Sunday, December 22, 2024

ছন্নছাড়া • অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত

ছন্নছাড়া • অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত


আনিসুল হকবঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়আহমদ ছফাহুমায়ূন আহমেদকাজী নজরুল ইসলামরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসমরেশ মজুমদারসুনীল গঙ্গোপাধ্যায়শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়মানিক বন্দোপাধ্যায়সৈয়দ শামসুল হকআহমদ ছফাজহির রায়হানসৈয়দ ওয়ালীউল্লাহআবু ইসহাকআবদুল্লাহ আল-মুতীআবুল বাশারআবুল মনসুর আহমদফররুখ আহমদযতীন্দ্রমোহন বাগচীপ্রমথ চৌধুরীসৈয়দ মুজতবা আলীমুনীর চৌধুরীহুমায়ুন আজাদআব্দুল জব্বারশামসুর রাহমান • অন্নদাশঙ্কর রায় • জগদীশচন্দ্র বসু • সুফিয়া কামালবিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর • ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহএম আর আখতার মুকুল • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় • মীর মশাররাফ হোসেন • আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ • রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ • সেলিনা হোসেন • সুকান্ত ভট্টাচার্যদ্বিজেন্দ্রলাল রায়জসীম উদ্দীনজীবনানন্দ দাশসত্যেন্দ্রনাথ দত্ত • বুদ্ধদেব গুহ • শিহাব আহমেদ তুহিন • রাগিব হাসান • আহসান হাবীব • সৈয়দ মকসুদ আলী • এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ • আরিফ আজাদ • মুসা আনসারী • সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় • সৈয়দ আলী আহসান • এপিজে আবুল কালাম আজাদ • আলী রিয়াজ • শওকত ওসমান • শাহীন আখতার • মহিউদ্দিন আহমদ • তিলোত্তমা মজুমদার • মাইকেল মধুসূদন দত্ত • সৈয়দ আমীর আলী • মুহম্মদ জাফর ইকবাল • আকবর আলি খান • আনিসুজ্জামান • ড. সৌমিত্র শেখর • সরদার ফজলুল করিম • অন্যান্য লেখকের বই



ছন্নছাড়া • অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত

ছন্নছাড়া
অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত

গলির মোড়ে একটা গাছ দাঁড়িয়ে
গাছ না গাছের প্রেতচ্ছায়া-
আঁকাবাঁকা শুকনো কতকগুলি কাঠির কঙ্কাল
শৃন্যের দিকে এলোমেলো তুলে দেওয়া, 
রুক্ষ রুষ্ট রিক্ত জীর্ণ
লতা নেই পাতা নেই ছায়া নেই ছাল-বাকল নেই 
নেই কোথাও এক আঁচড় সবুজের প্রতিশ্রুতি 
এক বিন্দু সরসের সম্ভাবনা।
ঐ পথ দিয়ে 
জরুরি দরকারে যাচ্ছিলামে ট্যাক্সি ক’রে।
ড্রাইভার বললে, ওদিকে যাব না। 
দেখছেন না ছন্নছাড়া ক’টা বেকার ছোকরা
রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে-
চোঙা প্যান্ট, চোখা জুতো, রোখা মেজাজ, ঠোকা কপাল- 
ওখান দিয়ে গেলেই গাড়ি থামিয়ে লিফট চাইবে,
বলবে, হাওয়া খাওয়ান।

কারা ওরা? 
চেনেন না ওদের? 
ওরা বিরাট এক নৈরাজ্যের --এক নেই রাজ্যের বাসিন্দে।
ওদের কিছু নেই
ভিট নেই ভিত নেই রীতি নেই নীতি নেই 
আইন নেই কানুন নেই বিনয় নেই ভদ্রতা নেই 
শ্লীলতা-শালীনতা নেই। 
ঘেঁষবেন না ওদের কাছে।

কেন নেই? 
ওরা যে নেই রাজ্যের বাসিন্দে-
ওদের জন্যে কলেজে সিট নেই 
অফিসে চাকরি নেই 
কারখানায় কাজ নেই 
ট্রামে-বাসে জায়গা নেই 
মেলায়-খেলায় টিকিট নেই
হাসপাতালে বেড নেই 
বাড়িতে ঘর নেই
খেলবার মাঠ নেই 
অনুসরণ করবার নেতা নেই 
প্রেরণা-জাগানো প্রেম নেই
ওদের প্রতি সম্ভাবণে কারু দরদ নেই-
ঘরে-বাইরে উদাহরণ যা আছে 
তা ক্ষুধাহরণের সুধাক্ষরণের উদাহরণ নয়, 
তা সুধাহরণের ক্ষুধাভরণের উদাহরণ-
শুধু নিজের দিকে ঝোল-টানা। 
এক ছিল মধ্যবিত্ত বাড়ির এক চিলতে ফালতু এক রক 
তাও দিয়েছে লোপাট ক’রে। 
তাই এখন পথে এসে দাঁড়িয়েছে সড়কের মাঝখানে। 
কোত্থেকে আসছে সেই অতীতের স্মৃতি নেই।
কোথায় দাঁড়িয়ে আছে সেই বর্তমানের গতি নেই
কোথায় চলেছে নেই সেই ভবিষ্যতের ঠিকানা । 

সেচ- হীন ক্ষেত 
মণি-হীন চোখ 
চোখ-হীন মুখ 
একটা স্ফুলিঙ্গ-হীন ভিজে বারুদের স্তূপ 

আমি বললুম, না ওখান দিয়েই যাব, 
ওখান দিয়েই আমার শর্টকাট। 
ওদের কাছাকাছি হতেই মুখ বাড়িয়ে
জিজ্ঞেস করলুম,
তোমাদের ট্যাকসি লাগবে? লিফট চাই? 
আরে এই তো ট্যাকসি, এই তো ট্যাকসি, লে হালুয়া 
সোল্লাসে চেচিয়ে উঠল ওরা 
সিটি দিয়ে উঠল 
পেয়ে গেছি পেয়ে গেছি চল পানসি বেলঘরিয়া। 
বললুম, কদ্দুর যাবে। 
এই কাছেই। ঐ দেখতে পাচ্ছেন না ভিড়?
সিনেমা না, জলসা না, নয় কোনো ফিল্মি তারকার অভ্যর্থনা। 
একটা নিরীহ লোক গাড়িচাপা পড়েছে,
চাপা দিয়ে গাড়িটা উধাও-
আমাদের দলের কয়েকজন গাড়িটার পিছে ধাওয়া করেছে 
আমরা খালি ট্যাকসি খুঁজছি।

কে সে লোক?
একটা বেওয়ারিশ ভিখিরি। 
রক্তে-মাংসে দলা পাকিয়ে গেছে। 
ওর কেউ নেই কিছু নেই 
শোবার জন্যে ফুটপাথ আছে তো মাথায় উপরে ছাদ নেই, 
ভিক্ষার জন্যে পাত্র একটা আছে তো 
তার মধ্যে প্রকাণ্ড একটা ফুটো । 
রক্তে মাখামাখি সেই দলা-পাকানো ভিখিরিকে 
ওরা পাজাকোলা করে ট্যাকসির মধ্যে তুলে নিল।
চেঁচিয়ে উঠল সমস্বরে-- আনন্দে ঝংকৃত হয়ে-
প্রাণ আছে, এখনো প্রাণ আছে। 

রক্তের দাগ থেকে আমার ভব্যতা ও শালীনতাকে বাঁচাতে গিয়ে 
আমি নেমে পড়লুম তাড়াতাড়ি।
সিমেন্টে-কংক্রিটে । 
ইটে-কাঠে-পিচে-পাথরে দেয়ালে-দেয়ালে 
বেজে উঠল এক দুর্বার উচ্চারণ 
এক প্রত্যয়ের তপ্ত, শঙ্খধবনি-
প্রাণ আছে, এখনো প্রাণ আছে, 
প্রাণ থাকলেই স্থান আছে মান অছে 
সমস্ত বাধা-নিষেধের বাইরেও 
আছে অস্তিত্বের অধিকার। 

ফিরে আসতেই দেখি
গলির মোড়ে গাছের সেই শুকনো বৈরাগ্য বিদীর্ণ করে 
মর্মরিত হচ্ছে বাতাসে, 

দেখতে দেখতে গুচ্ছে গুচ্ছে উথলে উঠেছে ফুল 
ঢেলে দিয়েছে বুকের সুগন্ধ, 
উড়ে এসেছে রঙবেরঙের পাখি 
শুরু করেছে কলকণ্ঠের কাকলি, 
ধীরে ধীরে ঘন পত্রপুঞ্জে ফেলেছে নেহার দীর্ঘছায়া 
যেন কোন শ্যামল আত্মীয়তা । 
অবিশ্বাস্য চোখে চেয়ে দেখলুম 
কঠোরের প্রচ্ছন্নে মাধুর্ষের বিস্তীর্ণ আয়োজন। 
প্রাণ আছে, প্রাণ আছে - শুধু প্রাণই আশ্চর্য সম্পদ 
এক ক্ষয়হীন আশা
এক মৃত্যুহীন মর্যাদা।। 


ছন্নছাড়া • অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত- Download

  • ছন্নছাড়া • অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত ➜ PDF Download
  • ছন্নছাড়া • অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত ➜ Image Download

ছন্নছাড়া • অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত
ছন্নছাড়া • অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত
ছন্নছাড়া • অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত

অন্যান্য কবিতাসমূহ

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles