যার উত্থান আমার সুন্নাহর দিকে হবে, সে সফলকাম। আর যার উত্থান আমার সুন্নাহ ব্যতিরেকে হবে, সে ধ্বংসিত। (ইবনে হিব্বান হা. নং ১১)
  • হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ইলম তিন প্রকার। আয়াতে মুহকামার ইলম, সুন্নাতে কায়েমার ইলম এবং ফরীযায়ে আদেলার ইলম। এগুলো ব্যতীত সব অতিরিক্ত। (আবূ দাউদ হা. নং ২৮৮৫)

উপরে উল্লিখিত প্রতিটি হাদীসে সুন্নাহর অনুসরণের এবং তা আঁকড়ে ধরার কথা বলা হয়েছে। এধরণের হাদীস বিশুদ্ধ হাদীসের কিতাবসমূহে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান রয়েছে। এখানে নমুনাস্বরূপ কিছু হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র। কিন্তু  এমন কোনো হাদীস পাওয়া যায় না, যেখানে হাদীস অনুসরণের কথা বলা হয়েছে। কেননা হাদীস সুন্নাহ থেকে ব্যাপক। রহিত হাদীসসমূহ এবং নবী ‘আলাইহিস সালামের সাথে, বা কোনো সাহাবীর সাথে খাস হুকুম-সম্বলিত বর্ণনা হাদীস হলেও সুন্নাহ নয়। সুন্নাহ হলো নবী ‘আলাইহিস সালাম উম্মতের অনুসরণের জন্য যা রেখে গেছেন এবং যা রহিত হয়নি। এজন্য নাজাতপ্রাপ্ত দলের নাম রাখা হয়েছে ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ’। অর্থাৎ, যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহকে সাহাবায়ে কিরামের জামা‘আতের মাধ্যমে অনুসরণ করে।

কোন হাদীস সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত আর কোনটি সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত নয় তা হক্কানী উলামাদের নিকট দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। হাদীসের কিতাব অধ্যয়ন করে জনগণের পক্ষে তা বুঝা সম্ভব নয়। সুতরাং উলামায়ে কিরাম থেকে না বুঝে একা একা হাদীস রিসার্চ করে আমল করা মারাত্মক গোমরাহী। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সকল প্রকার গোমরাহী থেকে হিফাজত করুন। আমীন।

তথ্য সূত্র

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles