Monday, December 23, 2024

ইসলামি দাওয়াতের সংজ্ঞা দিন, ইসলামি দাওয়াতের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ আলোচনা করুন

প্রশ্ন: ইসলামি দাওয়াতের সংজ্ঞা দিন, ইসলামি দাওয়াতের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ আলোচনা করুনবিষয়: (IST-502) Introduction to Islamic Dawahকোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)



ভূমিকা

ইসলামের সমস্ত হুকুম-আহকামগুলোর মধ্যে দাওয়াত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। মহান আল্লাহ তা’য়ালা যুগে যুগে যত নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন তাঁদের সকলেরই দায়িত্ব ছিল মানুষের নিকট ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেয়া। ইসলাম প্রচার-প্রসারের কাজই হলো দাওয়াতি কাজ। দাওয়াতের মাধ্যমেই ইসলামের ব্যাপক প্রসার ঘটে। মুসলিম জাতির বিস্তৃতি লাভ করে।

ইসলামি দাওয়াহ এর পরিচয়

দাওয়াহ অর্থ প্রার্থনা বা দু’আ করা, সাহায্য কামনা করা, আহ্বান বা নিমন্ত্রণ করা ইত্যাদি। দাওয়াহ হলো কথা, কাজ ও অন্য কোন মাধ্যমে কাউকে নিজের প্রতি বা কোনো বিষেয়ের প্রতি আকৃষ্ট করার চেষ্টা।

আল্লাহর দ্বীনের প্রতি মানুষকে ডাকা বা আহ্বান করার নাম দাওয়াত। দাওয়াতের মাধ্যমে ইসলাম এবং তার বিধি-বিধান, শিক্ষা ও নীতি মানুষের কাছে সহজ্জ ভাষায়, গ্রহণীয় প্রদ্ধতিতে পেশ করে তা গ্রহণের জন্য সাধারণকে আহ্বান জানানো হয়। যে জন্য যেসতেনেভাবে ইসলাম প্রচার বা ইসলামের আহ্বান পৌছে দেয়াকে দাওয়াত বলা হয় না। বরং দাওয়াত হলো হিকমত ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে মানুষের কাছে আল্লাহর দ্বীন ব্যাখা করা। অবস্থা, প্রেক্ষিত, পাত্র ও সময় বিবেচনা করে যথোপযুক্তভাবে মানুষকে আল্লাহর ও তাঁর প্রতি আহ্বান জানানো। এক কথায়, পরিবেশ ও ব্যক্তির চাহিদা অনুযায়ী বুদ্ধিমত্তা ও সুন্দর উপদেশের সঙ্গে উসলামের প্রতি লোকদের আহ্বান জানানোই দাওয়াত। এটি ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক কাজ।


আরো পড়তে পারেন: ইসলামি দাওয়াতের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করুন


ইসলামী দাওয়াতের উৎপত্তি

মহান আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর প্রথম মানুষ হযরত আদম (আঃ) এবং তাঁর সহধর্মীনি হাওয়া (আঃ) কে সৃষ্টি করে তাদেরেকে দুনিয়ায় প্রেরণ করেন। তারা আল্লাহর নির্দেশে পৃথিবীতে স্বাভাবিক জীবন যাপন শুরু করলে তাঁদের ঔরসে সন্তান এলো। আল্লাহর নির্দেশে তাঁরা সন্তানদের নামকরণ, লালন পালন করার সাথে সাথে তাদেরকে মহান আল্লাহর হুকুম-আহকাম, আদেশ-নিষেধ এবং আল্লাহর ইবাদাতের পদ্ধতি শিক্ষা দিলেন। এভাবে হযরত আদম (আঃ) থেকেই প্রথম পৃথিবীতে ইসলামী দাওয়াতের উৎপত্তি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আল্লাহর পথ তথা সিরাতুল মুসতাকিমের পথে আহবান করতেই অসংখ্য নবী-রাসূলগণের পৃথিবীতে আগমন ঘটেছে। অর্থাৎ দাওয়াতের কাজের জন্যই মহান আল্লাহ তায়ালা নবী-রাসুলগণকে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন।

ইসলামী দাওয়াতের ক্রমবিকাশ

ইসলামী দাওয়াতের মূলত দুটি ধারা রয়েছে। ১. নবুয়তী ধারা ২. খেলাফতি ধারা। হযরত আদম (আঃ) সর্বপ্রথম দাওয়াতের কাজ শুরু করেন। তারই ধারাবাহিকতায় দুনিয়ায় আগত সকল নবী-রাসুলগণ দাওয়াতের কাজ করেছেন। নবী-রাসুলগণ যে দাওয়াতী কাজ করেছেন সেটাকে নবুয়তী ধারা বলা হয়। সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শেষ নবী হওয়ায় দাওয়াতের নবুয়তী ধারার এখানেই সমাপ্তি ঘটে।

