Monday, December 23, 2024

ইসলামে বিতর্ক বলতে কি বোঝায়? বিতর্ক সংক্রান্ত কুরআনের ৮টি আয়াত লিখুন।

প্রশ্ন: ইসলামে বিতর্ক বলতে কি বোঝায়? বিতর্ক সংক্রান্ত কুরআনের ৮টি আয়াত লিখুন। ▶ বিষয়: (IST-505) Principles and History of Tafsir Literatureকোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)



ভূমিকা

পরস্পরের মধ্যে মতের অমিল হলে মানুষ সাধারণত তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়। বিতর্ক ও ঝগড়া মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। কুরআন ও সুন্নাহ মুমিনকে ইসলামী জ্ঞান চর্চা, জ্ঞান অন্বেষণ ও গবেষণায় উৎসাহ প্রদান করে এবং বিতর্ক ও ঝগড়া করতে নিষেধ করে। ইসলামের প্রাথমিক যুগের দিকে তাকালে আমরা দেখি যে, ছাহাবী-তাবেঈগণের যুগে কখনোই তাঁরা পরস্পরে শরয়ী বিষয়ে নিজের মতকেই সঠিক সাব্যস্ত করতে বিতর্কে লিপ্ত হননি। বিভিন্ন সময়ে মতভেদের ক্ষেত্রে পরস্পরে একে অপরের দলীল জানার চেষ্টা করেছেন বা নিজের দলীলটি ব্যাখ্যা করেছেন।

বিতর্ক বা ঝগড়ার কারণ

বিতর্কের নানা কারণ রয়েছে। তার মধ্যে দুইটি কারণ অন্যতম। যেমন-১. নিজের মতকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এবং ২. সত্যকে মিটিয়ে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের সূরা কাহাফ এর ৫৬ নম্বর আয়াতে বলেন-

وَمَا نُرۡسِلُ الۡمُرۡسَلِیۡنَ اِلَّا مُبَشِّرِیۡنَ وَمُنۡذِرِیۡنَ ۚ وَیُجَادِلُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا بِالۡبَاطِلِ لِیُدۡحِضُوۡا بِہِ الۡحَقَّ وَاتَّخَذُوۡۤا اٰیٰتِیۡ وَمَاۤ اُنۡذِرُوۡا ہُزُوًا

অর্থ: আমি রাসূলগনকে সুসংবাদ দাতা ও ভয় প্রদর্শন কারীরূপেই প্রেরণ করি এবং কাফেররাই মিথ্যা অবলম্বনে বিতর্ক করে, তা দ্বারা সত্যকে ব্যর্থ করে দেয়ার উদ্দেশে এবং তারা আমার নিদর্শনাবলীও যদ্বারা তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করা হয়, সেগুলোকে ঠাট্টারূপে গ্রহণ করেছে। 



মুমিনদের বিতর্কে জড়ানো

দুইজন মানুষ বা দুইটি পক্ষ যখন তর্ক-বিতর্ক বা ঝগড়ায় লিপ্ত হয়, তখন উভয়পক্ষই নিজের জ্ঞানকে সঠিক বলে মনে করেন এবং যে কোনভাবে নিজের মতের যথার্থতা ও অন্য মতের ভুল প্রমাণ করতে চেষ্টা করেন। নিজের জ্ঞানের ভুল স্বীকার করাকে ব্যক্তিগত পরাজয় বলে মনে করেন। এ কারণে ইসলামে ঝগড়া-তর্ক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “নিজের মত বাতিল হওয়ার কারণে যে ব্যক্তি বিতর্ক পরিত্যাগ করে তার জন্য জান্নাতের পাদদেশে একটি বাড়ি নির্মাণ করা হবে। আর যে ব্যক্তি নিজের মত সঠিক হওয়া সত্ত্বেও বিতর্ক পরিত্যাগ করে তার জন্য জান্নাতের মধ্যবর্তী স্থানে একটি বাড়ি নির্মাণ করা হবে। আর যার চরিত্র সুন্দর তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে একটি বাড়ি নির্মাণ করা হবে”।

তর্কপ্রিয় মানুষ আল্লাহর নিকট অপ্রিয়

অধিকাংশ মানুষ হক জানে না। আবার অনেকে হক জানলেও তা মানে না এবং হক গ্রহণে উদারতা প্রদর্শন করে না। বরং ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে। হক মানতে তর্ক-বিতর্ক করে। অথচ তর্কপ্রিয় মানুষ মহান আল্লাহর নিকট অপছন্দনীয়। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জেনেশুনে কোন বাতিল (অন্যায়) বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক করে, সে ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর রোষাণলে থাকে, যতক্ষণ না সে তা বর্জন করে।”

বিতর্ক সম্পর্কিত কুরআনের আয়াতসমূহ

বিতর্ক সম্পর্কি পবিত্র কুরআনের ০৮টি আয়াত ও আয়াতের বাংলা অনুবাদ নিচে উল্লেখ করা হলো-

বিতর্ক সম্পর্কিত সূরা আন ফাল এর ০৬ নম্বর আয়াত

یُجَادِلُوۡنَکَ فِی الۡحَقِّ بَعۡدَمَا تَبَیَّنَ کَاَنَّمَا یُسَاقُوۡنَ اِلَی الۡمَوۡتِ وَہُمۡ یَنۡظُرُوۡنَ ؕ

অর্থ: তারা তোমার সাথে বিবাদ করছিল সত্য ও ন্যায় বিষয়ে, তা প্রকাশিত হবার পর; তারা যেন মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে দেখতে দেখতে। 



বিতর্ক সম্পর্কিত সূরা আন নাহল এর ১২৫ নম্বর আয়াত

اُدۡعُ اِلٰی سَبِیۡلِ رَبِّکَ بِالۡحِکۡمَۃِ وَالۡمَوۡعِظَۃِ الۡحَسَنَۃِ وَجَادِلۡہُمۡ بِالَّتِیۡ ہِیَ اَحۡسَنُ ؕ اِنَّ رَبَّکَ ہُوَ اَعۡلَمُ بِمَنۡ ضَلَّ عَنۡ سَبِیۡلِہٖ وَہُوَ اَعۡلَمُ بِالۡمُہۡتَدِیۡنَ

অর্থ: আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দ যুক্ত পন্থায়। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তাই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষ ভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথে আছে। 

বিতর্ক সম্পর্কিত সূরা আল ইমরান এর ৬৬ নম্বর আয়াত

ہٰۤاَنۡتُمۡ ہٰۤؤُلَآءِ حَاجَجۡتُمۡ فِیۡمَا لَکُمۡ بِہٖ عِلۡمٌ فَلِمَ تُحَآجُّوۡنَ فِیۡمَا لَیۡسَ لَکُمۡ بِہٖ عِلۡمٌ ؕ وَاللّٰہُ یَعۡلَمُ وَاَنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ

অর্থ: শোন! ইতিপূর্বে তোমরা যে বিষয়ে কিছু জানতে, তাই নিয়ে বিবাদ করতে। এখন আবার যে বিষয়ে তোমরা কিছুই জান না, সে বিষয়ে কেন বিবাদ করছ? 

বিতর্ক সম্পর্কিত সূরা আন নাজম এর ১২ নম্বর আয়াত

اَفَتُمٰرُوۡنَہٗ عَلٰی مَا یَرٰی

অর্থ: তোমরা কি বিষয়ে বিতর্ক করবে যা সে দেখেছে? 

বিতর্ক সম্পর্কিত সূরা হাজ্জ এর ০৩ নম্বর আয়াত

وَمِنَ النَّاسِ مَنۡ یُّجَادِلُ فِی اللّٰہِ بِغَیۡرِ عِلۡمٍ وَّیَتَّبِعُ کُلَّ شَیۡطٰنٍ مَّرِیۡدٍ ۙ

অর্থ: কতক মানুষ অজ্ঞানতাবশতঃ আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে এবং প্রত্যেক অবাধ্য শয়তানের অনুসরণ করে। 

বিতর্ক সম্পর্কিত সূরা হাজ্জ ০৮ নম্বর আয়াত

وَمِنَ النَّاسِ مَنۡ یُّجَادِلُ فِی اللّٰہِ بِغَیۡرِ عِلۡمٍ وَّلَا ہُدًی وَّلَا کِتٰبٍ مُّنِیۡرٍ ۙ

অর্থ: কতক মানুষ জ্ঞান; প্রমাণ ও উজ্জ্বল কিতাব ছাড়াই আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে। 

বিতর্ক সম্পর্কিত সূরা কাহফ এর ৫৪ নম্বর আয়াত

وَلَقَدۡ صَرَّفۡنَا فِیۡ ہٰذَا الۡقُرۡاٰنِ لِلنَّاسِ مِنۡ کُلِّ مَثَلٍ ؕ وَکَانَ الۡاِنۡسَانُ اَکۡثَرَ شَیۡءٍ جَدَلًا

অর্থ: নিশ্চয় আমি এ কোরআনে মানুষকে নানাভাবে বিভিন্ন উপমার দ্বারা আমার বাণী বুঝিয়েছি। মানুষ সব বস্তু থেকে অধিক তর্কপ্রিয়। 



বিতর্ক সম্পর্কিত সূরা ইয়াছিন এর ৪৯ নম্বর আয়াত

مَا یَنۡظُرُوۡنَ اِلَّا صَیۡحَۃً وَّاحِدَۃً تَاۡخُذُہُمۡ وَہُمۡ یَخِصِّمُوۡنَ

অর্থ: তারা কেবল একটা ভয়াবহ শব্দের অপেক্ষা করছে, যা তাদেরকে আঘাত করবে তাদের পারস্পরিক বাকবিতন্ডাকালে। 

উপসংহার

মহান শান্তির ধর্ম ইসলামে ঝগড়া-বিবাদ ও তর্ক-বিতর্ককে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তর্ক-বিতর্ক মুমিনের গুণাবলী নয়। হযরত মুআজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের পাশ্বদেশে, জান্নাতের মধ্যভাগে এবং জান্নাতের উপরিভাগে একটি ঘর নির্মাণ করা হবে। যে ব্যক্তি সত্যাশ্রয়ী হওয়া সত্বেও তর্ক পরিহার করে, উপহাসস্বরূপ হলেও মিথ্যা কথা বর্জন করে, আর নিজের চরিত্রকে সুন্দর করে।


• IST-501 : Study of Al-Quran (Surah: Al-Fatah and Al-Hujurat) • IST-502 : Introduction to Islamic Dawah • IST-503 : Al-Sirat Al-Nababiah • IST-504 : Human Rights in Islam • IST-505 : Principles and History of Tafsir literature • IST-506 : Principles of Islamic Jurisprudence

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles