Saturday, November 16, 2024

ইসলামে বিতর্ক বলতে কি বুঝায়? বিতর্ক সংক্রান্ত কুরআনের ৫টি আয়াতের দৃষ্টান্ত দেখান / লিখুন।

ইসলামে বিতর্ক বলতে কি বুঝায়? বিতর্ক সংক্রান্ত কুরআনের ৫টি আয়াতের দৃষ্টান্ত দেখান / লিখুন।

ভূমিকা:

মানুষ সাধরণত মতের অমিল হলে পরস্পরে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়। ।বিতর্ক ও ঝগড়া মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। কুরআন ও ছহীহ হাদীছ মুমিনের ইসলামী জ্ঞান চর্চা, জ্ঞান অন্বেষণ ও গবেষণায় উৎসাহ প্রদান করে এবং বিতর্ক ও ঝগড়া করতে নিষেধ করে। ইসলামের প্রাথমিক যুগের দিকে তাকালে আমরা দেখি যে, ছাহাবী-তাবেঈগণের যুগে কখনোই তাঁরা পরস্পরে শারঈ বিষয়ে নিজের মতকেই সঠিক সাব্যস্ত করতে বিতর্কে লিপ্ত হননি। বিভিন্ন সময়ে মতভেদের ক্ষেত্রে পরস্পরে একে অপরের দলীল জানার চেষ্টা করেছেন বা নিজের দলীলটি ব্যাখ্যা করেছেন।

হজরত মুআজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের পাশ্বদেশে, জান্নাতের মধ্যভাগে এবং জান্নাতের উপরিভাগে একটি ঘর নির্মাণ করা হবে। যে ব্যক্তি সত্যাশ্রয়ী হওয়া সত্বেও তর্ক পরিহার করে, উপহাসস্বরূপ হলেও মিথ্যা কথা বর্জন করে, আর নিজের চরিত্রকে সুন্দর করে।

বিতর্ক বা ঝগড়ার কারণ :

বিতর্কের নানা কারণ রয়েছে। তনমধ্যে দু’টি কারণ উল্লেখযোগ্য। যেমন-

১. নিজের মতকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। ২. সত্যকে মিটিয়ে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য।  যেমন- মহান আল্লাহ বলেন,وَمَا نُرْسِلُ الْمُرْسَلِينَ إِلَّا مُبَشِّرِيْنَ وَمُنْذِرِيْنَ وَيُجَادِلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِالْبَاطِلِ لِيُدْحِضُوا بِهِ الْحَقَّ وَاتَّخَذُوا آيَاتِي وَمَا أُنْذِرُوا هُزُوًا ‘অথচ আমরা রাসূলগণকে প্রেরণ করে থাকি কেবল জান্নাতের সুসংবাদ দানকারী ও জাহান্নামের ভয় প্রদর্শনকারী হিসাবে। আর অবিশ্বাসীরা মিথ্যা দিয়ে ঝগড়া করে সত্যকে মিটিয়ে দেওয়ার জন্য এবং তারা আমার আয়াতসমূহকে ও যে শাস্তির ভয় তাদের দেখানো হয় সেগুলিকে ঠাট্টার বস্ত্তরূপে গ্রহণ করে’ (কাহাফ ১৮/৫৬)।

মুমিনদের বিতর্কে জড়ানো :

তর্ক-বিতর্ক বা ঝগড়ায় উভয়পক্ষই নিজের জ্ঞানকে চূড়ান্ত বলে মনে করেন এবং যে কোনভাবে নিজের মতের যথার্থতা ও অন্য মতের ভুল প্রমাণ করতে চেষ্টা করেন। নিজের জ্ঞানের ভুল স্বীকার করাকে ব্যক্তিগত পরাজয় বলে মনে করেন। এ কারণে ইসলামে ঝগড়া-তর্ক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ تَرَكَ المِراءَ وَهُوَ مُبْطِلٌ بُنِيَ لَهُ بَيْتٌ فِيْ رَبَضِ الْجَنَّةِ، وَمَنْ تَرَكَهُ وَهُوَ مُحِقٌّ، بُنِيَ لَهُ فِيْ وَسَطَهِا، وَمَنْ حَسُنَ خُلُقَهُ بُنِيَ لَهُ فِيْ أَعْلاَهَا، ‘নিজের মত বাতিল হওয়ার কারণে যে ব্যক্তি বিতর্ক পরিত্যাগ করে তার জন্য জান্নাতের পাদদেশে একটি বাড়ি নির্মাণ করা হবে। আর যে ব্যক্তি নিজের মত সঠিক হওয়া সত্ত্বেও বিতর্ক পরিত্যাগ করে তার জন্য জান্নাতের মধ্যবর্তী স্থানে একটি বাড়ি নির্মাণ করা হবে। আর যার চরিত্র সুন্দর তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে একটি বাড়ি নির্মাণ করা হবে’।[3]

আল্লাহর নিকট তর্কপ্রিয় মানুষ অপ্রিয় :

অধিকাংশ মানুষ হক জানে না। আবার অনেকে হক জানলেও তা মানে না এবং হক গ্রহণে উদারতা প্রদর্শন করে না। বরং ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে। হক মানতে তর্ক-বিতর্ক করে। অথচ তর্কপ্রিয় মানুষ মহান আল্লাহর নিকট অপসন্দনীয়। আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ أَبْغَضَ الرِّجَالِ إِلَى اللهِ الأَلَدُّ الْخَصِمُ ‘আল্লাহর নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ হ’ল কঠিন ঝগড়াটে ব্যক্তি’।[4]

পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তর্ক করে না, তার জন্য পরকালীন জীবনে রয়েছে জান্নাত। আবূ উমামাহ বাহেলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,أَنَا زَعِيمٌ بِبَيْتٍ فِي رَبَضِ الْجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ الْمِرَاءَ وَإِنْ كَانَ مُحِقًّا، وَبِبَيْتٍ فِي وَسَطِ الْجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ الْكَذِبَ وَإِنْ كَانَ مَازِحًا وَبِبَيْتٍ فِي أَعْلَى الْجَنَّةِ لِمَنْ حَسَّنَ خُلُقَهُ، ‘আমি ঐ ব্যক্তির জন্য জান্নাতের শেষ সীমায় একটি ঘর দেওয়ার যামিন হচ্ছি, যে হক হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া বর্জন করে। ঐ ব্যক্তির জন্য জান্নাতের মধ্যস্থলে একটি ঘরের যামিন হচ্ছি, যে উপহাসছলেও মিথ্যা বলা বর্জন করে। আর ঐ ব্যক্তির জন্য জান্নাতের সবচেয়ে উঁচু জায়গায় একটি ঘরের যামিন হচ্ছি, যার চরিত্র উত্তম’।[5]

পক্ষান্তরে অন্যায় দাবীর পক্ষে বিতর্ক করা আরো ঘোরতর অপরাধ। এমন ব্যক্তি আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হিসাবে গণ্য হবে। আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,وَمَنْ خَاصَمَ فِى بَاطِلٍ وَهُوَ يَعْلَمُهُ لَمْ يَزَلْ فِى سَخَطِ اللهِ حَتّٰـى يَنْزِعَ عَنْهُ ‘যে ব্যক্তি জেনেশুনে কোন বাতিল (অন্যায়) বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক করে, সে ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর রোষাণলে থাকে, যতক্ষণ না সে তা বর্জন করে’।[6]

বিতর্ক সম্পর্কিত কুরআনের আয়াত সমূহঃ

১.

তারা আপনার সাথে বিবাদ করছিল, সত্য ও ন্যায়ের বিষয়ে, তা প্রকাশিত হবার পর,  তারা যেন মৃত্যুর মুখে ধাবিত হচ্ছে দেখতে দেখতে। (সুরা আন ফাল -০৬)

২. আপনি আপনার পালনকর্তার প্রতি আহ্বান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উত্তম রূপে উপদেশ শুনিয়ে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দযুক্ত অবস্থায়। আপনার রব ভালো করে জানেন কে তার পথ থেকে বিপদগামী হয়ে গেছে। যে ব্যক্তি (হেদায়েতের)পথে  রয়েছে  তিনি তার সম্পর্কে ও সবিশেষ অবহিত আছেন। (সুরা আন নাহল ১২৫)

৩. শোন! ইতিপূর্বে তোমাদের যে বিষয়ে কিছু জানতে,  তাই নিয়ে বিবাদ করতে এখন আবার সে বিষয়ে তোমরা  কিছুই জানো না, সে বিষয়ে কেন বিবাদ করছ? ( সুরা আল ইমরান ৬৬)

৪. তোমরা কি সে বিষয়ে বিতর্কে লিপ্ত হতে চাচ্ছো  যা সে  যে নিজের চোখে দেখেছে। ( সুরা আন নাজম ১২)

৫. কতক মানুষ অজ্ঞানতাবশতঃ আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে এবং প্রত্যেক অবাধ্য শয়তানের পথ অনুসরণ করে। ( সুরা হাজ্জ ৩)

৬. কতক মানুষ জ্ঞান, প্রমাণ ও কিতাব ছাড়াই আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে। ( সুরা হাজ্জ ৮)

৭. আমি অবশ্যই মানুষের জন্য এই কুরআন সর্বপ্রথম উপমা বিশদভাবে বর্ণনা করেছি কিন্তু মানুষ অধিক  বির্তক  প্রিয়। ( সুরা কাহফ ৫৪) ৮. বস্তুত তারা কেবল একটি নিনাদের অপেক্ষা আছে।  যা তাদেরকে ধরবে পরস্পরের বিবাদরত অবস্থায়। (সুরা ইয়াছিন ৪৯)

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles