▶ প্রশ্ন: ইসলামি দাওয়াতের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করুন ▶ বিষয়: (IST-502) Introduction to Islamic Dawah ▶ কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)
ভূমিকা
মহান আল্লাহর নিকট মনোনীত দ্বীন হচ্ছে ইসলাম। ইসলামের প্রচার ও প্রসারে আত্মনিয়োগ করা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব। এই প্রচার ও প্রসারের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে দাওয়াত। দাওয়াতের জন্য যে সকল আধুনিক উপকরণ ব্যবহার করা হয় সেগুলোর অন্যতম হলো পত্র-পত্রিকা, রেডিও, টেলিভিশন, ওয়েবসাইট, সোস্যাল মিডিয়া, ই-মেইল, মোবাইল এ্যাপ্লিকেশন, ব্যানার-ফেস্টুন ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক মিডিয়া ব্যবহার।
দাওয়াতের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার
দাওয়াতের পত্র-পত্রিকা, রেডিও-টেলিভিশন, ওয়েবসাইট, সোস্যাল মিডিয়া, মোবাইল এ্যাপ্লিকেশন, ব্যানার-ফেস্টুন ইত্যাদিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো-
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী
ইসলামের দাওয়াত পৌছানোর জন্য অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হলো পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী। দৈনিক, সাপ্তাহিক ও পাক্ষিক বিভিন্ন ধরণের পত্রিকা ও সামিয়কীগুলোর প্রচুর পরিমাণ পাঠক রয়েছে। আর বর্তমানে সকল পত্রিকারই অনলাইন সংস্করণ রয়েছে। যার মাধ্যমে সহজেই মানুষের কাছে এসব পত্র-পত্রিকা ও সামিয়কীর অনলাইন ও প্রিন্ট ভার্সনের মাধ্যমে অসংখ্য মানুষের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌছানো খুবই সহজ। পত্রপত্রিকা একেবারে নিম্নশিক্ষিত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পর্যন্ত সর্বস্তরের লোক পড়ে থাকে। কাজেই সেখানে যদি সত্যের দাওয়াত সম্পর্কিত কোনো লেখা প্রকাশ করা হয় তাহলে এটি দাওয়াতের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে
রেডিও-টেলিভিশন
রেডিও টেলিভিশনের মাধ্যমে দাওয়াতের কাজ করা যায়। রেডিও এবং টেলিভিশনে বিভিন্ন ইসলামী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে খুব সহজেই ইসলামের দাওয়াত পৌছানো যায় হাজারো মানুষের কাছে। টেলিভিশনে খুবই সুন্দর-সাবলীল ভাবে আকষর্ণীয় উপায়ে দাওয়াত পৌছানোর সুযোগ রয়েছে।
আরো পড়তে পারেন: ইসলামি দাওয়াতের সংজ্ঞা দিন, ইসলামি দাওয়াতের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ আলোচনা করুন
ওয়েবসাইট
যোগাযোগ মাধ্যমের একটি বৃহৎ মাধ্যম হলো ইন্টারনেট। এই ইন্টারনেটে বর্তমানে দাঈগণ তাদের নিজস্ব নামে এবং দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে ওয়েবসাইট তৈরি করেন। সেখানে ইসলামের হুকুম-আহকামগুলো সম্বন্ধে বিভিন্ন ধরণের লেখা, ছবি, অডিও এবং ভিডিও প্রকাশ করেন। এসকল কনটেন্ট পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে যে কেউ দেখতে পারেন। সাধারণ মানুষ সেখান থেকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারেন। এভাবে ওয়েব সাইটের মাধ্যমে ইসলামের দাওয়াতের কাজ করার অপার সুযোগ রয়েছে।
সোস্যাল মিডিয়া
বর্তমানে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত এই মিডিয়ায় আসক্ত। এই মিডিয়ার মাধ্যমে ইসলাম প্রচার অনেক সহজ এবং দ্রুতগতিতে তা ছড়িয়ে পড়ে। দাওয়াতের ক্ষেত্রে ইসলামী মূলনীতি অনুসরণ করে সঠিক তথ্য-প্রমাণসহ আলোচনা দাওয়াতকে বেগবান করবে বলে আশা করা যায়। বর্তমান সময়ে সোস্যাল মিডিয়া যোগাযোগ ও গণমাধ্যমের একটি ব্যাপক বিষয়। ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার ইত্যাদিতে আসক্ত সকল বয়সের মানুষ। মুসলমানরা এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ইসলাম প্রচারে ভূমিকা রাখতে পারে। এসকল সোস্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ধরণের পোস্টের মাধ্যমে দাওয়াতের কাজ করা যায় খুব সহজেই। এটি ইসলাম প্রচারে একটি নতুন দিগন্তের উন্মোচন। একবিংশ শতাব্দীর প্রযুক্তির অন্য একটি উল্লেখযোগ্য মাধ্যম হলো ইউটিউব। দাওয়াত প্রচার ও প্রসারে আধুনিক প্রযুক্তি সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে। ইন্টারনেটে বিভিন্ন ভিডিও আপলোড ও ডাউনলোড করার উল্লেখযোগ্য একটি ওয়েবসাইট হলো ইউটিউব। যেখানে একজন ব্যক্তি যেকোনো অডিও এবং ভিডিও আপলোড করতে পারে। এ বিষয়টিকে আমরা সবাই ইচ্ছা করলে ভালো ভালো কাজে ব্যবহার করতে পারি। কাজেই এটিও ইসলাম প্রচারের উল্লেখযোগ্য একটি মাধ্যম।
ই-মেইল
নবী (সা.)-এর যুগে দূতের মাধ্যমে চিঠি প্রেরণ করে দাওয়াতের কাজ করা হতো। পরবর্তীতে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে চিঠির দ্বারা বিভিন্নভাবে মুসলমানরা ইসলামের দাওয়াত ও ইসলাম প্রচার-প্রসারের কাজ করেছেন। বর্তমানে আধুনিক যুগে আমরা সেই চিঠির ইলেকট্রনিক রূপ ইমেইলের মাধ্যমে দাওয়াতের কাজ করতে পারি। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে একজন ব্যক্তি মুহূর্তের মধ্যে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে ইসলামের দাওয়াত সহজেই পৌঁছে দিতে পারে।
মোবাইল এ্যাপ্লিকেশন
আধুনিক প্রযুক্তির অন্যতম আবিষ্কার হলো মোবাইল ফোন। ধনী-গরিব, নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতী, শিশু-কিশোর সব বয়সের সকল পেশার মানুষের হাতেই এখন মোবাইল। মোবাইল ফোন আমাদের জীবনের একটি আবশ্যিক অংশ। স্মার্টফোনের মাধ্যমে ইসলামী লেকচার, টিউটোরিয়ালের অডিও-ভিডিও শোনা ও দেখা যায়। অ্যানড্রয়েড ফোনের অ্যাপগুলোর মাধ্যমে ইসলামের দাওয়াত পৌছে দেয়া অনেক সহজ। ইসলামবিষয়ক অ্যাপগুলোতে কোরআন, হাদিসের গ্রন্থ, ফাতাওয়ার কিতাব, নামাজের সময়সূচি, দৈনন্দিন জীবনের দোয়া, তাফসির, মাসআলা-মাসায়েল প্রভৃতি বিষয় আছে। অ্যানড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন ইসলামী কিতাব ও পত্র-পত্রিকা পিডিএফ পড়ারও সুযোগ রয়েছে। এসব ধর্মীয় বই, অডিও, ভিডিও লেকচারগুলো এন্ড্রয়েড এ্যাপের মাধ্যমে কোটি মানুষের মাঝে পৌছে দেয়া যায়।
দাওয়াতী কাজে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সতর্কতা
দাওয়াতের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির অবদান অনস্বীকার্য। তবে এসকল উপকরণগুলো ইসলামের বিধি-বিধানের পরিপন্থী বা সাংঘর্ষিক কিনা সে বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। নতুবা অনেক ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে গিয়ে না কোন গুনাহে লিপ্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। দাওয়াতের জন্য আধুনিক প্রযুক্তির উপকরণগুলো অবশ্যই ইসলামি বিধি-বিধানের আওতায় ব্যবহার করতে হবে। দাওয়াত, আদেশ, নিষেধ বা প্রতিবাদের নামে ইসলাম নিষিদ্ধ কোনো কাজ করা যায় না।
উপসংহার
আল্লাহর পথে আহ্বান সব থেকে বড় আমল। কেননা তা নবী-রাসূলদের দায়িত্ব। আর নবী-রাসূলগণ ছিলেন মানুষের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। আল্লাহর পথে আহ্বান আল্লাহকে ও নবীকে জানার পথ দেখায়। শুধু তাই নয় বরং আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং এ কর্মের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ঐ ব্যক্তি থেকে কথায় কে উত্তম যে আল্লাহর পথে আহ্বান করল এবং সৎ কাজ করল।
• IST-501 : Study of Al-Quran (Surah: Al-Fatah and Al-Hujurat) • IST-502 : Introduction to Islamic Dawah • IST-503 : Al-Sirat Al-Nababiah • IST-504 : Human Rights in Islam • IST-505 : Principles and History of Tafsir literature • IST-506 : Principles of Islamic Jurisprudence •