ডায়াবেটিসের জটিলতা হিসেবে চোখের নানা উপসর্গ বা জটিলতা অন্যতম। যেসব মানুষের ১৫ বছর বা তারও বেশিদিন ধরে ডায়াবেটিস আছে তাদের ভেতর প্রায় ২% অন্ধ হয়ে যায় এবং আরো ১০% এর গুরুতর অবনতি ঘটে। চোখ কাজ করে অনেকটা ক্যামেরার মতো। কোনো বস্তু থেকে প্রতিফলিত আলো স্বচ্ছ কর্নিয়ার মধ্য দিয়ে এসে পিউপিল বা তারারন্ধ্রের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হয় এবং লেন্স বা চোখের মণি ভেদ করে চলতে থাকে। রেটিনা বিশেষ ধরনের এই আলোকে ধরে নেয় এবং এই তথ্যটি (চিত্রটি) চক্ষুগোলকের পেছনে অপটিক নার্ভের মাধ্যমে পৌঁছে যায় মস্তিষ্কে।
👉 আরো পড়তে পারেন: সমান পুষ্টিগুণের কিছু দামী ও সস্তা খাবার
এভাবে যে কোনো বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠন এবং পক্ষান্তরে তা অবলোকন করা হয়। যদি সময়মতো চোখের চিকিৎসার ব্যবস্থা না করা হয় তবে তা দৃষ্টিশক্তির অবনতি ঘটায় এবং পরিণামে ক্রমশ অন্ধত্বের কারণ হয়। যারা ডায়াবেটিসের জটিলতায় ভুগছেন তাদের মধ্যে চক্ষু সমস্যায় প্রায় ৬০-৭০% ভোগেন। এদের একটা বড় অংশ যে অন্ধত্ব বরণ করেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
যেসব প্রধান অসুবিধা ডায়াবেটিসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত তা হলো-
- ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি।
- ম্যাককুলার ইডিমা।
- ক্যাটারেক্ট বা চোখের ছানি।
যে প্রকার রেটিনোপ্যাথি ও ম্যাকুলার ইডিমা ডায়াবেটিক রোগীদের মধ্যে দেখা যায় তার প্রকৃতি একেবারে ভিন্ন। চোখে ছানি পড়া রোগ ডায়াবেটিস না থাকলেও হতে পারে, তবে ডায়াবেটিক রোগীদের মধ্যে তা সাধারণত অধিকহারে দেখা যায়।
যেহেতু রোগী প্রাথমিক অবস্থায় কোনো অসুবিধা বোধ করে না, তাই ডায়াবেটিসজনিত চোখের রোগ নির্ণয় বেশি কষ্টকর। স্বাভাবিকভাবেই এ ক্ষেত্রে রোগীরা ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার প্রয়োজন বোধ করে না।
কিন্তু যদি তা বেশ পুরনো ও জটিল হয়ে যায় এবং অসুবিধার সৃষ্টি করে তবে রোগ নির্ণয় সহজতর হয়। কারণ রোগীর দৃষ্টি হ্রাসের জন্য যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করে। যদি সূচনাতে জটিলতা ধরা পড়ে তবে তার চিকিৎসা করা সম্ভব এবং অনেক ক্ষেত্রেই তার অগ্রগতি প্রতিরোধযোগ্য। এসব চক্ষুবিষয়ক জটিলতা নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসা পরামর্শ অবশ্যই বিশেষ প্রয়োজন। সুতরাং কোনো অসুবিধা অনুভবকরার আগেই সচেতন হোন। নিয়মিত আপনার চোখ পরীক্ষা করান। এভাবে আপনি নিজেই আপনার চোখের ডায়াবেটিসজনিত রোগ সূচনাতেই প্রতিরোধ করতে পারবেন।