নবুয়ত পরবর্তী সময় থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত শেষ নবীর উম্মত হিসেবে সাহাবীগণ, তাবেঈগণ, তাবে-তাবেঈগণ, ওলী-আউলিয়াগণ, আলেম-উলামা, শায়খ মুহাদ্দিস এবং সাধারণ মানুষ যেভাবে দাওয়াতের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন সেটাই হলো খেলাফতী ধারা।


আরো পড়তে পারেন: দাওয়াহ সম্পর্কে কোরআনের ১০টি আয়াত লিখুন


নিম্মে এ সম্পর্কিত আলোচনা করা হলো-

  • বর্তমান ইরাকের কুর্দিস্থানে প্রেরিত হয়ে আল্লাহর নবী হযরত নুহ (আঃ) দীর্ঘ ৯৫০ বছর দাওয়াতের কাজ করেন।
  • ইবরাহিম (আঃ) মুর্তিপূজারী জাতির নিকট প্রেরিত হয়ে মহান আল্লাহর একত্ববাদের তথা ইসলামের দাওয়াত দিলেন।
  • পাপাচারী আদ জাতির নিকট আল্লাহর নবী হুদ (আঃ) দাওয়াতি কাজ করেন।
  • অনাচারের বরপূত্র প্রভাবশালী আদ জাতির নিকট প্রেরিত হয়ে হযরত সালেহ (আঃ) দাওয়াতী কাজ করেন।
  • পাপী ব্যবসায়ী জাতি মাদায়েনবাসীর নিকট আল্লাহর নবী হযরত শুয়াইব (আঃ) প্রেরিত হয়ে দাওয়াত দেন।
  • হযরত ইউসুফ (আঃ) মিশরে প্রেরিত হয়ে সেখানে দাওয়াতি কাজ করেন।
  • সত্য পথের দিশা এবং ইসরাইলীদের মুক্তির লক্ষ্যে হযরত মুসা (আঃ) মিশরে ফিরআউন ও তার জাতির কাছে দাওয়াতি কাজ করেন।
  • সমকালীন বিশ্ব বিশেষ করে ইসরাইলের কাছে আল্লাহর নবী হযরত ঈসা (আঃ) দাওয়াত দেন।
  • সর্বশেষ নবী ও রাসুল হিসেবে প্রেরিত হয়ে মুহাম্মদ (সা.) তাওহিদ এর মিশনের প্রচারের লক্ষ্যে এবং কুফর, শিরক, জুলুমের বিরুদ্ধে জীবনব্যাপি দাওয়াতি কাজ করেন।

ইসলাহী নেসাবতরবিয়তে আওলাদ : ইসলামের দৃষ্টিতে সন্তান প্রতিপালনআল ইলমু ওয়াল উলামাআদাবুল মু’আশারাতশিশুতোষ চল্লিশ হাদিসকোরআন ও হাদীসের আলোকে নেক আমলছোটদের ইসলামী শিক্ষা (আকাইদ ও ফিক্হ)রিয়া (লোক দেখানো ইবাদত)২৪ ঘণ্টা ব্যবহারিক জীবনে আমলযোগ্য রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ১০০০ সুন্নাতইসলামী বাল্য শিক্ষাইসলামী আদব ও দু’আ শিক্ষাছোটদের বিজ্ঞানকোষ : ১ম খণ্ডরাজাবলিআবূ দাঊদ শরীফ (সকল খণ্ড)অলৌকিক কিতাব আল কোরআনপ্রিয়তমা (উম্মুল মুমিনিনদের প্রেমময় জীবনের গল্পভাষ্য)হারিয়ে যাওয়া মুক্তোতাফসীর ইবন কাসীরতাফসীর আহসানুল বায়াননাদিয়াতুল কুরআন কায়েদা


রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ইন্তেকালের পর হতে দাওয়াতের খেলাফতী যুগের সূচনা হয়। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো-

  • খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগে দাওয়াত: রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ইন্তেকালের পর তাঁর বিশ্বস্ত প্রধান চার খলিফা তথা হযরত আবু বকর (রা.), হযরত ওমর (রা.), হযরত ওসমান (রা.), হযরত আলী (রা.) ইসলামের দাওয়াত এর কাজ করেন।
  • উমাইয়া যুগের দাওয়াত: উমাইয়া যুগে রাজতান্ত্রিক ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে দাওয়াহ রাষ্ট্রীয়ভাবে যেভাবে বিকাশ লাভের দরকার ছিল সে রকম বিকাশ লাভ করেনি। সে যুগে একান্ত ব্যক্তিক উদ্যোগে দাওয়াতের কাজ পরিচালিত হয়। সেসময় যাঁরা এ কাজে অগ্রনী ভূমিকা রেখেছেন তাঁরা হলেন- আলী ইবনু হুসাইন (রহ.), হাসান আল মুসান্না (রহ.), আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রহ.), সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহ.) প্রমুখ মনীষীগণ।
  • আব্বাসীয় যুগে দাওয়াত: আব্বাসীয় যুগের শাসকবর্গ কর্তৃক জ্ঞান বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতা সাধন করলেও সেই তুলনায় রাষ্ট্রীয় বা প্রতিষ্ঠানিকভাবে দাওয়াতের কার্যক্রম তেমন বিকাশ লাভ করেনি। তবে সেসময়কার মনীষীবৃন্দের ঐকান্তিক ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় দাওয়াতের এর কাজ বিকশিত হয়। এ কাজে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছেন তাঁরা হলেন, ইমাম আবু হানিফা (রহ.), ইমাম মুহাম্মদ (রহ.), সুফিয়ান সাওরী (রহ.), জুনায়েদ বাগদাদী (রহ.), জালাল উদ্দিন রুমি (রহ.) সহ আরো অগণিত দাঈগণ।
  • আব্বাসীয় পরবর্তী যুগের দাওয়াত: আব্বাসীয়দের পতনের পর তাতারীদের ধ্বংসযজ্ঞে ইসলামের অনেক দাঈ শহীদ হন। এতে করে দাওয়াতের কাজ কিছুটা স্তিমিত হয়ে যাচ্ছিল এমন সময় ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.) দাওয়ার ঝান্ডা উড্ডিন করে বর্বর তাতারী সহ অন্যান্যদের মাঝে দাওয়াতের কাজ করেন।


  • আধুনিক যুগে ইসলামী দাওয়াত: হিজরী দশম শতকে মুসলিম উম্মাহর পতনের পর বিশ্বের রাজনৈতিক অঙ্গনে মুসলিমদের কর্তৃত্বে ভাটা নামলেও দাওয়াতের কাজ বন্ধ হয়ে যায়নি। এ সময় ভারত বর্ষে শায়খ আহমদ সিরহিন্দ (রহ.), শায়খ আদম বিন নুরী (রহ.), শায়খ বদরুদ্দিন (রহ.), আল্লামা বখশ (রহ.) প্রমুখ দাওয়াতের কাজ করেন। বাংলা, বিহার, আসাম, উড়িষ্যা অঞ্চলে হাজী শরীয়ত উল্লাহ, কারামাত আলী জৌনপুরী (রহ.), আবু বকর সিদ্দীক ফুরফুরী (রহ.), রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী (রহ.) মাহমুদুল হাসান দেওবন্দি (রহ.), আশরাফ আলী থানবী (র.), সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী (রহ.), হযরত শাহ্‌ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহ.) প্রমুখগণ দাওয়াতের কাজ করেন। পাকিস্তান অঞ্চলে আল্লামা ইকবাল দাওয়াহর কাজ আঞ্জাম দেন। আরব উপদ্বীপে শায়খ মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব (রহ.), আফগানিস্তানে জামাল উদ্দিন আফগানী (রহ.), বাংলাদেশে মাওঃ আতাহার আলী, হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)সহ বিভিন্ন ত্বরীকার অসংখ্য ওলী আওলিয়া, বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন দাওয়াহর কাজ করে যাচ্ছেন।

উপসংহার

দীনের দাওয়াত এই উম্মতের একক বৈশিষ্ট্য। আখেরি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। কিয়ামত পর্যন্ত আর কোনো নবী আসবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মত হওয়ার কারণে আমাদের উপর দাওয়াতের কাজ জরুরি।



• IST-501 : Study of Al-Quran (Surah: Al-Fatah and Al-Hujurat) • IST-502 : Introduction to Islamic Dawah • IST-503 : Al-Sirat Al-Nababiah • IST-504 : Human Rights in Islam • IST-505 : Principles and History of Tafsir literature • IST-506 : Principles of Islamic Jurisprudence

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles