▶ প্রশ্ন: বায়’তুর রিদওয়ান কাকে বলে? এর তাৎপর্য বিশদভাবে আলোচনা করুন ▶ বিষয়: (IST-501) Study of Al-Quran (Surah: Al-Fatah and Al-Hujurat) ▶ কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)
ভূমিকা
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিজ জন্মভূমি মক্কা ছেড়ে মদীনায় হিজরত ইসলামের ইতিহাসে বড় একটি অধ্যায়। মদীনায় হিজরত করার পুনরায় আল্লাহর নির্দেশে মক্কা আগমন তথা বিজয়ের ঘটনা ইসলামের প্রচার ও প্রসারে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মক্কা বিজয়ের প্রাক্কালে বায়তুর রিদওয়ান এর ঘটনাও ব্যাপক তাৎপর্যবহ।
বায়’তুর রিদওয়ান কাকে বলে
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ষষ্ঠ হিজরিতে ১৪০০ জন সাহাবি নিয়ে ওমরাহ করার জন্য মক্কার উদ্দেশে রওয়ানা হন। মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সকল সাহাবাগণ মক্কায় আগমনের সংবাদ শুনে মক্কার কুরাইশগণ তাকে বাধা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
কুরাইশদের এই সিদ্ধান্তের বিষয়টা জানতে পেরে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কার অদূরে হুদাইবিয়া নামক স্থানে শিবির স্থাপন করে যাত্রা বিরতি দেন। তখন তিনি কুরাইশদের প্রকৃত উদ্দেশ্য জানার জন্য প্রথমে খারাস ইবনে উমাইয়া ও পরে উসমান ইবনে আফনান কে কুরাইশদের নিকট দূত হিসেবে প্রেরণ করলেন।
আরো পড়তে পারেন: সূরা আল হুজরাত এর আয়াত ০৯-১৩ এর অনুবাদ
কিন্তু কুরাইশরা মুসলমানদের দূত উসমান ইবনে আফনান কে মক্কায় আটক করে রাখে। এসময় চারদিকে রটে যায় যে, উসমানকে কুরাইশরা হত্যা করেছে। এ খবর শুনে মুসলমান ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য একটি বৃক্ষের নিচে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাতের ওপর হাত রেখে শপথ গ্রহণ করেন। ইসলামের ইতিহাসে এই শপথ বা বাইয়াতকে বাইয়াতে রিদওয়ান বলা হয়।
বায়’তুর রিদওয়ান এর তাৎপর্য
বাইতুর রিদওয়ান দুটি আরবি শব্দ থেকে এসেছে। প্রথম শব্দ বাইয়াত অর্থ শপথ, এবং দ্বিতীয় শব্দ রিদওয়ান যার অর্থ-সন্তুষ্টি। মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে শপথ গ্রহণ করে। তাই এই বায়তুর রিদওয়ান গুরুত্ব ও তাৎপর্যন্ত অনেক বেশি।
প্রকৃত অর্থে হুদায়বিয়ার সন্ধি তথা মক্কা বিজয় মুসলমানদের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি বিষয়। ৬ষ্ঠ হিজরীতে মহান আল্লাহ তায়ালা হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে স্বপ্নের মাধ্যমে পবিত্র কাবা ঘর তাওয়াফ করার নির্দেশনা প্রদান করেন। এই ঘটনা তিনি সাহাবীদেরকে জানালে তাঁরা আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক পবিত্র কাবা ঘর তাওয়াফ করার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে কাবার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সেসময় মক্কার কুরাইশরা মুসলমান আগমনের কথা শুনে তাদের প্রতিহত করার যে সিদ্ধান্ত নেয় তা জানার পর মুসলমান মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নির্দেশ মোতাবেক হুদায়বিয়া নামক স্থানে তাবু স্থাপন করে সেখানে অবস্থান করেন।
আরো পড়তে পারেন: মুত্তাকী কারা? মুত্তাকী কাকে বলে? মুত্তাকীদের পরিচয়, বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলি লিখুন?
