দূরের পাল্লা • সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
আনিসুল হক • বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় • আহমদ ছফা • হুমায়ূন আহমেদ • কাজী নজরুল ইসলাম • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর • সমরেশ মজুমদার • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় • মানিক বন্দোপাধ্যায় • সৈয়দ শামসুল হক • আহমদ ছফা • জহির রায়হান • সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ • আবু ইসহাক • আবদুল্লাহ আল-মুতী • আবুল বাশার • আবুল মনসুর আহমদ • ফররুখ আহমদ • যতীন্দ্রমোহন বাগচী • প্রমথ চৌধুরী • সৈয়দ মুজতবা আলী • মুনীর চৌধুরী • হুমায়ুন আজাদ • আব্দুল জব্বার • শামসুর রাহমান • অন্নদাশঙ্কর রায় • জগদীশচন্দ্র বসু • সুফিয়া কামাল • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর • ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ • এম আর আখতার মুকুল • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় • মীর মশাররাফ হোসেন • আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ • রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ • সেলিনা হোসেন • সুকান্ত ভট্টাচার্য • দ্বিজেন্দ্রলাল রায় • জসীম উদ্দীন • জীবনানন্দ দাশ • সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত • বুদ্ধদেব গুহ • শিহাব আহমেদ তুহিন • রাগিব হাসান • আহসান হাবীব • সৈয়দ মকসুদ আলী • এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ • আরিফ আজাদ • মুসা আনসারী • সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় • সৈয়দ আলী আহসান • এপিজে আবুল কালাম আজাদ • আলী রিয়াজ • শওকত ওসমান • শাহীন আখতার • মহিউদ্দিন আহমদ • তিলোত্তমা মজুমদার • মাইকেল মধুসূদন দত্ত • সৈয়দ আমীর আলী • মুহম্মদ জাফর ইকবাল • আকবর আলি খান • আনিসুজ্জামান • ড. সৌমিত্র শেখর • সরদার ফজলুল করিম • অন্যান্য লেখকের বই •
দূরের পাল্লা • সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
দূরের পাল্লা সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ছিপ্ খান তিন- দাঁড়- তিনজন মাল্লা চৌপর দিন্-ভোর দ্যায় দুর- পাল্লা। পাড়ময় ঝোপঝাড় জঙ্গল, - জঞ্জাল, জলময় শৈবাল পান্নার টাকশাল। কঞ্চির তীর-ঘর ঐ চর জাগছে, বন হাঁস ডিম তার শ্যাওলায় ঢাক্ছে। চুপ চুপ—ওই ড়ুব দ্যায় পানকৌটি, দ্যায় ডুব টুপ টুপ ঘোমটার বউটি। ঝক্ ঝক্ কলসীর বক্ বক শোন গো, ঘোমটায় ফাঁক বয় মন উন্মন্ গো। তিন দাঁড় ছিপখান্ মন্থর যাচ্ছে, তিন জন মাল্লায় কোন্ গান গাচ্ছে? রূপশালি ধান বুঝি এই দেশে সৃষ্টি ধূপছায়া যার শাড়ি তার হাসি মিষ্টি। মুখ কানি মিষ্টি রে চোখ দু’টি ভোমরা ভাব-কদমের –ভরা রূপ দেখ তোমরা। ময়নামতীর জুটি ওর নামই টগরী, ওর পায়ে ঢেউ ভেঙে জল হ’ল গোখরী! ডাক - পাখী ওর লাগি’ ডাক্ ডেকে হদ্দ, ওর তরে সোঁত- জলে ফুল ফোটে পদ্ম । ওর তরে মন্থরে নদ হেথা চলছে, জলপিপি ওর মৃদু বোল বুঝি বোলছে। দুই তীরে গ্রামগুলি ওর জয়ই গাইছে গঞ্জে যে নৌকো সে ওর মুখই চাইছে। আটকেছে যেই ডিঙা চাইছে সে পর্শ সংকটে শক্তি ও সংসারে হর্ষ। পান বিনে ঠোট রাঙা চোখ কালো ভোমরা রূপশালি-ধান-ভানা রূপ দ্যাখো তোমরা পান সুপারি! পান সুপারি এইখানেতে শঙ্কা ভারি পাঁচ পিরেরই শির্ণি মেনে চলরে টেনে বৈঠা হেনে বাঁক সমুখে, সামনে ঝুঁকে বায় বাঁচিয়ে ভাইনে রুখে বুক দে টানো বৈঠা হানো- সাত সতেরো কোপ কোপানো। হাড় - বেরুনো খেজুর গুলো ডাইনী যেন ঝামর - চুলো নাচতেছে ছিলো সন্ধ্যাগমে লোক দেখে কি থমকে গেলো জমজমাটে জাঁকিয়ে ক্রমে রাত্রি এলো, রাত্রি এলো। ঝাপসা আলোয় চরের ভিতে ফিরছে কারা মাছের পাছে, পীর বদরের কুদরতিতে নৌকা বাঁধা হিজল গাছে। আর জোর দেড় ক্রোশ জোর দের ঘন্টা, টান ভাই টান সব নেই উৎকণ্ঠা। চাপ্ চাপ্ শ্যাওলার দ্বীপ সব সার সার, বৈঠার ঘায় সেই দ্বীপ সব নড়ছে ভিলভিলে হাঁস তায় জল-গায় চড়ছে। ওই মেঘ জম্ছে চল্ ভাই সমঝে গাও গান দাও শিস্, বকশিস বকশিস! খুব জোর ডুব্-জল, বয় স্রোত্ ঝির ঝির, নেই ঢেউ কল্লোল, নয় দূর নয় তীর। নেই নেই শঙ্কা, চল্ সব ফুর্তি,- বকশিস টংকা, বকশিস ফুর্তি । ঘোর ঘোর সন্ধ্যায় ঝাউ গাছ দুলছে, ঢোল্ কলমীর ফুল তন্দ্রায় ঢুলছে। লক্লক্ শর-বন বক্ তায় মগ্ন, চুপচাপ চারদিক- সন্ধ্যার লগ্ন। চারদিক নিঃসাড়, ঘোর ঘোর রাত্রি, ছিপ্ খান তিন দাঁড়, চারজন যাত্রী। জড়ায় ঝাঁঝি দাঁড়ের মুখে, ঝাউয়ের বীথি হাওয়ায় ঝুঁকে ঝিমায় বুঝি ঝিঝির গানে- স্বপন পানে পরাণ টানে। তারায় ভরা আকাশ ওকি ভূলোয় পেয়ে ধুলোর’ পরে লুটিয়ে প’লো আচম্বিতে কুহক - মোহ - মন্ত্র- ভরে। কেবল তারা! কেবল তারা! শেষের শিরে মানিক পারা, হিসাব নাহি সংখ্যা নাহি কেবল তারা যেথায় চাহি। কোথায় এল নৌকোখানা তারার ঝড়ে হই রে কানা পথ ভূলে কি এই তিমিরে নৌকো চলে আকাশ চিরে! জুলছে তারা, নিবছে তারা- মন্দাকিনীর মন্দ সোঁতায়, যাচ্ছে ভেসে যাচ্ছে কোথায় জোনাক যেন পন্থা - হারা। তারায় আজি ঝামর হাওয়া- ঝামর আজি আঁধার রাতি, অগুনতি অফুরান্ তারা জ্বালায় যেন জোনাক্ - বাতি। কালো নদীর দুই কিনারে কল্পতরুর কুঞ্জ কি রে?- ফুল ফুটেছে ভারে ভারে- ফুল ফুটেছে মানিক হীরে। বিনা হাওয়ায় ঝিলমিলিয়ে পাপড়ি মেলে মানিক - মালা; বিনি নাড়ায় ফুল ঝঁরিছে ফুল পড়িছে জোনাক - জ্বালা । চোখে কেমন লাগছে ধাঁধা- লাগছে যেন কেমন পারা, তারাগুলোই জোনাক হ’ল কিম্বা জোনাক হ’ল তারা। নিথর জলে নিজের ছায়া দেখছে আকাশ-ভরা তারায় ছায়া-জোনাক আলিঙ্গিতে জলে জোনাক দিশে হারায়। দিশে হারায়, যায় ভেসে যায় স্রোতের টানে কোন্ দেশে রে?- মরা গাঙ আর সুর-সরিৎ এক হয়ে যেথায় মেশেরে! কোথায় তারা ফুরিয়েছে, আর জোনাক কোথা হয় শুরু যে নেই কিছুরই ঠিক ঠিকানা চোখ যে আলা, রতন উঁছে। আলেয়াগুলো দপদপিয়ে জ্বলছে নিবে, নিবছে জ্বলে’ উল্কোমুখী জিব মেলিয়ে চাটছে বাতাস আকাশ-কোলে! আলেয়া-হেন ডাক-পেয়াদা আলেয়া হতে ধায় জেয়াদা, একলা ছোটে বন-বাদাড়ে ল্যাম্পো - হাতে লকড়ি - ঘাড়ে; সাপ মানে না, বাঘ জানে না, ভূতগুলো তার সবাই চেনা, ছুটছে চিঠি পত্র নিয়ে রনরনিয়ে হনহনিয়ে। বাঁশের ঝোঁপে জাগছে সাড়া কোল-কুঁজো বাঁশ হচ্ছে খাড়া, জাগছে হাওয়া জলের ধারে, চাঁদ উঠেনি আজ আঁধারে। শুকতারাটি আজ নিশীথে দিচ্ছে আলো পিচকিরিতে, রাস্তা এঁকে সেই আলোতে ছিপ্ চলেছে নিঝুম স্রোতে। ফিরছে হাওয়া গায় ফুঁ-দেওয়া, মাল্লা মাঝি পড়ছে থ’কে; রাঙা আলোর লোভ দেখিয়ে ধরছে কারা মাছগুলোকে । চলছে তরী, চলছে তরী- আর কত পথ? আর ক’ঘড়ি? এই যে ভিড়াই, ওই যে বাড়ি, ওই যে অন্ধকারের কাঁড়ি- ওই বাঁধা বট ওর পেছনে দেখছে আলো? ঐ তো কুঠি ঐখানেতে পৌঁছে দিলেই রাতের মতন আজকে ছুটি। ঝপ্ ঝপ্ তিনখান দাঁড় জোড় চলছে, তিনজন মাল্লার হাত সব জ্বলছে গুর্ গুর্ মেঘ সব গায় মেঘ-মল্লার দুর-পাল্লার শেষ হাল্লাক্ মল্লার।
দূরের পাল্লা • সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত- Download
- দূরের পাল্লা • সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ➜ PDF Download
- দূরের পাল্লা • সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ➜ Image Download