এ সময় মক্কার মুশরিকরা মুসলমানদের প্রতিহত করার যে সিদ্ধান্ত নেয় সে বিষয়ে জানার জন্য যে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে দূত পাঠিয়ে ছিলেন তাকে হত্যা করার খবরটি পেয়ে, তার হত্যার প্রতিশোধ তথা মক্কা বিজয়ের কথা চিন্তা করে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর নির্দেশে সাহাবীদেরকে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একত্র থাকার বাইয়াত বা শপথ গ্রহণ করান। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের সূরা আল ফাতহ এর ১০ নম্বর আয়াতে বলেন,
اِنَّ الَّذِیۡنَ یُبَایِعُوۡنَکَ اِنَّمَا یُبَایِعُوۡنَ اللّٰہَ ؕ یَدُ اللّٰہِ فَوۡقَ اَیۡدِیۡہِمۡ ۚ فَمَنۡ نَّکَثَ فَاِنَّمَا یَنۡکُثُ عَلٰی نَفۡسِہٖ ۚ وَمَنۡ اَوۡفٰی بِمَا عٰہَدَ عَلَیۡہُ اللّٰہَ فَسَیُؤۡتِیۡہِ اَجۡرًا عَظِیۡمًا
অর্থ: যারা আপনার কাছে আনুগত্যের শপথ করে, তারা তো আল্লাহর কাছে আনুগত্যের শপথ করে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর রয়েছে। অতএব, যে শপথ ভঙ্গ করে; অতি অবশ্যই সে তা নিজের ক্ষতির জন্যেই করে এবং যে আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করে; আল্লাহ সত্ত্বরই তাকে মহাপুরস্কার দান করবেন।
এ সময় ১৪০০ জন সাহাবী একে একে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট শপথ গ্রহণ করেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের বললেন, “আল্লাহর শপথ, উসমানের হত্যার বদলা না নিয়ে আমরা কেউ ফিরে যাবনা। এসো তোমরা সবাই আমার হাতে বাইয়াত করো”। সহীহ বুখারীতে জাবির বিন আবদুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে, তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো “আপনারা হুদাইবিয়াতে রাসুলুল্লাহর হাতে কিসের উপর বাইয়াত করেছিলেন”? তিনি বললেন “মৃত্যুর উপর”। একজন মাত্র মুসলিম হত্যার বদলা নিতে এমনকি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেসহ ১৪০০ সাহাবী নিজেদের জীবন দেবার শপথ করেছিলেন।
আল্লাহ তায়ালা এই আয়াতে বলেছেন যে, যারা আল্লাহর নবীর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করলো তারা যেন আল্লাহর নিকটই শপথ গ্রহণ করলো। ইসলামের তরবারিকে শক্তিশালী করার জন্য সাহাবীর গৃহীত এই শপথ একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য। তাই মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে সূরা ফাতহ এর ১৮ নম্বর আয়াতে বলেন,
لَقَدۡ رَضِیَ اللّٰہُ عَنِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اِذۡ یُبَایِعُوۡنَکَ تَحۡتَ الشَّجَرَۃِ فَعَلِمَ مَا فِیۡ قُلُوۡبِہِمۡ فَاَنۡزَلَ السَّکِیۡنَۃَ عَلَیۡہِمۡ وَاَثَابَہُمۡ فَتۡحًا قَرِیۡبًا ۙ
অর্থ: আল্লাহ মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন, যখন তারা বৃক্ষের নীচে আপনার কাছে শপথ করল। আল্লাহ অবগত ছিলেন যা তাদের অন্তরে ছিল। অতঃপর তিনি তাদের প্রতি প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে আসন্ন বিজয় পুরস্কার দিলেন।
উপসংহার
বাইয়াতে রিদওয়ান ইসলাম তথা মুসলমানদের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি বিষয়। বর্তমানে সময় মুসলমানরা পৃথিবীর যে প্রান্তে নির্যাতিত হচ্ছে। ইসলামের মহান শিক্ষা হচ্ছে মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই। সেই মুসলমান যে দেশেরই হোক না কেন। তাই পৃথিবীর যেকোন প্রান্তের নির্যাতিত মুসলমানের সাহায্যের জন্য তথা ইসলামের পতাকাকে শক্তিশালী করার জন্য বায়তুর রিদওয়ানের শিক্ষা আমাদের জন্য পথেয়। অপর মুসলমানের কী করণীয় সে বিষয়ে গভীর শিক্ষা রয়েছে এর মধ্যে।
• IST-501 : Study of Al-Quran (Surah: Al-Fatah and Al-Hujurat) • IST-502 : Introduction to Islamic Dawah • IST-503 : Al-Sirat Al-Nababiah • IST-504 : Human Rights in Islam • IST-505 : Principles and History of Tafsir literature • IST-506 : Principles of Islamic Jurisprudence •